খেট্’ একটি প্রাচীন ধাতু৷ ধাতুটি পরস্মৈপদী’৷ এর ক্রিয়ারূপ দু’ধরণের৷ ‘লট্তি’–তে যদি বলি ‘খেটতি’ তার মানে হবে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে চলা বা পা’ টেনে টেনে চলা৷ যদি ক্রিয়ারূপে বলি ‘খোটয়তি’ তাহলে তার একটি মানে হবে ঔদরিকের মত অতিভোজন করা৷
সেই যে তোমাদের একবার গল্প বলেছিলুম না–কে একজন ছিলেন খ্যাটনভোঁদড় ভট্টাচার্য৷ তিনি আগে থেকে উপযুক্ত প্ল্যানিং বা পরিকল্পনা না করেই খেতে বসেছিলেন, যার ফলে প্রায় আশিটি লুচি, পটোলভাজা, বাঁধাকপির ডালনা আর আলুর দম দিয়ে খাবার পরে খেয়াল হল আরও বাকী রয়েছে ক্ষীরের দই, বাকী রয়েছে রাবড়ি, রয়েছে রসমালাই আর রসমাধুরী৷ নিজের পরিকল্পনা না থাকায় আত্মগ্লানিতে নিজেকে ধিক্কার দিতে লাগলেন৷ বললেন–আমার মত বোকা ভূ–ভারতে আর কেউ আছে গা৷ হায় হায় একী করলুম৷ প্রাচীনকালের মুনি–ঋষিরা বলে গেছেন ‘‘পরের পয়সায় পাই তো টিংচার আয়োডিন খাই৷ আমি কিন্তু সে সুযোগ হেলায় হারালুম৷ আচ্ছা দেকা যাক, ছাঁদায় পুষিয়ে নেওয়া যাবে৷ তারপরে ক্ষীরের দই এলে সেকালে ক্ষীরের দইকে উত্তর বাংলায় চন্দনচুর বলা হত৷ পাবনার চন্দনচুর ছিল ডাকসাইটে৷ তখন তিনি জোর করে কয়েকটা ঢ়োক গিলে খাওয়া জিনিসটা নাভির অনেকটা নীচের দিকে ঠেলে দিয়ে বললেন–আপাততঃ চার হাতা ঢ়ালো পরে দেখা যাবে৷ এর পরে দিয়ে গেল রসমালাই৷ তখন তার আলজিব প্রায় ডুবুডুবু৷ বারবার ঢ়োক গিলে রসমালাইকে নীচের দিকে ঠেলে দেবার আপ্রাণ প্রয়াসের পর তিনি বললেন –আরেকটু পরে আবার শুধিয়ো৷ তারপর যখন রসমাধুরী এল তখন তার ঠোঁট ঠেলে বাইরে বেরিয়ে যাবার জোগাড়৷ আপ্রাণ চেষ্টা করে তিনি খাবারগুলোকে ঠেলে ভিতরে পাঠানোর কাজটা চালিয়ে যেতে লাগলেন৷ লোকে ডাক্তার ডেকে নিয়ে এল৷ ডাক্তার এসে বললেন –আপনাকে ওষুধ দিচ্ছি৷
খ্যাটনভোঁদড় ভট্টাচার্য বললেন–ওষুধের পরিমার কতটা?
ডাক্তার বললেন–আন্দাজ দশ ফোঁটা, বড় জোর৷
খ্যাটনভোঁদড় বললেন –মুখে যদি (পেট, গলা তখন ভরে গেছে) দশ ফোঁটা ওষুধ যাবার জায়গা থাকত তাহলে ওষুধ খেতে যাব কার অভিশাপে৷ খাব তো খাব দশফোঁটা রসমালাইয়ের রস খাব৷
এই যে খ্যাটনভোঁদড় ভট্টাচার্য, ইনি কী করছিলেন, –না ইনি ‘খোটয়তি’ করছিলেন, বুঝলে তো৷ তোমরা মনে মনে একটা ব্রতই নাও যে কিছুতেই খ্যাটনভোঁদড় ভট্টাচার্যের মত ‘খোটয়তি’ করবে না৷
(শব্দ চয়নিকা, ১৫শ খণ্ড)