রাজ্যে এন আর সি-র বলি ৯৷ এন আর সি আতঙ্কে রাজ্যে মৃত্যুর সংখ্যা দিন দিন বাড়ছে৷ এখনও পর্যন্ত রাজ্যে এন আর সি আতঙ্কে মৃতের সংখ্যা ৯ বলে জানা গেছে৷ এন আর সি আতঙ্কে মৃত্যুর সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে রাজনৈতিক দলগুলির তরজা, দোষারোপ, পাল্টা দোষারোপ৷ মঙ্গলবার ২৪শে সেপ্ঢেম্বর উত্তরবঙ্গে তিন জনের আত্মহত্যার খবর এসেছে৷ প্রতিটি আত্মহত্যাই এন আর সি আতঙ্কে বলেই মনে করা হচ্ছে৷
ধূপগুড়ির গোবিন্দ পল্লীর বর্মন পাড়ায় থাকতেন বছর ছত্রিশের যুবক শ্যামল রায়৷ তিনি টোটো চালিয়ে সংসার প্রতিপালন করতেন৷ সোমবার রাতে খাওয়া-দাওয়ার পর তিনি ঘুরতে বের হন৷ কিন্তু আর ফিরে আসেননি৷ বাড়ির লোকজন তাঁকে খুঁজতে বেরিয়ে বাড়ীর পেছনে সীমানা নির্ধারক একটি পিলারে ঝুলন্ত অবস্থায় দেখতে পান৷ স্ত্রী ও দুই পুত্রকে নিয়ে তিনি ভাড়া বাড়ীতে থাকতেন৷ তাঁর স্ত্রীর অভিযোগ --আমার স্বামী কিছুদিন ধরেই এন আর সি আতঙ্কে ভুগছিলেন৷ ভাড়া বাড়ীতে থাকায় আমাদের হাতে এন আর সি-র কোনও কাগজপত্র নেই৷ ভয়ে ভাবনায় তাঁর শরীর খারাপ হচ্ছিল৷ আইনী লড়াই করার মত আর্থিক অবস্থাও আমাদের নেই৷ এইসব নিয়ে দুশ্চিন্তায় মানসিকভাবে ভেঙ্গে পড়ে তিনি আত্মহত্যা করেছেন৷
এন আর সি আতঙ্কেই আত্মহত্যা করেন জলপাইগুড়ির বাহাদূর অঞ্চলের সাবির আলি ও কোচবিহারের ২৬ বছরের মহিলা আর্জিনা খাতুন৷ সাবির আলি নাগরিকপঞ্জীর প্রয়োজনীয় কাগজপত্র না থাকায় কুয়োয় ঝাঁপ দিয়ে আত্মহত্যা করেন৷ আর্জিনা খাতুন আঁধার কার্ড ও ভোটার কার্ডের নামের অমিল থাকায় ঘরের ভেতরেই ফাঁস দিয়ে আত্মহত্যা করেন৷
লোকসভা ভোটের প্রচার থেকে শুরু করে দুদিন আগে পর্যন্ত রাজ্যের বিরোধী দলের প্রধান মুখ দিলীপ ঘোষ হুমকী দিচ্ছিলেন---বাঙলায় নাগরিকপঞ্জী লাগু হবেই৷ কেউ আটকাতে পারবে না৷ কিন্তু এন আর সি আতঙ্কে রাজ্যে কয়েকজনের মৃত্যুর পর ভোট আতঙ্ক গ্রাস করেছে দিলীপবাবুকে৷ তাই তিনি এখন সুর পাল্টেছেন৷ এদিন শিলিগুড়িতে সাংবাদিকদের সামনে তিনি বলেন---অসমে নাগরিকপঞ্জী হয়েছে সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে৷ বাঙলায় এমন কোনও নির্দেশ নেই৷ তাই বাঙলায় নাগরিকপঞ্জী চালু হবে না৷ মুখ্যমন্ত্রীই এন আর সি-র নামে রাজ্যে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে৷
২০২১-এর দিকে লক্ষ্য রেখে দিলীপবাবু সুর পাল্টেছেন বলে বিরোধীরা মন্তব্য করেন৷ কারণ দু’দিন আগেও তিনি হুমকী দিয়েছেন দু’কোটি লোককে ঘাড় ধাক্কা দিয়ে বাঙলাদেশ পাঠাবেন৷ এন আর সি হবেই---কেউ রুখতে পারবে না৷
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় অবশ্য তাঁর সিদ্ধান্তে অবিচল আছেন৷ তিনি প্রথম থেকেই এন আর সি-র বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করে আসছেন৷ এদিনও তিনি জোর দিয়ে বলেছেন---এ রাজ্যে এন আর সি লাগু হবে না৷ এন আর সি নিয়ে অযথা আতঙ্কিত হবার কিছু নেই৷ তিনি বলেন---ভয় পাওয়ার কিছু নেই৷ নথি হারিয়ে গেলে থানায় এফ.আই.আর করুন৷ ১৯৭১ সাল নিয়ে সঙ্কীর্ণ রাজনৈতিক স্বার্থে গ্রামে-গঞ্জে আতঙ্ক ছড়াতেই এন আর সি-র নামে অপপ্রচার চলছে৷ ইতোমধ্যে এন আর সি আতঙ্কে রাজ্যে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে৷ অসমেও অনেকের মৃত্যু হয়েছে৷ বিজেপি রাজ্যে উত্তেজনা ছড়াতেই এসব করছে৷ এক শ্রেণীর মিডিয়া বিজেপিকে মদত দিচ্ছে৷