সংবাদ দর্পণ

বিগত ৮ বছর ভিক্ষুকদের চা, বিস্কুট ও জল খাইয়ে সেবা করছেন এক গরীব চায়ের দোকানের মালিক

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

দোকান চালিয়ে কোনও দিন মেলে ৪০০ টাকা৷ বাজার ভাল হলে আয় কিছুটা বেশি হয়৷ আয় আহামরি না হলেও সপ্তাহের প্রতি মঙ্গলবার পূর্বস্থলী ২ব্লকের পারুলিয়া বাজার এলাকার চা বিক্রেতা তপন দেবনাথ তাঁর দোকানে ভিক্ষুকদের চা, বিস্কুট আর জল খাওয়ান বিনা পয়সায়৷ আট বছর ধরে এ ভাবেই ভিক্ষুকদের সেবা করে চলেছেন তিনি৷ আনাজ-সহ নানা জিনিসপত্র বিক্রি হয় পারুলিয়া বাজারে৷ প্রায় তিন দশক ধরে সেখানে চা বিক্রি করছেন তপন৷ বাজার থেকে প্রায় দেড় কিলোমিটার দূরে তেলিনপাড়া এলাকায় তাঁর বাড়ি৷ দু’দশক ধরে তিনি কেটলি হাতে ঘুরে ঘুরে চা বিক্রি করেছেন৷ আট বছর আগে বাজার কমিটি তাঁকে ‘শেড-এর নীচে দোকান করার জায়গা দেয়৷ এলাকার বাসিন্দাদের দাবি, প্রতি মঙ্গলবার বাজারে নবদ্বীপ, পাটুলি, লক্ষ্মীপুর, বেলেরহাট, নিমতলা, সমুদ্রগড়, পোলেরহাট থেকে বহু মানুষ ভিক্ষা করতে আসেন৷ গত মঙ্গলবার নবদ্বীপ এলাকার বাজার বন্ধ থাকায় বেশি সংখ্যক ভিক্ষুক পারুলিয়া বাজারে এসেছিলেন৷ তাঁদের বড় অংশই বয়স্ক৷ কাজ করার তেমন ক্ষমতা নেই তাঁদের৷ বাজারে ভিক্ষা করে ক্লান্ত হয়ে পড়েন তাঁরা৷ ক্লান্ত ভিক্ষুকদের দোকানে ডেকে আনেন তপন৷ তাঁদের হাতে জলের বোতল দেন৷ পরে খাওয়ান গরম চা আর বিস্কুট৷ কিছু ভিক্ষুককে ফলও দেন৷ আনন্দ বালা, গোপাল মণ্ডল, বন্দনা দাসীদের কথায়, ‘‘ভিক্ষা করতে এসে দলবেঁধে ওঁর দোকান গেলেও বিরক্ত হন না উনি৷ হাসি মুখে চা আর বিস্কুট এগিয়ে দেন৷’’ কত মানুষকে বিনা পয়সায় চা, বিস্কুট খাওয়ান? চায়ের গুমটি থেকে উত্তর আসে, ‘‘কখনও ১০০, কখনও ৮০৷ হিসাব করিনি৷ যতক্ষণ ওঁরা আসেন, আমি খাইয়ে যাই৷ হিসাব করে দেখেছি সপ্তাহে এক থেকে দেড় দিনের আয় চলে যায় ওঁদের সেবায়৷ তবে এ নিয়ে আক্ষেপ নেই৷ যাঁরা রোদে পুড়ে ভিক্ষাবৃত্তি করেন, তাঁদের পাশে দাঁড়াতে ভাল লাগে৷ যত দিন কর্মক্ষম থাকব, ততদিন এ ভাবেই সেবা করব৷’’

তপন জানান, তিনি মাতৃহারা হয়েছিলেন মাত্র দেড় বছর বয়সে৷ বাবা প্রভাতচন্দ্র দেবনাথ খেতমজুরের কাজ করে ছেলেমেয়েদের বড় করেছেন৷ তিনি বলেন, ‘‘বাবার মৃত্যু হয়েছে বছর আট আগে৷ ছোট থেকেই পরিবারে অভাব ছিল নিত্যসঙ্গী৷ অভাবের সংসারে ভালবেসে কেউ কিছু দিলে আনন্দ হত৷ তখনই ঠিক করেছিলাম, রোজগার করলে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াব৷’’ তপনের দুই ছেলে কর্ণ এবং অর্জুন-সহ পরিবারের সকলেই এই কাজে তাঁকে সহযোগিতা করেন৷ এলাকার বাসিন্দা দীপঙ্কর চক্রবর্তী, অনিল দেবনাথ, শঙ্কর ভৌমিক বলেন, ‘‘প্রতিদিন আমরা ওঁর দোকানে চা খাই৷ অসহায় মানুষ, যাঁরা ওঁর দোকানে আসেন, তাঁদের পরম যত্নে চা খাওয়ান উনি৷ অর্থ নেন না৷ ওঁর মতো মানুষ এলাকার সম্পদ৷’’ পারুলিয়া বাজার কমিটির সম্পাদক তথা পূর্বস্থলী ১ পঞ্চায়েত সমিতির সহ-সভাপতি কালীশঙ্কর বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, ‘‘দীর্ঘদিন ধরে তপনকে চিনি৷ শুধু সপ্তাহে এক দিন নয়, অন্য দিনও অসহায় কোনও মানুষ ওঁর দোকানে এলে তাঁকে বিস্কুট আর চা খাওয়ান তপন৷ বড় মন না হলে এত বছর ধরে এই কাজ করতে পারেন না কেউ৷’’

