বিজ্ঞানের অপরিণামদর্শিতা মানুষের সীমাহীন লোভ শাসকের নির্লিপ্ততায় পাহাড় থেকে সমতল প্রকৃতির ভয়াল রূপ
আজ থেকে প্রায় ৩৮ বছর আগে প্রাউট প্রবক্তা পরম শ্রদ্ধেয় শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার মেরুর স্থানান্তরন বিষয়ে বলেছিলেন---মেরুর স্থান পরিবর্তন একটি ভৌগোলিক তথ্য৷ এই পরিবর্তনের ফলে সূর্যের চারপাশে পৃথিবী ঘুরতে যে সময় লাগে তার কিছুটা এদিক-ওদিক হতে পারে৷ দিনরাত বছরের সময়টা পরিবর্তন হয়ে যাবে৷ পৃথিবীর নিজের কক্ষপথে প্রদক্ষিণের সময়েরও হ্রাস বৃদ্ধি হতে পারে৷ ফলে মাসের সঙ্গে ঋতুর সামঞ্জস্য থাকবে না৷ পৃথিবীর পরিবেশগত সামঞ্জস্যও ক্ষুণ্ণ্ হবে৷ এমন কি মানুষ জীবজন্তু উদ্ভিদেরও সংরচনাগত পরিবর্তন হবে৷ শ্রী সরকার সেদিন বলেছিলেন---মেরুর স্থান পরিবর্তন সমূহের জন্য ভবিষ্যতে পরিবেশগত সামঞ্জস্যের অভাবের স্বাভাবিক ফলশ্রুতির জন্য তৈরী থাকতে হবে৷ কিছু কিছু ক্ষেত্রে মেরুর স্থান পরিবর্তনের প্রভাব ইতিমধ্যেই লক্ষ্য করা যাচ্ছে৷ মাসের সঙ্গে ঋতুর সামঞ্জস্য থাকছে না৷ চাষ-আবাদের ক্ষেত্রেও এর প্রভাব পড়ছে৷ প্রকৃতির এই স্বাভাবিক ফলশ্রুতির সঙ্গে মানুষের সীমাহীন চাহিদা পূর্ত্তির অস্বাভাবিক প্রচেষ্টা প্রকৃতিতে বিপর্যয় ডেকে আনছে৷ পাহাড় থেকে সমতল সর্বত্রই প্রকৃতি ভয়াল রূপ ধারণ করছে৷ পশ্চিমবঙ্গের উত্তরে বর্ষার কারণে পাহাড়ে ধস, সমতলে প্লাবন জনজীবন বিপর্যস্ত করছে দক্ষিণবঙ্গ তখন তাপপ্রবাহে পুড়ছে৷
উত্তরবঙ্গে বর্ষার মরসুম এলেই তিস্তা ভয়াল রূপ ধারণ করে কিন্তু গত বছর থেকে তিস্তার ধবংসাত্মক রূপ প্রবল হচ্ছে৷ এর কারণ হিসেবে বিশেষজ্ঞদের ধারণা প্রাকৃতিক কারণের সঙ্গে মানুষের কার্যকলাপ তিস্তাকে ভয়ঙ্কর করে তুলছে৷ সিকিমে ১৭০ কিমি ও পশ্চিমবঙ্গে ১২৩ কিমি পথে তিস্তা প্রবাহিত হচ্ছে৷ এই দীর্ঘপথে ৪৭টি জলবিদ্যুৎ প্রকল্প তৈরী হয়েছে৷ এরফলে নদীর গতিপথ ও স্বাভাবিক ছন্দ নষ্ট হচ্ছে৷ সেবক-রংপো রেলপথে ১৪টি সুড়ঙ্গ তৈরী করতে হয়েছে ডিনামাইট ফাটিয়ে৷ তারও প্রভাব পড়ছে তিস্তায়৷ নদীর উপরিভাগ থেকে বালি পাথর নুড়ি নেমে এসে তিস্তার নদীখাত উঁচু করে দিচ্ছে৷ এর পরিনামে হড়পা বান বা জলস্ফীতিতে নদীর দুপাশের রাস্তা সেতু জঙ্গল পাহাড় ধবসে যাচ্ছে৷ বিশেষজ্ঞদের মতে যে কোন নির্মাণের ক্ষেত্রে ভৌগোলিক অবস্থান ও পরিবেশ পরিবর্তনের বিষয়ে ভাবাই হয় না৷
দক্ষিণবঙ্গে ভয়াল তাপপ্রবাহের জন্যে শুধু প্রকৃতি নয় মানুষও দায়ী৷ বনজঙ্গল কেটে, জলাশয়, খাল, বিল ভরাট করে কৃষি জমির উপর আবাস, শিল্প কারখানা গড়ে উঠছে৷ সবুজায়ন ধবংস করে নগর গড়ে উঠছে৷ এ ব্যাপারে প্রশাসন একেবারে নির্লিপ্ত, প্রাকৃতিক কারণের উপর সব দায় চাপিয়ে দেওয়া হচ্ছে৷ অবিলম্বে প্রশাসনের মানসিকতার পরিবর্তন না হলে যে কোন নির্র্মণের ক্ষেত্রে পরিবেশের উপর প্রভাব পড়া নিয়ে সজাগ সচেতন না হলে আগামীদিনে প্রকৃতি আরও ভয়ালরূপ ধারণ করবে৷