সম্পাদকীয়

সামাজিক-অর্থনৈতিক আন্দোলন

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

অদ্ভুত এক রাজনৈতিক বৈপরিত্যে আক্রান্ত ভারতীয় রাজনীতি৷ রাজনৈতিক দলগুলোর নীতি আদর্শ বলে কিছু নেই৷ স্বাধীনতার  শুরুতে দেশবন্ধু চিত্তরঞ্জন-সুভাষচন্দ্রের বাঙলা কিছুটা ব্যতিক্রম ছিল৷ ক্রমে সেই বিষাক্ত রাজনীতি গ্রাস করেছে বাঙলাকেও৷ ভ্রাতৃঘাতী রাজনীতি বাঙালীর  উন্নত সংস্কৃতি কৃষ্টি ও সভ্যতাকে অতি নিম্নস্তরে নিয়ে গেছে৷ সাঁইবাড়ী, বিজনসেতু বগটুই -রাজনীতির দানবিক বর্বরতার সাক্ষর বহন করছে৷ তবে এসবের পিছনে আছে এক সুগভীর রাজনৈতিক ষড়যন্ত্র৷ যারশুরু ৮৪ বছর আগে স্বাধীনতা পূর্ববর্তী ভারতে৷

সর্বাত্মক  মুক্তির আদর্শ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

১৯৮২ সালে ২৫শে মার্চ হাওড়া জেলার রামরাজাতলায় আনন্দমার্গের এক ধর্ম মহাসম্মেলন হচ্ছে ৷ তাতে মার্গগুরু শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী  প্রবচন দেবেন৷ হাজার  হাজার আনন্দমার্গীর সমাবেশ হয়েছে৷ প্যান্ডেলের বাইরেও আনন্দমার্গের পাবলিকেশনের বইয়ের দোকান৷ লোকে ভীড় করে শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজীর আধ্যাত্মিক দর্শন, সমাজদর্শন, ‘প্রাউট’, ভাষাতত্ত্ব, ব্যাকারণ, প্রভাতসঙ্গীত, গল্প, নাটক, শিশুসাহিত্য, যৌগিক চিকিৎসা, দ্রব্যগুণ  প্রভৃতি বিভিন্ন বিষয়ের বই দেখছেন --- কিনছেন৷ আচার্য ত্র্যম্বকেশরানন্দজী ও অন্যান্য কয়েকজন আনন্দমার্গী আগ্রহী মানুষজনের সঙ্গে  কথাবার্র্ত বলছেন, এমন সময় একদল কলেজের ছাত্র এল৷ তারাও বিভিন্ন বই দেখছ

সম্ভবামি যুগে যুগে

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

মানব সভ্যতার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যখনই সভ্যতার সঙ্কট চরম আকার ধারণ করেছে তখন সঙ্কট থেকে মানব সমাজকে পরিত্রাণের জন্য তারকব্রহ্ম যুগত্রাতা রূপে সমাজে বারংবার আবির্ভূত হয়েছেন৷ আজ থেকে প্রায় সাত হাজার বছর আগে তারকব্রহ্ম সদাশিব প্রাগৈতিহাসিক যুগের প্রায় অন্ধকারাচ্ছন্ন সমাজকে তার দিব্যজ্যোতিতে উদ্ভাসিত করেছিলেন৷ তিনি ছিলেন মানবেতিহাসের প্রথম তারকব্রহ্ম৷ তিনি মানবসভ্যতার আদি পিতা৷ প্রচণ্ড আধ্যাত্মিক স্পন্দনের দ্বারা---সমাজচক্রে দিয়েছিলেন এক বিরাট ধাক্কা ভগবান সদাশিবের বৈবহারিক তন্ত্র-যোগ ভিত্তিক সাধনা বিজ্ঞান, বিবাহ পদ্ধতি, নৃত্য,গীত বাদ্য সমন্ধিত সঙ্গীত বিজ্ঞান চিকিৎসা বিজ্ঞান, বৈদ্যক