‘মিলিটারি জেন্ডার অ্যাডবোকেট’ অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেলেন ভারতীয় সেনাকর্মী রাধিকা সেন

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

২০২৩ সালের রাষ্ট্রপুঞ্জের ‘মিলিটারি জেন্ডার অ্যাডভোকেট অব দ্য ইয়ার’ পুরস্কার পেতে চলেছেন এই ভারতীয় সেনাকর্মী মেজর রাধিকা সেন৷ গত ৩০ মে তাঁর হাতে পুরস্কার তুলে দেন রাষ্ট্রপুঞ্জের মহাসচিব আন্তোনিয়ো গুতেরেস৷ রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিসেনা হিসাবে মহিলা এবং নাবালিকাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার ব্যাপারে তাঁর ভূমিকার জন্য এই স্বীকৃতি৷

হিমাচলে জন্ম রাধিকার৷ বায়োটেকনোলজি ইঞ্জিনিয়ারিং নিয়ে স্নাতক হওয়ার পরে আইআইটি বম্বে থেকে স্নাতকোত্তরের পাঠ নিচ্ছিলেন৷ এ সময়ে মাঝপথেই তিনি ভারতীয় সেনায় যোগ দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন৷ আট বছর হয়ে গেল তিনি ভারতীয় সেনাবাহিনীতে যুক্ত রয়েছেন৷

২০২৩ সালে রাষ্ট্রপুঞ্জের শান্তিসেনার সদস্য হিসাবে গিয়েছিলেন কঙ্গোয়৷ এর আগে আর এক জন ভারতীয় মহিলা এই পুরস্কার পেয়েছেন, মেজর সুমন গাওয়ানি৷ ২০১৯ সালে দক্ষিণ সুদানে কাজ করেছিলেন তিনি৷ রাধিকাকে নিয়ে গুতেরেস বলেছেন, ‘‘উনি একজন সত্যিকারের নেত্রী৷ সকলের আদর্শ৷’’

দিল্লীর তাপপ্রবাহে চিন্তাগ্রস্ত দিল্লী হাইকোর্ট

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

তীব্র তাপপ্রবাহ ও গরমের জেরে নাকাল দিল্লিবাসী৷ সম্প্রতি রাজধানীতে তাপমাত্রা পেরিয়েছে ৫২ ডিগ্রির গণ্ডি৷ এই পরিস্থিতিতে গাছ কাটা নিয়ে সতর্ক করল দিল্লি হাই কোর্ট৷ আদালত জানিয়েছে, নতুন প্রজন্ম যদি গাছকাটা বন্ধ না করে, তা অচিরেই রাজধানী মরুভূমিতে পরিণত হবে৷ অন্য দিকে দেশ জুড়ে যেখানে গাছ লাগানোর কথা উঠে আসছে বারেবারে, সেই সময়েই অবশ্য সামনে এল পরিবেশকে উপেক্ষা করে ধর্মাচরণের পথ সুগম করে তোলার উদ্যোগ৷ কাঁওয়ার যাত্রার জন্য ৩৩ হাজারেরও বেশি গাছ কেটে ফেলা হবে বলে জানিয়েছে উত্তরপ্রদেশের যোগী আদিত্যনাথের সরকার৷ তিনটি জেলার উপর দিয়ে ওই রাস্তা তৈরির জন্যই এই পদক্ষেপ৷ বিষয়টি সামনে আসতেই বিতর্ক তৈরি হয়েছে৷ স্বতঃপ্রণোদিত মামলা করেছে ন্যাশনাল গ্রিন ট্রাইব্যুনাল (এনজিটি)৷ রাজধানীর প্রসঙ্গে আজ দিল্লি হাই কোর্টের বিচারপতি তুষার রাও গেডেলা জানিয়েছেন, সম্প্রতি দিল্লিতে তাপমাত্রা পৌঁছেছে ৫২.৩ ডিগ্রি সেলসিয়াসে৷ সে দিন আর বেশি দেরি নেই, যখন শহর বদলে মরুভূমিতে পরিণত হতে পারে৷ অবিলম্বে গাছকাটার অবস্থান নবীন প্রজন্মকে সরে যাওয়ার বার্তাও দিয়েছেন বিচারপতি৷ আদালত সেই প্রসঙ্গ উল্লেখ করে জানিয়েছে, নির্দিষ্ট, অফিস, কর্মী, যাতায়াতের সুবন্দোবস্ত করতে না পারায় বিচারপতি ওয়াজিরি কাজ করতে পারেননি৷ এই পরিস্থিতিতে প্রশাসনকে সমস্ত পরিকাঠামোর বন্দোবস্ত করার নির্দেশ দিয়েছে আদালত৷ এ জন্য ১৫ জুনের সময়সীমাও বেঁধে দেওয়া হয়েছে৷

