কলকাতা ঃ গত ২১শে জুন সকালবেলায় ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের উদ্যোগে কলকাতার প্রসিদ্ধ সত্যপ্রিয় রায় বি.এড কলেজের সভাগৃহে যোগবিদ্যা ও যোগ প্রশিক্ষণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়৷ এই অনুষ্ঠানের প্রধান বক্তা ছিলেন আনন্দমার্গ প্রচারক সংঘের প্রবীণ সন্ন্যাসী আচার্য কাশীশ্বরানন্দ অবধূত৷ প্রবীণ আচার্য তাঁর বক্তব্যে বলেন, এই অমূল্য বিদ্যার আদিগুরু হলেন যোগেশ্বর শিব৷ প্রায় সাত হাজার বছর পূর্বে মানব জাতির সর্বাঙ্গীন কল্যাণের উদ্দেশ্যে শিব এই মহাবিদ্যার প্রবর্ত্তন করেন৷ তিনি তাঁর পুত্র ভৈরব, কন্যা ভৈরবী, ভরত, ধনন্তরী সহ তখনকার সাধারণ মানুষকে এই বিদ্যা শিক্ষা দিয়েছিলেন৷ শিবের এই যোগবিদ্যা অভ্যাস করে তাঁরা হলেন অসাধারণ, তাঁরা হলেন মহর্ষি৷ শিবের পর এই যোগবিদ্যা আরো ব্যাপকভাবে প্রচার করেন শ্রীকৃষ্ণ৷ তাঁর প্রদর্শিত যোগ সাধনা অভ্যাস করেই পাণ্ডবরা, তাঁদের সন্তানগণ ও আত্মীয়বর্গ বাহুবল ও ধর্মবলে বলীয়ান হয়েছিলেন৷ কুরুক্ষেত্রের যুদ্ধে পাণ্ডবদের জয়ের পেছনে ছিল শ্রীকৃষ্ণের প্রদর্শিত যোগ সাধনা তথা ধর্ম সাধনা৷ শ্রীকৃষ্ণ ঘোষণা করেছিলেন, ‘যতো ধর্মঃ ততো জয়ঃ’৷ শ্রীকৃষ্ণের পর আজ থেকে প্রায় আড়াই হাজার বছর পূর্বে মহর্ষি পতঞ্জলি ‘যোগসূত্রম্’ রচনা করেন৷
বর্তমান কালে পরমগুরু শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী এই যোগ বিদ্যাকে সর্বসাধারণের উপযোগী করে চারটি স্তরে বিভাজিত করেন---প্রারম্ভিক যোগ, সাধারণ যোগ, সহজ যোগ ও বিশেষ যোগ৷ যোগ দর্শনের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে তিনি বলেন, ‘সংযোগ যোগো ইত্যুক্ত জীবাত্মা-পরমাত্মনঃ’৷ জীবাত্মার সঙ্গে পরমাত্মার মিলনই হ’ল যোগের দার্শনিক ব্যাখ্যা৷ এই যোগবিদ্যা আটটি অঙ্গের সমাহার---অষ্টাঙ্গিকযোগ৷ এগুলি হ’ল---যম, নিয়ম, আসন, প্রাণায়াম, প্রত্যাহার, ধারণা, ধ্যান ও সমাধি৷ শুধু আসন যোগের একটি অঙ্গ মাত্র৷ এই আট প্রকার যোগ সাধনা নিয়মিত অভ্যাস করে একজন সাধারণ মানুষ অসাধারণ স্তরে উন্নীত হতে পারে৷ এরপর আচার্য কাশীশ্বরানন্দ অবধূত কতগুলি সহজ ও বিশেষ উপকারী আসনের প্রশিক্ষণ দেন৷ বিশেষ করে মহিলাদের সার্বিক স্বার্থের কথা ভেবে শ্রীশ্রীআনন্দমূর্ত্তিজী কৌশিকী নৃত্যের প্রবর্ত্তন করেন৷ আচার্যজী সেই কৌশিকী নৃত্যেরও প্রশিক্ষণ দেন৷ এই যোগ দিবসের অনুষ্ঠানে যাঁরা যাঁরা বিশেষ ভাবে ভূমিকা পালন করেন ও বক্তব্য রাখেন তাঁরা হলেন ইন্দিরা গান্ধী জাতীয় মুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি ডিরেক্টর ডঃ বিশ্বজিৎ ভৌমিক, ডঃ সুজাতা দত্ত হাজারিকা, সত্যপ্রিয় শিক্ষক প্রশিক্ষণ কলেজের অধ্যক্ষ ডঃ সুবীর নাগ ও শিক্ষা বিভাগের অধ্যাপক ডঃ কৌশিক চ্যাটার্জী৷
এই অনুষ্ঠানে আনন্দমূর্ত্তিজীর ‘যোগ সাধনা’ ও ‘যোগ মনস্তত্ব’ গ্রন্থগুলি তাঁরা সংগ্রহ করেন৷