প্রভাতী

ক্লাসরুম

লেখক
ঋতজা চৌধুরী

ক্লাসরুমের ওই জানলা দিয়ে

ঢুকছে একটু আলো,

ক্লাসরুমের ওই টেবিল-চেয়ার

দেখতে লাগে ভালো৷

ক্লাসরুমের ওই চক-ডাস্টার

হাসছে মিটিমিটি,

কচিকাঁচাদের মাঝে শিক্ষক

করছেন তাঁর ডিউটি৷

ক্লাসরুমও যেনো তাদের তালে

মেতে উঠেছে আনন্দে,

ক্লাসরুমও যেনো গান গায়

মিষ্টি মধুর ছন্দে৷

গাছের ফাঁকে ক্লাসরুমকে

দেখতে লাগে বেশ,

কল্পনার এই ক্লাসরুম

আজ এই পাতাতেই শেষ৷৷

দরদী মেয়ে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বাঁকুড়া জেলায় দুর্ভিক্ষ লেগেছে৷ ঘরে ঘরে শুধু নেই নেই রব৷ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা---সকলেই উদরান্নের জন্য পাগলা কুকুরের মতো ছোটাছুটি করছে৷ কুখাদ্য-অখাদ্য খেয়ে অকালে মানুষগুলো মরছে! কে কাকে স্যহায্য করবে? সকলেই যে ভিখারী---সাহায্যপ্রার্থী?

এক ব্রাহ্মণ বড় গরীব কিন্তু তাঁর মনটা ছিল করুণায় ভরা৷ দরিদ্রের হাহাকার শুণে তাঁর অন্তরাত্মা কেঁদে উঠলো৷ সেবার গোলায় তাঁর কিছু ধান তোলা ছিল৷ কিন্তু সেগুলোছিল ভবিষ্যতের সংস্থান! ব্রাহ্মণ ভাবলেন আগে ক্ষুধাতুররা খেয়ে তো বাঁচুক, ভবিষ্যতের চিন্তা সময় করা যাবে৷ বর্তমানের আত্যন্তিক প্রয়োজনে ব্রাহ্মণ ভবিস্যতের কথা ভুলে গেলেন৷ স্বেচ্ছায় অনায়াসে তিনি বরণ করে নিলেন অপরিগ্রহ ব্রত৷

ব্রাহ্মণ মনস্থির করলেন একটা অন্নসত্র খুলবেন৷ মেয়ের কাছে সে ব্যাপার প্রকাশ করতেই মেয়ে তো আহ্লাদে নেচে উঠলো৷ এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে সে হাঁড়ি-কড়াই বের করে তখনই রীতিমত কাজ শুরু করে দিল৷ চালে-ডালে খিচুড়ি চাপনো হল৷ দরিদ্র নারায়ণের সেবা হবে৷ ব্রাহ্মণের মেয়ের স্ফূর্তি আর ধরে না৷ রান্নার কাজে সে নাচের ভঙ্গীতে রাঁধুনীকে যোগান দিতে লাগলো৷

 রান্না নির্বিঘ্নে শেষ হলো৷

পঙ্গ পালের মতো সব ক্ষুধার্তরা উঠানে সারি সারি পাতা নিয়ে বসে গেল৷ গরম গরম খিচুড়ি সবে উনুন থেকে নামানো হয়েছে৷ ধোঁয়া উঠছে৷ ফুঁ দিতে দিতে ব্যথা হয়ে যায় ঠোঁট, তবু খিচুড়ি জুড়োয় না৷ খেতে গেলে জিব পুড়ে যায়, কিন্তু পেট তবু মানে না উপবাসের জ্বালা ৷ বেচারা আহারীরা, পড়লো বড় মুস্কিলে৷

ব্রাহ্মণের মেয়ে তাদের এ হেন অসহায়... অবস্থা-দেখে পাখা হাতে ছুটে এলো৷ বাতাস দিয়ে সবার খিচুড়ি সে জুড়িয়ে দিল৷

 গোগ্রাসে পরম আগ্রহে তখন সকলে ‘হাঁপুস-হুপুস’ শব্দে খেতে শুরু করে দিল! আহা কি সুস্বাদু ! ব্রাহ্মণের মেয়েটিকে সেদিন প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করলো সকলে!