আইনজীবী আর অরুণাধরী আইয়ারের পেশ করা ওই কমিটির চেয়ারপার্সনের রিপোর্ট তুলে দিল্লি সরকারকে পরিকাঠামোর ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে৷ আদালত বলেছে, ওই কমিটির কাজের জন্য যে পরিকাঠামো প্রয়োজন তার উপযুক্ত বন্দোবস্ত করতে হবে প্রশাসনকে৷ যাতে কমিটি তার কাজ করতে পারে৷ মুখ্য বনসংরক্ষক জানিয়েছেন, এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রীর কাছে অনুমোদনের জন্য নথিপত্র পাঠানো হয়েছে৷ তিনি সবুজ সঙ্কেত দিলে তা চূড়ান্ত সম্মতির জন্য পাঠানো হবে উপরাজ্যপালের কাছে৷ গোটা বিষয়টি দেখভালের জন্য আদালতবান্ধবও নিয়োগ করা হয়েছে৷ এ ক্ষেত্রে যে হেতু নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্দিষ্ট করেছে আদালত, তাই তর মধ্যেই পরিকাঠামো সংক্রাম্ত বিভিন্ন পক্ষের ছাড়পত্রের কথা বলা হয়েছে৷ আদালত জানিয়েছে, এই মামলার পরবর্তী শুনানি ২৯ জুলাই৷ তার আগেই সমস্ত বন্দোবস্ত করে কমিটির কাজ শুরু করতে হবে৷ আদালতবান্ধবের পরামর্শ মতো ইন্টারনাল ডিপার্টমেন্টাল কমিটির পরিবর্তে এর নাম স্পেশ্যাল এমপাওয়ার্ড কমিটি রাখার আবেদনও গ্রহণ করেছে আদালত৷ এক দিকে যেখানে পরিবেশের চরম পরিস্থিতির বিষয়টি মাথায় রেখে নড়েচড়ে বসেছে দিল্লি হাই কোর্ট সেই সময়েই উত্তরপ্রদেশের যোগী সরকার এনজিটি-কেজানিয়েছে, কাঁওয়ার যাত্রার জন্য ৩৩ হাজারেরও বেশি গাছ কেটে ফেলা হবে৷ গাজিয়াবাদ, মিরাট, মুজফরনগরের উপরে ১১১ কিলোমিটারের ওই যাত্রাপথে কেটে ফেলা হবে গাছ৷ এই মামলার পরবর্তী শুনানি ৮ জুলাই৷

ভুটানের বৃষ্টির পরিমাণের ওপর নির্ভর করছে ভারতীয় সেচ ব্যবস্থা

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

ভুটানে কত বৃষ্টি হচ্ছে, কোন নদীতে কত জল বাড়ছে, প্রতিদিন সে খবর আসছে জলপাইগুড়িতে বন্যা প্রতিরোধের আঞ্চলিক কন্েন্টাল রুমে৷ ভুটান থেকে বহু নদী নেমে এসে বয়ে গিয়েছে উত্তরবঙ্গের তিন জেলা দিয়ে৷ জলপাইগুড়ি, আলিপুরদুয়ার এবং কোচবিহারে বন্যা পরিস্থিতি তৈরি হয় ভুটান থেকে আসা নদী উপচে৷ যদিও ভুটানে কত বৃষ্টি হচ্ছে তার নির্দিষ্ট তথ্য এতদিন উত্তরবঙ্গের সেচ দফতরের কাছে যথাযথ ভাবে পৌঁছত না৷ ফলে প্রায়শই হঠাৎ করে বান আসার খবর পাওয়া যেত বিভিন্ন নদীতে৷ হুড়মুড়িয়ে জল গড়িয়ে এসে উত্তরবঙ্গের সমতলের দু’কূল ভাসিয়ে দিত নদী৷ এ বার থেকে ভুটানের চারটি নদীতে জল বেড়ে যাওয়ার তথ্য পাবে সেচ দফতর৷ দফতর সূত্রের খবর, ভুটানের চার জায়গায় কী পরিমাণ বৃষ্টি হয়েছে তার প্রতিদিনের তথ্য হাতে আসতে শুরু করেছে৷ এই তথ্যে জলঢাকা, তোর্সা, সঙ্কোশ এবং রায়ডাক নদীতে জল বেড়ে যাওয়ার প্রবণতা জানা যাবে সঙ্গে সঙ্গেই৷ তার ফলে আলিপুরদুয়ার, কোচবিহার এবং জলপাইগুড়িতে এই নদীগুলির এবং এর সঙ্গে যুক্ত নদীগুলির দু’পারে সতর্কতামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যাবে৷

সেচ দফতর জানিয়েছে, ভুটানের তেন্দ্রু এলাকার বৃষ্টির তথ্য মিলবে, যাতে বোঝা যাবে জলঢাকা নদীতে কতটা জল বাড়তে পারে৷ তোর্সা নদীর কাছে ভুটানের দোরখার বৃষ্টিপাত, সঙ্কোশের ওয়াংদিফুরান, সঙ্কোশ দুবানি এবং রায়ডাক নদীর কাছে ভুটানের চুখায় বৃষ্টিপাতের তথ্য পাবে সেচ দফতর৷ দফতরের মুখ্য বাস্তুকার (উত্তর-পূর্ব) কৃষ্ণেন্দু ভৌমিক রবিবার বলেন, ‘‘ভুটানের সঙ্গে আমাদের বৈঠকও হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রকের মাধ্যমে ভুটানের সঙ্গে সমন্বয় রয়েছে৷ বৃষ্টিপাত এবং নদীর জল বৃদ্ধির তথ্য মিলছে, এর ফলে বন্যা প্রতিরোধের কাজে এ বছর খুবই সুবিধে হবে৷’’

