আলোকে যে কেটে কেটে দেয় তার জন্যে ছো+ ড করে ‘ছ’ শব্দ ব্যবহার করা যায়৷ এই ‘ছ’ শব্দের একটা অর্থ হ’ল ‘ছায়া’ যা আলোকে কেটে কেটে দেয়৷ যেহেতু ‘রাহু’ আর ‘কেতু’ এই দুটি হচ্ছে পৃথিবীরই দুই ধরণের ছায়া (ছায়া ও উপচ্ছায়া--umbra and penumbra), এই দু’টিকে ‘ছায়াগ্রহ’ বা ‘ছ’ ৰলা হয়৷ পৌরাণিক গল্প অনুযায়ী রাহু-কেতু ছিল একটি দানব৷ সে লুকিয়ে লুকিয়ে অমৃত খেয়ে ফেলেছিল৷ তাই বিষ্ণু চক্রের সাহায্যে তার মাথা কেটে দেন৷ অমৃত ভক্ষণ করায় তার মৃত্যু হ’ল না বটে, তবে ধড় ও মাথা দু’টো অংশ পৃথকভাবে বেঁচে রইল৷ মাথাটার নাম ‘রাহু’ umbra) ও ধড়টার নাম ‘কেতু’ penumbra)৷ পৌরাণিক গল্প অনুযায়ী সূর্যের স্ত্রীর নাম ‘ছায়া’৷ তার জন্যেও ‘ছ’ শব্দ ব্যবহার করা চলে৷
‘ছো’ ধাতুর আর একটা মানে ‘ছোলা’৷ যদি কখনো কোন বস্তুর বাইরের দিকটা মসৃণ ভাবে কাটা হয় আমরা তাকে ৰলি ‘চাঁছা’৷ যেমন, বাঁশের থেকে কি-ৰাখারি যদি আমরা ভালভাবে কেটে চলি তবে তাকে ৰলি ‘ৰাঁশ ‘চাঁছা’ হ’ল’৷ কিন্তু ৰাঁশটা যদি লম্বা লম্বা করে কাটি ও কেটে ‘চাচরি’ তৈরী করি তবে তাকে ৰলে ‘ছোলা’৷ তোমরা পেন্সিল কাট না, পেন্সিল ছোল?
(৯) কেউ যদি খানিকটা কাগজ নিয়ে তাকে কুচোয়, স্বাভাবিক অবস্থায় ওই ৰড় কাগজটা যত কাঁপৰে, কুচোনো হলে ওই কুচোনো টুকরোগুলো তার চেয়ে অনেক বেশী কাঁপৰে৷ তাই এই অর্থেও ছে+ড প্রত্যয় করে ‘ছ’ শব্দ পাই যার মানে যা ফরফর করে কাঁপে’৷
(১০) তোমরা আলু-পটোল-বেগুন যেভাবে কাট, শাক সেইভাবে কাট না৷ শাককে কুচিয়ে কাট৷ এই অর্থে ছো+ ড= ‘ছ’ পাই যার ভাবারাঢ়ার্থ হচ্ছে ‘যে জিনিসকে কুচিয়ে কাটা হয়’, যোগারুঢ়ার্থে ‘শাক’৷ প্রসঙ্গতঃ ৰলে রাখা ভাল যে, ৰাংলায় ‘শাক’ মানে নটে শাক, কলমী শাক, পালং শাক প্রভৃতি কিন্তু সংস্কৃতে ’’ ‘শাক’ মানে ‘সবজী’ অর্থাৎvegetables, আলু-পটোল-শোজনে ফুল-নটে শাক- সংস্কৃতে সবাই ‘শাক’৷ তাই নিরামিষভোজী বাvegetarian-কে সংস্কৃতে ৰলা হয় ‘শাকাহারী’৷ এর মধ্যে যে সকল শাকের আমরা পাতা খাই যেমন নটে শাক, পালং শাক, হিঞ্চে শাক প্রভৃতি তাদের সংস্কৃতে ৰলে পত্রশাক৷ যে সকল সৰজীর আমরা ফুল খাই, যেমন কুমড়ো ফুল, শোজনে ফুল, কলার মোচা এদের ৰলি ‘পুষ্প শাক’৷ যে সব সবজী মাটির তলায় হয় যেমন, আলু-কচু-ওল-খামালু (অতি পুষ্টিকর ও সুস্বাদু৷ এই আলুকে গ্রাম-ৰাঙলায় কোথাও কোথাও মেটে আলুও বলা হয়৷ তবে কলকাতায় আমরা খামালু ৰলি৷ মানকচুর মত এটিও একটি ত্রৈবার্ষিক ফসল) রাঙালু-শাঁখালু---এদের সংস্কৃতে ৰলি ‘কন্দ শাক’৷ ‘ছো’ ধাতু থেকে তৈরী ছ’ শব্দের অর্থ কিন্তু সমস্ত সবজী নয়৷ কেবলমাত্র পত্রশাককেই এই অর্থে ‘ছ’ ৰলা হয়৷
(১১) ‘ছো’ ধাতুর আর একটি অর্থ স্পর্শসুখানুভব করা৷ তোমার গায়ে কেউ যদি পায়রার পালক বুলিয়ে দেয়, তোমার সুখানুভব হৰে৷ তাই এই অর্থে ছো+ ড করে যে ‘ছ’ পাই তার মানে ‘পাখীর পালক’৷ ‘ছি’ ধাতুর উত্তর ‘কিপ্’ প্রত্যয় করে আমরা ‘ছি’ শব্দ পাচ্ছি যার একটি মান কাঁচকলার কচি ডগা অন্য গায়ে হাত বুলিয়ে আমরা স্পর্শসুখানুভূতি লাভ করি৷ তাই এই ছে+ড করে যে ‘ছ’ শব্দ পাই তার মানে বিভিন্ন জীবজন্তুর শাবক ও তৎসহ মানব শিশুও৷
(শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)