 বলো দেখি কে এই মেয়ে দরিদ্রের প্রতি যার এত দয়া? মনে রেখো, এই মেয়েটি হচ্ছেন ক্ষমা, পবিত্রতা, শুদ্ধচিত্ততা, সেবা ও তপস্যার প্রতিমূর্ত্তি শ্রীসারদামণি দেবী৷ বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী নামক গ্রামে ১২৬০ সালের ৮ই পৌষ তিনি জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর মাতার নাম শ্রীশ্যামাসুন্দরী দেবী৷ আর. পিতা শ্রীরামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়৷

একুশের আশ্বাস

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্‌হা

একুশ ফেব্রুয়ারী---

তোমার ঊজ্জ্বল স্মৃতি বাঙালীর মর্মে গাঁথা

তুমি শোষিতের রুক্ষ অন্তরে ফল্গুর সরসতা৷

নিপীড়িত, বঞ্চিত বুকে জাগায়েছো আশা

তোমার পরশে মানুষ  পেয়েছে মুখের ভাষা৷৷

 

বাঙলার মাটি ভাষা-শহীদের রক্তে রাঙা

তারাই ভেঙেছে পরাধীনতার শিকল,

শোষণ যন্ত্রণা৷

একুশের বলিদান গেয়েছে জীবনের জয়গান

পৃথিবীর কুর্ণিশে

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের’ সম্মান৷৷

 

মানব-ওষ্ঠে যতদিন রবে কথা,

ধমনীতে শোণিত

 একুশের আশ্বাস-বাণী সততঃ হবে উচ্চারিত৷

 অমর একুশের আহ্বানে মাতিবে

     পুণর্বার বাঙলার আকাশ-বাতাস

সকল বাঙালীর বাসভূমি মিলি একসাথে

    রচিবে বাঙালীস্তান,

           বাঙলার নূতন ইতিহাস৷৷

ভাষা বিপ্লবীদের প্রতি

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

যাঁদের মরনে গর্বিত মনে

একুশকে করি স্মরণ,

ভাষা আন্দোলনে পথের দিশারী

করেছে মৃত্যু বরণ৷

বাংলা ভাষার দাবী আদায়ে

শত শত তাজা প্রাণ,

কোন ভাবাবেগে আন্দোলিত হয়ে

রাখে মাতৃভাষার মান!

‘উর্দু’ হবে রাষ্ট্রীয় ভাষা

পাকশাসকের ঘোষণা,

বাঙালির দাবী, বাঙালির ভাষা

লাঞ্ছিত আশা বাসনা!

বাংলা হরফ, বাংলা লিপি

মাতৃস্নেহের টান,

সেই অধিকার হরিয়া শাসক

করে বাংলাকে অপমান!

বাহান্ন সালের একুশ--------

জাগত বাঙালি-মর্যাদার হুঁশ,

সুসংবদ্ধ ছাত্র, যুবক, সমাজ কর্মী

পাহাড় আন্দোলিত, সাগরে ঊর্মি,

সেই আন্দোলনে গুলি বর্ষণে

পাকসশস্ত্র বাহিনী,

রচিত হলো রফিক, সালাম, জববরের

ভাষা আন্দোলনের কাহিনী৷

মাতৃ-অঙ্ক শূন্য করে

দামাল তুর্কি দল,

দু’নয়নে মায়ের গঙ্গা-পদ্মা

নীরব অশ্রুজল!

শত শহীদের রক্তে অর্জিত

বাংলা ভাষার মান,

হৃদয়ে বরণে স্মরণ করি

তাঁহাদের অবদান৷

শূন্য পৃথিবী

লেখক
কেয়া সরকার

তুমি চলে গেলে---

আজ শূন্য পৃথিবী মোর---

তুমি নেই---

তবু যেন ভাঙেনি স্বপ্ণের ঘোর---

মনের মাঝে তোমার স্মৃতি,

এখনও দাগ রেখে যায়---

ভক্তি রসে সিক্ত এ মন

তোমাকেই যেন ফিরে পেতে চায়---

তোমার মিষ্টি হাসির ছোঁয়ায়,

উদ্বেল মন শান্তি খোঁজে---

তুমি আছো জানি সবখানে তবু,

কেন যে এ বুকে ব্যাথা শুধু বাজে---

অবুঝ মন কেন যে আজিকে

চারিদিকে শুধু তোমাকেই খোঁজে---৷

‘‘গোলোক বৃন্দাবন’’

