ঘটোৎকচ মহাভারতের এক উজ্জ্বল চরিত্র৷ ‘কচ্’ ধাতুর অর্থ চক্চক্ করা Shine) ৷ ‘উৎকচ’ মানে সবকে ছাপিয়ে চকক্ করা৷ ঘটের মত বিরাট আকৃতির যে সত্তা পৌরুষে উজ্জ্বল সে-ই ‘ঘটোৎকচ’৷ যোগারাঢ়ার্থে ভীমের স্ত্রী হিঁড়িম্বার পু-ঘটোৎকচ৷ এই আদর্শনিষ্ঠ পিত্রনুরাগী মানুষটি কম বয়সেই অনেক কাজ করে গেছলেন৷ তাঁর চরিত্রটি আরও ভাস্বর হয়ে উঠেছিল যখন মহাভারতের (মহাভারত সত্য হলেও সব গল্প বা গল্পাংশ সত্য হতেও পারে, নাও হতে পারে) গল্পে বলা হচ্ছে, ঘটোৎকচ যখন মৃত্যুমুখে পতিত হচ্ছেন অর্থাৎ ধরাশায়ী হচ্ছেন তখন তিনি পাগুব নেতাদের উদ্দেশ্যে ৰলছেন, ‘‘তাকে অনুমতি দেওয়া হোক, তিনি কুরু সেনাদের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ে মরৰেন যাতে তার চাপে আরও কিছু কুরু সেনা বিনষ্ট হয়৷
এই ঘটোৎকচের মা হিড়িম্বাও মহাভারতের আখ্যায়িকা অনুযায়ী ছিলেন এক নিষ্ঠাবতী দৃঢ়চেতা নারী৷ তিনি ছিলেন কাছাড় রাজ্যের রাজকন্যা---পরবর্ত্তীকালে তার নামে তৈরী হয় তৎকালীন কাছাড় রাজ্যের রাজধানী হিড়িম্বাপুর যা বিবর্তিত হয়ে আজ ‘ডিমাপুর’-য়ে (হিড়িম্বাপুরঞ্ছ ডিন্মাপুরঞ্ছডিমাপুর) পরিণত হয়েছে৷ এই ডিমাপুরকে কেন্দ্র করে এককালে কাছাড়ীদের বিরাট রাজ্য গড়ে উঠেছিল৷ তার দক্ষিণে ৰাঙলা, উত্তরে অসম৷
সাংস্কৃতিক বিচারে ও নৃতাত্ত্বিক বিচারে কাছাড়ীরা ৰাঙালীদের খুবই নিকট৷ এঁদের জাত ৰাঙালী ৰললেও ৰলা যেতে পারে৷ এঁরা ৰাঙলার শাক্ত ধর্মের অনুগামী ছিলেন৷ পরবর্ত্তীকালে ব্রহ্ম থেকে আগত অহোম রাজাদের আক্রমণে কাছাড়ীরা বিধবস্ত হয়ে যান৷ কাছাড়ীদের শেষ রাজা বঙ্কিমচন্দ্র ইংরেজদের কাছে আত্মসমর্পণ করেন৷ এ ব্যাপারে লিখিত ইতিহাস খুব স্পষ্ট নয়৷ কিংবদন্তী এই যে ইংরেজরা সন্ধির অছিলায় তাঁকে ডেকে এনে হত্যা করেন৷ তবে এ কথার সমর্থনে কোন তথ্য-প্রমাণ নেই৷ বর্তমানে কাছাড়ীরা একটি বিনীত সুসভ্য জনগোষ্ঠী৷ এঁদের আর্থিকপুনর্র্বসনের ব্যবস্থা অবিলম্বে হওয়া বাঞ্ছনীয়৷
ডিমাপুরের কাছাকাছি জায়গায় পাহাড়ে প্রাচীন ৰাংলা লিপিতে তল্প-স্বল্প তথ্য লিখিত রয়েছে যার থেকে প্রমাণিত হয় প্রাচীনকাল থেকেই কাছাড়ীরা এ দেশেরই বাসিন্দা... তারা বাইরে থেকে আসেননি ও তাঁরা বৃহত্তর ৰাঙালী জনগোষ্ঠীরই অস্তর্ভুক্ত৷ বৌদ্ধযুগে এঁরা বৌদ্ধ ধর্মাবলম্বী ছিলেন ৰলে কোন প্রমাণ নেই৷ তৰে তাঁরা যে শীক্ত ধর্মাৰলম্বী ছিলেন তার প্রমাণ কাছাড়ী সাহিত্য চর্চার মাধ্যমে পাওয়া যায়৷ সাহিত্য চর্চা তারা ৰাংলা ভাষাতেই করে এসেছেন৷ (‘বর্ণবিচিত্রা’,৭/১৯)