অবশেষে বাধ্য হয়ে জি.এস.টি.-র দিকে নজর কেন্দ্রের

লেখক
মুসাফির

আজ জনগণের মনে অনেক প্রশ্ণ জমে উঠেছে কারণ গত ৫টি রাজ্য নির্বাচনে  কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের পকেটে কোন রাজ্যেরই  আশাপূরণ ফল আসেনি তাই জি.এস.টি. যেটা জনগণের কাছে বিষবৎ ছিল সেটার দিকে কেন্দ্রীয় সরকার দৃষ্টি দিয়েছে৷ সরকার জনগণের মন বিজেপির দিকে ঘোরাতে  জি.এস.টি করের বোঝা কমাতে চাইছে৷ যাতে আগামী ২০১৯শের লোকসভা নির্বাচনে গদী হারাতে না হয়৷ কেন্দ্রের বিজেপি সরকারের অর্থমন্ত্রী জেটলি  জি.এস.টি-র করের বোঝা কিছুটা  কমাবার  কথা ঘোষণা করেন৷ ২২শে ডিসেম্বর  জি.এস.টির কাউন্সিল ৩৩টি পণ্যের দাম কমান অর্থমন্ত্রী৷ তিনি ঘোষণা করেন কিছু পণ্যের  ওপর কর বসাবে না৷ কিছু কিছু পণ্যের ওপর ৫ শতাংশ, ১২ শতাংশ , ১৮ শতাংশ স্ল্যাব চালু করার কথা  ঘোষণা করা হয়৷ ১২১৬টি পণ্যের মধ্যে  ১৮৩টি পণ্য শূন্যকর ও ৩০৮টির উপর ৫ শতাংশ কর আর ১৭৮টির উপর ১২ শতাংশ কর  ও ৫১৭টির উপর ১৮ শতাংশ কর বসতে চলেছে৷  কিন্তু বিলাসদ্রব্যগুলির ওপর চড়া হারে কর থাকবে৷ বিলাসদ্রব্য---অটো, যন্ত্রাংশ, ডিস ওয়াশার, এসি, সিমেন্টসহ ২৮টি  পণ্যের  ২৮ শতাংশ কর বহাল থাকবে৷ তিনি বলেন কংগ্রেস আমলে পূর্বে  ৩১ শতাংশ কর চাপানো ছিল৷ তার কর ফাঁকি দেওয়ার সেই সময়ে বেশী হত৷  জেটলি বলেন ১২ শতাংশ ও ১৮ শতাংশের মধ্যে একটি স্যান্ডার্ড চালু হবে৷  অদূর ভবিষ্যতে সিমেন্ট ও অটো যন্ত্রাংশকে স্ল্যাবের আওতায় নিয়ে আসা হবে৷

গণতন্ত্রের সরকার  প্রশাসনের খরচ  চালাতে  কি শুধু জনগণের উপর চাপিয়ে দেশ সেবা করে চললেন না অন্য কোন আর্থিক উপার্জনের চিন্তা করবেন৷ সেটা আজ বড়ো প্রশ্ণ? চরম বেকার সমস্যার সমাধান না করে তো সরকার জনগণের ঘাড়ের উপর করের বোঝা চাপাতে পারেন না৷ নিম্ন মধ্যবিত্ত , গরিব পরিবারগুলোতো শেষ হতে বসে চলেছে৷ অত্যন্ত  চিন্তার কথা  জীবন দায়ী নিত্য প্রয়োজনীয়  ও ওষুধগুলির  দাম  লাফিয়ে  লাফিয়ে বাড়ছে৷  যে ওষুধগুলির দাম গত বছর ২৪ টাকা ছিল বর্তমানে  সেটার দাম ৩২ টাকা হয়েছে, ৭০টাকার ওষুধের দাম হয়েছে ১০০টাকা, বোঝা যায় জিএসটি কোন হারে বেড়েছে৷  সাধারণ মানুষ কিছুই জানে না৷  বাজারে তো কোন জিনিষের কি দাম  সেটা সম্বন্ধে খরিদদাররা অন্ধকারে৷ জিএসটি নামে  সারাদেশে একটা দারুণ উপার্জন  দোকানদার ও  ফোড়েরাই  জানে কি হচ্ছে আর হয়ে চলেছে৷ বর্তমানে  শীতকালে তো শীতের ফসল  ভাল জন্মাচ্ছে ৷  কিন্তু বাজারে সব জিনিষের দাম যেন আগুন হয়ে আছে৷ এ ব্যাপারে  কি কেন্দ্র কি রাজ্য তো  কোন খবর রাখেন বলে তো মনেই হয়  না৷