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

গ্রামে যাত্রাগান চলছে৷ গীতাভিনয়*(সেকালে ভাল ৰাঙলায় যাত্রাকে ‘গীতাভিনয়’ বলা হত৷) হচ্ছে জমিদার বাড়ীর সামনেকার প্রকাণ্ড মাঠে৷ যার যা পার্ট সে পার্ট তো সে করছেই উপরন্তু সবাইকার চেষ্টা কোনোক্রমে জমিদারৰাৰুকে কিছুটা সন্তুষ্ট করে দিয়ে কিছু বখ্শিস আদায় করা৷ এই ধরনের ব্যাপার সেকালকার ৰাঙলায় খুব চলত৷ যার এলেম*(*মূল শব্দটি ‘ইল্ম্’ যার থেকে ‘আলিম্’ শব্দটি এসেছে৷) তেমন নেই সেও জমিদারের খোশামোদ করে দিয়ে বখশিসের ব্যবস্থা করে নিত৷ সেই যে গল্পে আছে না–

জাড়া গ্রামের ভোলা ময়রার সঙ্গে জনৈক জগুঠাকুরের কবির লড়াই হচ্ছে জাড়া গ্রামের জমিদার মধুসূদন বাঁড়ুজ্জের বাড়ীতে৷ জগুঠাকুর দেখলে, ভোলা ময়রার সঙ্গে সে এঁটে উঠবে না৷ তাই সে ঠিক করলে জমিদারৰাৰুকে খোশামোদ করেই দু’পয়সার ব্যবস্থা করে নেবে৷ পালার বাইরে গিয়েই ধুন ধরলে–

‘‘এ এক বৃন্দাবন রে ভাই এ এক বৃন্দাবন৷

হেথায় বাঁশী বাজানো লীলা করেন শ্রীমধুসূদন৷৷’’

ভোলা ময়রার নাকি তা সহ্য হয়নি৷ সে সঙ্গে সঙ্গে উত্তরে বলেছিল–

‘‘কেমন করে’ বললি জগা জাড়া গোলোক বৃন্দাবন৷

হেথা তুলসীমঞ্চ কোথায় পেলি সবই দেখি বাঁশের বন৷

বংশীধবনি শুনলি কোথায় ওরে মশায় করে ভনভন৷

কবি গা’বি পয়সা পাবি অত খোশামোদের কী কারণ’’৷৷

দুপুরে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

দুপুরবেলা অশথগাছে কাঠবেড়ালির খেলা,

ঘুম আসে না তাইতো বাপির চক্ষু সদাই মেলা৷

          ব্যস্ত কাঠবেড়ালি ঃ

          খেলা তো নয় খামখেয়ালি---

তরতরিয়ে নামে আবার চমকে ডগায় ওঠে

ডাইনে বেঁকে হঠাৎ কভু শুকনো পাতা খোঁটে৷

ভর-দুপুরে পাগলা হাওয়ায় ঘুম-পরীদের চুমে

ক্লান্তিমেশা আমেজ নেশায় ঢুললো বাপি ঘুমে৷

          কাঠবেড়ালি দুষ্টু ভারি

          ঘুমের সাথে দেয় সে আড়ি---

          কিচির মিচির কি কথা কয়

          নিঝুম দুপুর বেলা?

          এ ডাল ও ডাল পালায়

          বেতাল খেলে মজার খেলা৷                                              

তোমায় যাচি

লেখক
কেয়া সরকার

তোমার গানে ভরে নিতে চাই জীবন

                   শুধু তোমার গানে---

তোমার ধ্যানে সমর্পিত জীবন

                   শুধু তোমার ধ্যানে

 

তোমার মুকুতা ঝরা হাসি

                   ভরিয়ে দেয় যে হিয়া---

তোমার বরাভয়ে শান্ত হয় যে মন

ব্যস্ত পৃথিবীর মাঝে ক্ষণিক কিছুক্ষণ

 

তোমার আদর্শে উদ্বুদ্ধ হই যখন

তোমার সংকল্পে সমর্পিত জীবন

তোমার কৃপা যাচি সদা আমি

                   শুধু আমার ধ্যানে৷

প্রণমি তোমায়

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

তোমাকে পাওয়ার অদম্য আশায়

   পেরিয়ে সহস্র জনম,

কত জনমের প্রতীক্ষা পরে

   পেয়েছি মানব জীবন!

