‘কেণিকা’ শব্দের একটি অর্থ হল শামিয়ানা৷ শব্দটি ফার্সী৷ এ ক্ষেত্রে ৰাঙলার নিজস্ব শব্দ ‘কেণিকা’৷ রোদ ও অল্প বারিপাতের হাত থেকে কোনো উৎসব বা অনুষ্ঠানকে ৰাঁচাবার জন্যে শামিয়ানার ব্যবহার হয়ে থাকে৷ এই ‘শামিয়ানা’ শব্দটি ৰাংলা ভাষায় এসেছে ৰড় জোর ৪০০ বছর৷ ছোটৰেলায় আমি একজন শামিয়ানা–নেতার নাম শুনেছিলুম৷ তোমরা নিশ্চয় জানো, নেতা হবার জন্যে অনেকের সখের প্রাণ গড়ের মাঠ হয়ে থাকে৷ যোগ্যতা নেই, তবু নেতা হতে হবে৷ তাই তারা অনেক সময় অন্যকে দিয়ে ভাষণ লিখিয়ে নিয়ে নিজেরা তা কতকটা মুখস্থ করে জনসভায় ছেড়ে দেয়৷ হাততালির ব্যবস্থা আগে থেকেই করা থাকে৷ এদের জন্যে ‘শামিয়ানা–নেতা’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷
আমার জানা জনৈক শামিয়ানা–নেতা কয়েকৰারই ম্যাট্রিকে ঘায়েল হয়ে শেষ পর্যন্ত নেতা হবার পদটি নিরাপদ মনে করে সেটিকেই ৰেছে নিলেন৷ ৰলা ৰাহুল্য, লিখিত ভাষণ মুখস্থ করে তার ভালই চলছিল৷ কিন্তু যতিচিহ্ণের ত্নব্ভুন্তুব্ধব্ভ্ত্রব্ধ জ্ঞান না থাকায় ভাষণ একটু ওলট–পালট হয়ে যেত৷ তাঁর সহকর্মীরা একদিন তাকে ৰললেন–‘‘দেখিয়ে, আপ্ পাঙ্ক্চুয়েশন শিখ লিজিয়ে৷’’
তিনি ৰললেন–প্রোনাউন ঔর প্রপার নাউন তো মুঝে মালুম হৈ (হ্যায়)৷ বহী চীজ না৷
সহকারীরা ৰললেন–পাঙ্কচুয়েশনভী ঐসা হী হৈ, পর্ থোড়া ইধ্র্–উধ্র্৷ জৈসা ‘বাটার’ ভ্র্ত্রব্ধন্দ্বব্জগ্গ ঔর ৰাটার ত্ব্ব্ভব্ধব্ধন্দ্বব্জগ্গ্–দোনো করীৰ্ করীৰ্ এক হী হৈ, দোনো হী তরল হৈ৷ মগর থোড়া ফারাক্ ভী রহতা হৈ৷
তাঁরা তখন শামিয়ানা–নেতাকে যতিচিহ্ণ ৰোঝালেন৷ ৰললেন–জৰ্ হমলোগ কমা লিখেঙ্গে উস্কে ৰাদ আপ্কো বান্ (ওয়ান) বল্নে কা টাইম ছোড়না পড়েগা৷ জব্ ফুলিষ্টপ্ লিখেঙ্গে তব্ আপ্কো বান, টু, থীরী (ওয়ান, টু, থ্রী) কা টাইম ছোড়না পড়েগা৷
শামিয়ানা–নেতা ৰললেন–হান্ জী, ম্যায় সমঝ্ লিয়া৷
