পাঠান–মোগল যুগে আগ্রা প্রদেশ ও অযোধ্যা প্রদেশের মিলিত নাম ছিল হিন্দোস্তান বা হিন্দোস্তাঁ (প্রসঙ্গতঃ বলে রাখি যে ‘স্তান’ বা ‘স্তাঁ’ শব্দটি ফার্সী যার সংস্কৃত প্রতিশব্দ হচ্ছে ‘স্থান’৷ উর্দ্দুতে এই ফার্সী রীতি অনুসরণ করা হয়৷
‘‘সারে জাঁহাঁসে আচ্ছা হিন্দোস্তাঁ হমারা
হম বুলবুলেঁ হেঁ ইসকী যহ্ গুলিস্তাঁ হমারা’’
পাঠান যুগে উত্তর ভারতে তিনটি সুবা ছিল–পঞ্জাব, হিন্দোস্তাঁ ও বঙ্গাল (বাঙলা)৷ আকবরের সময় যখন সুবার সংখ্যা বাড়ানো হয় তখন হিন্দোস্তাঁ সুবার দক্ষিণ, দক্ষিণ–পশ্চিমাংশ ও দক্ষিণ–পূর্বাংশ নিয়ে গঠিত হয় আগ্রা সুবা ও উত্তর–পূর্বাংশ নিয়ে গঠিত হয় অবধ সুবা৷ এখনও তাই পঞ্জাব ও বাঙলার লোকেরা উত্তর প্রদেশের লোকেদের বলে হিন্দুস্তানী৷ অনেকে মনে করেন সারা ভারতটাই যখন হিন্দুস্তান তখন কেবল উত্তরপ্রদেশের লোকেদের কেন শুধু হিন্দুস্তানী বলা হবে৷ যাঁরা উত্তরপ্রদেশের লোকেদের হিন্দুস্তানী বলেন তাঁরা মোটেই ভুল করেন না কারণ হিন্দুস্তান বলতে সমগ্র ভারতকে বোঝায় না৷ তবে উর্দ্দু কবিতায় বা কথ্য ভাষায় ‘ভারত’ বলতে তাঁরা ‘হিন্দুস্তান’ শব্দটি ব্যবহার করেন৷ জিনিসটা কোন ঐতিহাসিক তথ্য নয়৷ মনে রাখা দরকার ফার্সী ভাষায় ভারতের আসল নাম ‘হিন্দোস্তান’ নয়, আসল নাম ‘হিন্দ’৷
ইংরেজরা এদেশে আসার পরে যখন আগ্রা ও অবধ প্রদেশ দখল করেন তখন তাঁরা এই দুই প্রদেশকে মিলিয়ে যে নতুন প্রদেশটি গঠন করেন তার নাম রাখেন আগ্রা–বধ সংযুক্ত প্রদেশ (United provinces of Agra and Oudh), সংক্ষেপে হুত্ন কালক্রমে ‘ইউ পি’ শব্দটা সাধারণের মধ্যে বেশ ছড়িয়ে যায়৷ তাই স্বাধীনতার পরে এই ‘ইউ পি‘ নামটাই বলবৎ রাখার জন্যে প্রদেশটির নতুন নাম রাখা হয় উত্তরপ্রদেশ৷ এও সংক্ষেপে ‘ইউ–পি’৷
পৃথিবীর সব ধ্বনিরই অর্থবহতা আছে–তা সে অর্থ আমাদের জানা থাক বা না থাক৷ এই অর্থবহতার সঙ্গে জড়িয়ে রয়েছে স্থানীয় ভাষার ধ্বনিবিজ্ঞান ও উচ্চারণ–স্বাতন্ত্র্য৷ অনেক সময় আমরা অর্থবহতার কথা বেমালুম ভুলে যাই ও স্থানীয় উচ্চারণ স্বাতন্ত্র্যের কথাও ভুলে থাকার চেষ্টা করি৷ এক্ষেত্রে আমরা যে ভুল করে থাকি সেই ভুল কিয়দংশ ক্ষম্য হলেও সর্বাংশে বা সর্বক্ষেত্রে ক্ষম্য নয়৷