 

এক জনমে না মিটিলে আশা

  থাকে পরজনমের প্রত্যাশা,

সে’ আশা পূরণে গুরুর চরণে

   ভক্তি ও ভালবাসা৷

 

প্রভু নির্দেশ পালন করিব

  করেছি জীবন পণ,

সার্থকতায় ভরিয়ে দিতে

  কীর্তন ভজন সাধন৷

 

মঙ্গলময় সকল কর্মে

  রয়েছি নিয়ত রত,

প্রভুর কৃপায় জীবের সেবা

  রয়েছে অব্যাহত৷

 

সাধ আর সাধ্যের বিভাজন রেখা

     চিরকাল দেয় কষ্ট,

একটি বাসনা, জীবের সেবায়

     দূর্গতরা হোক তুষ্ট৷

 

জীব সেবাতে তৃপ্ত সৃষ্টি

  সাধনে তুষ্ট ইষ্ট,

মন মাঝে থাক সমান দৃষ্টি

  জীবন হোক প্রকৃষ্ট৷

 

জাগতিক মায়া আঁধারের ছায়া

    বিপথগমন সম্ভব,

তব বরাভয় চির অক্ষয়

    সেইতো আমার বৈভব৷

 

কখনও জীবনে আঁধার ঘনায়

    চঞ্চল মন দুর্বল,

 বিহ্বল মন আলোর ছটায়

বাড়ে আত্মপ্রত্যয়, মনোবল৷

 

সবই তব লীলা, নয় অবহেলা

    পরীক্ষা প্রতিনিয়ত,

কোনো পরিস্থিতিতে নই আমি একা

    বিশ্বাস অব্যাহত৷

 

 মানব জীবন দুর্লভ

থাকি চরম লক্ষ্যে স্থির,

আবাস ছাড়িয়া পরমাশ্রয়,

যেথা তোমার সঙ্গ নিবিড়৷

 

তব পদধবনি আনমনে শুনি

 এসো কাছে ধীরে ধীরে,

কুসুম ডালায় গাঁথা মালাখানি

   ভিজানো অশ্রু নীরে৷

উলুবেড়ে লোক্যাল

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

অনেকে ভাবে, বিতর্ক মানে তর্কসংক্রান্ত বা তর্কযুক্ত জিনিস৷ কথাটি আংশিকভাবে সত্য৷ বিশেষ ধরনের তর্ককে ‘বিতর্ক’ বলা হয়৷ কিন্তু এটাই ‘বিতর্ক’ শব্দের শেষ কথা নয়৷ ‘বিতর্ক’ মানে অতি জল্পন (অহেতুক বকবক করা)৷ এই বকবক করার সঙ্গে যদি বদ্মেজাজ বা প্রগল্ভতা সংযুক্ত থাকে তবে তা ‘বিতর্ক’ পর্যায়ভুক্ত–‘কষায়’ পর্যায়ভুক্ত হবে না৷ নীচে কয়েকটা বিভিন্ন স্বাদের বিতর্কের দৃষ্টান্ত দিচ্ছি একজন হাওড়া ইষ্টিশনে গেছে৷ একটু দেরী হয়ে গেছে৷ একজন ভদ্রবেশধারী মানুষকে জিজ্ঞেস করলে–দাদা, উলুবেড়ে লোক্যাল ছেড়ে গেছে ভদ্রলোক মুখ ঝামটা দিয়ে খেঁকিয়ে বলে উঠলেন–উলুবেড়ে লোক্যালের খবর রাখা কি আমার ডিউটি আমাকে কি টাইম–টেবল পেয়েছেন আশ্চর্য সব বে–আক্কিলে লোক.........যত্ত সব........যত্ত সব.......এই জন্যেই দেশটার উন্নতি হচ্ছে না.......আমি এন্কোয়ারী অফিস নাকি

কাছেই আর একজন মানুষ দাঁড়িয়ে ছিলেন৷ তিনি বললেন, উলুবেড়ে লোক্যালের খোঁজ নিচ্ছেন৷ হ্যাঁ, গাড়িটা আজ পাঁচ মিনিট দেরীতে ছাড়ছে৷ ছাড়ছে এগার নম্বরপ্লাটফরম থেকে৷ একটু তাড়াতাড়ি পা চালালে গাড়িটা ধরতে পারবেন৷

প্রথমোক্ত ঘটনাটি বিতর্কের দৃষ্টান্ত, দ্বিতীয়োক্তটিকে বলা হয় ‘প্রমিত বাক্’৷ প্রমিত বাকে দরকার মত কথাটাই কেবল বলা হয়, আজেবাজে কথা বলা হয় না৷