প্রশ্ণ হানে মানবতা

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্‌হা

সেদিনও এসেছিল অন্ধ নিশা অবসানে শুভ্র প্রভাত

নব রবির আলোক নির্ঝর-স্নিগ্দ প্রকৃতিবক্ষে বিহগের কলগুঞ্জন

একে একে জেগেছে মানুষ, নবশক্তি সম্পাতে কেটেছে অবসাদ

নব চেতনায় সমৃদ্ধ সবে উন্মুখ, আরব্ধ করিতে সম্পাদন৷

মহাজীবনের আহ্বানে তাপস-তাপসী অগণিত দলে দলে

ত্যাগব্রতে বলীয়ান, সেবাব্রতে মহীয়ান, সঁপেছে অমূল্য জীবন

নিঃস্বহায় আর্তত্রাণে, বিশ্বমানবতার বেদীমূলে

সত্য-ধর্মের মহামন্ত্রে ধবনিত বিশ্বের মহাজাগরণ৷

প্রমাদ গণেছে নিকষ অন্ধকারের জীব, নররূপী হায়নার দল

পাশবিক শক্তি মদমত্ত, মানবতার শত্রু, পাতক, মিথ্যাচারী

অনাথ-আশ্রয়হীন শিশুকল্যাণে যারা বিছায়েছে মমতার কোল

দুরভিসন্ধি সাধনে কুচক্রী তাহাদের ‘ছেলেধরা’ অপবাদে বিষায়েছে নগরী৷

বিরাশির তিরিশে এপ্রিল, সুন্দর সকাল, তিলোত্তমা কলকাতা ক্রমশ কর্মব্যস্ত

সহসা ধাবমান ঘোর বন্য আঁধার, আদিম পৈশাচিক বর্বরতা

অসভ্যের হিংস্র হুঙ্কারে বিজন সেতু, বণ্ডেল গেটে নিরীহ মানুষ ভীত-সন্ত্রস্ত

উন্মত্ত পাষণ্ডের নির্লজ্জ তাণ্ডবে কলঙ্কিত হ’ল মানব সভ্যতা৷

নিরস্ত্র সর্বত্যাগী সন্ন্যাসী-সন্ন্যাসিনী, পীড়িত সেবায় সদা তৎপর

ঘাতকের অস্ত্রাঘাতে ক্ষত-বিক্ষত, রক্তাক্ত রাজপথে সপ্তদশ মানবদেহ ভূলুন্ঠিত

যন্ত্রণা কাতর দেহে পেট্রোল ঢালি, জ্বালিল অগ্ণি শয়তান-প্রবর

শ্বাপদকুলের জঘন্য উল্লাসে বিজন সেতু-বণ্ডেল গেট হ’ল প্রকম্পিত৷

সপ্তদশ দধীচির জ্বলন্ত দেহ, আকুল আর্তনাদ, অসহায় হাহাকার

প্রতি বৎসর তিরিশে এপ্রিল আসি মানুষের দরবারে মাগে বিচার

অজস্র ধিক্কারে প্রশ্ণ হানে মানবতা, সভ্যতার কি আজ সত্যিই দুঃসময়

নাকি ন্যায়ধর্ম প্রতিষ্ঠায় বিচারের অমোঘ নির্ঘোষ ধবনিবে নিশ্চয়ই?