মোসাহেৰ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

কথায় বলা হয়, খোসামদে পাহাড়ও গলে মাখন হয়ে যায়৷ খোসামদে দুর্বাসা মুনিও গলে যান৷ সেই খোসামদের জন্যে কাণ্ডশব্দটি ব্যবহার করা হয়৷ খোসামদশব্দটি এসেছে ফার্সী খুসামদথেকে৷ অনেকে খুসামদ’–কে মার্জিত রূপ দেবার জন্যে তোষামোদৰলে থাকেন৷ না, ‘তোষামোদৰলে কোনো শব্দ নেই৷ শাস্ত্রে ৰলেছে, খোসামদকারী প্রতি মুহূর্তেই প্রতি পদবিক্ষেপেই অধোগতি হয়, কারণ সে প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদবিক্ষেপে কেবল স্বার্থচেতনায় অস্বাভাবিক কাজ করে থাকে৷ আগেকার দিনে রাজাদের বা অবস্থাপন্ন লোকেদের বেতনভুক খোসামদকারী থাকত৷ তাদের ৰলা হত মোসাহেৰযারা সৰ সময় নিজেদের কর্ত্তাকে  সাহেৰ’, ‘সাহেৰৰলে তুষ্ট রাখবার চেষ্টা করে৷ আরবী ব্যাকরণ অনুযায়ী ওই  সাহিৰশব্দটির আদিতে  মুসংযুক্ত করে তাদের ৰলা হয় মুসাহিৰ বা মোসাহেৰ৷ এইভাবে বিভিন্ন গুণের সঙ্গে ব্যষ্টির সংযোগ সাধন করে ক্রিয়া বা বিশেষ্যের আদিতে মুযোগ করে আরক্ষীতে বিভিন্ন শব্দ সৃষ্ট হয়ে থাকে৷ যেমন মুয়াল্লিন, মুয়াজ্জিন (যিনি আজান দেন), মুজাহিদ (যিনি জেহাদ বা ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করেন), মুহাজির (যিনি অন্য দেশ থেকে এসে হাজির হয়েছেন অর্থাৎ রেফিউজী), মুসাফির (যিনি সফর বা ভ্রমণ করে চলেছেন) প্রভৃতি৷ সেই যে মোসাহেক্ষের একটা গল্প আছে না

রাজামশায়ের একজন মোসাহেৰ চাই৷ তিনি খৰরের কাগজে যথাক্ষিধি কর্মখালির বিজ্ঞাপন দিলেন৷ জানিয়েও দিলেন, ‘‘আবেদনকারীকে দরখাস্তের সঙ্গে ৫০০ টাকার ক্রশ চেক দিতে হবে যা প্রত্যর্পণযোগ্য নহে৷ হাজারে হাজারে দরখাস্ত এল৷ লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষা চলছে৷ রাজামশায় বসে রয়েছেন৷ তাঁর সিংহাসনের বাঁ হাতলটা ধরে ঘাড় বেঁকিয়ে মন্ত্রীমশায় একটু কেতরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ এক একজন কর্মপ্রার্থী আসছেন ইন্টারভিউ (সংজ্ঞপ্রতীতি) দিতে৷

রাজামশায় প্রথম জনকে জিজ্ঞেস করলেন–‘‘তুমি কি মোসাহেবের কাজ পারবে?’’

সে ৰললে–‘‘নিশ্চয় পারব, জাঁহাপনা৷’’

রাজামশায় তার নাম খারিজ করে দিলেন৷ দ্বিতীয় কর্মপ্রার্থী এলেনএকজন চালাকচতুর যুবক.......চোখে মুখে খই ফুটছে৷

রাজামশায় তাকে ৰললেন–‘‘মোসাহেবের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরু দায়িত্ব তুমি কি এ কাজ পারবে?’’

কর্মপ্রার্থী ৰললে–‘‘একবার চান্স দিয়ে দেখুন শাহানশাহ্, আমি নিশ্চয় পারৰ৷’’ রাজা তাকেও নাপসীন্দ*(*শব্দটা ফার্সী৷ তাই নাপছন্দনা ৰলে নাপসীন্দৰলাই বেশী ভাল৷ তবে এর ক্ষাংলা রূপ হিসেবে নাপছন্দও চলতে পারে৷) করলেন৷ ৰলা বাহুল্য, এরও চাকরী হল না৷

পরের কর্মপ্রার্থীটি খুৰই শিক্ষিত কিন্তু ইন্টারভিউ কেমন হবে তাই ভেবে সে পৌষের শীতেও ঘেমে গেছল........রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সে রাজার সামনে এসে দাঁড়াল৷

রাজামশায় তাকে শুধোলেন–‘‘মোসাহেবের এই মহান কর্ত্তব্যে তুমি কি সমর্থ?’’

উৎসাহের অগ্ণিতে প্রদীপ্ত হয়ে কর্মপ্রার্থীটি ৰললে–‘‘নিশ্চয়ই পারৰ৷ একশবার পারৰ, স্যার......কথা দিচ্ছি স্যার....কেবল একবার একটা চান্স দিন স্যার....ন্দব্ভব্দব্ধ  ন্তুড়্ত্রুন্তুন্দ্ব হ্মপ্তন্দ্ব্ত্রব্দন্দ্ব৷’’

রাজামশায় তাকেও বাতিল করে দিলেন৷ এবার যে ছেলেটি এল তার চোখেমুখে বুদ্ধির ঝলক ছিল কিন্তু প্রজ্ঞার গভীরতা ছিল না৷

রাজামশায় তাকে শুধোলেন–‘‘খোসামদের কাজটা তুমি কি পারবে?’’

সে বললে–‘‘সত্যিই রাজাসাহেৰ, খোসামদের কাজটা আমি কি পারৰ’’

রাজামশায় ৰললেন–‘‘হ্যাঁ, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারো৷’’

সে ৰললে–‘‘হঁ্যাঁ, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি৷’’

রাজামশায় আড়চোখে মন্ত্রীর দিকে চাইলেন৷ মন্ত্রী ৰললেন–‘‘মহারাজ, ইনিই সর্ক্ষগুণান্বিত, এঁকেই ৰহাল করুন৷ আজকের দিনে ইনিই বিশ্বমানবতার প্রতিভূ......জয়মাল্য পাবার ইনিই অধিকারী৷’’

রাজামশায় প্রার্থীকে ৰললেন–‘‘বুঝলে হে, আজ থেকে তোমার চাকরী হল৷’’

তাহলে ক্ষুঝলে কাণ্ডৰলতে এই খোসামদকে ক্ষোঝায়৷ সংসৃক্তে কিন্তু মোসাহেৰকে ৰলা হয় বিদূষকমোসাহেৰঅর্থে সীমিত ক্ষেত্রে সংসৃক্তে ভাণ্ডশব্দটিও চলত যার থেকে ক্ষাংলার ভাঁড়শব্দটি এসেছে (যেমনগোপাল ভাঁড়)৷ তবে ভাঁড়ৰলতে ক্লাউনকেও ক্ষোঝায়৷ ‘‘আর ভাঁড়ামিকরতে হবে না’’–এমন কথা যখন আমরা বলে থাকি তখন কিন্তু সেটা ভাণ্ডবা ভাঁড়থেকে আসছে না, আসছে ভণ্ডথেকে অর্থাৎ ভণ্ডামি অর্থে ভাঁড়ামিশব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