 

ভুটান থেকে বৃষ্টি বা নদীতে জল ছাড়ার তথ্য পাওয়া যায় না বলে একাধিকবার রাজ্য সরকারের শীর্ষস্তর থেকে আক্ষেপ প্রকাশ করা হয়েছে৷ কেন্দ্রীয় মন্ত্রককে চিঠিও লেখা হয়েছে৷ তার ফলেই এই তথ্য পাওয়া সম্ভব হয়েছে বলে দাবি৷ যদিও মাত্র চারটি এলাকার বৃষ্টিপাত বা নদীর জলের তথ্য দিয়ে উত্তরবঙ্গের বন্যা মোকাবিলার কাজ করা সম্ভব নয় বলে সেচ দফতরই মনে করছে৷ কারণ, ভুটান থেকে ছোট-বড় মিলিয়ে অন্তত ১০টি নদী-ঝোরা নেমে আসে৷ বর্ষাকালে সেগুলি ফুলেফেঁপে উঠে ভয়ঙ্কর রূপ নেয়৷ সেই নদীর তথ্য এখনও প্রশাসনের কাছে নেই৷ ডায়না, রেতি, সুক্রিতি, কালজানি, জয়ন্তী, রায়ডাক ১ এবং রায়ডাক ২, পানা, বাসরার মতো বন্যাপ্রবণ নদীগুলি ভুটান থেকে কতটা জল নিয়ে নামছে তার তথ্য হাতে না আসা পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের সামগ্রিক বন্যা মোকাবিলা সম্ভব নয় বলে সেচ দফতরের দাবি৷ মুখ্য বাস্তুকারের কথায়, ‘‘ভুটান থেকে আরও তথ্য চাই৷ বৈঠকে সে কথা বলেছি৷’’

মেদিনীপুরে পিক্যাপ PCAP) এর বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

প্রিভেনশন অফ ক্রুয়েলটি টু এ্যানিম্যালস এণ্ড প্ল্যান্টস পশ্চিম মেদিনীপুর জেলা শাখার উদ্যোগে ও তরুণ সংঘ ব্যায়ামাগার, মেদিনীপুর এর সহযোগিতায় গত ৫ই জুন, বুধবার বিশ্ব পরিবেশ দিবস উদযাপন করা হয় মেদিনীপুর শহরের কেরানীটোলায়৷ বিশ্ব উষ্ণায়নের প্রভাবে জীবজগত যে সমস্যার সম্মুখীন বর্তমানে তার থেকে কীভাবে তারা মুক্তি পেতে পারে এই বিষয়ে জনগণকে সচেতন করতে এই প্রচারমূলক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের লেখা নব্যমানবতাবাদের উপর আধারিত প্রভাত সঙ্গীত ‘মানুষ যেন মানুষের তরে সবকিছু করে যায়’ সমবেতভাবে পরিবেশন করেন ধৃতি পাল, মণিকা দে, মমতা পাল, কল্পনা গিরি, ইলা রানী পাত্র প্রমুখ সদস্যাবৃন্দ৷ নব্যমানবতাবাদের আলোকে পরিবেশ দূষণের কারণ ও তার থেকে উত্তরণের উপায় বিষয়ে প্রাঞ্জল ভাষায় বক্তব্য রাখেন শ্রী রঞ্জিত কুমার ঘোষ, শ্রী অসিত কুমার দত্ত, কল্পনা গিরি, মমতা পাল, রবীন্দ্রনাথ নন্দী, প্রশান্ত মাহাত প্রমুখ৷ সচেতনতা বৃদ্ধির জন্য শ্লোগান দেওয়া হয় ‘নদী,খাল,বিল,পুকুরের পাড়ে গাছ লাগাও,গাছ লাগাও’, ‘ভূগর্ভস্থ জলের ব্যবহার কমাতে হবে’, ‘নির্বিচারে প্রাণী হত্যা বন্ধ করো’, ‘মজে যাওয়া নদী নালা, খাল বিল, পুকুর সংস্কার করে বৃষ্টির জল ধরে রাখতে হবে’ ইত্যাদি৷ এর সাথে জনগণের মধ্যে বিলি করা হয় প্রচারপত্র৷ প্রায় দুই ঘণ্টা ধরে এই অনুষ্ঠান চলে৷ শুভাশীষ সাহু, বিশ্বদেব মুখোপাধ্যায়, দিলীপ পাল, মনোরঞ্জন মণ্ডল, সুকেশ পলমল, দীপক সাউ, অসীম সাধু, আশিস সাধু প্রমুখ এই অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন৷

