প্রাউটের স্বয়ংসম্পূর্ণ সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রসঙ্গে

লেখক
পত্রিকা প্রিতিনিধি

সংবাদে প্রকাশ ভারতে ১৩কোটিরও বেশি মানুষ দারিদ্রসীমার নীচে বাস করছে৷ দারিদ্রসীমার ওপরে যাদের ধরা হয় সেখানেও ফাঁকি আছে৷ পুঁজিবাদ নিয়ন্ত্রিত কেন্দ্রীত অর্থনীতিতে সমাজে আর্থিক বৈষম্য থাকবেই৷ কিন্তু ভারতে সেই বৈষম্য আসমান জমিন ফারাক৷ তাই দারিদ্রসীমার ওপরের মানুষও খুব সুখে নেই৷ আর্থিক বৈষম্য দুর করতে হলে বর্তমান কেন্দ্রীত অর্থনীতির খোলনলচে পাল্টে সমাজের সার্বিক বিকাশের লক্ষ্যে আর্থিক পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে৷

প্রাউটের মতে কোন বড় দেশে সমগ্র এলাকার সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনার জন্যে প্রাথমিক পর্যায়ে ওই দেশকে প্রয়োজনে একাধিক সামাজিক–অর্থনৈতিক (socio -economic unit) বিভক্ত করা উচিত ও প্রতিটি অঞ্চলের জনগোষ্ঠীকে তাদের নিজ নিজ এলাকার সার্বিক উন্নয়নের জন্যে পৃথক পৃথক ভাবে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের সুযোগ প্রদান করা বাঞ্ছনীয়৷ যে সমস্ত বিষয়গুলির ভিত্তিতে এই বিভাজন করা হবে তা হ’ল–

          ১)       একই ধরণের অর্থনৈতিক সম্পদ ও সমস্যা৷ তার সঙ্গে সঙ্গে অবশ্যই স্বয়ংসম্পূর্ণ অর্থনৈতিক অঞ্চল হওয়ার সম্ভাবনা (potentiality)

          ২)       সম ভাষা, ঐতিহ্য, সাহিত্য, সামাজিক প্রথা প্রভৃতির ওপর গড়ে ওঠা একই সেণ্টিমেণ্টাল লিগ্যাসি৷

          ৩)      একই জাতিগত বৈশিষ্ট্য৷

          ৪)      একই ধরণের ভৌগোলিক বৈশিষ্ট্য প্রভৃতি৷

এই নীতি অনুসারে ভারতবর্ষের সমগ্র এলাকার তথা সকল জনগোষ্ঠীর সার্বিক উন্নয়নের দিকে তাকিয়ে একে মোটামুটি ৪৪টি সামাজিক–অর্থনৈতিক অঞ্চলে (প্রাউট দর্শনে এক সংক্ষেপে ‘সমাজ’ও বলা হয়) বিভক্ত করে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা করা উচিত৷ যেমন সমগ্র বাংলা তথা বাংলা ভাষাভাষী এলাকা নিয়ে গড়ে তোলা উচিত একটি সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল৷ প্রাউটের পরিকল্পনা নীতি অনুসারে ভারতের অন্যান্য সামাজিক অর্থনৈতিক অঞ্চল তথা সমাজগুলি হবে ঃ–উৎকল, কোশল, লেপ্চা, ভুটিয়া, বোড়ো, অসমিয়া, অঙ্গিকা, মিথিলা, মগহী, ভোজপুরী, নাগপুরিয়া, অবধি, ব্রজ, হরিয়ানবি, গাড়োয়ালী, কুমায়ুন, পঞ্জাবী, সিরমৌরী, পাহাড়ী, কিন্নৌরী, ডোগ্রী, কশ্মীরী, লাদাকী, মাড়োয়ারী, হদৌতি, মেওয়ারী, কচ্ছী, কাথিয়াড়, গুর্জর, বিদর্ভ, সহ্যাদ্রি, মালোয়া, বুন্দেলখণ্ড, বাঘেলী, ছত্রিশগড়ী, তেলেঙ্গানা, সরকার, রয়ালসীমা, তামিল, মালায়লম্, কান্নাড়া ও টুলু সমাজ ইত্যাদি৷

প্রাউট যে ভারতে ৪৪টি সমাজ রচনার কথা বলছে, তার মানে এই নয় যে ৪৪টি পৃথক রাজ্য গড়তে হবে৷ এখানে পৃথক পৃথক রাজ্য তৈরীর কথা বলা হচ্ছে না, মূলতঃ অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলার কথা বলা হচ্ছে৷ একই রাজ্যের মধ্যে একাধিক অর্থনৈতিক অঞ্চল থাকতে কোন বাধা নেই৷ তবে সেক্ষেত্রে প্রতিটি অর্থনৈতিক অঞ্চলকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করবার পূর্ণ সুযোগ দিতে হবে৷ তাদের ন্যায্য দাবী তথা অধিকার থেকে বঞ্চিত করা চলবে না৷ এই অঞ্চলের জন্যে পৃথক বাজেটও মেনে নিতে হবে৷