এক ভদ্রলোক থাকতেন কলকাতায়৷ তাঁর নাম–ধরো, মনোরঞ্জন ঘোষ–দস্তিদার৷ বাড়ী তাঁর বাখরগঞ্জ জেলার গাভা গ্রামে৷ এক বার তিনি গ্রামে যাবেন৷ গ্রামে যে লোকটি তাঁর অনুপস্থিতিতে তাঁর পরিবারকে দেখাশোনা করে, ধরো তার নাম গোপাল দাস৷ মনোরঞ্জনবাবু গোপালকে চিঠি লিখে জানালেন, অমুখ তারিখে গ্রামে যাচ্ছি৷ তুমি ষ্টীমার ঘাটে উপস্থিত থেকো৷
মনোরঞ্জনবাবুর অনুপস্থিতিতে ও অজ্ঞাতে তাঁর পরিবারে এমন অনেক ঘটনাই ঘটে গেছে যা এখনো পর্যন্ত তাঁর জানবার ও শোণবার সুযোগ হয়নি৷ ষ্টীমার থেকে নেবে মনোরঞ্জনবাবু গোপালকে জিজ্ঞেস করলেন–হ্যাঁ গোপাল, বাড়ীর সব খবর ভাল তো
গোপাল বললে–হ্যাঁ কত্তা, সবাই ভাল, সব কিছুই ঠিকঠিক চলছে৷
তারপরে একটু ঢ়োক গিলে একটু উদীচী করে বললে–কেবল সেই এ্যাল্সেশিয়ান* কুকুরটি মারা গেছে৷
এ্যাল্সেশিয়ান কুকুর মারা গেছে শুণে মনোরঞ্জনবাবু মুষড়ে পড়লেন৷ তারপরে টাল সামলে নিয়ে গোপালকে শুধোলেন–হ্যাঁ গোপাল, তা কুকুরটার হয়েছিল কী
গোপাল বললে–কী আর হবে কত্তা! বাঘের লেখা ও সাপের দেখা, জন্ম–মৃত্যু–বিয়ে তিন বিধাতার নিয়ে–এই ব্যাপারে মানুষ আমরা কী করতে পারি! ওই পোড়া মাংস খেয়েই কুকুরটা মরল৷
মনোরঞ্জনবাবু বললেন এ্যাঁ পোড়া মাংস! কীসের পোড়া মাংস
গোপাল উদীচীর পথ ধরে চলেছে৷ সে বললে–ওই যেদিন আপনার বাড়ীটা পুড়ে গেল না সেদিন আস্তাবলের ভেতরে থাকা ঘোড়াটাও যে পুড়ে মরে গেল৷ ওই পোড়া ঘোড়ার মাংস খেয়েই এ্যাল্সেশিয়ানটা মরল৷
মনোরঞ্জনবাবু বললেন–এ্যাঁ! আমার অমন প্রাণচঞ্চল আরবী ঘোড়াটা আর নেই৷ তুই বলিস কী রে!
গোপাল বললে–ওই যেদিন বুড়ী মা কলেরায় মারা গেলেন তার ঠিক দু’দিন পরে৷
মনোরঞ্জনবাবু বললেন–এ্যাঁ! মা–ও নেই৷ বলিস কী গোপাল! উদীচী করতে করতে গোপাল বললে–হ্যাঁ কত্তা, বুড়ী মা–ও গত হয়েছেন৷
মনোরঞ্জনবাবু বললেন–কবে কলেরা হয়েছিল আমি যে কিছুই জানি না৷
গোপাল বললে–তারিখটা ঠিক মনে নেই কত্তা৷ তবে খোকাবাবু যেদিন মারা গেল তার হপ্তা খানেকের মধ্যে৷
মনোরঞ্জনবাবু বললেন–এ্যাঁ খোকাটাও নেই! তবে তুই যে বললি সব কিছুই এক রকম চলছে৷
গোপাল বললে কত্তা, উদীচী করছিলুম, ধাপে ধাপে বলছিলুম৷
মনোরঞ্জনবাবু কাঁদতে কাঁদতে বললেন–খোকার কী হয়েছিল রে
গোপাল বললে মা–মরা বাচ্চা ছেলে কি বাঁচে! গিন্নী–মা মারা যাবার পর থেকেই তার ঠিক মত দেখাশোনা হচ্ছিল না৷ তাই খোকাকে আর বাঁচানো গেল না৷
স্ত্রীও মারা গেছেন শুনে মনোরঞ্জনবাবু বললেন–এ্যাঁ বলিস কী! সেও নেই৷ তবে আর কাদের জন্যে গ্রামে যাব! চল্, ষ্টীমার ঘাটেই ফিরে যাই৷