জনাদেশ মেনে মোদির সরে যাওয়াই ভালো

সংবাদদাতা
প্রভাত খাঁ
সময়

অষ্টাদশ সাধারণ নির্বাচনের ফল প্রকাশের পর স্পষ্ট হল জনগণের রায়৷ কেন্দ্রীয় শাসকদলের ইসবার চারশপার অসার গর্জনে পরিণত হল৷ প্রবীন প্রাউটিষ্ট নেতা শ্রী প্রভাত খাঁ বলেন, সংখ্যার বিচারে এন.ডি.এ শাসন ক্ষমতায় ফিরলেও জনগণের রায়ে স্পষ্ট-দেশবাসীর বৃহত্তম অংশ মোদির প্রতি অনাস্থা জানিয়েছে৷ এবার নির্বাচনে দল হিসেবে বিজেপি নয়, মোদি সরকারের প্রচার হয়েছে৷ তাই দলের এই পরাজয়ের দায় মোদিকেই নিতে হবে৷ তাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে মর্যাদা দিয়ে মোদির সরে যাওয়া উচিত৷

শ্রী খাঁ বলেন, বিজেপি নামের কোন দল নয়, এবার বিরোধীদের সঙ্গে লড়াই হয়েছে মোদি নামের ব্যষ্টির৷ কারণ প্রচার ছিল মোদি সরকার, মোদি গ্যারান্টি, মোদিকে ভোট দিন৷ তাই পরাজয় মোদিরই৷ কারণ মোদির নেতৃত্বে সরকার গড়লেও সে সরকার হবে এন.ডি.এ সরকার৷ মোদিকে নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর ক্র্যাচে ভর দিয়ে চলতে হবে৷ শ্রীখাঁ বলেন, ২০১৯-এর তুলনায় ৬০টিরও বেশী আসন মোদি হারিয়েছে৷ এমন কি মোদির গড় উত্তরপ্রদেশেও মোদির পরাজয় ঘটেছে৷ রামমন্দির, রামলালার প্রাণ প্রতিষ্ঠা কোনকিছুই মানুষের মনে রেখাপাত করেনি উত্তরপ্রদেশের ফলাফল সেটাই দেখালো৷ মোদি নিজেও গতবারের থেকে প্রায় তিন লাখ ভোট কম পেয়েছে৷ তাই গণতান্ত্রিক মূল্যবোধকে মর্যাদা দিয়ে মোদির সরে যাওয়াই উচিত৷ এন.ডি.এ সরকার হলেও প্রধানমন্ত্রীর আসনে অন্য কেউ বসুন৷

বাঙলা তৃণমূলেরই---দেশে একক গরিষ্ঠতা পেল না বিজেপি

সংবাদদাতা
নিজস্ব সংবাদদাতা
সময়

আবারও এক্সিট পোলকে মিথ্যে প্রমাণ করে বাঙলায় আধিপত্য বজায় রাখলো তৃণমূল৷ এ যেন ২০২১-এর পুনরাবৃত্তি৷ গোটা দেশে বিজেপি ধাক্কা খেয়েছে৷ অব কি বার ৪০০ পার দুরস্ত্‌ একক গরিষ্ঠতাও পেলোনা বিজেপি৷ ২৪০সেই থেমে গেল বিজেপির রথ৷ ৩০০ পার হল না এন.ডি.এ জোট৷ গোটা দেশে ৬০টিরও বেশী আসন হারিয়েছে বিজেপি৷ উত্তর প্রদেশেও অখিলেশ যাদবের কাছে পরাজিত যোগী৷ প্রায় দ্বিগুন আসন বাড়িয়ে কংগ্রেস সংসদে ফিরে আসছে৷ মোদির পক্ষে রাহুল গান্ধীকে উপেক্ষা করা আর সহজ হবে না৷

এন.ডি.এ গরিষ্ঠতা পেলেও ইন্ডিয়া জোটও সরকার গড়ার খেলায় নামবে৷ এন.ডি .এ-র দুই প্রধান শরিক নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুর সঙ্গে ইন্ডিয়া জোটের অনেকেরই সম্পর্ক ভালো৷ এন.ডি.এ জোটে এই দুই দলের হাতেই আছে ৩১টি আসন৷ তাই ইন্ডিয়া জোটের থেকে একটা প্রচেষ্টা শুরু হয়েছে নীতিশ কুমার ও চন্দ্রবাবু নাইডুকে এন.ডি.এ জোট থেকে বার করে আনা৷ তা সম্ভব হলে সরকার গড়ার কাছাকাছি চলে যাবে ইণ্ডিয়া জোটও৷ এই পরিস্থিতিতে মোদির পক্ষে দুই শরিককে সামলে সরকার চালানো কঠিন হয়ে পড়বে৷ কারণ বিজেপির দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এই দুই দলের দাবী মেনে চলা মোদির পক্ষে প্রায় অসম্ভব হবে৷ কারণ একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা থাকায় দশ বছর মোদি শরিক দলকে সেভাবে পাত্তা দেয়নি৷ এবার ফল ভিন্ন, শরিক দলগুলো সুযোগ হাতছাড়া করতে চাইবে না৷ এতদিন তারা মোদির আস্ফালন বাধ্য হয়ে সহ্য করে গেছে৷ এবার তাদের চাহিদা পূরণ না হলে মোদিকে ছেড়ে কথা বলবে না৷ ইন্ডিয়া জোট এই পরিস্থিতির সুযোগ নিতেই চাইবে মোদি, অমিত শাহ এটা ভালোভাবেই জানে৷ তাই চূড়ান্ত ফল প্রকাশের আগেই মোদি অমিত শাহ নীতিশ ও নাইডুর মনোভাব জানতে ফোন করেছেন৷ ইন্ডিয়া জোটের টীম গেমের কাছে পরাজিত হয়ে এখন মোদির পক্ষে শরিকদের সামলে সরকার চালাতেই হিমশিম খেতে হবে৷ একগুঁয়ে স্বভাবের মোদির পক্ষে যা প্রায় অসম্ভব৷

