রোদ
ভাল লাগে শীতের দিনে
পায়েস আর পিঠে,
নলেন গুড়ের সন্দেশ আর
খেজুর রস মিঠে৷
ভাল লাগে কড়াইশুঁটির
কচুরি, মালপোয়া---
ভাল লাগে নতুন ধ্যানের
নবান্নে, আমোদ---
সবচেয়ে ভাল লাগে শীতে
সকাল বেলার রোদ!
- Log in to post comments
ভাল লাগে শীতের দিনে
পায়েস আর পিঠে,
নলেন গুড়ের সন্দেশ আর
খেজুর রস মিঠে৷
ভাল লাগে কড়াইশুঁটির
কচুরি, মালপোয়া---
ভাল লাগে নতুন ধ্যানের
নবান্নে, আমোদ---
সবচেয়ে ভাল লাগে শীতে
সকাল বেলার রোদ!
আমি সেই নরকুলের
প্রথম রাজা ‘মান্ধাতা’৷
তোমরা কি পেয়েছ সেই
শ্মরণাতীত বারতা!
তারপর থেকে বিশ্বে প্রথম
শুরু রাজতন্ত্র৷
আজও কোনো দেশে পরম্পরায়
রাজদণ্ডই শাসনতন্ত্র৷
তোমরাতো জানোনা সেই ইতিহাস,
এও এক নিষ্ঠুর পরিহাস!
ইতিহাসে এ তথ্য অনুল্লিখিত সত্য
আমায় ঘিরে পারিষদবর্গ
পাইক বরকন্দাজ
থাকতো কত অমাত্য৷
আমার সিংহাসন আমারই নির্র্মণ
নির্মমভাবে অস্বীকৃত,
দেয়নি কেহ দাম৷
আজও মানুষ বলে কথারচ্ছলে
মানুষ সবাই সুখী ছিল
মান্ধাতার আমলে৷
তারা হাসতো, খেলতো গাইতো গান
নাচতো ছন্দে তালে৷
আজ হারিয়ে গেছে সেই সত্যতা
অলিখিত ইতিহাসের অতল তলে৷
‘কৌশিকা’ শব্দের একটি অর্থ হ’ল রেকাবি, পিরীচ (পেয়ালা–পিরীচ), ডিশ, প্লেট (চায়ের প্লেট), জলখাবারের জন্যে ব্যবহার করা ছোট আকারের কানা–উঁচু থালা, ফুলকাটা থালা, সরা প্রভৃতি৷ প্রাচীন ভারতে এই প্রত্যেকটি জিনিসই ‘কৌশিকা’ নামে পরিচিত ছিল ও জলখাবারের জন্যে এই বাসনই সাধারণতঃ ব্যবহার করা হত৷ প্রাচীন রাঢ়ে রান্না করা জলখাবারের জন্যে ‘কৌশিকা’–ই ব্যবহার করা হত৷ কিন্তু না–রাঁধা জলখাবারের জন্যে ছোট আকারের একপ্রকার পাত্র যাকে ছোট ধুচুনী বা পেত্তে বলা হয় বা বলা হত তা–ই ব্যবহার করা হত৷ রাঢ়ের পণ্ডিতেরা এই জন্যে ছোট আকারের ধুচুনী বা পেত্তের জন্যে সংস্কৃত ‘কৌশিকা’ শব্দ ব্যবহার করতেন৷
