মাতৃভাষার মানরক্ষা

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

যখনকার কথা আমি বলছি তখন আমাদের দেশ পরাধীন লোকের মুখে তখনো স্বদেশিকতার উন্মেষ ঘটেনি৷ শিক্ষিত, বাঙালীমাত্রই ইংরেজ-ভক্ত হয়ে উঠতেন৷ বাংলাভাষাকে তারা ভাষা বলেই জ্ঞান করতেন না ইংরেজদের কৃষ্টি, সংস্কৃতি এবং ইংরেজী ভাষার প্রতি অন্ধ আনুগত্য দেখানো এবং তাদের চালচলন, হাবভাবের চাটুকারিতাসুলভ অনুকরণে অনেক বাঙালী সেদিন গর্ব অনুভব করতেন৷ স্বদেশের ভাষা, সভ্যতা, শিক্ষা, ঐতিহ্যকে তাঁরা হেয় জ্ঞান করতেন৷

তাঁদেরই মধ্যে কয়েকজন বাঙালী সেদিন বিভিন্নভাবে রুগণ্‌ বঙ্গজননীর সেবাশ্রশ্রূষায় ছিলেন অতন্দ্র৷ বাংলার অনাদৃত অবহেলিত সম্পদ্‌ তাঁরা অতল গহ্বর থেকে উদ্ধার করার কাজে ছিলেন ব্রতী৷ ‘বাংলার সম্মান প্রতিষ্ঠায় ছিলেন একনিষ্ঠ প্রয়াসী ৷ মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর তাদেরই একজন৷

বাংলাভাষাকে তিনি ভালবেসেছিলেন শুধু মুখের কথাতেই নয় ভালবেসেছিলেন অন্তর দিয়ে--হৃদয়ের অকৃত্রিম দরদ দিয়ে৷ তিনি যথার্থ বুঝেছিলেন, বাংলা বাঙালীর মাতৃভাষা৷ মাতৃভাষাকে মর্যাদা দেওয়া প্রতিটি বাঙালীর অবশ্য কর্তব্য৷ পরের ভাষায় জ্ঞানের বিকাশ সম্পূর্ণ এবং সহজ হয় না৷ প্রত্যেক জাতির পক্ষে তার মাতৃভাষাই অগ্রগতির সহায়ক৷

একদিন দুপুরবেলা খাওয়া দাওয়ার পর দেবেন্দ্রনাথ বৈঠকখানায় বসে বিশ্রাম করছেন এমন সময় পিওন এসে একটা চিঠি দিয়ে গেল৷ চিঠিটা ছিল তাঁর এক ঘনিষ্ঠ আত্মীয়ের৷ চিঠিটা হাতে পেয়েই কিন্ত তার মুখ হয়ে গেল গম্ভীর ৷ বিরক্তি আর রাগে কপালের চামড়ায় ভাঁজ পড়লো৷’’

ব্যাপারটা কি? তোমরা হয়তো ভাবছো কোন মৃত্যুসংবাদ---তাই না? না, আসলে তা নয়৷ আত্মীয়টি তাঁকে ইংরেজীতে চিঠি লিখেছেন৷

কেন, বাংলায় লিখলে কি মান যেতো ? নীরব গর্জন করলেন দেবেন্দ্রনাথ সঙ্গে সঙ্গে চিঠিটা না পড়েই ফেরত পাঠিয়ে দিলেন আত্মীয়ের কাছে৷ লিখে দিলেন আমি বাঙালী, আপনিও বাঙালী---

অতএব উচিত ছিল বাংলাতেই চিঠি লেখা৷