প্রভাতী

সততার সাধক

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন দাসের নাম তোমরা সকলেই শুনেছো---তাই না? তিনি একটি পত্রিকা পরিচালনা করতেন৷ পত্রিকাটির নাম ‘নারায়ণ’৷ তাতে লিখতেন তৎকালীন বড় বড় নামজাদা লেখকরা৷ একবার এক খ্যাতনামা উপন্যাসিকও সেই পত্রিকায় কয়েকটি মূল্যবান প্রবন্ধ লিখলেন৷ প্রবন্ধগুলোর বিষয়বস্তু ছিল রাজনৈতিক৷ যেমন ‘শিক্ষার বিরোধ’, ‘মহাত্মাজী’ ইত্যাদি৷

‘নারায়ণ’-পত্রিকায় যারা লিখতেন দেশবন্ধু তাদের প্রত্যেককেই টাকা দিতেন৷ কিন্তু সেই উপন্যাসিককে টাকা দিতে গিয়ে তিনি মহামুশকিলে পড়লেন৷ অতোগুলো শক্তিশালী লেখার জন্য ঠিক কত টাকা দেওয়া উচিত তা তিনি স্থির করতে পারলেন না৷ কিছুদিন ভেবেচিন্তে অবশেষে তিনি এক অদ্ভুত কাজ করে বসলেন৷ টাকার ঘরটা শূন্য রেখে গোটা চেকটাই পাঠিয়ে দিলেন উপন্যাসিকের কাছে৷ উপন্যাসিক এবার ইচ্ছামতো টাকার অঙ্ক বসিয়ে নিতে পারেন৷

চেকখানি হাতে পেয়ে যৎপরোনাস্তি বিস্মিত হলেন উপন্যাসিক৷ কত সরল মনে, মানুষের প্রতি কতখানি বিশ্বাস নিয়ে দেশবন্ধু এ কাজ করেছেন তা ভেবে তিনি সত্যিই মুগ্ধ হলেন৷ পরমূহূর্তে আবার ভাবলেন, এটাই তো স্বাভাবিক, মানুষ মানুষকে বিশ্বাস করবে না তো কি পশুকে করবে?

যাইহোক, নির্দিষ্ট দিনে চেকে টাকার ঘরে ন্যায্য সংখ্যা বসিয়ে ব্যাঙ্কে গেলেন৷ চেক ভাঙবার সময় দেখা হলো এখ বন্ধুর সাথে৷ বন্ধু সব শুনে জিজ্ঞেস করলেন, তা চেকে তুমি কত লিখেছো?

উপন্যাসিক বললেন, একশ টাকা৷ ‘মাত্র! ঠোঁট বেঁকিয়ে বন্ধুটি বললেন, তুমি দেখছি নিতান্তই বেকুব৷ আরে দেশবন্ধুর কি টাকার অভাব? কম করে পাঁচশ’ লেখা উচিত ছিল৷’

উপন্যাসিক এবার একটু গম্ভীর হয়ে গেলেন৷ বললেন, ‘দেখো, পাঁচশ লিখলে চিত্তবাবুর থলির ওয়েট বিশেষ কিছুই কমতোনা জানি এবং তার চিত্তেও এতটুকু আঁচড় পড়তোনা, কিন্তু তাতে করে আমার চিত্তে যে কালি পড়তো তা মুছবার উপায় তুমি আমায় বাৎলে দিতে পারো’?

বন্ধুটি নীরব৷ লজ্জায় মাথা হেঁট৷ কিছুক্ষণ পরে আমতা আমতা করে অন্য প্রসংগ তুলে পালিয়ে গেলেন৷ বলতো কে এই উপন্যাসিকটি? উপন্যাসিকই হলেন আমাদের শরৎচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়৷ তাঁর জীবনী পড়ে তাঁর যে জিনিসটি দেখে আমি মুগ্দ হয়েছি তা হলো তাঁর সততার সাধনা৷ তোমরা কি পারবে না এইরকম সততার পরিচয় দিতে?