পাশ্চাত্ত্য প্রভাবে মানুষ বাঁশ–বেতের ভোজনপাত্রের ব্যবহার কমিয়ে ফেলেছিল৷ বাঙলায় যখন সাহেবরা আসেন তখন ভোজনপাত্র হিসেবে বাঁশ–বেতের আধার ব্যবহূত হত৷ পাশ্চাত্ত্য প্রভাবে বাঙালী যখন একটি ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজ গড়ে তুলেছিল এই কলকাতা শহরেরই বিভিন্ন অংশে, ডিরোজিওর প্রতিপত্তি যখন তুঙ্গে সেইরকম সময়ের মানুষেরা সাধারণ বাঙালীর খাদ্যকে ‘খাবার’ তথা ভাল বাঙলায় ‘আহার’ বা ‘ভোজন’ বলত৷ সাহেবী খানাকে তারা ইচ্ছে করেই ‘খানা’ বলতে শুরু করে৷ বাংলা ভাষায় ‘খানা’ শব্দটি চলে আসছে ৭০০ বছর ধরে ঠিকই কিন্তু ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজে ‘খানা’ শব্দটি ব্যবহূত হতে থাকে বিশেষ করে সাহেবী চালের খাবারের জন্যে......আরও বিশেষ করে ভোজ্যে শূকরমাংসের ব্যবহার থাকলে৷ সেই সময়কার একটি ছোট্ট গল্পের কথা মনে পড়ল৷
তোমরা নিশ্চয় অনেকেই জান হুগলী জেলার জনাই ছিল ব্রাহ্মণ পণ্ডিতদের একটি শ্লাঘার বস্তু৷ বেশ সুশিক্ষিত গ্রাম৷ সংস্কৃতের জ্ঞানের জন্যে রাঢ়–বাঙলায় এই জনাবতীপুর (জনাই) অনেকের কাছেই পরিচিত ছিল৷ বৌদ্ধযুগে ও বৌদ্ধোত্তর যুগে বাঙলায় এর প্রভাব দূর দূরান্তে ছড়িয়ে পড়েছিল৷ বৌদ্ধোত্তর যুগের শেষ চরণে জনাই–এরও প্রতিদ্বন্দ্বী জুটে গেল৷ যারা জুটল তারা হচ্ছে পণ্ডিত কায়স্থদের গ্রাম বাক্সা (বাকসারিকা), কৈকালা (কপিত্থকলিকা) ব্রাহ্মণ–গ্রাম ভাণ্ডারহাটী, সিঙ্গুর (সিংহপুর) প্রভৃতি৷ ইংরেজ আমলের মাঝামাঝি সময়ে এদের অনেকে রাক্ষসী ম্যালেরিয়ার আক্রমণে ধ্বংস হতে বসেছিল৷ এখন কেউ কেউ টাল সামলে নিয়েছে.....কেউ আর তা পারেনি৷ সে যুগে এদের সবাইকার মধ্যে চলেছিল একটা বন্ধুত্বপূর্ণ বৈদগ্ধ্য প্রতিযোগিতা৷ প্রাক্–পাঠানযুগের ঠিক পূর্ব চরণে ভাণ্ডারহাটী একটি নামজাদা পণ্ডিত–গ্রাম রূপে পরিচিত ছিল৷ ভাণ্ডারহাটীর তো বটেই, ভাণ্ডারহাটীর কাছাকাছি গ্রামের বসবাসকারী পণ্ডিতেরাও নিজেদের ভাণ্ডারহাটী গোষ্ঠীর মানুষ বলে পরিচয় দিতেন৷ ঠিক তেমনই ভাণ্ডারহাটী গোষ্ঠীর একজন স্বনামধন্য মানুষ ছিলেন বিদ্যাভূষণ বাচষ্পতি৷ বাচষ্পতি মশায় ছিলেন তীক্ষ্ণধী প্রত্যুৎপন্নমতিত্ব সম্পন্ন এক বিরাট পণ্ডিত৷ কাব্য, সাংখ্য, ব্যাকরণ, স্মৃতি সবেতেই ছিল তাঁর সমান দখল৷ অথচ মানুষটি ছিলেন সদালাপি, নিরহঙ্কার৷ দেখে কে বুঝবে, তিনি অত বড় পণ্ডিত৷ কেউ তাঁকে শ্লেষ বর্ষণ করে কথা বললে, ঠোক্কর তুলে ঘা দিলে তিনি তাকে সেইভাবে প্রত্যুত্তর দিতেন না–দিতেন হাস্যরসিকতার মাধ্যমে, বৈদুষ্যমণ্ডিত ভাষায়৷
