পেট্রল ও ডিজেলের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি!

লেখক
আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

গত এক বছর ধরে  পেট্রোল ও ডিজেলের ক্রমাগত মূল্যবৃদ্ধি হয়ে চলেছে৷ পেট্রল ও ডিজেলের মূল্যবৃদ্ধি মানে অন্যান্য সমস্ত নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের  মূল্যবৃদ্ধি ৷ কারণ তেলের ওপর নির্ভরশীল ট্রাক, বাস প্রভৃতি পরিবহন৷ ভোগ্যপণ্যের পরিবহন খরচ বাড়লে স্বাভাবিকভাবে তার দাম বাড়বে৷ এমনিতে করোনা সংক্রমণ রোখার জন্যে দীর্ঘ লকডাউনের ফলে বহু কলকারখানা বন্ধ হয়ে গেছে৷

মানুষের সেবার জন্যেই তো সরকার! ডিজেল ও পেট্রল দেশের  অর্থনীতির, বলতে গেলে, প্রাণভোমরা ৷ সেই জ্বালানী তেল নিয়ে  সরকারের নীতি বিস্ময়ের উদ্রেক করে৷ আন্তর্জাতিক বাজারে যেখানে তেলের দাম কমেছে,অন্যান্য সব অর্থোন্নত দেশগুলিতে যখন তেলের দাম হ্রাস করা হচ্ছে, তখন ভারতে কীভাবে তেলের দাম বৃদ্ধি করা হচ্ছে? এটা কি পুঁজিপতিদের স্বার্থে? অথবা  আগামী নির্বাচনের জন্যে অর্থসংগ্রহের নয়াকৌশল৷ মোদী সরকারের কার্যকলাপ দেখে মনে হওয়া স্বাভাবিক যে এই সরকার জনগণের সরকার নয়৷ পুঁজিপতিদের স্বার্থরক্ষাকারী তল্পিবাহক সরকার৷ মানুষ বাঁচলে তবে না আগামী নির্বাচনেও  গদী দখলের স্বপ্ণ? কেন্দ্রীয় সরকারের এই জনবিরোধী নীতির বিরুদ্ধে দেশের বিরোধী দলগুলি আন্দোলনে সামিল হচ্ছে৷

কেন্দ্রীয় সরকারের ভেবে দেখা উচিত, পুঁজিপতি স্বার্থ আগে  নয়, জনগণের স্বার্থ আগে৷ বিভিন্ন ব্যাপারেও লক্ষ্য করা যাচ্ছে, সরকার বড় বড় শিল্পপতিদের স্বার্থেই কাজ করছেন, তাঁদের কথা মতই চলছেন৷ সরকার দেশের সম্পদ খনি, রেল, বীমা প্রকল্প প্রভৃতি ধীরে ধীরে বেসরকারী মালিকানার হাতে ছেড়ে দিচ্ছেন৷

পুঁজিপতিরা জনগণকে বাঁচাবে না৷ ‘টি্‌ক্‌ল ডাউন’ তত্ত্ব জনগণেরে কল্যাণে ব্যর্থ প্রমাণিত  হয়েছে৷ পুঁজিপতিদের দয়ায় দেশ বাঁচবে না৷ বরং অর্থনীতির চালিকা শক্তি যাতে জনগণের হাতে থাকে--- সরকারকে তারই ব্যবস্থা করতে হবে৷ সরকার মুখে দেশের জনগণকে আত্মনির্ভর হওয়ার কথা বলছেন৷ আত্মনির্ভরতা মানে পুঁজিপতি নির্ভরতা নয়৷ পুঁজিপতিরা মুনাফা ছাড়া কিছু বোঝে না৷ সরকারের কর্তব্য দেশের জনসাধারণের পাশে দাঁড়ানো, তাদের অভাব-অভিযোগ , তাদের দুঃখকষ্ট  লাঘব করা৷ আর প্রকৃতি মা দেশের সর্বত্র যে সম্পদ দিয়েছেন--- কাঁচামালের সঞ্চয় রেখেছেন, তার ওপর নির্ভর করেই কৃষিনির্ভর শিল্প, কৃষি সহায়ক শিল্পের  ও  অন্যান্য প্রাকৃতিক সম্পদ নির্ভর শিল্প প্রাউট প্রদর্শিত সমবায়ের মাধ্যমে গড়ে তুলতে হবে৷ এ ব্যাপারে সরকারকে জনগণের পাশে দাঁড়াতে হবে৷ জনগণকে আত্মনির্ভরশীল হতে সরকারকে সহযোগিতা করতে হবে৷ অর্থনৈতিক শক্তিকে জনগণের মধ্যে বন্টন অর্থাৎ বিকেন্দ্রীকরণ করতে হবে, তবে হবে জনগণের সরকার নাহলে তারা হবেন জনগণের সেবকের বেনামীতে জনগণের শোষক৷