রোগের লক্ষণ ঃ রক্তে অম্লদোষ বেড়ে গেলে বাত রোগের সৃষ্টি হয়৷ এখানে বাতরোগ বলতে বিশেষ করে গ্রন্থিবাতের ( গেঁটে বাত) কথাই বলা হচ্ছে৷
ঔষধ ঃ এই বাতরোগ কোন ঔষধের বহিঃপ্রয়োগে খুব ভাল ভাবে সারে না৷ তবে সাময়িক ভাবে উপশম হয়৷ বাতরোগে মালিশ জাতীয় বস্তুর মধ্যে যেগুলি উত্তম মানের তাদের অনেকেরই উপাদান হ’ল ধুতুরা ফল৷ কণ্ঢকযুক্ত ধুতুরা ফল খাদ্য হিসেবে কথঞ্চিৎ বিষাক্ত হলেও বহিঃপ্রয়োগে ভাল ফল দেয়৷ তবে কৃষ্ণ ধুতরোর ফলেতে এই গুণ একটু বেশী৷
গাঁদাল পাতা (১০–১২টি) চাটুতে সেঁকে রোগগ্রস্ত স্থানে দৃঢ়ভাবে বেঁধে রাখলে অথবা তাজা কদম পাতা অল্প সেঁকে ফ্লানেল বা অন্য কোন পশমী কাপড় দিয়ে বেঁধে রাখলেও উপকার হয়৷
‘‘একশিরা আর গোদ, বাত
সারবে বাঁধো কদম পাত৷
বাঁধতে পার গাঁদাল পাত৷৷’’
এছাড়া গুলঞ্চের ক্কাথ শীতল করে প্রত্যহ ভোরে পাঁচ তোলা পরিমাণ খেলে বাতরোগে অল্পদিনের মধ্যে সুফল পাওয়া যায়৷ রোগীর কোষ্ঠ পরিষ্কারের দিকে বিশেষ নজর রাখতে হয়৷
খাদ্য ও পথ্য ঃ উত্তম মানের প্রলেপ ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে খাদ্য হিসেবে ক্ষার জাতীয় বস্তুর ব্যবহার বাড়িয়ে দিলে (সাধারণতঃ কষায় স্বাদযুক্ত বস্তুতে ক্ষারের আধিক্য থাকে) বাতরোগের স্থায়ী উপশম হতে পারে৷ রোগী স্নানবিধি মেনে চলবে ও আতপ স্নান করবে৷
কটিবাত (Lumbago)
রোগের লক্ষণ ও কারণ ঃ মেরুদণ্ডের সংযোজক অস্থিগুলিতে চূর্ণ (চূণ) জমে গেলে তা কড়া হয়ে যায়৷ শিশুর মেরুদণ্ডে যে নমনীয়তা থাকে, বয়স্কের তা থাকে না৷ দীর্ঘকাল ধরে বেশী ঝুঁকে কাজ করতে করতে কটির অস্থি তার উর্ধ্বাংশ থেকে নিম্নাংশে কিছুটা পৃথক হয়ে পড়ে৷ এতে কটির কঠোরতা বেড়ে যায়৷ সে তখন আর সোজা হয়ে থাকতে পারে না৷ বক্র বা কুব্জ হয়ে যায়৷ কটির কঠোর অংশ তখন তার কাছে ভার বলে মনে হয়৷
বুদ্ধিজীবীরা অনেক সময় একই স্থানে চেয়ারে/আসনে দীর্ঘ সময় ধরে বসে থাকার ফলে তাদের কোমরের দিকে রক্তসঞ্চালন ক্রিয়া ব্যহত হয়৷ সেই মানুষ যদি অধিক আমিষভোজী হয় তাহলে রক্তে অম্লভাগ বৃদ্ধি হেতু তাদের কটিদেশে যে বাত হয় তাই হ’ল কটিবাত৷ রোগটি তত প্রাণঘাতী না হলেও ক্লেশদায়ক৷ ঙ্মএই বাতক্ষ যে কোন মানুষের ওই কটিদেশের জোড়কে আহত করে ও শেষ পর্যন্ত চরম বিপর্যয় এনে দিতে পারে৷ সেই ব্যাধিকে অর্থাৎ কটিবাতকে (Lumbago) সংস্কৃতে তাই ‘গৃধসী’ বা ‘গৃধ্রসী’ বলা হয়৷
ঔষধ ও চিকিৎসা ঃ যাঁদের কোমর ঝুঁকিয়ে বেশীক্ষণ কাজ করতে হয়, তাঁরা যদি প্রত্যহ নিয়মিত ভাবে নৌকাসন, পশ্চিমোত্তানাসন ও শলভাসন অভ্যাস করেন তাহলে এই ব্যাধি না হবারই সম্ভাবনা৷
বিশুদ্ধ সর্ষপ তেলে (হলদে সর্ষে) কৃষ্ণ ধুতরার ফল কুচিয়ে কেটে ভাল করে ভেজে নিয়ে, এক আনা পরিমাণ আফিং মিশিয়ে, অল্পক্ষণ উনুনে রেখে নাবিয়ে নিয়ে, তারপর সেটাকে মিহি বস্ত্রে ছেঁকে যে তেল পাওয়া যায়, তা কটিবাতের (মালিশের) ঔষধ৷
খাদ্য ও পথ্য ঃ রোগীকে ক্ষারজাতীয় তরকারী ও ক্ষারজাতীয় ফল অধিক পরিমাণে খেতে পরামর্শ দেওয়া উচিত৷ যেমন, মোচা, থোড়, কাঁচকলা, কালো জাম কটিবাত রোগীর খাদ্য, পথ্য ও ঔষধ তিন–ই৷ অবশ্য কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে মোচা–থোড়–কাঁচকলা না খাওয়াই ভাল৷
বিধিনিষেধ ঃ লোভ রিপুর আধার হচ্ছে কটিদেশ৷ যারা ঔদরিক তারা পঞ্চাশ পেরোবার আগেই কটিদেশ সংক্রান্ত নানান ব্যাধিতে আক্রান্ত হন তাই লোভ রিপুকে সংযত রাখতেই হবে ৷ সাধারণতঃ অধিকাংশ মানুষের পঞ্চাশে উঠেই কিছুটা কটিবাত হয় বয়োবৃদ্ধির দরুণ চূর্ণ ধাতু জমার ফলে৷ ষাটের পর তো প্রায় সবাইকারই হয়৷
মলম
ঔষধার্থে রোগ প্রশমনের জন্যে গায়ে যা লেপন করা হয় তাকে অনুলেপনী বলা হয় না– বলা হয় প্রলেপ (প্র–লিপ্ ঘঞ্ অর্থাৎ প্রকৃষ্ট রূপে লেপন করা) ফার্সীতে ‘মলহম্, বাংলায় মলম, ইংরেজীতে Ointment. ব্যথা প্রশমনের জন্যে অথবা শরীরকে জড়িয়ে রাখার জন্যে যদি কোন মলম ব্যবহার করা হয়, ইংরেজীতে তাকে Ointment না বলে বলা হয় balm বা প্রলেপ৷ তাই মলমকে অনুলেপনী বলব না৷ শুধু গায়েতে যা লেপন করা হয়, প্রকৃষ্ট রূপে নয় ওপরে ওপরে, তা হ’ল লিপ্ ঘঞ্ ঞ্চ লেপ বা অনুলেপনী৷
(দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য ঃ শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার)