নারীর মর্যাদা

আধ্যাত্মিক ক্ষেত্রে নারীর স্থান

সম্পতি আমাকে একটি দুরূহ সমস্যার সম্মুখীন হ’তে হয়েছিল৷ সমস্যাটা বা প্রশ্ণটা হয়তো কিছুটা দুরূহ কিন্তু উত্তরটা খুবই সরল৷ প্রশ্ণ ছিল, মহিলারা মুক্তি–মোক্ষের অধিকারী কি না৷

কিছুদিন আগে তোমাদের বলেছিলুম যে তন্ত্রে বলা হয়েছে, ‘‘দেহভৃৎ মুক্তো ভবতি নাত্র সংশয়ঃ’’৷ আত্মজ্ঞান লাভের নূ্যনতম যোগ্যতা হ’ল এই যে সাধককে মানুষের শরীর পেতে হবে৷ এটাই হ’ল তার নূ্যনতম যোগ্যতা৷ কৈ, এখানে তো উল্লেখ করা হয়নি যে সে সাধক নারী বা পুরুষ হবে৷ এর থেকে এটাই পরিষ্কার যে নারী–পুরুষ উভয়েই মুক্তি–মোক্ষ লাভের সমান অধিকারী৷

প্রাগৈতিহাসিক সমাজ

প্রাগৈতিহাসিক যুগের মানুষ–সমাজে নারীর স্থান ছিল অন্যান্য যে কোন জীবের স্বাধীন নারীর মতই৷ পুরুষেরা যেমন প্রকৃতির কোলে নেচে গেয়ে হেসে খেলে জীবন কাটিয়ে দিত নারীরাও তা–ই করত৷ এই অবস্থা চলেছিল যখন মানুষ সমাজ বলতে কোন কিছুই গড়েনি তখন তো বটেই, তার পরেও মাতৃশাসনের যুগেও৷ কিন্তু যখনই পিতৃশাসিত সমাজ ব্যবস্থা এল তখনই নারীর অধিকার ক্রমশঃ সঙ্কুচিত করা হতে থাকল৷ গোড়ার দিকে ঠিক করা হ’ল মেয়েরা ততটুকু স্বাধীনতা ভোগ করবে যতটুকু বিবাহের পরে তার শ্বশুরকুল তাকে ভোগ করতে দেবে বা বিবাহের পূর্বে পিতৃকুল তাকে যে সুযোগটুকু দেবে৷

পত্নী/জায়া/ভার্যা/কলত্র

(মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার তাঁর শব্দ চয়নিকা–২৬ খণ্ড গ্রন্থের বিভিন্ন স্থানে ‘নারীর মর্যাদা’ বিষয়ক অনেক কিছুই বলেছেন৷ ওই গ্রন্থ থেকে কিছু অংশ সংকলিত করে প্রকাশ করা হচ্ছে৷                 –সম্পাদক)

জাতিভেদ ও নারীর মর্যাদা হ্রাস

বৈয়ষ্টিক জীবনে মৌলিক অধিকার সমূহের সুরক্ষা তথা সামূহিক জীবনে শান্তি প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্যে মানুষ অনাদিকাল থেকে শৃঙ্খলাসমন্বিত শাসন–ব্যবস্থার প্রবর্ত্তন করে চলেছে৷ এই সকল আইন শাসকশ্রেণীই সময়ে সময়ে তৈরী করেছে ও প্রতিটি আইন থেকে এ ভাবই প্রকট হয় যে শাসক শ্রেণী আইন প্রণয়নকালে তাদের নিজেদের স্বার্থের দিকেই সব থেকে বেশী নজর রেখেছে৷ দৃষ্টান্ততঃ, মনুস্মৃতিতে মনু বিধান দিয়েছেন যে কোন ব্রাহ্মণ শূদ্রকন্যার পাণিগ্রহণ করলে তাকে মাথা মুড়িয়ে গাধার পিঠে বসিয়ে শহর পরিক্রমণ করানো হবে, আর শূদ্র যদি কোন ব্রাহ্মণতনয়ার পাণিগ্রহণ করে তবে সেক্ষেত্রে তার শাস্তি হবে প্রাণদণ্ড৷  এই ধরণের আইন ব্যবস্থা সমাজে ব্রাহ্মণদের প

পণপ্রথা ও বিবাহ

পণপ্রথা সামাজিক অবিচারের আরেকটি জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত৷ ‘‘মানুষের সমাজ’’ পুস্তকটিতে বলেছি এই পণপ্রথার কারণ মুখ্যতঃ দু’টি–একটি অর্থনৈতিক ও অপরটি নারী–পুরুষের সংখ্যাগত তারতম্য৷ আর্থিক ব্যাপারে নারীর পুরুষ নির্ভরশীলতা কমে যাবার সঙ্গে সঙ্গে অথবা দেশ বিশেষে পুরুষের নারী নির্ভরশীলতা কমে যাবার সাথে সাথে পণপ্রথার উগ্রতা থাকবে না বটে কিন্তু এই কার্যকে ত্বরান্বিত করবার জন্যে তরুণ–তরুণীদের মধ্যে উন্নত আদর্শবাদ প্রচারেরও প্রয়োজন রয়েছে৷ আমাদের ছেলেমেয়েরা চাল, ডাল, নুন, তেল বা গোরু, ছাগল নয় যে তাদের নিয়ে হাটবাজারে দর কষাকষি চলবে৷    (আজকের সমস্যা) 