ভারতের গণতন্ত্র চলছে  কিন্তু জনগণের এত দুর্দশা কেন? নির্র্বচনের সময়  কি কেন্দ্রীয় সরকার  আর কি  রাজ্য সরকার দেশের উন্নতির  কথা সাতকাহন করে বলে বড়ো বড়ো  সভা করে, টিভিতে  ব্যাপক প্রচার চালিয়ে জনসমর্থন  যোগাড়ে  সদাব্যস্ত থাকেন৷  প্রতিদিন কিভাবে  হতভাগ্য  গরিব  মানুষ বেঁচে  থাকার  জন্য লড়াই করে চলেছে  তার  সংবাদ কি জন প্রতিনিধিদের  চোখে পড়ে না?  তাঁরা তো  দেশেরই মানুষ৷ আগে  দেখা যেত  জিনিসের  দাম বেড়ে  গেলে  রাজনৈতিক  দলের  নেতারা জনসভা  করে  ব্যবসাদারদের  সজাগ  যেমন  করতেন,তার পাশাপাশি জনগণকে  সচেতন করতেন৷ এখন কিন্তু এসবই বন্ধ৷ শুধু সরকার পক্ষ ও বিরোধী পক্ষ তরজার লড়াই করছে  আর  এ ওর বিরুদ্ধে  দোষারোপ  করে বাজার গরম করছেন৷  তাছাড়া রাজনৈতিক  দলগুলির  মধ্যে  বিরোধ বাড়ছে  আর এলাকা  দখলের  সহিংস আন্দোলন  চলছে৷ এ কেমন  গণতন্ত্রের  কুৎসিত  বহিঃপ্রকাশ?

রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়নে  দেশ  ধবংস হচ্ছে৷  দুর্নীতিতে দেশ  ছেয়ে  গেছে৷  খাদ্যে  জীবনদায়ী ওষুধের  ভেজালে  ছেয়ে  গেছে দেশ৷  এদিকে  শাসকদলের  তো  তেমন  নজর  নেই৷

ব্যাঙ্কগুলির কাজ কর্ম  বেড়েছে  কিন্তু ব্যাঙ্ক কর্মচারীদের কর্মী  সংখ্যা দিন দিন  কমছে৷ ব্যাপক হারে  কাজ  বেড়ে যাওয়াতে ব্যাঙ্কের  সংখ্যা যেমন বৃদ্ধি পাওয়াা  দরকার সেদিকে  নজর  সরকারের নেই৷  বর্তমানে  লিঙ্ক  ফেল এর ব্যাপকতার দরুণ হতভাগ্য ব্যাঙ্ক কাষ্টমাররা দারুণভাবে  সমস্যার  মধ্যে পড়েছেন৷  কোনও  দিকেই  কেন্দ্র ও রাজ্য  সরকারের নজর নেই  জনগণকে  সঠিক  সেবা দেবার  ব্যাপারে৷ গণতন্ত্র একথা বলে না যে রাজনৈতিক  দলগুলি শুধু  গদির স্বার্থে জনগণকে সদাসর্বদা স্তোকবাক্য দিয়ে যাবে ও প্রতিশ্রুতির বন্যা বহাবে৷ কাজের  কাজ কিছু  করবেন না৷  গণতান্ত্রিক  রাষ্ট্রে  সরকারের  শুধু  প্রশাসনিক ব্যয় তো বৃদ্ধি পেয়েছে, যার দরুণ জনসেবা করার জন্যে ভাঁড়ার শূন্য৷ কেন্দ্রীয় সরকার বড়ো  নোট পরিবর্ত্তন  করে যে ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন, সেই  আর্থিক  ক্ষতিপূরণে  নানাভাবেই  হতদরিদ্র  নাগরিকদের  সুদ কমিয়ে  নিত্য প্রয়োজনীয় জিনিসের উপর  কর বসিয়ে  জিএসটি চালু করে শোষণের যাঁতাকলে মানুষকে রক্তশূন্য করে ছাড়ছেন৷ তাই আশা করে জনগণ  সরকার  এমন  ব্যবস্থা নিক  যাতে  তারা  হাঁফ ছেড়ে  বাঁচতে পারে৷

শাসন এর অর্থ এই নয়  যে জনগণ আর্থিকও সামাজিক শোষণে শেষ হয়ে যাবে আর ফড়েরা লুটেপুটে খাবে আর কর্পোরেট গোষ্ঠীর পোয়াবারো হবে৷ তাই নির্বাচন  যেন  এমন  হয় যেখানে বোটার  গণ নির্ভয়ে  নিজেদের  মতামত  দান  করার সুযোগ পায় তবে নাগরিকদের গণতন্ত্রের স্বার্থে অবশ্যই সজাগ থাকতে হবে৷ তা না হলে  তাদের  কল্যাণ দুরস্ত!