অর্থনৈতিক গণতন্ত্রই একমাত্র বিকল্প

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

প্রচলিত অর্থনৈতিক ব্যবস্থার মধ্যে থেকেই  বিভিন্ন ভাবে কি কেন্দ্রীয় সরকার কি রাজ্য সরকার দরিদ্র্য জনসাধারণের সমস্যা সমাধানের নামে নানা ধরণের চমক দিয়ে চলেছেন৷ কিন্তু স্বাধীনতার পর ৭৭ বছর অতিক্রান্ত হয়ে গেল আজও গরীব জনসাধারণের দুর্দশার অন্ত নেই৷ আসলে পুঁজিবাদ বা মার্কসবাদ–এদের কোনটাই দরিদ্র মানুষের যথাযথ কল্যাণ করতে পারবে না৷ আর ভারতবর্ষে না পুঁজিবাদ, না মার্কসবাদ, মিশ্র অর্থনীতির নামে বক–কচ্ছপ অবস্থা ভারতীয় অর্থনীতির৷ তাই হাল ফেরাতে দেশের অর্থনীতির নিয়ামকদের প্রাউটের অর্থনৈতিক ব্যবস্থার দিকে নজর দেওয়া উচিত৷

ভারতীয় যুক্তরাষ্ট্রে বৈচিত্র্যের মধ্যেই ঐক্য কাম্য

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

প্রাউট দর্শনের প্রবক্তা মহান দার্শনিক শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার বলেছেন---‘‘বৈচিত্র্যং প্রাকৃত ধর্মঃ সমানং ন ভবিষ্যতি৷’’ বৈচিত্রই প্রকৃতির ধর্ম৷ সৃষ্ট জগতের কোনও দুটি বস্তু হুবহু এক নয়৷ দু’টি মন এক নয়, দুটি অণু বা পরমাণুও এক নয়৷ এই বৈচিত্র্যই প্রকৃতির স্বভাব৷ যদি কেউ সবকিছুকে সমান করতে চায় সেক্ষেত্রে প্রাকৃত ধর্মের বিরোধিতা করায় অবশ্যই ব্যর্থ হবে৷ সব কিছু সমান কেবল প্রকৃতির অব্যক্ত অবস্থায়৷ তাই যারা সব কিছুকে সমান করার কথা ভাবে, তারা সব কিছুকেই ধবংস করার কথা ভাবে৷ .....সবাইকে যেমন এক ছাঁচে ঢালা যাবে না, তেমনি বৈচিত্র্যের ধূয়ো তুলে কেউ যাতে শোষণ করতে না পারে সেদিকেও লক্ষ্য রাখতে হবে৷ বৈচিত্র্য স

ভ্রান্ত দর্শনের করালগ্রাসে সমাজ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

একজন মহান দার্শনিক বলেছিলেন–‘‘কিছু সংখ্যক গুণ্ডা–বদমাস অপেক্ষা একটি ভ্রান্ত দর্শনের অনুগামীরা সমাজের অনেক বেশী ক্ষতি করে৷’’

আজ ভ্রান্ত দর্শনের যাঁতাকলে পিষ্ট বাঙলা তথা ভারতবর্ষের মানুষ৷ অর্থনীতিকে গ্রাস করেছে আত্ম স্বার্থকেন্দ্রিক পুঁজিবাদ৷ সমাজের সর্বস্তরে পৌঁছে গেছে পুঁজিপতি শোষকের কালো হাত৷ শিল্প সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি ফ্যাসিষ্ট শোষকের বিষাক্ত ছোবল থেকে কেউ রেহাই পায়নি৷

প্রভাত সঙ্গীত ঃ তমসাবৃত নিশীথে আলোর পরশ

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

আজ সমাজের সর্বস্তরে দেখা দিয়েছে চরম অবক্ষয়ের অমানিশা৷ অর্থনৈতিক স্তরে চলছে চরম শোষণ ও দুর্নীতি৷ ঈশ্বর সৃষ্ট এই জগতের সম্পদ যা ঈশ্বরের সন্তান সমস্ত মানুষের মিলেমিশে খেয়ে পরে বাঁচার জন্যে, সবাইকে সঙ্গে নিয়ে জীবনের চরিতার্থতার পথে এগিয়ে যাওয়ার জন্যে, কিন্তু আজ সেই সম্পদ লুঠে পুটে খাচ্ছে সমাজের এক শ্রেণীর শোষকগোষ্ঠী৷ রাজনীতি – যা নাকি দেশ–সেবার প্রকৃষ্ট নীতি, তা হয়ে উঠেছে যেন তেন প্রকারেণ ক্ষমতা করায়ত্ত করার ও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত থাকার কৌশল মাত্র৷ এখানে ‘নীতি’টা নিতান্তই গৌণ৷ শিক্ষার নামে চলেছে কেবলমাত্র অর্থ রোজগারের উপায় আয়ত্ত করার প্রশিক্ষণ, সেখানে নীতিশিক্ষা–ধ্যাত্মশিক্ কোনো নাম–ঠিকানা নেই৷ সং

