আমি নারী!
সুন্দর এই পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর সৃষ্টি আমি৷
কখনও আমি বিদূষী মৈত্রী, ক্ষণা লীলাবতী৷
কখনও বা সতী সাবিত্রী সীতা অরূন্ধতী৷
আমার পূর্ণতা ষোড়শীর দর্পণে৷
পূর্ণতা মোর শত মনীশীর জন্মদানে৷৷
আমার পূর্ণতা নিশাবসানের হুংকারে৷
আমার পূর্ণতা দশভূজার রণ ঝংকারে৷৷
নারী হল একজন পূর্ণ মানব৷ সৃষ্টির ঊষালগ্ণ হতে নারী আপন জীবন তুচ্ছ করে নতুন প্রজন্মকে ধারণ, বহন ও পালন করে চলেছেন, নারীরা তাঁদের সেবা ও ত্যাগ দিয়ে রচে গেছেন কালের কাহিনী৷ সেই অনিত্যের নিত্যপ্রবাহিনীর জয়গাথা শুনতে পাই কবির কন্ঠে---
‘‘জনে জনে রচি গেল কালের কাহিনী,
অনিত্যের নিত্য প্রবাহিনী
জীবনের ইতি বৃত্তে নাম হীন কর্ম-উপহার
রেখে গেল তার
আপনার প্রাণ সূত্রে যুগ যুগান্তর
গেঁথে গেঁথে চলে গেল না রাখি স্বাক্ষর,
ব্যথা যদি পেয়ে থাকে না রহিল কোনো তার ক্ষত
লভিল মৃত্যুর সদাব্রত৷৷’’
এই সেই নারী যাঁরা জীবনের ইতিবৃত্তে নামহীন কর্ম-উপহার দিয়ে চলেন, শুধু নাম হীন কেন তাঁরা ‘ধাম হীন ও বটে’৷ যাঁর স্থায়ী কোন ঘর নেই, শৈশবে পিতৃ গৃহ, যৌবনে শ্বশুরালয় এবং অনেকের ভাগ্যে শেষ জীবনে কাশী বেনারস বা বৃদ্ধাশ্রম, ঘর ছেড়ে তবে ঘর খানি পেতে হয় তারে অচেনার ধারে৷ এই সেই নারী যাঁরা অনিত্যকাল ধরে উচ্চারণ করে থাকেন ‘‘ওঁ সহনা ভবতু’’৷
তাদের এই সহনশীলতা এতটাই যে হাজার অপমান, লাঞ্চনা, গঞ্জনা, মারেও তাঁরা সংসারের মঙ্গলার্থে মুখে রা কাড়েন না৷ হয়তো বা এজন্যই নারীদের নাম হয়েছে---‘অবলা’
এই নারীরাই আবার কোলে বাচ্চা নিয়ে হাতে তলোয়ার ধরেছেন বৃহত্তর স্বার্থে৷ গুর্জ্জর রমনী রাম পিয়ারী, ঝাঁসী রাণী লক্ষ্মীবাই, মাতঙ্গিনী হাজরা, প্রীতিলতা ওয়াদ্দেদার, বীনা ভৌমিক প্রভৃতিরা৷ এই সমস্ত মহিয়সী মহিলারা বীরের মত লড়াই করেছেন৷ বলতে কুন্ঠা নেই যে এঁরা একজন মহিলা শত শত সাধারণ পুরুষের থেকেও বীর!
কুইন এলিজাবেথ (প্রথম) ১৫৮৮ সালের ১৯শে আগষ্ট Speech To The Troops At Tilbury’তে বলেছিলেন--- I know I have but the body of a weak and feeble woman% but I have the heart of a King, and of a King of England too........I myself will take up arms, I myself will be your general, Judge and rewarder of every one of your virtues in the field.’
তাই যুগ যুগ ধরে মহিয়সী নারীরা প্রার্থনা করেছেন ---
‘‘হে বিধাতা, আমারে রেখো না বাক্যহীনা-
রক্তে মোর জাগে রুদ্রবীণা,
উত্তরিয়া জীবনের সর্বোন্মত মুহূর্তের পরে
জীবনের সর্র্বেত্তম বাণী যেন ঝরে কন্ঠ হতে
নির্র্ধরিত স্রোতে৷’’
‘নইকো অবলা’র বিভাগে আমরা এবার থেকে ভারতবর্ষের যে সমস্ত মহিলারা যুগ যুগ ধরে হাজার ঘাত প্রতিঘাত সহ্য করে এগিয়ে এসেছেন সমাজের বিশুদ্ধি করণের জন্য, সমাজ সংস্কারের জন্য যাঁরা তাঁদের ‘রাঁধার পরে খাওয়া আর খাওয়ার পরে রাঁধা’র গোলক ধাঁধাতে থেকে নিজস্ব পাণ্ডিত্য মনীষার বিকাশ ঘটিয়ে সমাজে আলোক বর্তিকা নিয়ে এগিয়ে গেছেন এবং যাচ্ছেন তাঁদের সম্পর্কে যথাসাধ্য ধারাবাহিক আলোচনা করার প্রচেষ্টা চালিয়ে যাবো যাতে আমাদের বর্তমান সমাজের মানুষেরা বিশেষতঃ তরুণ তরুণীরা উদ্বুদ্ধ হতে পারেন ‘এক নোতুন পৃথিবী পৃথিবী গড়ার আদর্শে, তাই তো পরিশেষে বলতে হয়---
‘‘অবলা কেন মা এত বলে! বহুবল ধারিনীর
, নমামি তারিণীং, রিপুদলবারিনীর মাতরম৷’’
- Log in to post comments