সহকারীরা লিখে দিলেন–প্যারে সজ্জনোঁ, মুঝে আজ কাফী হর্ষ্ হৈ, কি ম্যায় আপলোগোঁকা পাশ্ পঁহুচ গ্যয়া৷ মগর কহ্না যহী হৈ কী শীর্ফ আজ হী কে লিয়ে নহীঁ, বল্কি অনন্তকালকে লিয়ে ম্যায় আপলোগোঁকা পাশ আনা চাহতা হুঁ–, ঔর অনন্তকাল তক্ আপ্লোগোঁকো সাথ রহনা চাহতা হু৷’’ শামিয়ানা–নেতা কমা, ফুলষ্টপ, আর ৰান–টু–থীরীর হিসাৰ ভালভাৰে শিখে নিলেন৷ এবার তিনি শামিয়ানার নীচে দাঁড়িয়ে ভাষণ শুরু করলেন–
‘‘প্যারে সজ্জনোঁ কমা বান মুঝে আজ কাফী হর্ষ্ হৈ কমা কি ম্যায় আজ আপ্লোগোঁকা পাশ্ পঁহুচ্ গয়া ফুলিষ্টপ ৰান, টু, থীরী (ওয়ান, টু, থ্রী) মগর কহ্না যহী হৈ কমা ৰান শীর্ফ্ আজ হী কে লিয়ে নঁহী ৰল্কি অনন্তকালকে লিয়ে ম্যায় আপ্লোগোঁকা পাশ আনা চাহতা হুঁ কমা ঔর অনন্তকাল তক্ আপ্লোগোঁকা সাথ রহনা চাহতা হুঁ ফুলিষ্টপ ৰান টু থীরী৷
শ্রোতা–জনতা সোল্লাসে হাততালি দিয়ে তাঁকে সম্ৰর্দ্ধনা জানালেন৷ নেতা তো হাততালিই চাইছিলেন৷ তাঁর ভাষণটা প্রদত্ত হয়েছিল সম্ভবতঃ অল ইণ্ডিয়া চোর এ্যাণ্ড ডাকু কন্ফারেন্সে (নিখিল ভারত চোর ও ডাকাত সম্মেলন)৷ তাহলে তোমরা ৰুঝলে শামিয়ানা–নেতা কাদের ৰলে৷
* * * *
ওই রকম একজন নেত্রীও ছিলেন৷ তিনি ছিলেন ৰ্রিটিশ ভারতের জনৈক দেশীয় রাজ্যের মহারাণী৷ তাঁর ভাষণ লিখে দিতেন ভারতের জনৈক নামজাদা ৰ্যারিষ্টার৷ একবার এলাহাৰাদে সর্বভারতীয় মহিলা সম্মেলন হয়েছিল৷ ৰ্যারিষ্টার সাহেৰের লেখা ভাষণটি মহারাণী ভালভাৰেই পড়ে নিয়েছিলেন৷ কিন্তু সভাস্থলে দাঁড়িয়ে বিপুল জনসমাবেশ দেখে মহারাণীর মাথা ঘুরে যায়......ভিরমি যাৰার উপক্রম হয়, সমস্ত ভাবনাই তাঁর তখন গুৰলেট হয়ে যায়৷ মহারাণী ছিলেন শামিয়ানা–নেত্রী৷ সুতরাং ভাষণের সুযোগ তিনি তো ছাড়ৰেন না, তা মুখস্থ থাক, বা না থাক ৰলৰেনই৷ তিনি মঞ্চে দাঁড়িয়ে তিন–চার ৰার ৰললেন–ম্যায় ক্যা কহুঁ...ম্যায় ক্যা কহুঁ...ম্যায় ক্যা কহুঁ৷ তারপর রুমাল দিয়ে সযত্নে টিপ ৰাঁচিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে বললেন–ৰড্ডী গরম...ৰড্ডী গরম...ৰড্ডী গরম৷ তারপরে মহারাণীর গলার স্বর আর ৰেরুল না, আগাগোড়া ভাষণটি ভুলে গেলেন আর কি! ‘‘এক গেলাস পানী’’ ৰলে ধপাস করে চেয়ারে ৰসে পড়লেন৷