শারীরিক রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতাকে নিয়ন্ত্রণের পরীক্ষা করার জন্য ১০০ দিন সমুদ্রের তলায় রইলেন এক ব্যক্তি

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

সমুদ্রের নীচে ১০০ দিন কাটালেই নাকি বয়স ১০ বছর কমে যায়! শুধু তা-ই নয়, শরীরের কোলেস্টরলের মাত্রাও কমে, লম্বা হয় ক্রোমোজোম! এই দাবিই এখন বিজ্ঞানীদের মধ্যে হইচই ফেলে দিয়েছে৷ অনেকের মনেই প্রশ্ণ, এ-ও কি সম্ভব?  মহাকাশ হোক বা সমুদ্র, সেখানে কী আছে, তা নিয়ে বিজ্ঞানী মহলে উৎসাহের ঘাটতি নেই৷ শুধু বিজ্ঞানীদের মধ্যে নয়, সাধারণ মানুষের মধ্যেও এ নিয়ে কৌতূহল রয়েছে৷ তাই প্রায়ই দেখা যায় ‘উদ্ভট’ পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা হচ্ছে৷ আপতদৃষ্টিতে সেই সব গবেষণা বা পরীক্ষা ‘উদ্ভট’ মনে হলেও, তার ফলাফল অনেক সময়ই বিজ্ঞানে নতুন দিক খুলে দেয়৷ তেমনই এক গবেষণা হল ‘প্রজেক্ট নেপচুন ১০০’৷ জোসেফ ডিতুরি নামে আমেরিকার বাসিন্দা ছিলেন এই গবেষণার অংশ৷ আটলান্টিক মহাসাগরে সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৩০ ফুট নীচে একটি বিশেষ যানে ১০০ দিন কাটিয়ে এসেছেন জোসেফ৷ আর তাতেই নাকি আশ্চর‌্যজনক ফল পেয়েছেন, যা তাঁর জীবনচক্রকে পাল্টে দিয়েছে৷ জোসেফ এখন ‘ডক্টর ডিপ সি’ নামে পরিচিত৷ প্রথম জীবনে আমেরিকার নৌবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন তিনি৷ অবসর নেওয়ার পর তিনি পিএইচডি করেন৷ তার পর নিজেকে নিয়েই নানা বিজ্ঞানমূলক গবেষণা শুরু করেন জোসেফ৷ ‘প্রজেক্ট নেপচুন ১০০’ শুরু হয়েছিল গত বছর ১ মার্চ৷ যে বিশেষ যানে ১০০ দিন সমুদ্রের নীচে কাটিয়েছেন, তা দেখলে মনে হবে, তা যেন একটা হোটেলের ছোটখাটো ঘর৷ সেখানে ফ্রিজ থেকে শুরু করে আরামদায়ক বিছানা কী নেই৷ পর্যাপ্ত খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থাও ছিল সেখানে৷ দিনে কয়েক বার তিনি ওই ডুবোযান থেকে বেরিয়ে সমুদ্রে ঘুরে আসতেন৷ সমুদ্রের নীচে থাকা জোসেফের প্রথম ৯৩ দিন নিয়ে গবেষণা শুরু করেছেন গবেষকেরা৷ জল থেকে উঠে আসার পর তাঁর শরীরে কী কী পরিবর্তন হয়েছে, সেটাই গবেষণার মূল বিষয়৷ জোসেফের বিভিন্ন মেডিক্যাল রিপোর্ট আশ্চর্য করেছে বিজ্ঞানীদের৷

এখন প্রশ্ণ হল, জোসেফের শরীরে কী কী পরিবর্তন হয়েছে? ডক্টর ডিপ সি-র মেডিক্যাল রিপোর্ট থেকে স্পষ্ট, ক্রোমোজোমের টেলোমার্সের বয়স বৃদ্ধি পেয়েছে৷ ক্রোমোজোমের একেবারে নীচের প্রান্তের অংশকে টেলোমার্স বলে৷ সাধারণত বয়স বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে টেলোমার্সের দৈর্ঘ্য কমতে থাকে৷ কিন্তু জোসেফের ক্ষেত্রে উল্টো ঘটনা ঘটেছে৷ সমুদ্রের নীচে দিন কাটানোর আগে জোসেফের শরীরের ক্রোমোজোমের টেলোমার্সের দৈর্ঘ্য যা ছিল, তার তুলনায় ২০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে৷ যা থেকে দাবি করা হচ্ছে, জোসেফের বয়স উল্টো খাতে বইতে শুরু করেছে৷ অন্তত ১০ বছর তাঁর বয়স কমেছে বলে দাবি করা হচ্ছে৷ শুধু বয়স কমা নয়, শরীরে আরও পরিবর্তন ঘটেছে জোসেফের৷ তাঁর স্টেম সেলের সংখ্যাও আগের তুলনায় বেড়েছে৷ স্টেম সেল কী? সহজ ভাষায় বললে সন্তান জন্মানোর পর মায়ের শরীর থেকে যে প্ল্যাসেন্টা বা অমরা বেরিয়ে আসে, তার মধ্যে থাকে স্টেম সেল৷