কবরেজ মশায় ৰাঁচিয়ে দিলেন

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

সত্যিকারের ক্লান্তিচ্ছেদ করতে গেলে খুব সতর্ক হয়ে কথা ৰলতে হয়৷ মনে করো কোন একটি ছেলে পরীক্ষায় ফেল করেছে৷ কারও সঙ্গে কথা ৰলছে না৷ তিন মুণ্ডু এক করে ৰসে আছে (দু’হাটু আর মুণ্ডু তিনে নিয়ে তিন মুণ্ডু) খেতে চাইছে না, শুতে চাইছে না৷ ৰাড়ীর লোকের ভয় ছেলেটা হয়তো পুকুরে ডুবৰে .....হয়ত বা রেলে গলা দেৰে৷ গ্রামের ৰুড়ো কবরেজ মশায় খবর শুণে ছুটে এলেন৷ আহা! ছেলেটা যদি মরে ৰড় দুঃখের হৰে৷ এই সতর ৰছর বয়সে সীতার ভূমিকায় যা অভিনয় করে তা এককথায় অনবদ্য৷ কৰরেজ মশায় রামভক্ত, তাই সীতা মরে যাবে ভেবে তার প্রাণটা খাঁ খাঁ করে উঠল৷ আৰার কিছুদিন আগে কেষ্টযাত্রায় রাধিকার ভূমিকায় ছেলেটা এমন প্রাণ সঞ্চার করেছিল যে বৃন্দাবন কেন, টুণ্ডুলা ইষ্টিশানও কেঁপে উঠেছিল......যমুনার জল সরে নীচেরটা একেৰারে ফুটিফাটা হয়ে গেছল৷

কৰরেজ মশায় পরম বৈষ্ণব৷ তিনি সীতাকেও মরতে দিতে পারেন না.....রাধিকাকেও মরতে দিতে পারেন না৷ তাই তিনি হন্তদন্ত হয়ে ছুটে এলেন৷ ডান পায়ের খড়মটা ঠিকই ছিল, বাঁ পায়ের খড়মটা বাঁশঝাড়ে আটকে সেখানেই পড়ে রইল৷ তিনি এসে ছেলেটাকে শুধোলেন–‘‘হাঁ রে, ওই রকম তিন মুণ্ডু হয়ে ৰসে আছিস ক্যানে এবার তোদের যা অভিনয় হইয়েছিল যারা দেখেছে তারা জীবনেও ভুলৰ্যে না৷ এখন কোন নাটকের রিহার্সাল দিচিস’’

ছেলেটার মনমেজাজ তখন ভীষণ খারাপ৷ সে মুখ ওপরে না তুলে ৰললে, ‘‘ওই নাটক করতে গিয়েই তো এই দশা হয়েছে৷ আর নাটক–টাটক নয়’’৷

কৰরেজ মশায় শুধোলেন–‘‘এখন এই ইস্কুলে পড়বি না অন্য ইস্কুলে যাব্যি’’

সে কান্নায় ফুঁপিয়ে উঠে ৰললে, ‘‘এবার যমের ইস্কুলে পড়তে যাৰ’’৷

কৰরেজ মশায় ৰললেন, ‘‘তুই কতবার ফেল্ করেছিস’’

