(১) ‘ভা’ ধাতুর অর্থ চকচক করা, জ্যোতিঃ বিকিরণ করা৷ তাই ‘ভা’ ধাতুর উত্তর ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ভ’ শব্দ পাই ভাবারূঢ়ার্থে তা হ’ল ‘যা চকচক করে’, বা ‘জ্যোতিঃ বিকিরণ করে’৷ যোগারাঢ়ার্থে ‘ভ’ ৰলতে ৰোঝবায় পরমৰ্রহ্ম৷ পরমৰ্রহ্ম জ্যোতিষ্মান ৰলেই বিশ্বের আর সকল সত্তা জ্যোতিষ্মতী৷ পরমৰ্রহ্মের আলোকেই সব কিছু আলোকময়৷
‘‘ন তত্র সূর্যো ভাতি ন চন্দ্রতারকম
নেমা বিদ্যুতো ভান্তি কৃতোইয়গ্ণ্নিঃ৷৷
তমেব ভান্তমনুভাতি সর্বং
তস্য ভাসা সর্বমিদং বিভাতি৷’’
তাঁর জ্যোতির সামনে সূর্য্য নিষ্প্রভ৷ তারকা-চন্দ্রের অবস্থাও তথৈবচ৷ বিদ্যুৎ তার সামনে জ্যোতি হারায়৷ অগ্ণির কথা আর ৰলৰ কী! তিনি আলোকময় ৰলেই আর সবাই আলোকময়৷ তার জ্যোতিতেই সবাই জ্যোতিঃ বিকিরণ করে চলেছে৷ তাই ‘ভ’ শব্দের প্রথম ও প্রধান অর্থ হচ্ছে ‘পরমপুরুষ’৷
(২) ‘ভা’ ধাতুর (ভাতি) অর্থই হচ্ছে আলো দেওয়া ৷ তাই ‘ভা’ ধাতুর উত্তর ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ভ’ শব্দ পাচ্ছি তার একটি মানে হচ্ছে ‘আলো’ বা ‘যে আলো দেয়’৷ আমরা অনায়াসে যে কোন ৰাতির উদ্দেশে---বৈদ্যুতিক আলো, হ্যারিকেন লন বা টর্চ প্রভৃতি ---‘ভ’ শব্দ ব্যবহার করে সময় সংক্ষেপ ও শব্দ সংক্ষেপ করতে পারি---বিশেষ কুরে ‘টর্চ’ শব্দটির পরিবর্তে ‘ভ’ শব্দটি খুবই সহজবাচ্য৷
(৩) আকাশের দিকে তাকিয়ে আমরা যত কিছু জ্বলজ্বলে বস্তু দেখি---তা সে জ্বলজ্বলে তারাই হোক, নক্ষ্রই (ণক্ষ্র/নক্ষ্র দুই-ই চলবে) হোক, গ্রহ-উপগ্রহ-উদা-ধূমকেতু-নীহারিকা যাই হোক না কেন--সবাইকার জন্যেই এই ‘ভ’ শব্দ সাধারণভাবে চলতে পারে কারণ তারা সবাই জ্বলজ্বল করছে৷ এতদর্থে ‘ভ’ মানে ইংরেজীতে celestial body-র সমতুল্য....সংস্কৃতে ‘জ্যোতিষ্ক’৷
(৪) এর আগেই একবার ৰলেছি, ‘ণক্ষ্’ ধাতুর অর্থ হ’ল জ্বলজ্বল করা৷ ‘নক্ষ’ শব্দটি তার থেকেই এসেছে৷ সাধারণতঃ যার নিজের আলো আছে তাবেই ৰলা হয় তারা বা নক্ষ্র৷ তাই সাধারণ ভাবে ‘ভ’ ৰলতে সমস্ত জ্যোতিষ্ককে ৰোবালেও বিশেষভাবে ‘ভ’ ৰলতে বোঝায় তারা বা নক্ষকে৷ তারা ও নক্ষরে পার্থক্য একটু পরে ৰলছি৷
(৫) একটি জ্যোতিষ্মান তারাকে (যেমন সূর্য্য, মঘা, পুলহ, পুলস্ত, অগস্ত্য, অরুন্ধতী, বরুণ, বারুণী প্রভৃতি) ঘিরে যে সকল জ্যোতিষ্ক ঘুরে চলেছে তারা প্রত্যক্ষভাবে ওই তারাটা থেকেই আলো পাচ্ছে৷ তারা যদি তৎসহ নিজের চারিপাশে ঘুরতে থাকে লাট্টুর মত (যেমন পৃথিবী ঘুরে থাকে), তাহলে তাদের সর্বাংশে কোন না কোন সময়ে আলো এসে থাকে৷ অন্যথায় একটি অংশে (যেমন চন্দ্র) আলো অবশ্যই আসে৷ তাই জ্যোতিষ্মান হওয়ায় গ্রহদেরও ‘ভ’ ৰলা যায় যদিও তাদের আলো নিজস্ব নয়৷ কিন্তু গভীর ভাবে বিবেচনা করলে দেখা যায় নিজস্ব আলো কার আছে৷ জ্যোতিষ্কেরও নেই, গ্রহ-নক্ষত্রেরও নেই, সবাই আলোক পায় সেই আলোকময় পরমপুরুষেরই কাছ থেকে৷ তাই পরম-পুরুষের কাছ থেকে আলো পেয়ে তারা-নক্ষ যদি ‘ভ’ পদবাচ্য হতে পারে তবে গ্রহই বা হবে না কেন!
(৬) তবে উপগ্রহের জন্যে (যেমন পৃথিবীর ছাদ, মঙ্গলের ডিমোস---Demos, ফোৰস---Phobos) সাধারণতঃ ‘ভ’ শব্দ ব্যবহৃত হয় না৷ হলেও তা অযৌক্তিক হত না৷ তারাও জ্যোতিষ্ক ৰলে গণ্য হওয়ায় সেই বিচারে সাধারণ অর্থে ‘ভ’ অবশ্যই৷
(৭) আকাশে আমরা আমাদের কাছাকাছি যে সব চকচকে জিনিস দেখি তাদের মধ্যে শুক্রগ্রহ venus) অন্যতম৷ এই গ্রহটিকে কথ্য ভাষাতে আমরা ভূল করে ‘তারা’ ৰলে থাকি৷ সন্ধ্যাকাশে জ্বলজ্বল করা এই তারাটিকে ৰলি সন্ধ্যাতারা, একেই আবার শেষরাত্রে ৰলি শুকতারা(শুক্রতারা)৷ তাই ‘ভা+‘ড’ করে যে ‘ভ’ শব্দ পাচ্ছি তার একটি বিশেষ অর্থ হ’ল ‘শুকতারা’৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)