বিজ্ঞানীদের একাংশের মতে, বার্ধক্যজনিত বিভিন্ন রোগের বিরুদ্ধে লড়াই করার পথও নির্দেশ করল জোসেফের অভিজ্ঞতা৷ জোসেফ মনে করেন, জলের তলায় এমন অবস্থায় কয়েক দিন থাকা প্রয়োজন৷ সকলের থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে থাকার উপকারও ব্যাখ্যা করেছেন জোসেফ৷ তিনি সকলকে উচ্চচাপ পরিস্থিতিতে অন্তত দু’সপ্তাহ কাটিয়ে আসার পরামর্শও দিচ্ছেন৷

অক্সিজেন ছাড়াই এভারেস্টের শীর্ষে ভারতীয়

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

সর্র্বেচ্চ শৃঙ্গের পথে সঙ্গে নেই কোনও শেরপা, নেই অক্সিজেন সিলিন্ডার৷ এ ভাবেই বৃহস্পতিবার ভোরে এভারেস্টের (৮৮৪৮ মিটার) শীর্ষে আরোহণের কৃতিত্ব অর্জন করলেন লে-র বাসিন্দা, ৪২ বছরের স্কালজাং রিগজিন৷

অক্সিজেন ছাড়াই সর্র্বেচ্চ শৃঙ্গের শীর্ষে পৌঁছনো প্রথম ভারতীয় হিসেবে নাম রয়েছে ফু দোরজে শেরপার (১৯৮৪ সালে)৷ তার পরে ভারতীয় হিসেবে এই কৃতিত্ব লাদাখের রিগজিনের৷ এ দিন স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৪টে নাগাদ এভারেস্টের সামিটে পৌঁছন তিনি, একা৷ উল্লেখ্য, ২০২২ সালে শেরপা ও অক্সিজেন সিলিন্ডার ছাড়া অন্নপূর্ণা (৮০৯১ মিটার, দশম উচ্চতম) এবং লোৎসের (৮৫১৬ মিটার, চতুর্থ উচ্চতম) সামিটে পৌঁছেছিলেন তিনি, যা ভারতীয় হিসেবে প্রথম৷

গত বছরে এভারেস্ট-লোৎসেজয়ী, ভারতীয় সেনাবাহিনীর মেজর চিরাগ চট্টোপাধ্যায় জানাচ্ছেন, এ বছর ধৌলাগিরি অভিযানে তাঁর সঙ্গী ছিলেন রিগজিন৷ কিন্তু খারাপ আবহাওয়ার কারণে রুটই খোলা যায়নি এ বার৷ এর পরেই এভারেস্টে যান রিগজিন৷ চিরাগ বলছেন, ‘‘গত কয়েক দিনে এভারেস্টে অত্যধিক ভিড় ছিল৷ এত ভিড়ে অক্সিজেন ছাড়া এগোনো বিপজ্জনক হত৷ তাই রিগজিন ক্যাম্প ২-তে বসে অপেক্ষা করেছে৷ মঙ্গলবার সেখান থেকে ক্যাম্প ৩ যায়৷ বুধবার বিকেলের দিকে ক্যাম্প ৪ থেকে সামিটের দিকে যাত্রা করে৷’’ এ দিনই রিগজিন ক্যাম্প ২-তে নেমে এসেছেন৷

প্রসঙ্গত, এভারেস্টে শেরপা ও অক্সিজেনের সাহায্য ছাড়া এগিয়ে গত বছর নিখোঁজ হন হাঙ্গেরির জিলার্দ সুহাজদা৷ এ বছর একই ভাবে এভারেস্টের শীর্ষ ছুঁয়ে ফেরার পথে মৃত্যু হয় মঙ্গোলিয়ার দুই পর্বতারোহীর৷ এ দিন অক্সিজেন ছাড়া এগিয়ে কেনিয়ার এক আরোহীর মৃত্যুর খবরও মিলেছে৷ তবে চিরাগের মতে, আট হাজারি পথে শেরপা ও সিলিন্ডার ছাড়া সামিটের পূর্ব অভিজ্ঞতা রয়েছে রিগজিনের৷ তাই এই সব খবর তাঁর আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরাতে পারেনি৷

এ বারের এভারেস্ট মরশুমে বাংলা থেকে যাওয়া, হুগলির সবিতা মাহাতো অসুস্থতার কারণে ৮৫০০ মিটার থেকে ফিরতে বাধ্য হয়েছেন৷ অপর বাঙালি অভিযাত্রী, বাংলাদেশের চিকিৎসক-পর্বতারোহী বাবর আলি গত ১৯ এবং ২১ মে যথাক্রমে এভারেস্ট এবং লোৎসের সামিট ছুঁয়েছেন৷