ছেলেটা ৰললে–‘‘এই নিয়ে পাঁচবার’’৷

কৰরেজ মশায় ৰললেন–তবে ওতো আমার কাছে নস্যি রে৷ আমি প্রতিটি ক্লাসে একবার ফেল করেছি, পরের বার পাশ করেছি৷ আর ক্লাস টেনে রগড়েছি আট বার৷ ন–ৰারের ৰেলায় একেৰারে ফার্ষ্ট ডিবিশনে সংস্কৃতে লেটার পেয়ে পাশ করেছি৷ আজ দেখ আমি একজন নামজাদা কৰরেজ৷ বদ্দমান জেলার মানকড়ের, শ্রীখণ্ডের, কোগ্রামের (কুমুদগ্রাম) সব জায়গার তাগড়া তাগড়া বদ্যিরা আমাকে ডাকসাইটে বদ্যি ৰলে সম্মান করে৷ নাড়ি ছোঁবার আগেই নিদান দিয়ে দি’৷ আর তুই তিন মুণ্ডু হয়ে দামী সময় নষ্ট করছিস্৷ এখ্খুনি উঠে পড়ত্যে ৰোস৷ এই ইস্কুলেই পড়বি, কারণ এই ইস্কুলের শিক্ষকদের ঘাঁত–ঘোঁত সৰই তোর জানা৷ হাঁ, হাঁ, আমিই একটা ভুল করনুম৷ আগে চাট্টি গুড় মুড়ি খেয়ে নে, তারপরে পড়ত্যে ৰোস৷ হ্যাঁ, এর পর যে নাটকটার রির্হার্স্যাল দিৰি আমাকে আগে থাকতে জানাৰি৷ অভিনয়ের দিন আমিও গ্রীণরুমে গিয়ে ৰসে থাকৰ’’৷

এটাই হ’ল সত্যিকারের ক্লান্তিচ্ছেদ...........ৰুঝলে৷                      (শব্দ চয়নিকা, ১১/২১৪)

মনুষ নহীঁ, দেওতা হ্যায়

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

তোমরা এমন কিছু কিছু মানুষ নিশ্চয় দেখেছ যাদের শরীরে মায়ামমতা অত্যন্ত বেশী৷ বিপদে আপদে সবাই তাঁদের দ্বারস্থ হয়, তাঁরাও বিপন্ন মানুষকে বাঁচাবার জন্যে আপ্রাণ চেষ্টা করে থাকেন৷ নিজেকে বিপদে ফেলেও অন্যকে বাঁচাবার চেষ্টা করেন৷ একটি ঘটনার কথা মনে পড়ল৷

সেটি ১৯৪৬–৪৭ সালের কথা৷ ভারতে নানান স্থানে তখন সাম্প্রদায়িকতার কৃশাণু জ্বলছে৷ এই আগুন জ্বালাতেন বা জ্বালিয়েছিলেন রাজনৈতিক নেতারা৷ আমি তাঁদের জন্যে ঘৃণা সূচক পলিটিক্যাল পিগ (হ্মপ্সপ্তন্ব্ধন্ন্তুত্র হ্মন্ন্ধ) শব্দটি ব্যবহার করেছিলুম৷ তাদের কাছে মানুষের জীবনের দাম ছিল না৷ তাদের উদ্দেশ্য ছিল যে কোন পন্থায় তাদের রাজনৈতিক মতলব হাসিল করা৷ এজন্যে মানুষ মরে মরুক....শান্তির নীড় গ্রামগুলি ওই আগুনের লেলিহান শিখায় জ্বলে জ্বলুক, রাজনৈতিক উদ্দেশ্য সিদ্ধি ছিল তাদের কাছে সবচেয়ে বড় কথা৷ আমরা যে পাড়াটিতে থাকতুম সেটি ছিল সংখ্যালঘু ও সংখ্যাগুরু দুই সম্প্রদায়েরই বাসভূমির সীমান্তরেখা৷ আমাদের বাড়ীটি ছিল সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের পাড়ার শেষ হবার কয়েক পা মাত্র দূরে৷

স্থানটি বিহারের একটি ছোট্ট শহর৷ তখন সন্ধ্যেবেলা৷ একজন বাংলাভাষী সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোক সিল্কের লুঙ্গি বেচতে আমাদের পাড়ায় প্রায় ঢুকে পড়েছিল৷ আমরা তাকে তাড়াতাড়ি আমাদের পাড়া ছেড়ে সংখ্যালঘু অধ্যুষিত পাড়ায় চলে যেতে বললুম৷ আমাদের বাড়ী থেকে প্রায় একশ’ হাত দূরে৷ লোকটি ছিল ময়মনসিং জেলার৷ একে বিহারে সে কখনও আসেনি, তার ওপর এখানকার ভাষাও সে ভাল জানত না৷ সে বললে–‘‘কি করে যাব কর্ত্তা, সেখানে তো আমার জানা–চেনা কেউ নেই৷’

