কেন্দ্রের বিজেপি সরকার থেকে শুরু করে দেশের বিভিন্ন রাজ্য সরকারগুলি বর্তমানে দেশের দারিদ্রপীড়িত, বঞ্চিত চাষীদের নানাভাবে সন্তুষ্ট করতে উঠে পড়ে লেগেছে৷ বিগত ৫ রাজ্যে বিজেপি’র নির্বাচনী বিপর্যয়ের পেছনে যে সংশ্লিষ্ট রাজ্যগুলির চাষীদের ক্ষোভ একটা প্রধান কারণ---তা সবাই উপলদ্ধি করতে শুরু করেছেন৷ এই কারণে মোদি সরকার চাষীদের কল্যাণে বিভিন্ন প্রকল্পের কথা ঘোষণা করছেন৷ ৫ রাজ্যের নির্বাচনের পর যে যে রাজ্যে কংগ্রেস ক্ষমতায় এসেছে ক্ষমতায় আসার সঙ্গে সঙ্গেই কৃষিঋণ মুকুবের কথা ঘোষণা করেছে৷ বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলিও সেই পথে চলেছে৷ সঙ্গে সঙ্গে কেন্দ্র চাষীদের আয়বৃদ্ধির নানান্ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করছেন৷
পঃবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় আন্তর্জাতিক নববর্ষের প্রাক্কালে ৩১শে ডিসেম্বর ‘কর্ষক বন্ধু’ প্রকল্পের কথা ঘোষণা করেছেন৷ তিনি জানিয়েছেন ১৮ থেকে ৬০ বছর পর্যন্ত যেকোনোও চাষী বা ক্ষেতমজুরের যে কোনও কারণে মৃত্যু হলে তার পরিবারকে এককালীন ২ লক্ষ টাকা আর্থিক সাহায্য দেওয়া হবে৷ এছাড়া প্রতি বছর একর পিছু হাজার টাকা করে রাজ্য সরকার দেবে৷ এজন্যে সরকারের অতিরিক্ত ৭ হাজার কোটি টাকা ব্যয় করতে হবে৷ তাছাড়া কর্ষকদের ন্যায্য দামে ফসলের দাম পাইয়ে দেওয়া হবে৷ প্রয়োজনে ঋণ মুকুব সহজ ঋণ সহ বিভিন্ন মনোমোহিনী প্রকল্পের কথা ও জানানো হয়েছে৷
স্বাধীনতার পর থেকে প্রতিটি সরকার প্রায় প্রতি বছরই কর্ষক দরদী সেজে কর্ষকদের বিভিন্নভাবে সাহায্য বা সুযোগ সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন, কিন্তু দেশের কর্ষক সমাজের বেশি অংশ আজও যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরে রয়েছে৷
ন্যাশন্যাল ক্রাইম ব্যুরোর তথ্য অনুসারে আমরা জানতে পারি ১৯৯৫ সাল থেকে এ পর্যন্ত ৩ লক্ষ্যেরও বেশি কর্ষক আত্মহত্যা করেছে৷ ২০১৭ সালে কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টে দেওয়া তথ্যে জানায়, প্রতিবছর ১২ হাজার কর্ষক হতাশ হয়ে আত্মহত্যার পথ বেছে নিচ্ছে৷ যে পঞ্জাব কৃষিতে খুব উন্নত বলা হয়, সে পঞ্জাবে বস্তুত ২০০০ থেকে ২০১৬ পর্যন্ত এ ১৬ বছরে ১৬ হাজার ৬০০ কর্ষক ঋণের ভারে জর্জরিত হয়ে আত্মহত্যা করেছে৷ সব রাজ্যেরই মোটামুটি একই চিত্র৷ কোনো কোনো ক্ষেত্রে রাজ্য সরকার এই আত্মহত্যার অন্য কারণ দেখিয়ে রাজনৈতিক ফায়দা ওঠাতে চান৷ কিন্তু বাস্তব চিত্র বদলায় না৷
তার মূল কারণ, কর্ষকদের সমস্যা সমাধান করার জন্যে যেটা সবচেয়ে জরুরী, সেই দিকেই কেউ হাঁটছেন না৷ প্রকৃতপক্ষে কৃষি ও কর্ষকদের সমস্যা সমাধানের জন্যে যা করতে হবে--- তা হ’ল, সমস্ত কৃষি ব্যবস্থাকে অর্থাৎ সমূহ পদ্ধতিতে কৃষি উৎপাদন ও কৃষি উৎপাদিত ফসলের বিপনন ধাপে ধাপে সমবায়ের মাধ্যমেই করতে হবে, তার সঙ্গে জল, সার সহ বৈজ্ঞানিক প্রথায় চাষের সমস্ত উপকরণ ও প্রশিক্ষণ ও সরকারকে যোগাতে হবে৷ কেবল বি?ভাবে কিছু সাহায্য দিয়ে মূল সমস্যার সমাধান হবে না৷
এইপথে না এগুলো কর্ষকদের পুঁজিবাদী শোষণের যাঁতকল থেকে রক্ষা করা যাবে না, কর্ষকদের দুর্দশারও অন্ত হবে না৷