পালং শাক
শাক বা পত্রশাকেদের মধ্যে পালং একটি উত্তম মানের শাক৷ অতি মাত্রায় ভক্ষণ করলে শ্লেষ্মাৰৃদ্ধি ঘটে৷ অন্যথায় এই শাক গুণেরই আকর৷ শাকটি খেতে মিষ্টি মিষ্টি, সুস্বাদু, শরীরের পক্ষে হিতকর প্রভাব–সম্পন্ন, কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করে, হূদ্রোগের ঔষধ (পালং শাকের ক্কাথ), শ্বাসরোগের ঔষধ (পালং শাকের রস), লিবারের ক্ষতের ঔষধ ও বিষক্রিয়া–নাশক৷ বিটামিনে পরিপূর্ণ এই শাকটি গুণের তুলনায় খুবই সস্তা৷ ভাজা না করে ঘন্ট বা চচ্চড়িতে ব্যবহার করাই বেশী ভাল৷ ভাজা খেতে গেলে কম তেলে ভাজতে হবে৷
দিনের বেলায় একটু বেশী মাত্রায় পালং শাক খেলে তাও মৃদু বিরেচকের কাজ করে৷ কারণ পালং শাকের অনেক গুণের মধ্যে একটি গুণ হচ্ছে তা কঠিন মলকে গুঁড়ো করে দেয় ও মল–নিঃসরণে সাহায্য করে৷ সংস্কৃতে ওই ধরণের গুণযুক্ত বস্তুকে ‘বিষ্টম্ভিনী’ বলা হয়৷
‘‘পালঙ্ক্যা মধুরা স্বাদু শ্লেষ্মলা হিতকারিণী,
বিষ্টম্ভিনী মদশ্বাস পিত্তরক্ত বিষাপহা৷৷’’
এই গুণ কিঞ্চিৎ পরিমাণে মটর শাকেও (কলায় পত্রম) আছে ঙ্মন্য শাকেরও অল্পবিস্তর একই গুণ আছেৰ৷ নেবুর রস ঙ্মসবচেয়ে ভাল পাতি নেবুর রসৰ কোষ্ঠকাঠিন্যের অতি উত্তম ঔষধ ঙ্ম সকালে খালি পেটে ১/২টি নেবুর রস ২ গ্লাস জল ও লবণসহ খেলে খুব ভাল ফল দেয়৷ এ ছাড়া ৰেল, ত্রিফলার জলও কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করেৰ৷
টমেটো
লৌকিক সংস্কৃতে ‘কৃমীলক’ মানে টমেটো৷ এই মৌলিক আমেরিকাজাত সব্জি বা ফলটি সেখানকার আদি বাসিন্দারা এর বুনো গন্ধের জন্যে নিজেরা খেতেন না–গৃহপালিত পশুকে খাওয়াতেন৷ এতে পশুও হূষ্ট–পুষ্ট হত, দুধ দিত বেশী৷ ইউরোপীয়রা আমেরিকায় গিয়ে এই সব্জিটির সংস্পর্শে এসে একে মনুষ্য খাদ্যরূপে গ্রহণ করলেন৷ খেতে শুরু করলেন লবণ সহযোগে ফল হিসেবে৷ এর থেকে তৈরি হল সস্, মার্মালেড, জেলি প্রভৃতি৷ এর রস থেকে তৈরি করলেন কয়েকটি ঔষধও৷ তাঁরা জেনে ফেললেন, এতে রয়েছে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ খনিজ লবণ ও মূল্যবান বিটামিন৷ ঙ্ম টমাটো কাঁচা স্যালাড হিসেবে বা স্যুপ হিসেবে অথবা টমাটোর রস নিয়মিত ভাবে খাওয়া উচিত, কেননা এটি লিবার ও প্রোস্টেট গ্ল্যান্ডের সুস্থতা রক্ষার পক্ষে সহায়ক৷ কর্কট রোগ বা ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও টমেটো আহার ও ঔষধ দুই–ই৷ ৰ
বৈজ্ঞানিকেরা আমেরিকার মৌলিক আর একটি ফসল–আলুকেও টমেটোর সঙ্গে যোড় কলম করে ‘পমেটো’ নামেও একটি সব্জি উৎপাদন করলেন৷ কিন্তু এই সব্জিটি জনপ্রিয় হতে পারল না৷ সমুদ্রপাড় থেকে এসেছিল বলে ৰাংলায় গোড়ার দিকে এর নাম রাখা হয়েছিল ৰিলাতি বেগুন৷ কারণ এর ৰীজ দেখতে কতকটা বেগুন–এর মত৷
কাঁটাল
কাঁটাল ভারত ও দক্ষিণ–পূর্ব এশিয়ার একটি নামকরা ফল৷ শব্দটির উৎপত্তি সংস্কৃত ‘কন্টকীফলম্’ থেকে অর্থাৎ যে ফলের গায়ে কাঁটা আছে৷ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে প্রায় ৪৭ প্রজাতির কাঁটাল পাওয়া যায়৷ কাঁটাল একটি পুষ্টিকর খাদ্য, তবে কিছুটা দুষ্পাচ্য৷ কাঁচা কাঁটাল (যাকে ৰাংলায় এঁচোড় বলা হয়) গুণগত বিচারে মাংসের সমান, অথচ মাংসের তামসিক দোষ এতে নেই৷ ৰাংলায় কাঁচা কাঁটালকে অনেকে ‘‘গাছপাঁঠা’’ বলে থাকেন৷ কাঁটালের ৰীজ আলুর চেয়েও অনেক বেশী পুষ্টিকর ও সুস্বাদু৷ ভারতে আলু আসবার আগে পর্যন্ত ভারতের মানুষ কাঁটাল ৰীজই মুখ্য তরকারী রূপে ব্যবহার করত৷ এখনও খাদ্য হিসেবে কাঁটাল ৰীজের ব্যবহার আছে৷ ঙ্মকাঁটালের একটি ভিন্ন প্রজাতিৰ রুটিফল (ব্রেড ফ্রুট) কাঁটালের চেয়ে বেশী পুষ্টিকর ও সুস্বাদু হলেও পাকা অবস্থায় ফলটি অত্যন্ত দুর্গন্ধযুক্ত৷ কাঁটালের একটি বন্য প্রজাতিকে চামল বলে৷ যদিও দেখতে প্রায় একই কিন্তু কাঁটালের মত অত স্বাদিষ্ট নয়৷ ঙ্মকাঁটালের মতৰ এর থেকেও ভেজি–মিট বা নিরামিষ মাংস তৈরী হতে পারে৷
কলা
যদিও সাধারণ অর্থে ‘কদলী’ ৰলতে সব কলাকেই ৰোঝায়, তবু বিশেষ অর্থে ‘কদলী’ অর্থে কাঁচকলা আর ‘রম্ভা’ মানে পাকা কলা৷ এখানে কাঁচকলা বলতে আমরা সেই কলাকে ৰোঝাচ্ছি যা কাঁচা অবস্থায় তরকারী রেঁধে খাওয়া হয়, আর পাকা অবস্থায় সাধারণতঃ খাওয়া হয় না৷ কলা সমস্ত গ্রীষ্মপ্রধান দেশেই জন্মায়৷ তবে কলার আদি নিবাস পূর্ব ভারতীয় দ্বীপপুঞ্জ–ড্র্ত্রব্দব্ধ ঢুস্তুন্ন্দ্বব্দ ট্টব্জন্তুড়ন্হ্মন্দ্বপ্) অর্থাৎ মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া, ফিলিপিন্স প্রভৃতি দেশ৷ ভারতও অন্যতম কলা–উৎপাদনকারী দেশ৷ কেবল ভারতেই শতাধিক প্রজাতির গাছ রয়েছে৷ ভারত ও বহির্ভারত নিয়ে সমগ্র বিশ্বে কলার প্রজাতির সংখ্যা দেড় হাজারের মত৷ ভারতের কেরলেই সবচেয়ে বেশী প্রজাতির কলা পাওয়া যায়৷ ৰাংলায় সবচেয়ে বেশী কলার চাষ হয় হুগলী জেলায়৷ এছাড়া হাওড়া, মেদিনীপুর, নদীয়া, মুর্শিদাবাদ, চব্বিশ পরগণা, জলপাইগুড়ি ও ত্রিপুরায় প্রচুর পরিমাণ কলা জন্মায়৷
কলার কোন অংশই পরিত্যাজ্য নয়৷ কলার খোলাও পৃথিবীর বিভিন্ন অংশের লোকেরা বিভিন্ন ভাবেই খেয়ে থাকেন৷ ফলন্ত কলা গাছের কাণ্ডের অভ্যন্তরভাগ যাকে ৰাংলায় থোড় বলা হয়, তাও মানুষের খাদ্য৷ থোড়ের বেশির ভাগ অংশই জল৷ তবে থোড়ে কিছু মূল্যবান খনিজ লবণও রয়েছে৷ সেই হিসেবে থোড়ের একটা খাদ্যমূল্যও রয়েছে৷ যারা রক্তাল্পতায় ভোগে অথবা যাদের চর্ম কিছুটা বিবর্ণ, থোড় তাদের পক্ষে মোটামুটি বিচারে ভাল৷ কলাপাতা ভোজনপাত্র হিসেবে ব্যবহূত হয়৷ কলাগাছ পোড়ালে যে ক্ষার পাওয়া যায় তা দিয়ে এককালে কাপড় কাচা হত৷ এই কলাগাছের ক্ষার–সোডিয়াম কার্বনেট (হল) যা কাপড় কাচা সোডার মূল উপাদান৷ কলাগাছের সূতোতে পৃথিবীর অনেক দেশে বস্ত্র প্রস্তুত করা হয়৷ যেমন বস্তু প্রস্তুত হয় আনারসের সূতো দিয়ে৷
কদলী একটা খুব পুষ্টিকর খাদ্য৷ পালা জ্বর ৰলে এক রকমের যে জ্বর হয় একদিন অন্তর বা দু’দিন অন্তর–তার ঔষধ কদলী৷ যকৃত, অগ্ণ্যাশয়, কিডনী এই তিনের কাজ ভাল রাখে কদলী৷ আমাশয় রোগেরও খুব ভাল ঔষধ কদলী৷ আবার মৃতবৎসা নারীর পক্ষে খুব ভাল খাদ্য কদলী৷
(আগেই ৰলেছি) খাদ্য হিসেবে কলা বেশ পুষ্টিকর৷ তবে যেসব কলায় অম্লভাব বেশী (যেমন চাঁপা কলা) সেগুলি সন্ধ্যার পর খেলে অম্লদোষ হতে পারে৷ ঙ্ম যদিও সব প্রজাতির কলাতেই পুষ্টিমূল্য প্রায় সমান, তবুও কাঁটালী কলার পুষ্টিমূল্য তুলনামূলক ভাবে একটু বেশী৷ বিশেষ করে ঔষধ হিসেবে ব্যবহারের ক্ষেত্রে–আমাশয় বা রক্ত–আমাশয়ে ঘিয়ে ভাজা বা দুগ্ধক্ষীরার রস সহ পাকা কলা–এক্ষেত্রে কাঁটালী কলাই ব্যবহার করা উচিত