আমার এক অতি নিকট আত্মীয় ওই সময় আমাদের বাড়ীতে ছিলেন৷ তিনি তার হাত ধরে টেনে আমাদের বাড়ীতে ঢুকিয়ে নিলেন৷ লোকটি তখন ভয়ে কাঁপছে৷ চারিদিকে দাঙ্গা–কাজিয়া তখন চরম অবস্থায় পৌঁছেছে৷ সংখ্যাগুরু সম্প্রদায়ের লোকেরা আমাদের বাড়ীতে এসে বললে–সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকটিকে তোমাদের বাড়ীতে ঢুকতে দেখেছি, তোমরা ওকে আমাদের হস্তে সমর্পণ করো৷

আমাদের সেই আত্মীয়টি তখন বাড়ী থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এলেন৷ তিনি সংখ্যাগুরু ওই বিরাট রণোন্মত্ত বাহিনীকে বললেন–লোকটিকে আমিই বাড়ীতে ঢুকিয়ে রেখেছি৷ লোকটি বিপন্ন৷ তোমরা যদি লোকটিকে চাও আমি তাকে তোমাদের হস্তে সমর্পণ করতে রাজী আছি–একটি সর্ত্তে৷ তোমরা আমাকে এখনই মেরে ফেল....তারপর আমার মৃতদেহের ওপর দিয়ে চলে যাও ওই বাড়ীতে....লোকটিকে বাড়ী থেকে বার করে আনো৷ যতক্ষণ আমি বেঁচে আছি ততক্ষণ আমি তোমাদের ওই লোকটির কাছে যেতে দোবনা–তা সে সংখ্যায় তোমরা হাজারই হও, লাখই হও৷ আক্রমণকারীরা বলতে বলতে গেল, ‘‘দেওতা হ্যায়৷’’ (শব্দ–চয়নিকা, ১৩শ খণ্ড)

বাংলার গৌরব - রাধা গোবিন্দ কর (আর.জি.কর)

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

না, সম্প্রতি আর.জি.কর হাসপাতালের জঘন্য নারকীয় ঘটনা এ নিবন্ধের আলোচ্য বিষয় নয়৷ আর.জি.কর হাসপাতালের যিনি প্রতিষ্ঠাতা আর.জি.কর অর্থাৎ ডাক্তার রাধা গোবিন্দ কর---তাঁকে নিয়েই এখানে আজ বিস্তর আলোচনা করবো৷

রাধা গোবিন্দের জন্ম ২৩শে আগষ্ট,১৮৫২ সালে হাওড়া জেলার সাঁতরাগাছিতে৷ পিতা দুর্র্গদাস কর৷ চিকিৎসা শাস্ত্র পড়া শেষ করে ১৮৮৩ খ্রীষ্টাব্দে তিনি ইয়ূরোপ যাত্রা করেন৷ ১৮৮৭ খ্রীষ্টাব্দে এডিন ধরায় চিকিৎসা শাস্ত্রে ডিগ্রী লাভ করেন৷

