(১১) ডব্ ধাতুর অর্থ নীচে নাৰা/নীচে পড়ে যাওয়া/জলের তলায় থাকা৷ এই ‘ডব্’ ধাতু থেকেই ৰাংলায় ‘ডোৰা’ শব্দ এসেছে৷ মনে করো, তুমি সমতল ভূমির উপর দিয়ে যাচ্ছে৷ হঠাৎ একটু নীচের দিকে পড়ে গেল৷ অর্থাৎ মাটির স্তর একটু নেৰে গেল৷ এই নীচু অংশকেও আমরা তাই ডোবা ৰলি৷ ডোৰাতে যে জল জমে থাকতে হবেই এমন কোন কথা নেই৷ ৰাঙলার কোন কোন অংশ---ৰরিশাল, ফরিদপুর, ডাকা (ঢাকা), ব্রাহ্মণবাড়িয়া, হবিগঞ্জ, আড়িয়ল, চাঁদপুর, কালিকচ্ছ, সরাইল প্রভৃতি স্থানগুলিকে এক কালে ডোবা জায়গা ৰলা হত কারণ ওই সকল স্থান বছরে প্রায় সাত মাস জলের তলায় থাকত ডুৰে থাকত৷ এই অর্থে পূর্ব ৰাঙলার একটি ৰড় অংশকে ‘ডবাক্’ বলা হত৷ এই ‘ডবাক থেকেই ডাকা (ঢাকা) শব্দটি এসেছে৷ ঢাক পিটিয়ে কেউ শহরের সীমানা নির্ধারণ করেননি৷ স্থানটি জলে ঢাকা এই অর্থেও ‘ঢাকা’ নামের সার্থকতা সিদ্ধ হতে পারে৷ সংস্কৃত ভাষায় এই শহরটির দু’টি নাম---ঢক্কানগরী ও ডাকানগরী৷ এই ‘ড’ ধাতু থেকেই আমরা ৰাংলায় ডুৰ দেওয়া, ডুৰে যাওয়া, ডুৰ-সাঁতার কাটা, ডুবে ডুৰে জল খাওয়া, ডুৰন্ত (ডুৰন্ত মানুষ খড়কুটোও ধরতে চায়) প্রভৃতি শব্দগুলি পেয়েছি৷ মনে রেখো, ‘ড’ ধাতুর ‘ৰ’ বর্গীয় ‘ৰ’৷ তাই ‘ডোৰা’ ও ‘ডোৰা’ সংক্রান্ত সব ক্রিয়া, বিশেষ্য ও ক্রিয়াবিশেষণে বর্গীয় ‘ৰ’ ব্যবহার করতে হৰে৷ এই ‘ডব’ ধাতুর উত্তর ‘ড’ প্রত্যয় করে আমরা যে ‘ড’ শব্দ পাচ্ছি তার ভাবরুঢ়ার্থ হচ্ছে এই যে মানুষ খুবই নীচে নেৰে গেছে বা অধোগতি প্রাপ্ত হয়েছে৷ যাঁরা সেকালে অবিদ্যাতন্ত্রের চর্চা করতেন তাদের অনেককেই এমন সব নিম্ন মানের কাজ করতে হত যা মানবতার মৌল নীতিগুলির বিরোধী৷ সেইজন্য এই সমস্ত লোককে পুংলিঙ্গে ‘ডাক’ স্ত্রীলিঙ্গে ‘ডাকিনী’ ৰলা হত৷ ‘ডাক’ শব্দ ভিন্নতর অর্থেও ব্যবহৃত হত৷ কিন্তু ডাকিনী সর্বক্ষেত্রেই ডাকিনীতন্ত্রের অনুধাবনকারিণী নারীকেই ৰোঝাত৷ অধোগতি পাওয়া এই অর্থে ‘ডৰ্’+ ‘ড’ করে যে ‘ড’ শব্দ পাচ্ছি তার ভাবরূঢ়ার্থ হচ্ছে অধোগতি-প্রাপ্ত মানুষ৷ আর যোর্গরূঢ়ার্থ হচ্ছে ডাক, বিশেষ ভাবে ডাকিনী (ডাকিনী> ডাইনী> ডাইন)৷ উত্তর ভারতে ‘ডাইন’ শব্দটি ৰেশী প্রচলিত৷
