প্রাচীনকালে মানুষ গান গেয়েছিল বিহঙ্গের কাকলির অনুরণনে৷ মানুষের জন্মেতিহাসের প্রথম উষাতেই অর্থাৎ যে অরুণ রাগে মানুষ এই পৃথিবীতে এসেছিল সেই অরুণ রাগেই এসেছিল গানের রাগ........না–জানা সুরসপ্তকের সিঞ্জিনের মঞ্জুষিকা৷ সেই নাম–না–জানা রাগের সঙ্গে তাল মেশাবার জন্যে মানুষ বস্তুতে বস্তুতে ঠোকাঠুকি করত....জন্ম নিল সংঘাত–সঞ্জাত বাদ্যযন্ত্র৷ মৃদঙ্গ, তবলা, খোল, ঘটম্–এদের আদি রূপ এসেছিল৷ তারপর মানুষ এই ঠোকাঠুকি থেকে উদ্ভুত বাদ্যযন্ত্র থেকে নিজেদের মন ভরাবার জন্যে তৈরী করে রৈক্তিক সম্পদ৷ শূন্যতাকে আচ্ছাদন দিল চর্মের বা অন্য কোন মৃদু আবেষ্টনের.....এল বিভিন্ন ধরণের তালসৃষ্টিকারী বাদ্যযন্ত্র৷ মানুষের মন এতেও ভরল না৷ সে চাইল এমন বাদ্যযন্ত্র যা গানের সঙ্গে সঙ্গে মধুরিমা নিষিক্ত না–জানা ভাষায় কণ্ঠে কণ্ঠ মিলিয়ে চলবে........সুরে সুর মিলিয়ে সহযোগিতা করে চলবে........শুরু হ’ল তারযন্ত্র৷ বিজ্ঞানসম্মতভাবে তারযন্ত্রের উদ্ভব করেছিলেন শিব ও পার্বতী৷ শিবের তাণ্ডব নৃত্যের আদ্যক্ষর ‘তা’ ও পার্বতীর ‘ললিত’ নৃত্যের আদ্যক্ষর ‘ল’ নিয়ে তৈরী হয়েছিল তাল–বিজ্ঞান৷ তারযন্ত্রের নিক্কনের সঙ্গে সুরসপ্তকের সামরস্যে গড়ে উঠেছিল শিবের প্রথম বীণ বা বীণা–রুদ্রবীণা৷ এই বীণাতেই ঘাট বেঁধে নিয়ে তৈরী হয়েছিল বিভিন্ন ধরণের তারযন্ত্র৷ এই বীণাকেই প্রাকৃত রূপে রেখে দিয়ে তৈরী হয়েছিল একতারা৷ এতেই তারের সংখ্যা বাড়িয়ে অনুরণনের প্রস্তুতি ঘটিয়ে সংঘাত তৈরীতে হয়েছিল বেহালা৷ বহির্ভারত থেকে ভারতে এসেছে বেহালা যার জন্মস্থান ইতালি (আসল নাম ‘ইতালিয়া’)৷ বহির্ভারত থেকে এসেছে সিতার যার জন্মস্থান আর্যন্যব্রজ বা ইরাণ বা পারস্য৷ ‘সিতার’ শব্দের অর্থ তিন তারের সমাহার৷ তারযন্ত্রের মধ্যে রকমারি রয়েছে....রকমফের রয়েছে কিন্তু সমস্ত তারযন্ত্রের প্রাণীনতা একই অর্থাৎ তার–নিসৃত ধ্বনিতে রণনে অনুরণন আনিয়ে সুরসপ্তকের মাধুর্য্য শ্রবণে ঢেলে দেওয়া৷ (শব্দ চয়নিকা, ৮/১২)
Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার