চিতিশক্তির মহাজাগতিক ৰন্ধনে সবাই ৰদ্ধ৷ যতক্ষণ সৃষ্টি আছে, পরমপুরষেরও প্রতিটি বস্তুর সঙ্গে ওতযোগ ও প্রোতযোগের ৰন্ধন রয়েছে৷ কেউ যদি বলে যে অন্য কারোর তার প্রয়োজন নেই, আমি একলাই থাকব, কারোর সঙ্গে আমার কোনো সম্পর্ক নেই– এটা বলা তার পক্ষে অনুচিত কাজ হবে৷ পৃথিবীতে কেউ একলা থাকতে পারে না৷ দেখ, তোমার জলের প্রয়োজন, তার জন্যে তুমি কি কোদাল নিয়ে মাটি খুঁড়ে একা একাই কুঁয়ো বানিয়ে দেবে তোমার জুতোর প্রয়োজন এরজন্যে নিজেই জুতো তৈরী করতে বসে যাবে বস্ত্রের প্রয়োজন, তাই নিজেই বস্ত্র তৈরীতে লেগে যাবে – না, এটা সম্ভব নয়৷ সকলেই সকলের ওপর নির্ভরশীল৷
এই যে পারস্পরিক নির্ভরশীলতা৷ এই যে ওতযোগের ৰন্ধন, এই যে প্রোতযোগের ৰন্ধন, এটা কেমন যেখানে ক্ষুদ্রতা আছে, সেখানে ক্ষুদ্রতাই ৰন্ধনের কারণ৷ অর্থাৎ সেখানেই ৰন্ধনেও মুক্তি যেখানে ৰন্ধন সবার জন্যে৷ আর যেখানে ৰন্ধন ক্ষুদ্র বা সীমিত, সেখানে তা ৰন্ধনের কারণ, যা কি না মহাজাগতিক ৰন্ধন (cosmic tie)৷ এই ৰন্ধন থেকে কেউ নিজেকে বিচ্ছিন্ন করতে চাইলে তার অর্থ দাঁড়াবে মৃত্যু৷ পরমপুরুষ ওতযোগ তথা প্রোতযোগের দ্বারা কীভাবে সবার সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করে চলেছেন যখন সমগ্র বিশ্বকে তিনি দেখেন তখন সেটা তাঁর প্রোতযোগ, আর যেখানে বৈয়ষ্টিক সম্পর্ক, প্রত্যেক ব্যষ্টির সঙ্গে আলাদা আলাদা সম্বন্ধ–কে কী করছে, কে কী ভাবছে, কার কী দুঃখ, কার কিসে সুখ, কে কী বলতে চাইছে অথচ বলতে পারছে না–এ সব ব্যাপারে অবহিত থাকা তাঁর কর্ত্তব্য৷ এই যে তাঁর কাজ বা কর্ত্তব্য, এটাও তো এক ৰন্ধন– এটা একটা বরণীয় তথা স্মরণীয় ৰন্ধন৷
এই যে মহাজাগতিক ৰন্ধন, এতে প্রতিটি মানুষ, জীব, গাছপালা, সমস্ত চেতন অচেতন সত্তা সবাই অংশীদার, সবাই সদস্য, সবাই মেম্বার৷ অর্থাৎ এই যে ভারসাম্য বা সন্তুলন–বিশ্বের মহা সন্তুলন এতে কেউই তুচ্ছ নয়, কেউই অবহেলিত নয়৷ কারও জীবন ব্যর্থ নয়৷ একজন একশ’ বছরের বৃদ্ধা বিধবার জীবনও যেমন ব্যর্থ নয়, তেমনি একটি পাঁচ বছরের শিশুর জীবনও ব্যর্থ নয়৷ সবার মূল্য সমান৷ এই মহাজাগতিক ভারসাম্যের সকলেই মহান স্থপতি৷ একটা পিঁপড়েরও যদি অকাল মৃত্যু হয় তাহলে এই মহাজাগতিক ভারসাম্য নষ্ট হয়ে যাবে–অর্থাৎ কেউ–ই তুচ্ছ নয়৷ আর মানুষ তো সর্বাধিক ৰুদ্ধিদৃপ্ত, সে তুচ্ছ হতেই পারে না৷ তাই বলি, তোমাদের কারও মনে কোনো প্রকার হীনমন্যতা ভাব থাকা উচিত নয়৷ তোমরা কেউ ছোট নও৷ তোমরা আছ, তাই বিশ্বব্রহ্মাণ্ড আছে৷ তাই মানুষকে যারা খণ্ড খণ্ড করে টুকরো করতে চায় তারা মানুষের শত্রু–এই মহাজাগতিক সন্তুলনেরও শত্রু৷
তাই আজ কী দরকার মানুষ–মানুষ তো অবশ্যই এক, যদি এক না হত তাহলে দুনিয়া ধ্বংস হয়ে যেত৷ কেবল এই ছোট্ট পৃথিবীই নয়, সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড ধ্বংস হয়ে যেত৷ প্রতিটি মানুষ প্রতিটি মানুষের নিজের আত্মীয়৷ কেউ কারো থেকে দূর নয়৷ এই চরম ও পরম সত্য সবাইকে মনে করিয়ে দিতে হবে যে, সকলে তোমার আপন–আত্মার আত্মীয়৷ আজ যেসব গ্রহে মানুষ পৌঁছয়নি, সুদূর ভবিষ্যতেও যেসব গ্রহে মানুষ পৌঁছতে পারবে না, সেখানকার যে মানুষ তারাও তোমার আপন–পর নয়৷ আর এই যে আত্মীয়তা, এই যে আপন ৰোধ, এ ব্যাপারে যত তাড়াতাড়ি তোমাদের মনে ৰোধ জাগবে, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের ততই কল্যাণ৷ আর যারা তোমাদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি করতে চায়, দূরত্ব সৃষ্টি করতে চায় তারা শুধু তোমাদেরই শত্রু নয়, বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের শত্রু৷ যে সাধক, তার মাতৃভূমি সমগ্র বিশ্বব্রহ্মাণ্ড, আর বিশ্বব্রহ্মাণ্ডের সকলেই তার আত্মীয়৷ সেজন্যে তাদের এই আন্দোলনের অগ্রদূত হতে হবে, নায়ক হতে হবে, মুখ্যভূমিকায় অবতীর্ণ হয়ে সকলকে বলতে হবে, ‘‘মানুষ, মানুষ ভাই–ভাই, আমাদের মধ্যে যারা বিভেদ সৃষ্টি করতে চাইছে তারা আমাদের শত্রু– মানবতার শত্রু– তারা পরমপুরুষের কু–পুত্র৷