সাধনা কবে থেকে শুরু করা উচিত?

Baba's Name
শ্রী শ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী

ৰুদ্ধিমান ব্যষ্টি শৈশব অবস্থা থেকেই ধর্মসাধনা করৰে৷ কারণ মানুষের শরীর দুর্লভ, আর তার থেকেও দুর্লভ সেই জীবন যা সাধনার দ্বারা সার্থক হয়েছে৷ সব কাজ সঠিক সময়ে করা উচিত৷ যেমন আষাঢ় মাসে ধান রোপণ করা উচিত, আর অঘ্রাণে কাটা উচিত৷ কেউ যদি অঘ্রাণে রোপণ করে তবে সমস্যা হয়ে যাৰে৷ ফসল হৰে না৷ ঠিক ওই রকম কেউ যদি ভাবে ৰৃদ্ধ বয়সে ধর্মসাধনা করৰ, তাহলে খুব ৰড় ভুল হয়ে যাৰে৷ কারণ ৰৃদ্ধাবস্থা সমস্ত মানুষের জীবনে নাও আসতে পারে৷ কালকের সূর্যোদয় তোমার জীবনে নাও আসতে পারে৷ তাই কোন কাজ কালকের জন্যে ফেলে রাখা উচিত নয়৷ যখনই কিছু ভাল কাজ করার ইচ্ছা হয় তো তখনই করে নাও৷ তৎক্ষণাৎ করে নাও৷

তোমরা জান রাবণের কাছ থেকে রাম কিছু উপদেশ পেয়েছিলেন৷ যখন রাবণ মৃত্যুশয্যায়, তখন রাম তাঁকে ৰললেন, আপনি অভিজ্ঞ রাজা, আপনি আমাকে কিছু উপদেশ দিন৷ রাবণ ৰললেন, ‘‘শুভস্য শীঘ্রম, অশুভস্য কালহরণম্‌’’৷ যখন শুভ কাজ করার ইচ্ছা হয় তো সেটা তৎক্ষণাৎ করে নাও,then and there করো৷ এক মুহূর্ত দেরী হওয়া উচিত নয়৷ আর যখন অশুভ কাজ করার ইচ্ছা হৰে তখন দেরী করতে থাক, আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু৷ রাবণ ৰললেন, দেখ রাম, আমার মনে ইচ্ছা ছিল স্বর্গ অবধি একটা সিঁড়ি বানিয়ে দেৰ, কিন্তু আজ নয় কাল, কাল নয় পরশু করতে কারতে আজ আমার মৃত্যু এসে গেল, সিঁড়ি বানানোর কাজ শুরু হ’ল না৷ আর দ্বিতীয় কথা, ‘‘অশুভস্য কালহরণম্‌’’৷ আমার মনে ইচ্ছা হয়েছিল সীতার অপহররণ করৰ৷ এটা অশুভ কর্ম ছিল৷ যদি আমি দেরী করতাম, আজ না কাল, কাল না পরশু, তাহলে এই অশুভ কর্ম আমার দ্বারা হত না, আর আমাকে এই রকম মৃত্যু বরণ করতে হত না৷ তাহলে ‘‘শুভস্য শীঘ্রম্‌ অশুভস্য কালহরণম্‌’’৷

চার-পাঁচ বছরেই মানুষের মধ্যে অল্প-বিস্তর ৰুদ্ধির উদয় হয়, উন্মেষ হয়৷ ওই সময় থেকেই সাধনার পথে আসা উচিত, সাধনা শুরু করে দেওয়া উচিত৷ ৰৃদ্ধাবস্থার জন্যে অপেক্ষা করা উচিত নয়৷ কারণ ৰৃদ্ধাবস্থা আসতে নাও পারে৷ অনেকের হয় তো আজকেই শেষ দিন৷ জীবনে কালকের দিন নাও আসতে পারে৷ আর একটা কথা৷ ধরে নাও, জীবনে বৃদ্ধাবস্থা এলেও তার জন্যে একটা কথা মনে রাখা দরকার, শরীর যখন সুস্থ, বয়স কম সেই সময়ই সাধনার উচিত সময়৷ বৃদ্ধাবস্থায় তো শরীর দুর্বল হয়ে পড়ৰে, রক্তে তেজ থাকৰে না৷ নোতুন কাজ মানুষ বৃদ্ধাবস্থায় শুরু করতে পারে না৷ যা কিছু কাজ অল্প বয়সে শুরু করা উচিত৷ শুধুমাত্র এই নয়, আর একটি কথা৷ প্রতিটি কর্ম অভ্যাসের দ্বারা পুষ্ট হয়৷ সাধনাও ধীরে ধীরে অভ্যাসের দ্বারা পুষ্ট হয়৷ তাই যত কম বয়সে সাধনা শুরু করা যায় তত ভাল, বৃদ্ধাবস্থায় সাধনা শুরু করলে কবে তা পুষ্ট হৰে? সেইজন্যে এইকথা মনে রাখৰে, ‘‘কৌমার আচরেৎ প্রাজ্ঞঃ ধর্মান ভাগবতানিহ’’৷

ৰুদ্ধিমান ব্যষ্টি কৌমার, অর্থাৎ ছোট বয়স থেকেই ধর্মসাধনা শুরু করৰে৷ কেন? ‘‘দুর্লভং মানুষং জন্ম তদপ্যধ্রুবমথর্দম্’’৷ দেখ, কত গাছপালা, পোকা-মাকড়, তারপর ধীরে ধীরে, নানা জীবনের স্তর পার হয়ে মনুষ্য জন্ম পাওয়া গেছে, মানুষের শরীর লাভ হয়েছে৷ এই মনুষ্য শরীর অবশ্যই দুর্লভ৷ মানুষের শরীর পাওয়ার পরেও যদি কারোর জীবনযাত্রা পোকা-মাকড়ের মত হয় তবে খুব দুঃখের কথা৷ পবিত্র সাধনার দ্বারা মানুষের জীবন সার্থক হয়৷ এইভাবে তোমার মনুষ্য জীবন তো আরও দুর্লভ৷ সেইজন্যে ৰুদ্ধিমান মানুষ এই দুর্লভ বস্তু পাওয়ার চেষ্টা করৰে৷ যে সাধনার পথে নেই তার কর্তব্য আজই সাধনা শুরু করে দেওয়া৷ যে সাধনার পথে আছে, সে আজ থেকেই জোরদার সাধনা শুরু করে দিক৷ তবে মানুষের দেহে আসা তার সার্থক হৰে৷