১৮৭৩ খ্রীষ্টাব্দে ২৯শে মার্চ মেয়ো হাসপাতালের সাহায্যার্থে টাউন হলে ধর্মদাস বাবুর দল নীলদর্পন নাটক মঞ্চস্থ করেন৷ নাটকে উড সাহেবের চরিত্রে অভিনয় করেছিলেন গিরিশচন্দ্র ঘোষ আর সৈরিন্ধীর চরিত্রে অভিনয় করেন ডাঃ রাধা গোবিন্দ কর৷ ১৮৮৬ খ্রীষ্টাব্দে এই রাধাগোবিন্দ করই ক্যালকাটা স্কুল অব মেডিসিন নামে চিকিৎসাবিদ্যায় প্রশিক্ষণ দেবার জন্য একটি শিক্ষায়তন প্রতিষ্ঠা করেন৷ ১৭বছর স্কুলটি ভাড়া বাড়িতে থাকার পর ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দে স্কুলটিকে অ্যালবার্ট ভিক্টর হসপিটালে স্থানান্তরিত করা হয়৷ ওই বছর আর.জি. কর ঐ হাসপাতালের অবৈতনিক সম্পাদক হিসাবে সাধারণের কাছে সাহায্য প্রার্থনা করে এক আবেদন করেছিলেন৷ সংক্রামক ব্যাধিগ্রস্ত রোগীদের জন্য ১২টি শয্যার একটি ওয়ার্ড খেলার জন্য তিনি সাহায্যপ্রার্থী হয়েছিলেন৷ ১৯০৩ খ্রীষ্টাব্দেই আর.জি.করের স্কুলের সঙ্গে কলেজ অব ফিজিসিয়ানস্‌ এ্যাণ্ড সারজেনস মিশে গিয়েছিল৷ ১৯১৬ খ্রীষ্টাব্দের ৫ই জুলাই তৎকালীন বাংলার গভর্নর লর্ড কার মাইকেল নতুন হাসপাতালটি উদ্বোধন করেন৷ তখন হাসপাতালটির নামকরণ করা হয় ‘কার মাইকেল মেডিকেল কলেজ’৷ পরে ১৯৪৮ খ্রীষ্টাব্দের মার্চ মাসে এই নাম পরিবর্তন করে নতুন নামকরণ হয় আর.জি.কর মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতাল৷ তাঁর রচিত কয়েকটি উল্লেখ্যযোগ্য গ্রন্থ---ধাত্রীসহায়, অ্যানটমি, কর-সংহিতা, সংক্ষিপ্ত ভৈষজ্য তত্ত্ব, রোগীপরিচর্যা, নূতন ভৈষজ্যতত্ত্বে, প্লেগ, স্ত্রী রোগ চিকিৎসা প্রভৃতি৷

অনন্ত রহস্য

লেখক
আচার্য প্রবুদ্ধননন্দ অবধূত

সৃষ্টির মহিমা, অনন্ত গরিমা

অহরহ বহে চলে,

কে কি ভাবে ভাবের সাগরে,

কোন দ্বিধা নাই তাঁর বলে৷

আপন ছন্দে আপন সৃষ্টি ,

সকলের তরেই তাঁর প্রকাশ,

নিজ গুণে তিনি সদাই শ্রেষ্ঠ,

অপরূপ তাঁর অভিপ্রকাশ৷

অণু পরমাণু আব্রহ্মস্তম্ব নিত্য

নোতুন সৃষ্টির ধারা,

মহাকাশ, বায়ু-বলয়ে জ্যোতির

ছটায়ে নক্ষত্র গ্রহ রাশি নাচে তারা৷

সমুদ্র সাগর নদী খাল বিল

সবেরই আছে উপযুক্ত উপযোগ,

বিনা অর্থে নাহি তাঁর সৃষ্টির প্রকাশ,

এমনই শিল্পী তিনি, অপরূপ অনুযোগ৷

মানুষ সৃষ্টির সর্ব শ্রেষ্ঠ জীব,

যদি সে সংযোগ রাখে তাঁর সাথে,

অনন্ত অপার করুণার ধন পায়

সে যদি ধ্যান যোগে রহে একসাথে৷

নহিলে এ জীবন বৃথা আস্ফালনে

হইবে নিষ্ফল অপচয়,

মায়ার বন্ধনে রবে চির আবদ্ধ,

কাঁদিবে চিরকাল, দূর হোক এ সংশয়৷

নুতন-পুরাতন

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

পুরাতন হয়ে গেছে হারিকেন--

পুরাতন হয়ে গেছে কালি-ঝরা পেন,

পুরাতন হয়ে গেছে তালপাতার পাখা,

ধূলোর আস্তরণে অবহেলায় ঢাকা৷

পুরাতন হয়ে গেছে হেঁসেলে শিল-নড়া,

পুরাতন হয়ে গেছে জল রাখা ঘড়া৷

সংসারে পুরাতন পিতা, পিতামহ,

হাঁপানি কাশিতে তারা ভূগে অহরহ৷

নব প্রজন্ম ভাবে বুঝি চলে গেলে বাঁচি,

এদের সেবার তরে মোরা বেঁচে আছি!