সমাজ–সভ্যতা বাঁচাতে চাই আদর্শ শিক্ষা

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

জাতিগঠনের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হ’ল শিক্ষা৷ বর্তমানে সমাজ যে সব ব্যাধিতে ভুগছে তার প্রধান কারণ অশিক্ষা বা ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা৷ দেশের খ্যাতনামা বিশ্ববিদ্যালয় যাদবপুরে স্বপ্ণদীপ কুন্ডুর মত ছেলেরা দুরগ্রাম থেকে উচ্চশিক্ষার আশায় এসে অকালে হারিয়ে যায় আদর্শহীন ত্রুটিপূর্ণ শিক্ষার বলি হয়ে৷ সারা দেশ জুড়ে অসংখ্য আর্থিক দুর্নীতি, নারী–লাঞ্ছনা, পারিবারিক হিংসা ও হত্যা সহ অজস্র অপরাধের ঘটনা ঘটছে এ সবের পেছনে অন্যতম প্রধান কারণ হচ্ছে শিক্ষার ব্যবস্থার ত্রুটি৷ প্রতি বছর তো লক্ষ লক্ষ যুবক–যুবতী স্কুল কলেজের গণ্ডী পেরিয়ে কর্মক্ষেত্রে ঝাঁপিয়ে পড়ছে৷ এই স্কুল কলেজগুলিই প্রধানতঃ মানুষ তৈরীর কারখানা

আদর্শ নেতৃত্বের প্রয়োজন

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

বহু দলীয় গণতন্ত্রে নেতার ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ৷ কারণ যদিও গণতন্ত্র প্রসঙ্গে বলা হতে থাকে জনগণের জন্যে-জনগণের দ্বারা জনগণের সরকার৷ সার্থক গণতন্ত্র তখনই সম্ভব যখন রাষ্ট্রের কমপক্ষে ৫১ শতাংশ মানুষ শিক্ষিত ও সামাজিক অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক বিষয়ে সচেতন হবে৷ ভারতবর্ষে তথাকথিত শিক্ষিত মানুষের একটা বড় অংশ আজও সামাজিক অর্থনৈতিক রাজনৈতিক বিষয়ে শুধু অসচেতন নয়, অজ্ঞ বলা চলে৷ এই অবস্থায় ভারতীয় গণতন্ত্র দলতন্ত্রে পরিণত হয়েছে৷ অর্থাৎ দলের দ্বারা, দলের জন্যে, দলের সরকার৷ আবার দল নির্ভর করে ব্যষ্টি নেতৃত্বের ওপর৷ তাই ভারতীয় গণতন্ত্রে ব্যষ্টি নেতৃত্বকে অস্বীকার করা যায় না৷ ভারতবর্ষের স্বাধীনতা সংগ্রামে ব্

সামাজিক অর্থনৈতিক ব্যবস্থার আমূল পরিবর্তন চাই

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

৭৭তম স্বাধীনতা দিবসে প্রধানমন্ত্রী তাঁর ভাষণে অর্থনীতিকে কোন দিশা দেখাতে পারেনি৷ তাঁর ভাষণ ছিল আত্মপ্রচারের বাগাড়ম্বর৷ তার কথায় না ছিল সারবত্তা, না ছিল সত্যতা৷ দ্রব্যমূল্য বৃদ্ধি, সুইসব্যাঙ্কের  কালোটাকা  বছরে দুকোটি  চাকরী না এসব নিয়ে  তাঁর ভাষণে একটি কথাও বার হয়নি৷ শুধু দেশ এগিয়ে চলেছে  জিডিপির হাত ধরে৷ ‘জিডিপি’‘জিডিপি’ করে নেতা মন্ত্রীরা দেশবাসীকে চমকে দিচ্ছে৷ সাধারণ দেশবাসী জিডিপি বৃদ্ধির ঠিক মানেও বোঝেন না, তাদের শুধু এইটুকু বোঝানো হয়, দেশের অত্যন্ত  দ্রুত উন্নয়ন হবে৷ জিডিপি বৃদ্ধি মানেই তো দেশের সামগ্রিক উৎপাদন বৃদ্ধি৷ দেশের কলকারখানা বাড়বে, কৃষিজ সম্পদ বাড়বে,খনিজ সম্পদ বাড়বে, পরিষেবা