এহেন বিদ্যাভূষণ বাচষ্পতি মশায় কলকাতায় খুব কমই আসতেন৷ কলকাতার ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজের সঙ্গে তিনি মানিয়ে চলতে পারতেন না৷ সংস্কৃত কলেজের পণ্ডিত মশায়রা চাইতেন তিনি কলকাতায় আসুন–তাঁদের সঙ্গে যোগাযোগ রাখুন৷ কিন্তু বাচষ্পতি মশায়ের কলকাতার প্রতি এই অনীহা তাঁদের ব্যথিত করত৷
একবার তিনি কলকাতা এলেন৷ তাঁকে দেখেই ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজ কিছুটা বিরক্ত হ’ল.......দুশ্চিন্তাগ্রস্তও হ’ল কারণ বাচষ্পতি মশায় কারোর খাতির রেখে কথা বলতেন না৷ যদিও কথা বলতেন অত্যন্ত ভদ্রভাবে৷ সেবার কলকাতায় দু’চার দিন থেকে গেলেন৷ বাচষ্পতি মশায় এবার গ্রামে ফিরবেন৷ ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজ প্রতিপদেই তাঁর উপস্থিতিতে পর্যুদস্ত হয়ে চলেছিল৷ তাঁরা ভাবলেন একবার অন্ততঃ বাচষ্পতি মশায়কে অপ্রতিভ করতে হবে–একটা অন্ততঃ ভাল রকমের ঠোক্কর দিতে হবে৷
ইঙ্গ–বঙ্গ সমাজের কয়েকজন তাগড়া তাগড়া মানুষ শূকর মাংসের খাদ্য খাচ্ছিলেন৷ তাঁরা ভাবলেন, এটাই তো মোক্ষম সুযোগ৷ তাঁরা বাচষ্পতি মশায়কে বললেন–‘‘আচ্ছা বাচষ্পতি মশায়, আপনি তো পাণ্ডিত্যের সমুদ্র–যেমন উদার তেমনই ব্যাপক৷ তাহলে আমাদের সঙ্গে বসে একবার খানা খেয়ে আমাদের কৃতার্থ করে দিয়ে যান৷’’ বাচষ্পতি মশায় এর উত্তরে একগাল হেসে বললেন, ‘‘দেখো, আমি একে হুগলী জেলার গ্রাম্য মানুষ–তার ওপর আবার গরীব৷ আমি তোমাদের ওই খানাটানা চোখেও দেখিনি কখনও........জানিও না, তাই খাই–ও না৷ আমরা গেঁয়ো ভূত৷ আমরা খানা–ডোবায় মলত্যাগই করতে যাই৷’’ বাচষ্পতি মশায় তাঁর স্বগ্রামে ফিরে গেলেন৷
শোন শোন ভক্তগণ শোন মন দিয়া,
কীর্ত্তন করো গো সবে হৃদয় মথিয়া৷
ৰাৰা নামে ব্রহ্ম নামে ভর মনপ্রাণ,
ৰাৰা নামে যে মাতে গো সে যে বুদ্ধিমান৷
দুই হাত তুলে নাচো ‘ৰাৰা নাম’ বলে,
