আমার ছোটবেলায় শ্যামবাজারে আমার মামার বাড়িতে এক রাঁধুনী ছিলেন৷ রান্নায় তাঁর হাত ছিল ৰেশ পাকা–যেন একেবারে সৈরিন্ধ্রী৷ আমরা তাঁকে ৰামুনদিদি বলে ডাকতুম৷ নুন–ঝাল–মশলার হিসেব ছিল তাঁর চমৎকার৷ একবার বাড়িতে কিছু লোককে নেমন্তন্ন করা হয়েছিল৷ খাবার পর অতিথিরা মুক্তকণ্ঠে ৰামুন–দিদির প্রশংসা করতে লাগলেন৷ সবাই বললেন–যা রেঁধেছ ৰামুন–দিদি, অমৃত, অমৃত! ত্রিভুবনে এর তুলনা মেলা ভার!
নিজের প্রশংসা শুনে আহ্লাদে আটখানা হয়ে ৰামুনদিদি উচ্ছ্বসিত ভাষায় বলে উঠলেন– আমি বালো পাক করুম না তো করৰো ক্যাডা
খানিক বাদে নিমন্ত্রিতরা চলে গেলেন৷ অতিথিরা চলে যাবার পরে আমার ফুল মাসিমা ৰামুনদিদিকে ডেকে বললেন–ৰামুনদিদি, নিজের মুখে নিজের প্রশংসা করতে নেই৷
ৰামুনদিদি জিজ্ঞাসু নেত্রে তাকিয়ে রইলেন৷ বললেন–তবে কী ক রুম
ফুল মাসিমা–যখন কেউ তোমার প্রশংসা করবে তখন প্রথমতঃ মুখ আর চোখ নীচের দিকে করে দাঁড়িয়ে থাকবে দ্বিতীয়তঃ মিটিমিটি হাসবে তৃতীয়তঃ হাত কচলাতে থাকবে চতুর্থতঃ উৎকর্ণ হয়ে অর্থাৎ কান খাড়া করে নিজের প্রশংসা শুনতে থাকবে ও আনন্দ পেতে থাকবে৷ ৰুঝেছ
ৰামুনদিদি–হ, ৰুস্সি৷
তার কিছুদিন পরেকার কথা৷ আবার কিছু লোককে নেমন্তন্ন করা হয়েছে৷ অতিথিরা খেয়ে একেবারে ভাবতন্ময় হয়ে গেছেন৷ তাঁরা ৰামুনদিদিকে ঘিরে প্রশংসা করে চলেছেন আর বলছেন–কী বলব ৰামুনদিদি, যা রেঁধেছ অমৃত........ অমৃত! স্বর্গের ইন্দ্রলোকের বাবুর্চি –খানসামারাও এমন রাঁধতে পারে না৷ সত্যি কথা বলতে কী, ৰামুনদিদি যা খেলুম তা মুখে লেগে রইল৷ আর প্রত্যাশায় রইলুম কবে আবার ডাক পড়বে৷
ৰামুনদিদির আগেকার দিনের কথা মনে ছিল৷ তিনি বসেছিলেন৷ হঠাৎ তড়াং করে উঠে দাঁড়ালেন৷ মুখ আর চোখ নীচের দিকে করলেন..........হাত দু’টি কচলাতে লাগলেন.....মিটিমিটি হাসতে লাগলেন.........কান খাড়া করে নিজের প্রশংসা শুনতে লাগলেন আর আনন্দপেতে থাকলেন৷ কিন্তু ৰামুনদিদি এদিনও শেষ রক্ষা করতে পারলেন না৷ সব কিছু ঠিকভাবে করার পরে ৰামুনদিদি পরিশিষ্ট হিসেবে কিছুটা অতিজল্পন (বিতর্ক) যোগ করে বিনয়ের পরাকাষ্ঠা দেখাতে গিয়ে বললেন–কী আর পাক করসি, কী আর পাক করসি, এ্যাই মশলা দিয়া কানিকডা পসা গোবর পাক করসি৷
নিমন্ত্রিতরা একসঙ্গে ঃ থু.......থু...........থু............!