আমরা সবাই পরমপুরুষের সন্তান৷ তিনি সবাইকে তৈরী করে চলেছেন৷ সুতরাং বেঁটে, লম্বা, কালো, ফর্সা, আমি পুরুষ, সে মেয়ে–এসব ভেদের মধ্যে থাকার প্রয়োজন নেই৷ পরমপুরুষের সঙ্গে মনটা মিলিয়ে দিয়ে ভেবে দেখ কী করলে পরমপুরুষের ভালো লাগৰে, কী করলে ভাল লাগবে না৷ যা’ করলে তাঁর ভাল লাগবে সেই মত করবে৷ কোন পিতা চাইবে না তার একটা সন্তান শুকিয়ে মরুক, একটা সন্তান প্রয়োজনের চেয়েও বেশী খাক বা প্রয়োজনের চেয়েও বেশী জমিয়ে রাখুক৷ অর্থনৈতিক জীবনেও তোমাদের সেই রকমই চলতে হবে৷ সামাজিক জীবনে কোন পিতাই মনের দিক থেকে চাইবে না তার বিধবা মেয়ে অন্য রকম পোষাক পরুক, তার বিধবা মেয়ের ওপর সামাজিক নির্যাতন চলুক অর্থাৎ কোন শুভ কার্যে তাকে ছুঁতে না দেওয়া হোক৷ সুতরাং তোমরা এসব সমর্থন করবে না, সবাইকে সমান সুযোগ দেবে৷
বাবা–মা চান না, তাঁদের ছেলে–মেয়ে কাঁদুক৷ কাঁদলে কোলে তুলে নিয়ে কান্না থামান, আদর করেন, ভাল করে দেন৷ এমন ভাবে সমাজ গড়তে হবে যাতে কোন মানুষকেই কাঁদতে না হয়, সবার মুখে যেন সব সময়েই হাসি থাকে৷ পৃথিবীটাকে এমনভাবে গড়ো যেন পৃথিবীর প্রতিটি মানুষ হাসবার সুযোগ পায় আর তাদের হাসি দেখে পরমপুরুষের আনন্দ হয়৷ এই রকম ভাবে পরমপুরুষের সঙ্গে তোমাদের সান্নিধ্য বেড়ে যাবে৷ এটাই হ’ল মানুষের জন্যে যথার্থ নীতিশাস্ত্র – সোস্যাল কোড৷ স্পিরিচুয়াল কোড হ’ল ঈশ্বরের দিকে চলার পথ, আজে–বাজে তর্ক করার পথ নয়৷ তেমনি সোস্যাল কোড হ’ল ঈশ্বরের সন্তানের মুখে হাসি ফুটিয়ে তোলার কাজ৷ এই পথেই চলবে৷ জয় তোমাদের অনিবার্য৷
(‘কঃ পন্থায়’–আনন্দবচনামৃতম্–৪থ খণ্ড)
পরমপুরুষ চাইবেন, সবারই প্রগতি হোক৷ সমাজ বলবে – এ নারী, একে এই অধিকার দেওয়া হবে না, ওই অধিকার দেওয়া হবে না, বাড়ীর ভেতর আটকে রাখা হবে – ইত্যাদি৷ সামাজিক বিধান ভিন্ন ভিন্ন হয়ে থাকে৷ কিন্তু পরমপুরুষের কাছে এ সব নেই৷ তাঁর কাছে পুত্র যতখানি প্রিয় কন্যাও ততখানিই প্রিয়৷ পিতা যখন ছোট–ছোট শিশুদের নিয়ে খেলা করেন, তখন কোনটা পুত্র, কোনটা কন্যা, কৈ সে ব্যাপারে তো পার্থক্য করেন না৷ পুত্রকেও কোলে তুলে নেন, কন্যাকেও কোলে তুলে নেন৷ পুত্র–কন্যা উভয়েই সমান আদরের৷ আসলে সেটা সমাজের বদমাইসী – সমাজ নারীর ওপর অত্যাচার চালায়, এই হ’ল সত্যি কথা৷ পরমপুরুষের বিচারে সবাই সমান৷ (‘‘যিনি সবার পাপ হরণ করেন তিনি হরি’’
‘আনন্দবচনামৃতম্’ ৮ম খণ্ড)
মেয়েদের অধিকার ওই রকমভাবে হরণ করা হয়েছিল৷ এটা করতে নেই, ওটা করতে নেই, এই করলে মেয়েদের নিন্দে হয়ে যাবে অথচ সেই ধরণের জিনিস যদি পুরুষেরা করে তবে নিন্দে হবে না – এ কেমনতর কথা হ’ল৷ এক নিয়মই তো সবার উপরে খাটবে৷ পুরুষেরা যদি পরমপুরুষের পুত্র হয় তবে মেয়েরাও পরমপুরুষের কন্যা আর তাদেরও সমান অধিকার আছে৷ এ কি অন্যায় কথা একজন পিতা – তাঁর ছোট্ট মেয়েটিকেও তিনি সেই ভাবেই আদর করেন৷ তখন তো তিনি মনের মধ্যে অন্য ভাব পোষণ করেন না যে মেয়ে বলে একে আদর করব না৷ সুতরাং যারা বলে যে মেয়েরা মুক্তি–মোক্ষ পেতে পারে না তারা সুবিধাবাদী, তারা সমাজশোষক – তারা দুষ্ট লোক, তারা বদ্ লোক৷
(‘‘অধিকার ভেদ’’, ‘আনন্দবাচনামৃতম্’, ৯ম খণ্ড)