বিশ্ব জুড়ে সেই দৃশ্য--- দেখুক সকলে৷
‘ৰাৰা নাম কেবলম্’ মুক্তিমন্ত্র সিদ্ধ
ৰাৰা নাম ভজ’ পাবে ৰাৰার সান্নিধ্য
প্রাণ খুলে নাচো গাও মৃদঙ্গের তালে
ভক্তিস্রোতে বৈকুন্ঠের দ্বার যাবে খুলে
যেথায় কীর্ত্তনে মাতে যত ভক্তগণ
যোগীর হৃদয় ছেড়ে সেথা আগমণ৷
ভক্তির কাণ্ডারী তিনি--- চিনি বা না চিনি,
আসবেন আসবেন আসবেন তিনি৷
ৰাৰা নামে ধরাধাম কর মুখরিত,
হয়ো না শঙ্কিত কেউ, হয়ো না লজ্জিত৷
বিদ্যা নয়, বুদ্ধি নয়---শুধু ভক্তি -অর্ঘ্য---
কী আনন্দ, কী আনন্দ, মর্ত্তলোক স্বর্গ৷
ফের বলি, ৰাৰা নামে ভরো মন প্রাণ
ৰাৰা নামে যে মাতে গো সে যে বুদ্ধিমান৷
ব্যর্থ হবে না যুগের সাধনা
এ দাবী চিরকালের
গড়বো সমাজ নতুন আদর্শে
এ আশা প্রতি পলের
ভাবজড়তার প্রাচীর ডিঙিয়ে,
শত ভেদাভেদের গণ্ডি এড়িয়ে,
বিশ্ব সমাজ করবো রচনা,
এ আশা প্রতি জনের৷
সব বিদ্বেষ, গ্লানি দূর হয়ে,
ভালোবাসা কে পথ করে দেবে
শুভ বুদ্ধিতে জাগ্রত জনে,
আদর্শকে হৃদে ধরে রবে
ঐক্যের সুধা পান করে সবে
মানুষ আবার এক হয়ে যাবে
প্রাউট স্থাপনে পৃথিবীতে আর,
মানুষের কোনো দ্বিধা নাহি রবে৷
নব্যমানবতার কোমল স্পর্শে,
মানুষের যবে চোখ খুলে যাবে
হৃদয় নিংড়ানো প্রীতি ভালোবাসায়
মানুষে মানুষে ভেদ ঘুচে যাবে
বিশ্ব সংসারে মানুষ আবার মানুষ বলে পরিচিতি পাবে৷
সেই দিন এক নোতুন পৃথিবী
মানুষের তরে গড়ে নেওয়া হবে৷
১
সৌন্দর্যবোধ
সৌন্দর্যবোধ,
সে তো মানুষের অনুভূতি
সেই দৃষ্টি হতে মানুষ
গড়ে থাকে প্রীতি,
সকল প্রাণের মাঝে
সুধা ভরা যে বিরাজে,
জীব জড়, তরুলতায়
তাঁর প্রেমময় উপস্থিতি৷
২
পক্ষী
প্রেমের বার্তা বয়ে নিয়ে যায়
বিশ্বের দরবারে
দুঃসাহসের ডানা মেলে
দেশ হতে দেশান্তরে৷
পক্ষীকুলের নাইকো ছুটি
ছেড়ে যেতে হয় ঘর,
নিয়ম বেঁধে আকাশে ওড়া
ঝাঁকে ঝাঁকে পরস্পর৷
একজন কর্ষক ছিল৷ সে ছিল দারুণ ঔদরিক ৷ কিন্তু তার দু’পায়ে ছিল গোদ৷ তা সে যাই হোক, সেই কর্ষক গেছল বিয়ে করতে৷ গোদ দেখাদেখি জানাজানি হলে বিয়ে কেঁচে যাবে যে! তাই ঔদরিকতার কথা ভেবে তাকে তখন সবসময় ধুতি দিয়ে গোদ ঢ়েকে রাখতে হয়েছে৷ সে কী ৰিড়ম্বনা!
