তরমুজ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

পৃথিবীতে তরমুজের অনেক প্রজাতি রয়েছে৷ ভারতীয় তরমুজের ওপর–শাদা, ওপর–সবজে ও ওপর–কালচে–তিন প্রজাতিই রয়েছে৷ সাধারণতঃ ভারতীয় তরমুজের ভেতরটা ঘোর লাল অথবা ফিকে লাল হয়ে থাকে৷ গোয়ালন্দ, আমতা, তারকেশ্বর, ৰর্দ্ধমান, ভাগলপুর ও সাহারাণপুরের তরমুজেরও নিজস্ব বৈশিষ্ট্য রয়েছে৷ আকারে সবচেয়ে ৰড় হয়ে থাকে ভাগলপুরী তরমুজ৷ যার ভেতরটা হলদে সেই চীনা তরমুজের আকার কিছুটা ছোট হয় কিন্তু মিষ্টত্ব খুবই বেশী৷ বর্ত্তমানে সাক্ষেকী জাপানী বর্গীয় তরমুজ দক্ষিণ ৰাংলায় সমুদ্র–ঘেঁষা অঞ্চলে ভালই জন্মাচ্ছে–এর স্থানিক নাম দেওয়া হয়েছে সাগরশ্রী৷ উদ্ভিদ বিজ্ঞানীরা ৰলেন তরমুজের আদি বাসস্থান নাকি আরব দেশে৷ অনুমিত হয় জলপথে এই তরমুজ কলিঙ্গ দেশে (বর্ত্তমান ওড়িষ্যা) প্রথম এসেছিল৷ তাই ভাল ৰাংলায় তরমুজের নাম হচ্ছে কালিঙ্গ (কলিঙ্গ  অণ্)৷ তরমুজের অপর একটি ভাল নাম (সংস্কৃত) হচ্ছে ‘কালিকাফলম্’৷ খরক্ষুজাকে ত্তব্ভব্দন্সপ্পন্দ্বপ্ ৰাংলায় খরমুজ বলা হয়৷ সংসৃক্তে বলা হয় স্ফোটক বা স্ফোটন৷ আর ফুটিকে বা ‘বাঙ্গি’কে ৰলা হয় স্ফুটিকা৷ এই তরমুজেরই একটি স্বগোত্র যা কালক্রমে মূল শাখা থেকে পৃথক হয়ে যায়, সেটি ‘খেঁড়ো’ নামে পরিচিত৷ খেঁড়ো অনেক ব্যাপারেই তরমুজের মত৷ তরমুজ কাঁচায় খাওয়া যায় না, পাকলে খাওয়া যায়৷ খেঁড়ো কাঁচাতেই খাওয়া যায়৷ তবে রেঁধে খেতে হয়–পাকলে খাওয়া যায় না৷ তরমুজ একটি লতানে গাছ৷

তরমুজ আজ একটি বিশ্বের সুপরিচিত ও উপাদেয় ফল৷ তরমুজের মধ্যমাংশে শর্করার হার অত্যন্ত অধিক৷ তাই গ্রীষ্মকালে শরীর থেকে অতিরিক্ত ঘাম বেরিয়ে শরীরে যে প্রাণশক্তির ঘাটতি হয়, সরস ও সুমিষ্ট তরমুজ তার অনেকটাই পূরণ করে৷ তরমুজের রস থেকে এক ধরনের চীনী প্রস্তুত করা যায়৷ পাকা তরমুজের শাদা অংশটা শুকিয়ে আটা ও ময়দার মত ব্যবহার করা যায়৷ এর পুষ্টিমূল্য (গমের) আটা ময়দা থেকে কম হলেও আপদকালীন খাদ্য হিসেবে ব্যবহার করা যায়৷ গরীবের পেট ভরাবার কাজেও এ কিছুটা সাহায্য করবে৷ ৰাংলা, ভারত তথা পৃথিবীর খাদ্যসংকটযুক্ত দেশগুলিতে নদীর উভয় তীরের পতিত জমিতে তরমুজ, খেঁড়ো, মেঠো শশা, কাঁকুড় বর্গীয় গাছের অধিক চাষ হওয়া দরকার৷ তাতে বিশ্বের খাদ্য সমস্যার সমাধানে যথেষ্ট সাহায্য করবে৷

তরমুজ ও খোঁড়োর ৰীজ থেকে রন্ধন তৈলও যথেষ্ট পরিমাণে পাওয়া যেতে পারে৷ বস্তুতঃ তরমুজ, শশা, কাঁকুড়, খরমুজ, ফুটি ও কুমড়োর ৰীজ থেকে যে মূল্যবান তেল পাওয়া যায় তার পুষ্টিমূল্য বাদাম তেলের মতই৷ স্বাদ কোন কোন ক্ষেত্রে ঘি–এর কাছাকাছি৷

সয়াবীন

সয়াবীন একটি প্রচুর স্নেহগুণ–যুক্ত উত্তম খাদ্য৷ কিন্তু এতে রয়েছে কিছুটা বুনো গন্ধ৷ এর আদি বাস চীন ও উত্তর পূর্ব এশিয়ার প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে৷ বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে একে স্তুন্দ্ব–প্সস্তুপ্সব্ভ (দুর্গন্ধনাশক) করতে পারলে এর জনপ্রিয় হওয়ার পথে কোন ৰাধা থাকে না৷

এই সয়াবীন থেকে দুগ্ধের সমস্ত উপাদান ও উপকরণই পাওয়া যায়৷ তাই এ থেকে দই, ছানা, মাখন, সয়াবীন তৈল (ঘৃতের বিকল্প) পাওয়া তো যায়ই, গুণেও এ দুধের চেয়ে কিছু বেশী তো কম নয়৷ দুধের ছানার চেয়ে সয়াবীনের ছানার পুষ্টিমূল্য বেশী৷ সয়াবীন তৈল ছাড়া এর অন্যান্য ব্যবহার এখনো ভারতে জনপ্রিয় হয়নি৷ অথচ সাধারণ মানুষের সহজে প্রাপ্ত পৌষ্টিক ও প্রোটিন উপকরণ হিসেবে একে জনপ্রিয় করা উচিত৷ এর চাষও কঠিন কিছু নয়, অন্যান্য ডাল–চাষের মতই৷ সয়াবীন আগের রাত্রে ভিজিয়ে রেখে, পরের দিন তা শিলে ছেঁচে নিয়ে যে কোন তরকারীতে ছড়িয়ে দেওয়া যায় বা তা শিলে ভাল করে পিষে নিয়ে, অন্যান্য উপকরণ মিলিয়ে ৰড়া তৈরী করে তরকারী বানালে, শুধু উপাদেয় হবে না, হবে প্রোটিন–গুণে সমৃদ্ধ একটি মহার্ঘ–খাদ্য৷

দধি–ঘোলের উপকারিতা

‘‘অজীর্ণরোগে তরলভেদে দধি ও কোষ্ঠকাঠিন্যে চীনী সহ মহিষী দুগ্ধের ঘোল৷ মনে রাখতে হক্ষে ঘোল জিনিসটা ডিস্পেপসিয়া (অজীর্ণ) রোগীর পক্ষে বিশেষ হিতকারী৷’’

‘‘অম্লরোগীর পক্ষে ঘোল বিশেষ উপকারী, দধি বিশেষ হিতকারী নয়৷’’

‘‘অর্শ রোগী দু’বেলা এক গ্লাস করে ঘোল খাবে৷’’