                        ণ্ণ     ণ্ণ     ণ্ণ

স্বাস্থ্য ও কৌশিকী নৃত্য

মানুষের অস্তিত্ব ত্রি–স্তরীয় অর্থাৎ এর তিনটে স্তর (Stratum) রয়েছে– শারীরিক  (Physical), মানসিক (Phychic) ও আধ্যাত্মিক (Spiritual)৷ এই যে তিনটে স্তর এদের কোনটিকেই অবজ্ঞা করা যায় না৷ শারীরিক স্তরের চেয়ে মানসিক স্তরের মহত্ত্ব অধিক, কিন্তু তাই বলে শারীরিক স্তরটাকেও (Physical stratum) উপেক্ষা করা যায় না৷ ঠিক তেমনি মানসিক স্তর (Psychic stratum) অপেক্ষা আধ্যাত্মিক স্তরের (Spiritual stratum) গুরুত্ব বেশী কিন্তু মানসিক স্তরটাও (Psychic stratum) অবহেলার জিনিস নয়৷ তাই তারও চর্চা আবশ্যক৷ তেমনি যারা আধ্যাত্মিক চর্চা করে না, কেবল শরীর ও মনেরই চর্চা করে তারা দেখতে মানুষের মত হলেও তাদের মানসিকতা স্থূল হয়ে

নারীর দুরবস্থা

খুব প্রাচীনকালে যখন মাতৃশাসিত সমাজব্যবস্থা ছিল সেই সময় সমাজে ছিল কন্যারই কদর৷ একজন নারীই হত সমাজের গোষ্ঠীমাতা৷ মানুষ তার নাম ধরে গোত্র–পরিচয় দিত৷ পুরুষেরা সেই গোত্রমাতার নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে যেত৷

সে যুগ চলে গেল৷ পৃথিবীর অধিকাংশ এলাকা থেকে নারীর প্রাধান্য চলে গেল, এল পুরুষের শাসন.......সমাজ হ’ল পিতৃশাসিত৷ মানুষ পিতার পরিচয়ে নিজের পরিচয় দিত৷ সমাজ ব্যবস্থায় প্রবর্ত্তন হ’ল পিতৃগোত্রের ও প্রবরের৷

ক্রমবর্ধমান নারী–নিগ্রহ ঃ সমস্যার সমাধান কোথায়

অবধূতিকা আনন্দগতিময়া আচার্যা

‘রাজ্যে রাজ্যে নারী–নিঃগ্রহ, বধূহত্যা, নারী ধর্ষণ প্রভৃতি উদ্বেগজনকভাবে বেড়ে চলেছে৷ এই সমস্ত রোধের জন্যে দেশে অনেক আইন রয়েছে, নূতন নূতন আইন তৈরীও হচ্ছে৷ কিন্তু সমস্যা আগের মতই রয়েছে৷ উদাহরণস্বরূপ দিল্লির গণধর্ষণ কাণ্ডের প্রসঙ্গ আনা যায়৷ এই ঘটনার পর দেশজুড়ে প্রতিবাদের ঝড় উঠল৷ কঠোর আইন–প্রণয়ণের দাবী উঠল৷ সংসদেও সর্বসম্মতিক্রমে নারী নির্যাতন রুখতে কঠোর আইন আনার দাবী উঠল৷ কঠোর আইন পাশ করাও হ’ল৷ কিন্তু পরিস্থিতির কোনো পরিবর্তনই পরিলক্ষিত হচ্ছে না৷ তাহলে এ সমস্যার সমাধান কীভাবে হবে?

প্রাচীনকালে নারীর স্থান

সুপ্রাচীনকালে যখন পৃথিবীর সর্বত্র মাতৃগত কুল–ব্যবস্থা ছিল, ছিল মাতৃগত দায়াধিকার ব্যবস্থাও, সেই সময় মানুষ মাতার পরিচয়ে নিজের পরিচয় দিত৷ পিতৃপরিচয় অনেকেরই থাকত না৷ যাদের থাকত, সেটাও খুব গৌণ জিনিস বলে গণ্য করা হ’ত৷ সেই সময়কার মানুষ স্বাভাবিক নিয়মে মাতা–মাতামহীর নামে নিজের পরিচয় দিত৷ কারও মাতা বা মাতামহী সদ্বংশজাতা, শিক্ষিতা ও প্রশংসনীয় স্বভাবের হলে লোকে তাঁর কথা বলতে গৌরব বোধ করত৷ 

(‘‘কৌঞ্জ’’, শব্দচয়নিকা’, ‘৯ম পর্ব)

নারী–পুরুষ উভয়েই পরমপুরুষের আদরের সন্তান

আমরা সবাই পরমপুরুষের সন্তান৷ তিনি সবাইকে তৈরী করে চলেছেন৷ সুতরাং বেঁটে, লম্বা, কালো, ফর্সা, আমি পুরুষ, সে মেয়ে–এসব ভেদের মধ্যে থাকার প্রয়োজন নেই৷ পরমপুরুষের সঙ্গে মনটা মিলিয়ে দিয়ে ভেবে দেখ কী করলে পরমপুরুষের ভালো লাগক্ষে, কী করলে ভাল লাগবে না৷ যা’ করলে তাঁর ভাল লাগবে সেই মত করবে৷ কোন পিতা চাইবে না তার একটা সন্তান শুকিয়ে মরুক, একটা সন্তান প্রয়োজনের চেয়েও বেশী খাক বা প্রয়োজনের চেয়েও বেশী জমিয়ে রাখুক৷ অর্থনৈতিক জীবনেও তোমাদের সেই রকমই চলতে হবে৷ সামাজিক জীবনে কোন পিতাই মনের দিক থেকে চাইবে না তার বিধবা মেয়ে অন্য রকম পোষাক পরুক, তার বিধবা মেয়ের ওপর সামাজিক নির্যাতন চলুক অর্থাৎ কোন শুভ কার্যে তাকে