(১) ণক্ষ্ একটি বৈদিক ধাতু যার মানে নাকের সোজা ছুটে চলা৷ এই ‘ণক্ষ্’ ধাতুর উত্তর ‘শতৃ’ প্রত্যয় করে পাই ‘ণক্ষৎ’ শব্দটিকে৷ ণক্ষৎ+ ত্রৈ+ ড = ণক্ষত্র৷ বর্তমানে বৈয়াকরণিক বিধি ভুলে যাওয়ায় লোকে ‘’-এর পরিবর্তে ‘’ দিয়ে লিখছে৷ গুপ্তযুগ থেকে ‘ণ’-এর পরিবর্তে ‘ন’ লিখছে৷ তবে তোমরা ইচ্ছা করলে ‘ণক্ষ’ ৰানানটিও লিখতে পারো৷ বৈয়াকরণিক বিচারে সেটাই ৰেশী শুদ্ধ একটা ত্র দিয়ে লেখা অশুদ্ধ৷ ‘ন’ দিয়ে লেখা অশুদ্ধ হলেও নিপাতনে সিদ্ধ অর্থাৎ ভুল করে ‘ন’ দিয়ে লেখার প্রথা গুপ্তযুগ থেকেই চলে আসছে৷
এই ‘ণক্ষ্’ ধাতু+ ‘ড’ প্রত্যয় করে যে একাক্ষরী ‘ণ’ শব্দটি পাচ্ছি তার ভাবারাঢ়ার্থ হচ্ছে যিনি সোজা চলেন, যার মনে ঋজুতা আছে, যোগারূঢ়ার্থ হচ্ছে শিব৷
(২) চলার সময় মানুষের ও সর্ব জীবেরই পায়ের তলদেশ ভূমির স্পর্শে আসে৷ তাই সোজা চলা/ৰাঁকা চলা যাই হোক না কেন, পায়ের তলদেশ ‘ণক্ষ্’ ধাতুর সঙ্গেই সম্বন্ধিত৷ শিব সোজা পথে চলতেন৷ তাই এই ‘ণ’-এর আর একটি অর্থ হচ্ছে শিবের পায়ের তলা৷
(৩) ‘ণক্ষ ্’ ধাতুর যা মানে ণখ ধাতুরও সেই একই মানে৷ তবে ‘ণখ্’ ধাতুর একটি ৰাড়তি মানে হচ্ছে আঁচড়ানো৷ ‘ণক্ষ’ অর্থে ‘ণক্ষত্র’ ও চলতে পারে৷ এ ছাড়া আঁচড়ানো অর্থে ‘ণখ্’ ধাতু+‘অচ্’ প্রত্যয় করে আমরা ‘ণখ’ শব্দ পাই যার মানে হাতের আঙ্গুলের শেষাংশ পায়ের আঙ্গুলের শেষাংশ৷ ণখ যার আছে এই অর্থে ইন ভাগান্ত করে ‘ণখী’ শব্দ পাচ্ছি৷ এই আছে ণখ/ণথী ৰানানগুলিতে গুপ্তযুগ থেকে ‘ন’ দিয়ে লেখবার প্রথা আজও প্রচলিত আছে৷
‘ণখ’ ধাতুর উত্তর ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ণ’ শব্দটি পাচ্ছি তার একটি অর্থ নখযুক্ত জীব৷
(৪) প্রাচীনকাল ‘ণিন্দ’ ধাতুর আদিতে ‘ণ’ ছিল৷ গুপ্তযুগ থেকে ‘ন’ দিয়ে লেখা হচ্ছে৷ ‘ণিন্দ’ ধাতুর অর্থ নিন্দা করা, নিন্দিত হওয়া, নিন্দাযোগ্য কাজে রত হওয়া৷ এই ‘ণিন্দ’ ধাতু + ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ণ’ পাই তার মানে ‘নিন্দিত মানুষ’ ‘নিন্দার্হ মানুষ’ ‘সমাজের ৰোঝা’, অথবা ‘সমাজবিরোধী মানুষ’
(৫) ‘ণী’ একটি বৈদিক ধাতু যার অর্থ হ’ল পরিচালনা করা, পথ নির্দেশনা দেওয়া, সামাজিক ও জীবনের অন্যান্য ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় বিধান দেওয়া ৷ ‘নী’ অনট্+ ণয়ন৷ গুপ্তযুগ থেকে ৰানানটি হয়েছে ‘নয়ন’৷ অনুরূপভাবে আনয়ন, অপনয়ন, অবনয়ন, অভিনয়ন প্রভৃতি৷ এরা সবাই এককালে ‘ণ’ দিয়ে লেখা হত, এখন হচ্ছে ‘ন’ দিয়ে৷
এই ‘ণী’ ধাতুর মুখ্য অর্থ হচ্ছে পরিচালনা করা৷ মানুষকে যে পরিচালনা করে বা মানুষ যার দ্বারা পরিচালিত হয় তা হল ‘ণীতি’৷ ‘ণীতি’ শব্দের ভাবারূঢ়ার্থ হচ্ছে---যা পরিচালনা করে, যোগারুড়ার্থ হ’ল ‘ভাবাদর্শ’৷ এই ‘নীতি দাঁড়িয়ে থাকে জ্ঞান-বিদ্যার প্রাখর্যের ভিত্তিতে৷ তাই ‘ণী’ ধাতুর এই অর্থ নিয়ে তার সঙ্গে ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ণ’ শব্দ পাচ্ছি তার অর্থ জ্ঞান-বিদ্যা-বৈদুষ্য৷
(৬) নীতি যে কেবল জ্ঞান-বিদ্যা-বৈদুষ্যের ওপরই নির্ভরশীল তা-ই নয় বা সেটাই নীতির প্রথম ও শেষ কথা নয়, নীতি এনে দেয় জীবনের স্থিরতা, বাস্তবধর্মিতা, নিশ্চিততা৷ তাই এই অর্থ ‘ণী’ ধাতুর উত্তরে ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ণ’ পাচ্ছি তার একটা মানে ‘‘নিশ্চিততা’’ বা ‘দৃঢ়চিত্ততা’৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে সংগৃহীত)