‘ঋষ্’ ধাতু ঃ এর অর্থ হচ্ছে কোন কিছুকে ফুঁড়ে এগিয়ে যাওয়া অথবা কোন কিছুর দ্বারা বিদ্ধ হয়ে যাওয়া৷ যেমন ‘‘কেউ কাউকে ফুঁড়ে দিলে অথবা কারুর দ্বারা কেউ ফোঁড়া হয়ে গেল’’৷ ‘ঋষ্’ ‘ইঞ্’ করে ‘ঋষি’ শব্দ পাচ্ছি যার মানে, যিনি সমস্ত ৰাধার বিন্ধ্যাচলকে ফুঁড়ে এগিয়ে যান, যাঁর প্রগতি কোন ৰাধা মানে না৷ এই ‘ঋষি’ শব্দ থেকেই আমরা পাচ্ছি ‘আর্ষ’ শব্দটি৷ আজকাল আমরা যাকে হিন্দুমত বা হিন্দুধর্ম বলি এটা কিন্তু তার সংস্কৃত নাম নয়৷ ‘হিন্দু’ শব্দটা ফার্সী যার মানে হচ্ছে হিন্দু অর্থাৎ ভারতের বাসিন্দা (ইংরেজীতেIndian)৷ যে ধর্মমত বৈদিক যুগের ঋষিরা প্রচার করে গেছেন তাই হ’ল ‘আর্য’৷ যেমন ‘ঋ’ ধাতু থেকে ‘আর্য’ তেমনি ‘ঋসি’ থেকে ‘আর্ষ’৷
একটু আগে ‘আর্ত্ত’ শব্দের কথা ৰলছিলুম৷ ‘ঋত’ শব্দ থেকে যদি এইভাবে ‘আর্ত্ত’ শব্দ তৈরী করি তা হলে ব্যাকরণ-বিপর্যয় দেখা দেয়৷ কারণ ‘ঋত’ শব্দটি Participle আর ‘আর্ত্ত’ শব্দটি adjective৷ Participle থেকেadjective কী করে হবে?
‘ইঞ্’ প্রত্যায়ান্ত অন্যান্য শব্দগুলির মত ‘ঋষি’ শব্দেরও স্ত্রীলিঙ্গে ‘ঈপ’ প্রত্যয়ের সংযুক্তি ঘটে হয়ে যাৰে ‘ঋষী’, যেমন ‘কবি’র স্ত্রীলিঙ্গে ‘কবী’৷
ঋষ্+ স প্রত্যয় করলে ‘ঋ’ ও ‘স’-এর মধ্যে ‘ক’-এর আগম হয় অর্থাৎ শব্দটি হয়ে দাড়ায় ‘ঋকষ= ঋক্ষ যার ভাবারূঢ়ার্থ হচ্ছে, যাকে ভেদ করে অর্থাৎ তছনছ করে যাওয়া হয়েছে অর্থাৎ শোষিত আবার যে অন্যকে ভেদ করে অর্থাৎ ফুঁড়ে ফেঁড়ে চলে এসেছে এই অর্থে ভালুক (সংস্কৃত ‘ভল্লুক’)৷ ‘ঋক্ষ’ শব্দটিকে এ ছাড়া আর কয়েকটি অর্থে ব্যবহার করা চলে৷
ঋষভ ঃ ‘ঋষভ’ মানে যাঁড়৷ একজন জৈন তীর্থঙ্করেরও নাম ছিল ‘ঋষভনাথ’৷ শিবের একটি নাম ‘ঋষভবাহন’৷ ষাঁড়ের ধবনিকেও ৰলা হয় ‘ঋষভ’৷ এই ‘ঋষভ’ ধবনির মধ্যে যে বৈশিষ্ট্য রয়েছে সেই বৈশিষ্ট্যকে মেনে চলে যে ধবনি উচ্চারিত হয় তাকেও ৰলা হয় ‘‘ঋষভ’ ---সংক্ষেপে ‘ঋ’ বা ‘রে’৷ এই ‘ঋ’ বা ‘রে’ হচ্ছে সুরসপ্তকের দ্বিতীয় ধবনি৷
ঋষি ঃ বৈদিক ‘ঋ’ শব্দ থেকে ‘ঋষি’ শব্দটি এসেছে৷ মনে রাখার দরকার, ‘আর্ষ’ শব্দটাও ‘ঋ’ শব্দ থেকে সৃষ্ট৷ ‘ঋষি’ শব্দের মানে জ্ঞানতপস্বী৷ অর্থাৎ জ্ঞান তথা বিজ্ঞানের ক্ষেত্রে যিনি নিরলসভাবে চর্চা করেন ও সেই চর্চায় সমাজের সেবা করে যান তিনি ঋষি৷ আজকের মানুষের সমাজ সত্যিসত্যিই যদি কোন উন্নতি করে থাকে বা করে থেকে থাকে তবে তা হয়েছে এই ঋষিদের জন্যেই৷ এই ঋষিরা পৃথিবীর সর্বদেশে সর্বকালেই জন্মেছেন, এঁরা সর্বকালে সর্বদেশেই নমস্য৷ (শ্রীপ্রভাতরঞ্জন সরকারের লঘুনিরক্ত থেকে গৃহীত)