কনের অবস্থাও শোচনীয়, কারণ তিনি কানা৷ তাঁকে সব সময় চোখ ঢ়েকে রাখতে হচ্ছে৷ নইলে জানাজানি হয়ে গেলে বিয়ে ভেস্তে যাবে৷ তিনি বিয়ের আগের মুহূর্ত পর্যন্ত বাংলা পান দিয়ে মুখ ঢ়েকে রাখছিলেন৷ বিয়ের পর তো আরো সুবিধে৷ ঘোমটা দিয়ে মুখ ঢ়েকে রাখার সুযোগ পাওয়া গেছল৷ ঔদরিক ৰড় উস্খুস করছেন, কারণ তার সমস্ত সংবেদনা আজ ঔদরিকতার ভাবনায় প্রেষিত৷
ভালয় ভালয় যখন শুভ কার্য সমাধা হয়ে গেল ৰর তার ইনটেলিজেন্সের মাধ্যমে খোঁজখবর নিলে বিয়ের আর কোনো আনুষ্ঠানিক অঙ্গ বাকী আছে কিনা৷ ইনটেলিজেন্স যখন সবুজ সংকেত দিলেন যে না, আর কোনো ৰাধা–বাগড়া আসবার সম্ভাবনা নেই, ফাঁড়া কেটে গেছে ৰর তখন আশ্বস্ত হলেন৷ খোঁজ নিয়ে জানলেন এইবার প্রচলিত দেশাচার অনুযায়ী ক্ষীর ভোজনে বসতে হবে৷ ৰর তো মহা খুশী৷ এইবার তার ঔদরিকতা পূর্ণ চরিতার্থতার পানে ছুটে চলেছে৷ ৰর এবার ধুতি হাঁটুর ওপর তুলে ক্ষীর ভোজনে সমস্ত মানসিকতাকে চালিয়ে দিয়ে বললেন–
‘‘আর কি বিয়ের ভয়
হাঁটুর কাপড় তুলে
এখন ক্ষীর ভোজনে রয়৷’’
কনে বসেছিলেন একটু দূরে ৰর কী বলছেন শোনার জন্যে উৎকর্ণ হয়ে৷ তিনিও কিছু কম দাঁও মারেননি৷ বিবাহ–বৈতরণী পার হওয়ার জন্যে তাঁকে অনেকক্ষণ ধরে কষ্ট করে পান–ঘোমটায় মুখ ঢ়েকে থাকতে হয়েছিল৷ তিনি এবার মুখের কাপড় সরিয়ে দিয়ে সমবেত জনতাকে উদ্দেশ্য করে বললেন–
‘‘আর কি বিয়ের মানা
মুখের কাপড় খুলে দেখ কনের দু’চোখ কানা’’৷
যাই হোক ‘ঔদরিক’ কাকে বলে ৰুঝে গেলে তো! ঔদরিকতাকে কোনো মতেই প্রশ্রয় দিও না৷
শিব বলেছেন.....
‘‘অতিভোজনম্ রোগমূলমায়ূঃক্ষয়ক৷
তস্মাদতিভোজনং সর্বথা পরিহরেৎ৷’’
এই ঔদরিকতায় কারো কোনো লাভ নেই, আছে কেবল ক্ষতির পাহাড়৷ যারাই ঔদরিক তারাই একটু ৰেশী বয়সে নানান ধরনের উদর ব্যাধিতে ভুগে থাকেন৷
আজকাল কোলকাতায় বে-আইনী বাড়ি নিয়ে প্রায়ই হৈচৈ শোণা যায়৷ বেআইনী বাড়ি নির্মাণ ঠেকাতে কোলকাতা কর্র্পেরেশন হিমশিম খেয়ে যাচ্ছে৷ কিন্তু শুণতে অদ্ভূত লাগলেও এ কথা সত্যি যে, কোলকাতা নগরের পত্তনই হয়েছিল বে-আইনী বাড়ি দিয়ে৷
১৬৯০কে কোলকাতার জন্মকাল হিসাবে ধরা হয়৷ আর জোবচার্নককে বলা হয় কোলকাতার জন্মদাতা৷ তার কারণ জোব চার্নকই নানা প্রতিকূলতার মধ্য দিয়ে ১৬৯০ সালে কোলকাতাকে ইংরেজদের শক্তিকেন্দ্র হিসাবে বেছে নেন৷ তার আগে অবশ্য ১৬৮৬ ও ১৬৮৭ খ্রীষ্টাব্দে চার্নক দুবার কোলকাতায় এসেছিলেন৷ কিন্তু স্থায়ীভাবে বসবাস করেননি৷ ১৬৯০ সালের ২৪শে আগষ্ট থেকেই চার্নক কোলকাতাকে ইংরেজ সাম্রাজ্যের উপনিবেশ ভারতের প্রাণকেন্দ্র হিসাবে গড়ে তুলতে শুরু করেন৷
