প্রগতিশীল সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনাই সমাজের সামনে একমাত্র পথ

লেখক
প্রবীর সরকার

সব বিষয়ে গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে৷ বিশেষ করে ভারতে লোকসংখ্যার চাপ আছে৷ দীর্ঘ ৭৭ বছরে আমরা কর্ম সংস্থান বাড়াতে পারিনি৷ শুধু তাই নয় নানা কারণে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে যাওয়াতে মানুষ বেকার হয়ে পড়েছে৷ তাই যেটা সবচেয়ে বড় সমস্যা তা হ’ল কোন পরিবারে যদি কর্মক্ষম ব্যষ্টির অধিকাংশ বেকার থাকে তাহলে সে পরিবারের নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের ক্রয়ক্ষমতা বাড়তে পারে না৷ আর জিনিসের দাম যাই হোক না কেন যদি পরিবারের সবাই কাজ পায় ও রোজগার করে তা হলে অবশ্যই পরিবারের ক্রয় ক্ষমতা বাড়বে৷ আজ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিস যেটা না হলে চলে না সেই প্রয়োজনীয় জিনিসগুলির যথোপযুক্ত উৎপাদন ও দেশের মধ্যে ন্যায়সঙ্গত বন্টনের ব্যবস্থা থাকলে তবেই তো বোঝা যাবে দেশ উন্নতির পথে এগুচ্ছে৷ দেখা যাচ্ছে বিজ্ঞান সম্মতভাবে কৃষিপণ্য উৎপাদনের জন্যে যা যা প্রয়োজন এদেশ অদ্যাবধি তা করে উঠতে পারে নি৷ আমাদের প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি তথা বিশ্ববিখ্যাত বৈজ্ঞানিক ডঃ কালাম বলেছিলেন যে ভারতকে মোট ৫০০ মিলিয়ন টন খাদ্য উৎপাদনে নজর দিতে হবে৷ তাহলে প্রথমে ভারতে কৃষিতে উপযুক্ত সেচের ব্যবস্থা, উন্নতবীজ, সার, অকৃষি জমিকে কৃষি উপযোগী করে গড়ে তোলা দরকার ও উন্নত বৈজ্ঞানিক প্রথায় খাদ্য উৎপাদন করা দরকার৷ উৎপাদিত ফসলের উপযুক্ত দাম নির্দ্ধারণ করা দরকার, যাতে কর্ষক আর্থিক দিক থেকে বঞ্চিত ও শোষিত না হয়৷ কিন্তু সেই প্রাচীন কাল থেকে কর্ষক কিন্তু ফোড়ে, মধ্যসত্ত্বভোগীদের দ্বারা শোষিত হচ্ছে৷ দীর্ঘ ৭৭ বছরের মধ্যে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার কৃষি পণ্যের ন্যায্য মূল্যের নির্ধারণ ব্যাপারে অনেক কিছুই করতে পারতেন৷ কিন্তু সময় গড়িয়ে গেছে কিছুই করা হয়নি৷ তাছাড়া চাষের জমি অনেক ক্ষেত্রে অন্যভাবে ব্যবহার করার জন্যে অনেক কমে গেছে৷ এটা যেমন একটা দিক অন্যদিক হ’ল বর্তমান প্রজন্মের ছেলেমেয়েদের মানসিকতাও পরিবর্তিত হয়েছে নানা কারণে৷ অনেকেই চাষে খাটতে চায় না যেহেতু এদেশে চাষের নাকি ভবিষ্যৎ নেই৷ তাদের কথা হ’ল খাটুনিটাই সার হয় বিশেষ করে ক্ষুদ্র চাষীদের জীবন ও জীবিকার মান উন্নতি করাটা আকাশ কুসুম চিন্তা! এখানেই সরকারকে আন্তরিকতার সঙ্গে কাজ করতে হবে৷ ছোট ছোট চাষী টুকরো টুকরো জমি চাষ করে লাভ পেতে পারে না৷ সেখানে ট্রাক্টরের সাহায্যে বিজ্ঞান সম্মতভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়ে চাষীদের চাষ করতে হবে৷ যাকে আমরা বলতে পারি সমবায় পদ্ধতিতে চাষ৷ যার যতোটুকু জমি সেইভাবে সে ফসল ভোগ করবে ও মোট খরচ জমির পরিমাণ হিসাবে দিতে হবে৷ সেই ফসলকে বিজ্ঞান সম্মতভাবে গোলাজাত করে রাখতে হবে৷ প্রয়োজন হিসাবে সেই ফসল বিক্রি করে দাম পাবে গায়েগতরে খাটা চাষী ও জমির মালিক৷ সমাজতান্ত্রিক চিন্তাভাবনাকে অগ্রাধিকার দিতে হবে৷ মধ্যসত্ত্বভোগী বা ফোড়ের হাত থেকে চাষী ও কর্ষককে বাঁচাতে হবে৷