‘ডাইন’ ৰলতে গিয়ে একটি মজার কথা মনে পড়ল৷ দু’টুকরো খাদ্য বস্তুকে যদি কোন তৃতীয় খাদ্যবস্তু দ্বারা সংযুক্ত করে দেওয়া হয় তাহলে তাকে ৰলা হয় স্যাণ্ডিচ Sandwitch) ৰানানগত বিচারে উচ্চারণ ‘স্যাণ্ডুইচ’ হলেও বৈবহারিক উচ্চারণ ‘স্যাণ্ডিচ’ যেমন ৰানানে ‘গ্রীনউইচ’ Greenwitch) থাকলেও আসল উচ্চারণ ‘গ্রীনিচ’৷
সেকালে ভারতের কোন কোন অংশের লোকেরা রাতারাতি ইংরেজীকে সরাতে চেয়েছিল৷ তারা ভেবে কূলকিনারা পাচ্ছিল না, যাকে ৰলে একেবারে দিশেহারা হয়ে গেছলSandwitch-এর দেশী শব্দ কী হৰে তাই নিয়ে৷ শেষে মুশকিল-আসান করে দিলেন একজন দাদা শ্রেণীর পণ্ডিত৷ তিনি ৰললেন,Sand-কে যখন ৰলি ৰালুকা আরWitch কে যখন ৰলি ডাইন তখ স্যাণ্ড-উইচকে ৰলা উচিত বালু-ডাইন৷ শব্দটি দিল্লীর ৰাজারে চলেছিল কি না ৰলতে পারি না৷
হ্যাঁ, একটু আগে ৰলছিলুম ‘ডাক’ শব্দের ভিন্নতর অর্থও আছে৷ ‘ডাক’ ৰলতে সংস্কৃত ভাষায় বুদ্ধিমান পুরুষকেও ৰোঝায়৷ ডাক ৰলতে নরসুন্দর বা নাপিতকেও ৰোঝায়৷ মধ্যযুগীয় ৰাংলায় ক্ষণার বচনের পাশাপাশি যাঁর বচন চলত সেই ডাক ছিলেন নাপিত বর্গীয় একজন অতি বুদ্ধিমান মানুষ৷ মানব চরিত্র ৰোঝার বা ৰোঝাবার ক্ষমতা ছিল তার অপরিসীম৷ এই ডাকের বচনের বিভিন্ন ভাবে বিভিন্ন ধাঁচের মানুষের সমাজ-চিত্রণ করা হয়েছে৷ যেমন দুষ্টা নারী সম্বন্ধে ৰলা হয়েছে---
‘‘ঘরে আখা ৰাহিরে রান্ধে , অল্প কেশ ফুলাইয়া ৰান্ধে৷
ঘন ঘন চায় পালটি ঘাড়, ডাক ৰলে এ নারী ঘর-উজাড়৷’’
‘‘নিড়ি* পোখরী দূরে যায়, পাথিক দেখিয়ে আউড়ে চায়৷ পর সম্ভাষে বাটে থিকে, ডাক ৰলে এ নারী ঘরে না টিকে৷৷’’
ভাষাটি দেখে মনে হয় এটি আনুমানিক ৭০০/৮০০ বছরের পুরোণো ৰাংলা৷ ‘আখা’ শব্দের ব্যবহার দেখে অনুমিত হয় ডাক মানুষটি ছিলেন পশ্চিম রাঢ়ের ৰাসিন্দে৷
যাই হোক ডাক/ডাকিনী দুই অর্থে ই ‘ড’ শব্দটি চলৰে বটে, তবে মুখ্যতঃ ‘ডাকিনী’ অর্থেই চলে থাকে৷ অনেকের মতে এই ডাকিনীতন্ত্র দক্ষিণ-পূর্ব চীন থেকে ভারতে এসেছিল, কারো কারো মতে পূর্ব তিববত থেকে৷ আৰার কারো মতে এর উদ্ভুতি প্রাগ-জ্যোতিষপুরে অর্থাৎ কামরূপে (যার বর্ত্তমান নাম অসম)৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)