এৰার ৰ্যারিষ্টার ভদ্রলোক উঠে দাঁড়ালেন৷ তিনি বললেন–আজ যে সকল বিদুষী মহিলা এই সভায় এসে ভাষণ দিয়ে আমাদের কৃতার্থ করলেন তাঁদের অন্যতমা হচ্ছেন আমাদের এই মহারাণী৷ সত্যিই এঁর ভাষণের তুলনা ভারতে কেন, সমগ্র বিশ্বে বিরল৷ এখন আমাদের খতিয়ে দেখার দিন এসেছে যে ভারতের মহিলারা আজ কত দুঃখে আছেন আর তাঁদের সেই দুঃখ দেখে মহারাণীর কোমল প্রাণ আজ কী পরিমাণ বিগলিত হয়েছে কী পরিমাণ দ্রবিত হয়েছে৷ মহারাণী প্রথমেই ৰললেন–‘‘ম্যায় ক্যা কহুঁ ম্যায় ক্যা কহুঁ ম্যায় ক্যা কহুঁ’’ অর্থাৎ ভারতীয় নারীর দুঃখ–দুর্দশার ইতিকথা এত পর্বতপ্রমাণ যে মহারাণী এর কোন্খানটা ৰলৰেন আর কোন্খানটা না ৰলৰেন ভেবে পাচ্ছেন না৷... ভারতীয় নারীর দুঃখের ইতিহাস মহারাণীর কোমল প্রাণকে এমন ওতঃপ্রোতভাবে গলিয়ে দিয়েছে যে মহারাণী ভেবে পাচ্ছেন না যে কোন্খানটি থেকে তাঁর বর্ণনা শুরু করৰেন আর কোথায় বা হৰে তার পরিসমাপ্তি৷ তাই মহারাণীর দরদী মন ৰলছে, ‘‘ম্যায় ক্যা কহুঁ...ম্যায় ক্যা কহুঁ...ম্যায় ক্যা কহুঁ’’৷ উঃ ভাবতেই পারছি না মহারাণীর কী অপূর্ব মমতা...মহীয়সী নারীর কী বিরাট হূদয়বত্তা! তারপর মহারাণী বললেন...মহারাণী কী ৰললেন...ৰললেন–ৰড্ডী গরম...ৰড্ডী গরম...ৰড্ডী গরম৷ অর্থাৎ অত্যাচারের নাগপাশে আজ ভারতীয় নারী পিষ্ট৷ শুধু যে রান্নাঘরের আগুনের উত্তাপেই তারা জ্বলেপুড়ে মরে যাচ্ছে তাইই নয়, অত্যাচারের নাগপাশের উষ্ণতাতেও তাদের দম ৰন্ধ হবার উপক্রম৷ সেই রান্নাঘরের উত্তাপ, সেই নাগপাশের দাবদাহ মহারাণীর কোমল মনকে স্পর্শ করেছে৷ মহারাণীর ওষ্ঠের মধুর হাসি মরুভূমির মারব জ্বালায় হারিয়ে গেছে৷ মহারাণী তাঁর অন্তরের বিদগ্ধ অনুভূতি, অন্তর্দৃষ্টিসম্পন্ন কবির মাধুর্য্যময় মুন্সীয়ানায় ছোট্ট কয়েকটি শব্দে বললেন–‘‘ৰড্ডী গরম...ৰড্ডী গরম...ৰড্ডী গরম’’ অর্থাৎ এ অত্যাচারের অনল জ্বালা আমি সহ্য করতে পারছি না......এ উষ্ণতার ক্লেশ আমার কাছে অসহনীয়৷ শ্রোতা–জনতা করধ্বনি দিলেন৷ ৰ্যারিষ্টার সাহেৰ শামিয়ানা–নেত্রীকে অদ্রিতুঙ্গে উঠিয়ে দিলেন৷
* * * *
তোমরা একজন শামিয়ানা–নেতার পরিচয় পেলে–একজন নেত্রীর পরিচয়ও পেলে৷ কেমন লাগল!