পুরাতন হয়না কেন আকাশের চাঁদ ,

সবারে ভাগ্ণে বলে পেতেছে সে ফাঁদ!

রবি মামা সব যুগে সবার মাতুল,

এ’’ কথা সবার জানা, নয় সেতো ভূল!

এদের মুখে দেখি নাই বয়সের ছাপ,

হাসি মুখে আলো দেয়, দেয় উত্তাপ!

আকাশের তারাগুলি মিটি মিটি চায়,

নীরব সাক্ষী তারা, সব দেখে যায়৷

বয়স্ক পাকা মাথা হোকনা প্রাচীন,

তবু তার অভিজ্ঞতা নয় অর্বাচীন৷

যা ভাবছ তা নয়

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

‘মৃগী’ শব্দের একটি অর্থ হচ্ছে একটি স্নায়ু–সংক্রান্ত মানসিক ব্যাধি, ইংরেজীতে ন্দ্বহ্মন্প্তন্দ্বহ্মব্দ্৷ যদি কোনো কম বয়সের ছেলে বা মেয়ে হঠাৎ কোনো অভাবনীয় কিছু দেখে বা শোনে তাহলে অনেক সময় তার স্নায়ুর ওপর বা মনের ওপর হঠাৎ একটা ৰড় রকমের চাপ এসে পড়ে৷ সেই চাপ সে যদি সহ্য করতে না পারে তখন তার এই মৃগী রোগ দেখা দেয়৷ যেমন ধরো, একটি ১২/১৪ বছরের ছেলের ধারণা ছিল, অমুক লোকটি কোনো নেশার ধারেকাছে যান না৷ হঠাৎ সে দেখলে সেই সংশ্লিষ্ট লোকটি বোতলের পর বোতল মদ খাচ্ছে৷ ফলে তার আগেকার ধারণার ওপর বিরাট একটা হাতুড়ির আঘাত লাগল৷ এর ফলে তার মৃগী রোগ দেখা দিতে পারে৷ কোনো একটি ছেলের ধারণা ছিল যে সে সদ্বংশজাত কিন্তু হঠাৎ সে শুনতে পেলে তার বংশ পরিচয় নেই৷ এই অবস্থায় তার মৃগী রোগ দেখা দিতে পারে৷ মৃগী রোগীর জীবনে স্নায়ুতন্তুর ওপর হঠাৎ কোনো আরামদায়ক পরিস্থিতি এলেই রোগ ফুটে ওঠে৷ কোনো মৃগী রোগীর অনেকক্ষণ ধরে মূত্র ত্যাগের প্রয়োজন দেখা দিয়েছে৷ কিন্তু উপযুক্ত স্থান না পাওয়ায় মূত্র ত্যাগের সুযোগ পায়নি৷ এখন সে যখন মূত্র ত্যাগের সুযোগ পায় তখন তার স্নায়ুতে একটা আরামের অবস্থা আসে৷ এমন সময় মৃগী রোগী মূত্র ত্যাগ করতে করতে রোগগ্রস্ত হয়ে পড়ে যায়৷ কোনো মৃগী রোগী হয়তো দারুণ গরমে কষ্ট পাচ্ছে, এমন সময়ে সেই কষ্ট থেকে বাঁচার জন্যে সে পুকুরে বা নদীতে স্নান করতে গেল৷ জলের সংস্পর্শে এসে তার আরাম ৰোধ হল৷ এমন অবস্থায় রোগগ্রস্ত হয়ে সে জলে পড়ে মৃত্যুমুখে পতিত হতে পারে৷ এই কারণে কোনো মৃগী রোগীকে একলা কখনই কোনো জলাশয়ে স্নান করতে যেতে দিতে নেই৷