কোলকাতায় তখন বিশেষ জনবসতি ছিল না৷ চারিদিকে বনজঙ্গল খাল বিল পুকুর জলাভূমি৷ আর ছিল নানা জন্তজানোয়ারের উপদ্রব৷
লোকজন বসবাস না করলে কোন অঞ্চলেরই উন্নতি হয় না৷ তাই ১৬৯০ খ্রীষ্টাব্দে কোলকাতা প্রতিষ্ঠা করে জোব চার্নক এক আদেশ প্রচার করে৷ সেই আদেশে বলা হলো, কোম্পানীর দখলি যেকোন পতিত জমি বা জঙ্গলে গাছগাছড়া কেটে পরিষ্কার করে যে কোন স্থানে যে কেউ নিজের ইচ্ছে মতো ঘরবাড়ি বানিয়ে বসবাস করতে পারবে৷
সেই আদেশ পেয়ে যে যেখানে খুশি ঘরবাড়ি তুলতে শুরু করলো৷ ফলে পরবর্তীকালে দেখা দিল নানান অস্বাস্থ্যকর বিশৃঙ্খলা৷ এলোপাথাড়ি ঘরবাড়ি তৈরির ফলে নগরে বাসিন্দার সংখ্যা বৃদ্ধি পেল বটে কিন্তু নোংরা জল নিকাশির ব্যবস্থা বা পয়ঃপ্রণালীর অভাবে মানুষের জীবন দুর্বিষহ হয়ে ওঠে৷
অর্থাৎ সেই সময় থেকেই আইনমাফিক গৃহনির্মাণ না করায় দেখা দিল এক ভয়াবহ অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ৷ বলা যেতে পারে, সেই সময়কার প্রত্যেকটি বাড়িই ছিল বেআইনি৷
যার ফলে ১৭০৭ সালে মার্চ মাসে কাউন্সিল আর একটি আদেশ জারী করতে বাধ্য হন৷ সেই আদেশটি হলো--- বিশৃংঙ্খলভাবে যেখানে সেখানে আর কাউকে বাড়ি নির্মাণ করতে দেওয়া হবে না৷
অনেকে আবার ফোর্টউইলিয়ামের অনুমতি না নিয়েই বাড়ির চারিদিকে পাঁচিল তুলেছিলেন৷ যা আইন বিরুদ্ধ৷ কেউ বা বাস্তু জমিতে পুকুর কাটিয়ে ছিলেন৷
অবশেষে এ ধরণের বে আইনী ঘরবাড়ি নির্র্মণ বন্ধ করার জন্য কোম্পানী একটি নোটিশ দুর্গাদ্বারে টাঙিয়ে দেন৷
অর্থাৎ কোলকাতা নগরের পত্তনটাই ঘটেছিল বেআইনী বাড়ি দিয়ে৷
১
ওগো ত্রিকালদর্শী
মধুবন বিহারী
বিশ্বভুবন রেখেছো
তুমি মননে ভরী৷
অনন্তলীলায় খেলিছো
বিশ্ব বিধাতা
দয়ার সাগর তুমি
জীবের পরিত্রাতা৷
বাজাও বাঁশি
ওগো মোহন বেশে
নন্দনলোকের দিব্যানন্দে
আছো মিশে৷
২.
দিনের আলোয় ব্যস্ত তারা
তাই তো বুঝি দেয় না ধরা
রাত গগনে তাকায় তারা
কৌতুহলে দীপ্ত নয়ন ভরা
আসতে মানা মোদের পাশে
বন্দি সেকোন অজানা দেশে৷
১
লাল পাখীটা সবুজকে কয়
নেবেন নাকি ঘরভাড়া
আলো বাতাস ভালোই খেলে
রাত্রিতে রয় পাহারা৷
সবুজ বলে অমি রাজি
চাইনা পৃথক কামরা,
একই ঘরে বাকি জীবন
থাকতে পারি আমরা৷
এই ভাবেতে সবুজ-লাল
কাটিয়ে দিল জীবনকাল,
বর্ণভেদ চিন্তাধারায়
মানুষের কি করুন হাল!
২
একাই বানায় নিজের আবাস
সাবাস পক্ষী সাবাস!
কষ্ট করে জোগাড় করে
ডাল, পালা, খড়, ঘাস৷
যদি দুর্যোগ নেমে আসে
ভূমিকম্প বা প্রলয়,
ঝড় বৃষ্টিতে কড়কাপাতে
এক নিরাপদ আশ্রয়!