ন্যাজ
অনেকে ‘ন্যাজ’ না বলে বলে ‘লেজ’ বা ‘ল্যাজ’৷ কিন্তু সেটা ঠিক নয়৷ সংস্কৃত ‘ন্যুব্জ’ থেকে ভাষাতত্ত্বের বিশেষ নিয়মে ‘ন্যাজ’ হতে পারে, ‘লেজ’ বা ‘ল্যাজ’ হতে পারে না৷ কেননা মূল শব্দের বানানে দন্ত্য ‘ন’ রয়েছে৷ তার বিবর্ত্তিত রূপে ‘ল’ আসবে কোত্থেকে? শব্দটা ‘লাঙ্গুল’ থেকেও আসে নি কারণ লাঙ্গুল–এ ‘জ’ অক্ষরটি নেই৷ এমনকি ‘দ’–ও নেই৷ অনেক সময় ‘দ’ বিবর্ত্তিত হয়ে ‘জ’ হয়ে যায়৷ ‘লাঙ্গুল’–এর তদ্ভব বাংলা শব্দ ‘নেঙ্গুন’৷ এই শব্দটি আমি বীরভূমের গ্রামে শুণেছি.......একটি ছড়ায় ঃ ‘‘ছুতোরে কাঠ কাটে/বগাতে নেঙ্গুন নাড়ে৷’’
জ্যোতিঃ
‘জ্যোতিঃ’ বলতে সংস্কৃতে তিন রকম উচ্চারণ হতে পারে–যেমন ‘জ্যোতিস্’, ‘জ্যোতির্’ ও ‘জ্যোতিহ্’৷ সংস্কৃতের নিয়ম অনুযায়ী বিসর্গের পর স্বরবর্ণ থাকলে বিসর্গ লুপ্ত হয় কিন্তু বিসর্গের পর ব্যঞ্জনবর্ণ থাকলে বিসর্গ লোপ পায় না৷ যেমন ‘জ্যোতিঃকে বললুম’ বললে ‘জ্যোতিঃ’ বানানে বিসর্গ হবে কিন্তু জ্যোতিঃ ইন্দ্র হবে ‘জ্যোতিরিন্দ্র’ কারণ এটি সমস্তপদ৷ অনুরূপে ‘স্পষ্টতঃ’ বানানে বিসর্গ রাখতেই হবে, কারণ ‘তঃ’ হচ্ছে পঞ্চমী বিভক্তির দ্যোতক, কিন্তু ‘স্পষ্টতই’ লেখবার সময় বিসর্গটা না রাখাই ভাল কারণ বিসর্গের ঠিক পরেই স্বরবর্ণ রাখা ঠিক নয়৷ তাই ‘‘স্পষ্টতঃই’’ লেখা ভুল, স্পষ্টতই’ শুদ্ধ৷ এইভাবে ‘ক্রমশই’ শুদ্ধ, ‘ক্রমশঃই’ নয়৷ ‘প্রায়শই’ শুদ্ধ, ‘প্রায়শঃই’ নয়৷
পাশ্চাত্ত্য
অনেকে ‘পাশ্চাত্ত্য’ বানান ‘পাশ্চাত্য’ লেখেন, সেটা ভুল৷ কেননা ‘পশ্চাৎ’ শব্দের উত্তর ‘ত্যায়ঙ্’ প্রত্যয় করে ‘পাশ্চাত্ত্য’ শব্দটি নিষ্পন্ন হয়েছে৷ তাতে রয়েছে ‘পশ্চাৎ’ শব্দের একটি ‘ত’ ও ‘ত্যয়ঙ্’ প্রত্যয়ের একটি ‘ত’৷ তাই ‘পাশ্চাত্ত্য’ বানানে দু’টো ‘ত’ লিখতে হবে৷
(সূত্র ঃ প্রভাতরঞ্জন সরকারের ব্যকরণ বিজ্ঞান৷)