কালের মানসিক পরিমাপে যুগের হিসেবে আরও একটা বছর যোগ হল৷ দুর্লভ মানব জীবন থেকে চলে গেল মূল্যবান ৩৬৫টা দিন৷ যা আর ফিরে পাওয়া যাবে না৷ পৃথিবী আজ বড় অশান্ত৷ মানুষের সীমাহীন চাহিদা, স্বার্থলোভ, ক্ষমতার আস্ফালন বিত্তশালীর প্রতাপে মানুষের জীবন অতিষ্ঠ৷ রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রের যুদ্ধ রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে সম্প্রদায়ে সম্প্রদায়ে, গোষ্ঠীতে গোষ্ঠীতে, দলে উপদলে সংঘাত বার বার রক্তাক্ত করছে পৃথিবীকে৷ ধর্মের নামাবলী গায়ে মানবতাহীন, বিবেকহীন, ভাবজড়তায় আচ্ছন্ন অধার্মিকদের ব্যভিচার অনাচারে জর্জরিত মানব সমাজ৷
এই সব নিয়েই চলে গেল আরও একটা বছর৷ আর.জি.করের মর্মান্তিক ঘটনা, তাকে কেন্দ্র করে কিছু ক্ষমতালোভী মানুষ সব নৈতিকতা বিসর্জন দিয়ে মিথ্যা ও ছলনার আশ্রয় নিয়ে মানুষকে বিভ্রান্ত করে দিকভ্রষ্ট আন্দোলন, প্রতিবেশী রাষ্ট্রে স্বৈরাচারী শাসনের অবসান ঘটিয়ে সাম্প্রদায়িক বিভেদকামীর উত্থান, তার উত্তাপের আগুনে সীমান্তের এপারেও বিভেদকামীরা হাত সেঁকছে৷ এমনই তিক্ত গ্লানিময় অভিজ্ঞতা নিয়ে একটা বছর পার হয়ে গেল৷ এই ভাবে সমাজ এগিয়ে চলে দিন মাস বছর পার করে আর পাল্লা দিয়ে সমাজে বিভেদকামীরা নিত্য নোতুন বিচ্ছিন্নভাব ধারার জন্ম দিচ্ছে৷
পর্বত কন্দর থেকে অন্ধকারময় অরণ্যের পর্ণকুটির থেকে আলো ঝলমল শহরের সুরম্য অট্টালিকায় গো-যান বাষ্প শকটের যুগ পেরিয়ে মানুষ আজ মহাকাশ যানে মহাকাশের বাসিন্দা এই নিয়েই তার সভ্যতার বড়াই৷
কিন্তু এই কি সভ্যতা! পৃথিবীকে ভৌগোলিক সীমানায় ভাগ করে একে অপরের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়ছে নিত্য নতুন মারনাস্ত্রের সম্ভার নিয়ে৷ রক্তের স্রোত বইয়ে দিয়ে দানবীয় উল্লাসের নাম দেশপ্রেম! বিরোধিতা করলেই দেশদ্রোহী! ধর্মের নামে মন্দির মসজিদ থেকে একে অপরের বিরুদ্ধে ছড়িয়ে দিচ্ছে ঘৃণা বিদ্বেষের বিষ! সংস্কৃতির নন্দনকাননে শিল্পীর স্বাধীনতার দোহাই দিয়ে অশ্লীল অসংস্কৃতির আবাদ জন্ম দিচ্ছে অসংযত অনাচারী দ্বিপদ পশুর৷ বিদায়ী ২০২৪ ও বয়ে নিয়ে গেল সেই পাশবিকতার ধারা---আর.জি.কর, বাংলাদেশ,গাজা, প্যালেস্টাইন, ইসরাইল ....আর কত দিন মানুষ বয়ে বেড়াবে--- বিচ্ছিন্ন বিভেদকামী ধন পিপাসু ক্ষমতালোভী নরপশুদের নারকীয় অত্যাচার৷
যুদ্ধ বিদ্ধস্ত মানুষ, ধর্মান্ধদের চাপিয়ে দেওয়া কুসংস্কারে আচ্ছন্ন মানুষ, ধনকুবেরদের আগ্রাসনের শিকার বুভুক্ষু মানুষ, দ্বিপদ পশুর লালসার শিকার মানুষ--- এই বেদনা বুকে নিয়েই কি তার সভ্যতার বড়াই! নববর্ষের নব প্রভাতে, আড়ম্ভর, উল্লাস, সমারহের আয়জন কম ছিল না! তবু মানুষ আজও মানুষ হল না৷ জাত-পাত সম্প্রদায়, দল-উপদল গোষ্ঠীর পরিচয় আবদ্ধ হয়ে নিজেকে জাহির করতে চায়৷
তবু তমসাচ্ছন্ন নিশিথের পরেই অরুণ আলো নিয়ে আসে নবপ্রভাত৷ মানব জাতির এই চরম দুঃসময়েই আবির্ভাব শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী৷ মানব সমাজের সার্বিক উন্নয়নের, সর্বশ্রেণীর মানুষের সর্বজীবের তথা সর্ব অস্তিত্বের সার্বিক বিকাশের জন্য তিনি ছিলেন সর্বানুসূ্যত জীবন দর্শন আনন্দমার্গ৷ এই সুমহান দর্শনের বাস্তবায়নই একমাত্র পথ সর্ব কলুষমুক্ত, সর্বশোষণ মুক্ত নির্মল পৃথিবী গড়ার৷ ২০২৫ প্রথম প্রভাত মহাসমারোহে বরণ করেই কি কর্তব্য শেষ! আজ মানুষের মহত্তম আদর্শই হলো সব বিভেদ বিদ্বেষ বৈষম্য দূর করে সুসংহত সঙ্ঘবদ্ধ এক মানব সমাজ গড়ে তোলা৷ ২০২৫ এর নব প্রভাতের ব্রত এক মানব সমাজ তথা বিশ্বভ্রাতৃত্ব প্রতিষ্ঠার মহৎ কাজে আত্মনিয়োগ করা আনন্দমার্গ দর্শনের প্রবক্তা শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তির আশীর্বচন সঙ্গে নিয়ে---‘প্রতিটি মহৎ কাজের জন্যে যারা নিয়োজিত তাঁদের জন্যে আমার সমর্থন সর্বদা সঙ্গে আছে৷ মানবতার আর্থিক মুক্তির জন্যে সকলের প্রয়াস অবশ্যই সফলীভূত হবে৷’
- Log in to post comments