প্রতিবছর ৫ই মার্চ আমরা ‘দধীচি দিবস’ হিসাবে পালন করে থাকি৷ কিন্তু কে ছিলেন এই দধীচি? তিনি ছিলেন পুরাণে বর্ণিত একজন বিখ্যাত মুনি৷ বেদমতে তিনি ছিলেন অথর্বমুনির পুত্র৷ কিন্তু পুরাণমতে তিনি মহর্ষি ভৃগু বা চ্যবনের পুত্র৷ তাঁর মায়ের নাম শান্তি৷
একবার তাঁর কঠোর তপস্যায় ভীত হয়ে দেবরাজ ইন্দ্র তাঁর তপোভঙ্গের উদ্দেশ্যে অলম্বুষা নামে এক অপসরাকে পাঠিয়েছিলেন৷ দধীচি ছিলেন পরম শিবভক্ত৷ তিনিই নন্দীকে শিবমন্ত্রে দীক্ষিত করেন৷ পরবর্ত্তীকালে এই নন্দীই শিবের পার্শ্বচরপদ লাভ করে৷ দক্ষ প্রজাপতিকে তিনি শিবহীন যজ্ঞ করতে নিষেধ করেছিলেন৷ দক্ষ তাঁর নিষেধ অমান্য করায় তিনি দক্ষযজ্ঞ পরিত্যাগ করেন৷
এদিকে বৃত্র ছিলেন একজন অসুর৷ শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন --- ‘‘...প্রাচীনকালে অসুরেরা শিবের সাধনা করে শিবের বরে শক্তি লাভ করেছিল৷ (লঘু নিরুক্ত) তেমনি বৃত্রাসুর ও শিবের তপস্যা করে শিবের বরে যুদ্ধে অজেয়ত্ব লাভ করে৷ অর্থাৎ যুদ্ধে তাকে কেউ পরাজিত করতে পারবে না৷ শিবের বরে বলীয়ান হয়ে বৃত্রাসুর স্বর্গরাজ্য আক্রমণ করে৷ স্বর্গ থেকে দেবতারা বিতাড়িত হন৷ যুদ্ধে দেবতাদের পর্যুদস্ত করে বৃত্রাসুর দেবলোকে অসুর রাজ্য প্রতিষ্ঠা করে৷
ইন্দ্র অতঃপর স্বর্গ থেকে বিতাড়িত হয়ে অন্যান্য দেবতাদের সাথে নিয়ে ব্রহ্মার শরণাপন্ন হলেন৷ সব বৃত্তান্ত শুণে ব্রহ্মা উপদেশ দেন ---একমাত্র দধীচিমুনির অস্থির দ্বারা বজ্রাস্ত্র নির্মাণ করলে সেই অস্ত্রেই বৃত্রাসুর কে বধ করা যাবে৷ যেহেতু ইন্দ্র একবার দধীচির তপোভঙ্গ করেছিলেন তাই মনে একটু দ্বিধা নিয়ে তিনি তাঁর কাছে উপস্থিত হলেন৷ কিন্তু ইন্দ্রের কাছে সব ঘটনা শুণে দধীচি তৎক্ষণাৎ অকুন্ঠিত চিত্তে পরোপকারার্থে আত্মজীবন দানে রাজী হয়ে গেলেন৷ তিনি বললেন, আমার এই দেহ তো নশ্বর৷ দেহের অস্থিপঞ্জর দেবতাদের হিতার্থে দান করা তো সৌভাগ্যের বিষয়৷ এই কথা বলে তিনি যোগ সাধনায় বসে দেহত্যাগ করলেন৷ অতঃপর বিশ্বকর্মা তাঁর অস্থি দিয়ে বজ্রাস্ত্র নির্মাণ করলেন৷ সেই বজ্রাস্ত্র দিয়েই ইন্দ্র বৃত্রাসুরকে বধ করলেন৷
বাংলাসাহিত্যে হেমচন্দ্র বন্দ্যো পাধ্যায় রচিত ‘বৃত্রাসংহার’ একটি জনপ্রিয় আখ্যান কাব্য৷ বৃত্রাসুরের স্বর্গজয়, তারপর দধীচির দ্বারা নির্মিত বজ্রপ্রয়োগ করে ইন্দ্রের বৃত্রাসুর বধ--- এই কাব্যের মূল বিষয়৷ কাব্যটি বঙ্কিমচন্দ্র ও রবীন্দ্রনাথের ভূয়সী প্রশংসা লাভ করে৷
সব কথার শেষ কথা---দধীচির নামের মধ্যেই তাঁর স্বভাব বিধৃত আছে৷ দধ্ ইচি দধীচি৷ দধ্ শব্দের অর্থ দান করা৷ দেবতাদের হিতার্থে তিনি তার দেহদান করে নামের সার্থকতা প্রতিপন্ন করেছেন৷
- Log in to post comments