ব্যাটারি প্রযুক্তির নতুন পদ্ধতি আবিষ্কার করল তিন বাঙালী বিজ্ঞানী

সংবাদদাতা
পি.এন.এ.
সময়

ইলাহাবাদের হরিশচন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটের বিজ্ঞানী দম্পতি সুদীপ চক্রবর্তী ও তিষিতা দাস এবং আমেরিকার টেক্সাস এ অ্যান্ড এম ইউনিভার্সিটির বিজ্ঞানী অধ্যাপক সর্বজিৎ বন্দ্যোপাধ্যায়৷ ‘নেচার মেটেরিয়ালস’ জার্নালে প্রকাশিত তাঁদের গবেষণাপত্রে ‘প্রি ইন্টারকালেশন’ নামে নতুন পদ্ধতির কথা বলেছেন৷ এই রসায়নে একটি ব্যাটারি তৈরিও করেছেন সর্বজিতেরা৷ গত এক দশক ধরে ক্রমেই উন্নততর হয়েছে লিথিয়াম আয়ন ব্যাটারির প্রযুক্তি৷ তবে এই ‘প্রি ইন্টারকালেশন’ পদ্ধতি মোবাইল, ল্যাপটপ থেকে শুরু করে বিদ্যুৎচালিত পরিবহণেরও ভোল পাল্টে দেবে বলে তাঁরা আশাবাদী৷

যন্ত্রে চালিকাশক্তি যোগানোর সময় ব্যাটারির অ্যানোড অংশ থেকে লিথিয়ামের আয়ন ক্যাথোড অংশে যেতে থাকে৷ অ্যানোডের গ্রাফাইটে লিথিয়াম একা একা থাকে, যা মোটেও তার ধর্ম নয়৷ ক্যাথোডে কোবাল্টের মতো ধাতুর অক্সাইডের সঙ্গে জুড়তে চেয়ে লিথিয়াম পরমাণু নিজের একটা ইলেকট্রন ছেড়ে দু’টি আয়নে ভাঙে৷ ধাতব তার দিয়ে ক্যাথোডে পৌঁছনোর পথে ঋণাত্মক আয়ন, অর্থাৎ দলছুট ইলেকট্রনগুলিকে সার্কিট থেকে সার্কিটে ছুটিয়ে ইলেকট্রনিক যন্ত্র কাজ করায়৷ ব্যাটারির ভিতরে চার্জের ভারসাম্য বজায় রাখতে ধনাত্মক আয়ন অর্থাৎ ইলেকট্রন ঝেড়ে ফেলা পরমাণুর বাকি অংশ লিথিয়াম-লবণের দ্রবণের মধ্য দিয়ে ক্যাথোডে পৌঁছয়৷

হরিশচন্দ্র রিসার্চ ইনস্টিটিউটের রিডার ও ‘মেটস ল্যাব’-এর প্রধান সুদীপ এবং ‘ইন্সপায়ার ফ্যাকাল্টি’ তিষিতা জানান, লিথিয়াম আয়নগুলি ব্যাটারিতে চার্জ দেওয়ার সময় নিজের নিজের পথে আবার অ্যানোডে ফিরে যায়৷ তাকেই বলে ‘ইন্টারকালেশন’৷ ক্যাথোডের ধাতব অক্সাইডের সঙ্গে দু’দিক দিয়ে আসা লিথিয়ামের দুই আয়ন আলাদা ভাবে জুড়ে নতুন যৌগ গঠন করে থাকে৷ তার আণবিক বন্ধন শক্তপোক্ত৷ চট করে ভাঙতে চায় না৷

বাঙালি বিজ্ঞানী ত্রয়ী জানাচ্ছেন, তাঁরা কোবাল্ট অক্সাইডের বদলে ক্যাথোডে ভ্যানাডিয়াম পেন্টক্সাইড নামে একটি রাসায়নিক যৌগের সঙ্গে সোডিয়াম ও পটাশিয়াম ব্যবহার করে দেখেছেন, লিথিয়ামের ধনাত্মক আয়নগুলি এসে সুবিন্যস্ত ভাবে তার মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে৷ তার মধ্যে সোডিয়াম ও লিথিয়াম পরমাণুর বিন্যাসে একটি নির্দিষ্ট ছাঁচ লক্ষ করা যাচ্ছে৷ লিথিয়াম ও সোডিয়াম পরমাণু বহুমাত্রিক নকশায় সমান্তরাল ভাবে বসছে৷ গবেষণাপত্রে এই অতিসূক্ষ্ম পথবিন্যাসের খুঁটিনাটি রয়েছে৷ একেই প্রি-ইন্টারকালেশন বলেছেন তাঁরা৷ এ ভাবে ক্যাথোডে বেশি আয়ন ধরানো যায়, আবার ঝাঁক ধরে ফেরতও পাঠানো যায় বলে ব্যাটারির স্বাস্থ্যও ভাল থাকে৷ তারকেশ্বরের মন্দিরপাড়ার সুদীপ নরেন্দ্রপুর রামকৃষ্ণ মিশনের প্রাক্তনী৷ দমদমের তিষিতা এক সময়ে গবেষণা করেছেন যাদবপুরের ইন্ডিয়ান অ্যাসোসিয়েশন ফর দ্য কাল্টিভেশন অব সায়েন্সে৷ সর্বজিৎ আদতে দক্ষিণ কলতাকার কসবার বাসিন্দা৷ সম্প্রতি লাদাখের রেয়াসি জেলায় দেশের মধ্যে প্রথম খোঁজ মিলেছে লিথিয়ামের ভান্ডারের৷ তিন বাঙালি বিজ্ঞানীর আশা, সেই সঞ্চয় কাজে লাগিয়ে উন্নতির পথে দেশকে আরও দ্রুত এগিয়ে নিয়ে যাবে তাঁদের গবেষণা৷