আনন্দমার্গের সর্বানুসূ্যত দর্শন তথা আদর্শ কি আধ্যাত্মিক, কি অর্থনৈতিক, কি সামাজিক, কি সাংস্কৃতিক জীবনের সর্ববিধ সমস্যারই সমাধানের পথ দিয়েছে৷ এই কারণে আজকের অজস্র সমস্যার নাগপাশে আবদ্ধ নিপীড়িত মানবতার মুক্তির জন্যে আনন্দমার্গের ব্যাপক প্রচার প্রয়োজন৷ আরএই জন্যেই আনন্দমার্গের সর্বাত্মক আদর্শের বিভিন্ন দিকের ওপর দেশে-বিদেশে সর্বত্র ব্যাপকভাবে সেমিনারের কর্মসূচী নেওয়া হয়েছে৷ এই কর্মসূচী অনুসারেই গত ২৫, ২৬ ও ২৭শে জানুয়ারী পশ্চিমবঙ্গের বাঁকুড়া জেলার দুর্লভপুর, ত্রিপুরার খোয়াইতে, ওড়িষ্যার দেওঘরে, কানপুরের ফৈজাবাদে, দক্ষিণ ভারতের বেঙ্গালুরুতে, বাঙলাদেশের সাদিশপুরে আনন্দমার্গের সেমিনার অনুষ্ঠিত হয়৷ আনন্দমার্গের কর্মসূচী অনুযায়ী এগুলিকে বলা হয় ফার্স্ট ডায়োসিস লেবেল সেমিনার৷ পরপর চার সপ্তাহ এইভাবে বিভিন্ন স্থানে ফার্স্ট ডায়োসিস লেবেল সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে৷ এই সেমিনারগুলিতে কেন্দ্রীয় আশ্রম থেকে প্রশিক্ষক পাঠানো হচ্ছে৷ এই সংবাদ দেন আনন্দমার্গের দিল্লী সেক্টরের সেমিনার (ইসমুব) বিভাগের সেক্রেটারী আচার্য তথাগতানন্দ অবধূত৷
দুর্লভপুরে অনুষ্ঠিত সেমিনারে কেন্দ্রীয় আশ্রম থেকে প্রশিক্ষক হিসাবে গিয়েছিলেন আচার্য দেবাত্মানন্দ অবধূত, আচার্য তথাগতানন্দ অবধূত ও আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত৷ বলা বাহুল্য এই সমস্ত ফার্স্ট ডায়োসিস সেমিনারেই আলোচ্য বিষয় ‘আনন্দমার্গ---এক বিপ্লব’, ‘প্রমা’, ‘যোগ, তন্ত্র ও কেবলাভক্তি’ ও ‘গ্লোবালাইজেশন’ (বিশ্বায়ন)৷ আচার্য দেবাত্মানন্দ অবধূত ‘যোগতন্ত্র ও কেবলাভক্তি’ আর ‘আনন্দমার্গ বিপ্লব’---এই বিষয়ের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ আচার্য তথাগতানন্দ অবধূত ‘প্রমা’র ওপর আলোকপাত করেন৷ আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত প্রাউট দর্শনের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন৷ তিনি বর্তমান গ্লোবালাইজেশনের নামে বিশ্বজোড়া যে পুঁজিবাদী শোষণ চলছে তার ওপরও আলোচনা করেন৷
আচার্য দেবাত্মানন্দ অবধূত আনন্দমার্গের মূল লক্ষ্য---মানুষ যেন তার জীবনের পরম লক্ষ্য---ব্রহ্ম-সম্প্রাপ্তি করে’ জীবনে পরমানন্দ লাভ করে৷ এই কারণে আনন্দমার্গে সমস্ত কুসংস্কার তথা সমস্ত প্রকার ডগমা মুক্ত অষ্টাঙ্গিক যোগসাধনা শিক্ষা দেওয়া হয়৷ আনন্দমার্গ কোনও প্রকার জাতপাত বা সাম্প্রদায়িক মানে না৷ আনন্দমার্গ বলে সমস্ত মানুষের এক জাতি---মানব জাতি, সমস্ত মানুষের এক ধর্ম---মানব ধর্ম৷
আচার্য তথাগতানন্দ অবধূত বলেন---দেহ, মন ও আত্মার মধ্যে ভৌতিক Physical) বা শারীরিক, মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের মধ্যে সুন্দর সামঞ্জস্য থাকা চাই৷ সমাজে বা মানুষের জীবনে এই সামঞ্জস্যের অভাবের জন্যে আজ এত সমস্যা৷
আচার্য তন্ময়ানন্দ অবধূত বলেন---মানুষ যদি খেতে না পায় তাহলে তার পক্ষে মানসিক ও আধ্যাত্মিক বিকাশের জন্যে অনুশীলন করা সম্ভব নয়৷ তাই প্রাউট-প্রবক্তা বলেছেন তিনি চান---প্রতিটি মানুষ জীবনের নূন্যতম প্রয়োজনপূর্ত্তির গ্যারাণ্টি পাক৷ প্রতিটি মানুষ মানসিক ক্ষেত্রে সমস্ত সম্ভাবনার বিকাশের পূর্ণ সুযোগ পাক ও প্রতিটি মানুষ তার আধ্যাত্মিক লক্ষ্য পূর্ণ করে পরমানন্দের সন্ধান পাক৷
আচার্য তন্ময়ানন্দজী বলেন---গ্লোবালাইজেশনের নামে বর্তমানে বিশ্বব্যাপী পুঁজিবাদী আগ্রাসন চলছে৷ এই সর্বগ্রাসী পুঁজিবাদী আগ্রাসন থেকে সমাজকে বাঁচাতে পারে একমাত্র মহান দার্শনিক শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকার প্রবর্ত্তিত দর্শন ‘প্রাউট’৷
এই সেমিনারে দুই মেদিনীপুর জেলা, বাঁকুড়া ও মুরি ডায়োসিস থেকে (পুরুলিয়া, সিংভূম প্রভৃতি জেলা) আনন্দমার্গের সক্রিয় দেড় শতাধিক সদস্য উপস্থিত ছিলেন৷
সেমিনারের দ্বিতীয় দিন আনন্দমার্গের এক বণ্যাঢ্য শোভাযাত্রাও বের হয় ও দুর্লভপুর বাজারে এক পথসভা অনুষ্ঠিত হয়৷ এই পথসভায় আনন্দমার্গ ও প্রাউটের বিভিন্ন দিকের ওপর মূল্যবান বক্তব্য রাখেন আচার্য সত্যস্বরূপানন্দ অবধূত, অবধূতিকা আনন্দ গতিময়া আচার্যা ও অবধূতিকা আনন্দ উন্মেষা আচার্যা৷ এই সেমিনারের ব্যবস্থাপক ছিলেন আচার্য উদিতানন্দ অবধূত৷
আগরতলার খোয়াইতে অনুষ্ঠিত আনন্দমার্গের সেমিনারে আনন্দমার্গ তথা প্রাউট দর্শনের বিভিন্ন দিকের ওপর বিস্তারিত আলোচনা করেন আচার্য সর্বেশ্বরানন্দ অবধূত ও আচার্য প্রসূনানন্দ অবধূত৷ এখানে ২৫০-এর বেশী আনন্দমার্গের সক্রিয় সদস্য যোগদান করেন৷ এই সেমিনারের ব্যবস্থাপক ছিলেন আচার্য মনোশুদ্ধানন্দ অবধূত৷
ওড়িশার দেবগরে অনুষ্ঠিত আনন্দমার্গের সেমিনারে প্রশিক্ষক ছিলেন আচার্য বাসুদেবানন্দ অবধূত ও আচার্য বিশুদ্ধানন্দ অবধূত৷ সেমিনারের আলোচ্য বিষয়গুলি ছিল পূর্বরূপ৷ এই সেমিনারের ব্যবস্থাপক ছিলেন আচার্য চিরঞ্জীবানন্দ অবধূত৷
একই তারিখে উল্লিখিত বিষয়ের ওপর এলাহাবাদ ডায়োসিসের সেমিনার অনুষ্ঠিত হয় ফৈজাবাদে৷ এখানে প্রশিক্ষক রূপে গিয়েছিলেন আচার্য মোহনানন্দ অবধূত ও অবধূতিকা আনন্দগুণময়া আচার্যা৷ এই সেমিনারের আয়োজক ছিলেন আচার্য গোপেশানন্দ অবধূত৷
বেঙ্গালুরুতে ওই একই তারিখে আনন্দমার্গের সেমিনারে প্রশিক্ষক হিসেবে গিয়েছিলেন আচার্য শুভদীপানন্দ অবধূত৷ এই সেমিনারের আয়োজক ছিলেন আচার্য শান্তশিবানন্দ অবধূত৷
ঢাকা (বাঙলাদেশ) থেকে প্রাপ্ত সংবাদে বলা হয়েছে গত ২৫, ২৬, ২৭শে জানুয়ারী আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় আশ্রম থেকে নির্ধারিত বিষয়ের ওপর অনুষ্ঠিত সেমিনারে আলোচনা করার জন্যে কেন্দ্রীয় আশ্রম থেকে প্রশিক্ষক রূপে গিয়েছিলেন আচার্য চিতিবোধানন্দ অবধূত৷ এই সেমিনারের আয়োজক ছিলেন অবধূতিকা আনন্দ কীর্তিলেখা আচার্যা৷