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌল্লা বয়সে অল্প হয়েও বুঝেছিলেন তাঁর মাতামহ আলিবর্দ্দীর উপদেশ৷–ইন্তেকালের আগে তিনি নবাবকে সাবধান করে দেন যেন ইংরেজদের সে বিশ্বাস না করে৷ সিরাজ কোন দিনই তাই ইষ্ট ইন্ডিয়া কোম্পানীর কর্মচারীদের বিশ্বাস করেন নি৷ তিনি আক্রমণ করেন কোম্পানীকে কিন্তু এদেশের বেইমানদের তো অভাব ছিল না৷ মীর্জাফরদের জন্যে তাঁকে পলাশীর যুদ্ধে লর্ড ক্লাইভের কাছে হার স্বীকার করতে হয়৷ তাই কোন অবস্থাতেই খুচরো ব্যবসায়ে বিদেশী পুঁজির (ফরেন ডাইরেক্ট ইন্ভেস্টমেন্ট ঃ এফডিআই) বিনিয়োগের যেন সুযোগ না দেওয়া হয়৷ অতীতে সোনার বাংলাকে তথা ভারতবর্ষকে ওই বণিকের দল ধবংস করে ও এদেশে বিদেশী রাজশক্তির শাসন কায়েম করে৷ এফডিআই–এর ছদ্মবেশে সাম্রাজ্যবাদীরা এদেশে অনুপ্রবেশ করতে চলেছে৷ আমরা আজ যদি না বুঝি আমাদের প্রজন্ম আগামী দিনে ভিখারীতে পরিণত হবেই হবে৷

আজকের দুর্দ্দিনে সরকারকে দেশের কালোটাকা উদ্ধার করতে হবে ও সেই অর্থে সরকারকে দেশের অর্থনৈতিক সমস্যার সমাধানের পথ নির্দ্দেশনা দিতে হবে৷ সত্যই তো গাছে টাকা ফলে না৷ তবে আর্থিক কেলেঙ্কারীতে যদি দেশ বার বার জড়িয়ে পড়ে আর তার হাত থেকে বাঁচতে ওই বিপজ্জনক বিদেশী অক্টোপাশদের আমন্ত্রণ করে আনা হয় তাহলে দেশ অবশ্যই অচিরে রক্তশূন্য হয়ে দেউলিয়া হয়ে যাবে৷ দেশকে বাঁচাতে হলে কৃষির ব্যাপক উন্নতি করার দিকে নজর দিতে হবে আর ব্যাপকভাবে কৃষি ভিত্তিক শিল্প গড়ে তুলতে হবে৷ আপামর জনসাধারণকে খাদ্য যোগান দেওয়ার পর বহির্দেশে রপ্তানি করা যাবে৷ এ দেশের উৎপাদিত পণ্য প্রথমে দেশের মানুষ ভোগ করবে আর উদ্বৃত্ত যা থাকবে সেটাই বাইরের বাজারে রপ্তানী হবে এটাই ন্যায় সঙ্গত ব্যবস্থা৷