‘মৃগী’ প্রসঙ্গে একটা গল্প মনে পড়ল৷ একবার কৃষ্ণনগরের এক পাঁড় মাতাল ৰেশী মদ খেয়ে বেসামাল হয়ে রাত্তিরটা নালীতে শুয়ে কাটালে৷ শেষ রাতের মিষ্টি মিষ্টি ফুরফুরে হাওয়া ও ঠান্ডা নালীর জলের মধুর স্পর্শে তার নেশার ঘোর যখন কিছুটা কেটে গেল সে চোখ মেলে চেয়ে দেখলে তাকে ঘিরে লোকের ভীড় জমেছে৷ তার তখন একটু একটু লজ্জা করতে লাগল৷ সে আবার চোখ বুজে ফেললে৷ খানিক বাদে আবার সে চোখ খুলে চাইল৷ চেয়ে দেখলে ভীড়ের লোকেদের ভেতর তার বেয়াই মশায়ও (বৈবাহিক) রয়েছেন৷

এবার তার লজ্জার মাত্রা গেল আরও ৰেড়ে৷ বেয়াই তাহলে আসল ব্যাপারটা জেনেই ফেলেছে৷ এবার কী হবে! সে তখন বেয়াইয়ের দিকে চেয়ে বললে–বেয়াই, ও বেয়াই, বেয়াই গো, শুনছ, তুমি যা ভাবছ এটি তা নয়–এ আমার মৃগী রোগ৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘গল্প সঞ্চয়ন’ থেকে)

অদৃশ্য হাত

লেখক
আচার্য গুরুদত্তানন্দ অবধূত

কালবৈশাখীর ঝড়ের মত

বিদ্যুত গতিতে তুমি এলে,

সরিয়ে রিক্ততা দিলে পূর্ণতা,

গড়লে মানুষ মানবতার

মহান আদর্শে৷

গড়ে উঠল মিশন তোমার নেতৃত্বে,

একান্ত আপন

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

তুমি স্রষ্টা, প্রতিপালক,

তুমি পরিত্রাতা, তোমার চরণে

শতকোটি নমি,

তুমি পরমপিতা৷

তব করুণায় তোমাকে জেনেছি,

সারাৎসার তোমাকে মেনেছি

সর্বদা সাথে তাও বুঝেছি

যুগ যুগ ধরে শুধু তোমা তরে

চাপা আছে ব্যাকুলতা৷

যে কথাটি আজও হয়নি ব্যাক্ত

সে কথাকি তবে অশ্রুসিক্ত!

সবখানে নয় অভিব্যক্ত

তাই প্রকাশের আকুলতা৷

ছোট ছোট কথা ছোট ছোট ভাব

অঞ্জলী দিয়ে গড়ি সদ্ভাব,

সৃষ্টির মাঝে তব আবির্ভাব

নানা রূপে রঙে তোমারি আভাস৷

বিপদে সম্পদে আছ পাশে পাশে,

পুষ্প কোরকে ফুলের সুবাসে

রাকার আলোয় দখিনা বাতাসে

তোমার প্রেমের স্নিগ্দ প্রকাশ৷

শতরূপে দেখি তোমার হাসি,

কোন নীপবনে বাজাও বাঁশি

দখিনা পবন হয় উদাসী

এ কোন আকর্ষন!

কীর্তনে গানে সাধনে ভজনে

করি ভাব আহরন,

যে ভাব-তরঙ্গে সর্ব অঙ্গে

অনুভবি শিহরণ৷

মননে তোমার নিত্য লীলা

এ কোন বৃন্দাবন!

ভয়

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

পথে যেতে যেতে থমকে দাঁড়াই

দেখি পিছে তুমি আছো কিনা---

সোয়াস্তি নাই, নাইকো শান্তি

ক্ষণে ক্ষণে থামে মনোবীণা৷

ধূলি ধুসরিত পথে যাই হেঁটে,

চলার ছন্দ শুধু যায় কেটে,

এলোমেলো যত ভাবনার দায়ে

নিজেরেই নিজে করি ঘৃণা৷

মনের দেউলে খুঁজি গো তোমায়,

তোমা হতে যে গো গেছি সরি,

যত দূরে যাই পিছু ফিরে চাই

হারিয়ে তোমায় কেঁদে মরি৷

মুদিত নয়নে শয়নে স্বপনে

ধরিতে চাই গো তোমায় মননে

বড় ভয় জাগে পাছে যাও চলে

দেখি পিছে তুমি আছো কিনা৷