ৰাংলা ভাষায় ৰহুল–প্রচলিত ‘গরজ’ শব্দটি আসলে ফারসী মূলজাত৷ শব্দটি ‘গরজ’ নয়–‘গর্জ্’৷ তোমরা ৰাংলা উচ্চারণে ঢ়েলে একে ‘গরজ’ করে নিয়েছ, যেমন তৰলা ৰাজাতে গিয়ে দ্রুত লয়কে ‘জলদ’ করে দিয়েছে৷ শব্দটি ‘জলদ’ নয়–‘জল্দ্’৷ উর্দু ফারসীতে প্রচলিত ‘খুদগর্জী’ শব্দের সঙ্গে তোমরা কেউ কেউ হয়তো পরিচিতও৷ শব্দটি ‘খুদগরজী’ নয়–‘খুদগর্জী’৷
‘গরজ’ অশুদ্ধ....‘গর্জ্’ শুদ্ধ, কিন্তু তাই ৰলে ‘ৰরজ’ অশুদ্ধ–‘ৰরোজ’ শুদ্ধ এমনটা ভেবে বসো না৷ তবে ৰানানে ‘ৰরোজ’ না লিখে ‘ৰরজ’ লেখাই সঙ্গত, কারণ শব্দটির উদ্ভব হয়েছে ৰরূজনূড এই সূত্র থেকে৷ এ ব্যাপারে সেই মজার পৌরাণিক গল্পটা জান তো৷
পৌরাণিক গল্পে আছে, স্বর্গে নাকি সেকালে ঘৃতাচি নামে এক অপ্সরা ছিলেন৷ তিনি একলা থাকতেন না......সব সময় দোকলা থাকতেন–সঙ্গে থাকতেন তাঁর বোন ঘৃতকৌষিকী৷ অবিশ্যি কারো কারো মতে ঘৃতাচি/ ঘৃতকৌষিকী একজনেরই নাম৷ যেমন কারো বাড়ীর নাম খাঁদুরাণী, তিনিই আৰার সমাজে এসে হয়ে যান নামকরা চিত্রতারকা মিস্ আলেয়া আটা৷
যাই হোক্, সেই ঘৃতাচি নাকি একবার উড়তে উড়তে আমাদের হুগলী জেলার কোথাও কোন একটি হেলিপ্যাডে নেৰে পড়েছিলেন৷ সেখানে ছিল পেল্লায় ৰড় একটা হ্রদ বা ঝিল৷ লোকে শুভক্ষণে মন্ত্রীকে দিয়ে ফিতে কাটিয়ে হ্রদটির ভাল নাম রেখেছিল ঘৃতাচি হ্রদ–ডাক নাম খন্যানের জলা৷ স্থানটি নামাল৷ চারিপাশের যত জল সেই হ্রদে এসে পড়ত৷ পরবর্ত্তীকালে চারিপাশের বালি–মাটি, দামোদরের ৰালি–পলি পড়ে হ্রদটা কিছুটা ভরাট হয়ে গেছল৷ তবুও চারিপাশের জমি নিচু থেকেই যায়৷ এর ফলে চারিপাশের অঞ্চল থেকে বর্ষার জল এসে সেখানে জমে, যেমন জমে মেদিনীপুর জেলার ময়না থানায়, হুগলী জেলার ডানকুনির জলায়, হাওড়া জেলার কেন্দুয়ার (কেন্দোর) মাঠে৷ ধান এখানে মারা পড়ে না৷ এটি খন্যানের জলা নামে পরিচিত৷ সেকালে এই জলা থেকে বেরিয়ে এসেছিল একটি নদী–নামও অপ্সরার নামে রাখা হল ঘৃতাচি নদী......বর্ত্তমান নাম ঘিয়া নদী৷
রাঢ়ের মিষ্টি ভাত খেয়ে ঘৃতাচি অপ্সরার খুব ভাল লেগে গেল৷ সে ভাৰলে এৰার রাঢ়ের মাটিতে আঁচল বিছিয়ে একটু গড়িয়ে নেওয়া যাক্৷ ঘৃতাচির মনে পড়ল স্বর্গে সে ভাত খেয়ে পরে একটি পান খায় কিন্তু মর্ত্ত্যে পান কোত্থেকে পাৰে৷ কিন্তু ভাত খাবার পর পান না খেলে যে থাকাই যায় না৷ ৰর্দ্ধমান জেলার জনৈক অকুলন ৰিৰিকে ৰলতে শুনেছিলুম, ‘‘ভাত বিহনে যেমন তেমন/পান বিহনে মরি’’ অর্থাৎ স্বামীর ঘরে যদি ভাত না–ও জুটল, পানটি আমার চাই–ই৷ ঘৃতাচি অপ্সরা সেই সুরে সুর মিলিয়ে মনে মনে ৰিড়ৰিড় করে ৰলতে লাগল–
‘‘শোলক মোলক বাঁশের গজা
ভাতটি খেলে পেটটি সোজা
পানটি পেলে আরও মজা
পেট ৰলে মাগো
আমায় নিয়ে শো’ গো’’
যেমনি ভাবা তেমনি কাজ...দেবতা–প্সরাদের ব্যাপার কিনা রাঢ়ের ওপর ঘৃতাচি ৰর বর্ষণ করলেন৷ স্বর্গ থেকে নেৰে এল একটি পানের ‘ৰরজ’ যার ছত্রছায়ায় গজিয়ে উঠেছে মিঠে পান, মগহী পান, ৰাংলা পান, ঢ়োলক পান, ছাঁচি পান, গাছ পান...আরও কত কী ৰরজটি এসে ঠিক কোন জায়গায় পড়েছিল ৰলা মুশকিল৷ তবে এ ৰ্যাপারে পানচাষীদের মধ্যে মতভেদ আছে৷ কেউ ৰলে ওটি পড়েছিল রাঢ়ের তমলুকের কাছে, কেউ ৰলে মেদিনীপুরের মেচাদায়, কেউ ৰলে হাওড়া জেলার নুন্ঠিয়া–বাঁটুলে, কেউ ৰলে ২৪ পরগণা জেলার বারুইপুরে, কেউ বা ৰলে শ্রীরামপুর–চাতরার কাছে বারুইপাড়ায়, কেউ বা ৰলে হাওড়া–ৰর্দ্ধমান কর্ড–লাইনের বারুইপাড়ায়, কেউ বা ৰলে ৰেগমপুরে, আবার কারো মতে নদে’ জেলার চাকদা থানার শিমুর–আলিতে৷ যেখানেই পড়ে থাকুক না কেন, সেখানেই এক একটি পানের ৰরজ গজিয়ে উঠল৷ হ্যাঁ, ঘৃতাচি (ঘৃতাচি/ঘৃতাচী দুই ৰানানই চলৰে৷)
অপ্সরার ৰর থেকে যার জন্ম সে ‘ৰরজ’ – ‘ৰরোজ নয়’৷
এখন ৰুঝছ ‘ৰরজ’–এর মত শব্দ নয় ‘গরজ’–আসলে তা ‘গজ্’৷
(শব্দ চয়ণিকা ২০/৬০)