লক্ষণ ঃ কফাশ্রিত বায়ুর প্রভাবে শ্বাসক্রিয়ার কষ্ট বোধ করাই এই রোগের লক্ষণ৷ রোগের আক্রমণ সাধারণতঃ শেষ রাত্রের দিকেই হয়ে থাকে৷
কারণ ঃ শ্বাসবায়ু যে সূক্ষ্ম শ্বাসনালীর সাহায্যে ফুসফুসের দিকে প্রবাহিত হয় সেই শ্বাসনালী অনাহত চক্রাশ্রিত গ্রন্থিগুলির দুর্বলতার ফলে কফপূর্ণ হয়ে থাকায় বায়ুর গমানাগমন ব্যাহত হয়৷ দুর্বল শ্বাসনালী সংকুচিত হয়ে থাকলে দেহস্থ অঙ্গারাম্ল (carbon-dioxide) যথাযথভাবে বাইরে যেতে পারে না ও দেহাভ্যন্তরস্থ ওই দূষিত বায়ু শরীরে অজস্র পরিমাণে রোগবীজাণু সৃষ্টিতে সাহায্যকরতে থাকে৷ কেবলমাত্র অনাহত চক্রাশ্রিত গ্রন্থিগুলির দুর্বলতায় স্থায়ীভাবে শ্বাসরোগ দেখা দেওয়া সম্ভব নয়৷ এর সঙ্গে গৌণভাবে বিশুদ্ধ চক্রাশ্রিত গ্রন্থিগুলি ও মুখ্যভাবে মণিপুর চক্রাশ্রিত গ্রন্থিগুলির দুর্বলতায় অম্লবিষে রক্ত দূষিত হয়ে পড়লে বা কোষ্ঠকাঠিন্য থাকলে দেহের অন্যান্য যন্ত্রগুলি দুর্বল হয়ে পড়ে৷ সে অবস্থায় ফুসফুসের দুর্বলতার ফলে ফুসফুস–নিয়ন্ত্রক স্নায়ুগুলিও দুর্বল হয়ে পড়ে ও শ্বাসনালীও দুর্বল হয়ে যায়৷ শ্বাসরোগ তখনই ঠিক ভাবে ফুটে ওঠে৷
চিকিৎসা ঃ
প্রত্যুষে ঃ উৎক্ষেপমুদ্রা, নৌকাসন, পদহস্তাসন, মৎস্যেন্দ্রাসন ও বায়বী মুদ্রা৷ ভোর ও দ্বিপ্রহরে ব্যাপক স্নান৷
সন্ধ্যায় ঃ সর্বাঙ্গাসন, পশ্চিমোত্তানাসন, যোমুদ্রা, ভস্ত্রিকাসন, উড্ডয়ন৷
পথ্য ঃ রোগী টক বা মিষ্ট ফল অথবা কয়েক ঘণ্ঢা জলে ভিজিয়ে রাখা মেওয়া ফল জলখাবার রূপে ব্যবহার করবে৷ নেবুর রস অল্প মাত্রায় দিনে অনেক বার ব্যবহার করবে৷ রোগী কখনও একেবারে পেট ভর্তি করে খাবে না৷ পেট যাতে পরিষ্কার থাকে সেদিকে সর্বদা নজর রাখবে কারণ কোষ্ঠকাঠিন্যের সঙ্গে সঙ্গে এই রোগের বৃদ্ধি হয়৷ খাদ্য হিসেবে অল্প পরিমাণ গরম ভাত বা রুটির সঙ্গে যথষ্ট পরিমাণ শাক–সব্জির ঝোল, দুধ, দধি বা ঘোল ব্যবহার করবে৷ বস্তুতঃ সমস্ত ক্ষার জাতীয় খাদ্যই এই রোগে উপকারী৷ ঘি, তেল, ভাত, ডাল, রুটি ও সমস্ত আমিষ খাদ্য অম্লধর্মী৷ তাই সেগুলি কম খাবে৷
বিধি–নিষেধ ঃ এই রোগে দুধ একটি প্রধান পথ্য৷ শ্বাসরোগীর পক্ষে রাত্রের আহার যত তাড়াতাড়ি সেরে ফেলা যায় (অবশ্যই সূর্যাস্তের পর দেড় ঘণ্ঢার মধ্যে অর্থাৎ রাত্রি ৭.৩০টা বা ৮–টার মধ্যে) ততই ভাল, কারণ তাতে করে শেষ রাত্রের মধ্যে সমস্ত খাদ্যান্ন জীর্ণ হয়ে যাওয়ায় পেট হালকা হওয়ার ফলে শেষ রাত্রে হাঁপানির টান প্রবলভাবে দেখা দিতে পারে না৷ মনে রাখা দরকার পেটে বেশী ক্ষুধা থাকলে হাঁপানির টান বাড়তে পারে না আর তাই রোগের বেশী বাড়াবাড়ি অবস্থায় যত বেশী উপবাস দেওয়া যায় ততই মঙ্গল৷
শ্বাসরোগীকে সমস্ত রকমের নেশার জিনিস থেকে কঠোরভাবে দূরে থাকতে হবে, এমনকি যে মানুষ দিনে তিন পোয়ার চেয়ে কম দুধ খায় তার পক্ষে এক পোয়া চা–ও পান করা চলবে না৷ সর্বপ্রকার আমিষ খাদ্যও বর্জন করতে হবে৷
যার পক্ষে আমিষ ত্যাগ করা সম্ভব নয় সে অল্প পরিমাণে ক্ষুদ্র টাটকা মৎস্যের ঝোল খেতে পারে৷ যে দেশে নিরামিষ খাদ্য পাওয়া দুষ্ক্র সে দেশের রোগী আহারান্তে হরিতকী (myrobalan) অথবা অন্য কোন প্রকার কোষ্ঠ–পরিষ্কারক দ্রব্য ব্যবহার করে নিজেকে কোষ্ঠকাঠিন্যের হাত থেকে রক্ষা করে চলবে৷ মিষ্টান্ন ও ভাজা–পোড়া জিনিসও শ্বাসরোগীর পক্ষে ক্ষতিকরাক৷ কি গ্রীষ্ম, কি শীত সকল ঋতুতেই রোগীকে উন্মুক্ত প্রান্তরে যথেষ্ট পরিমাণে ভ্রমণ করতে হবে৷
কয়েকটি ব্যবস্থা ঃ
১) এক তোলা শ্বেত পুনর্নবার শাখা–শিকড় আড়াইটা গোল মরিচের সঙ্গে গঙ্গাজলে (নদীর জলে) বেটে সোমবারে অভুক্ত অবস্থায় স্নানান্তে উত্তর মুখে বসে খেলে শ্বাসরোগে চমৎকার ফল পাওয়া যায়৷
২) পাঁচ তোলা গব্য ঘৃত কাঁসার বাটিতে ফুটিয়ে নাও৷ অন্য একটি পাত্রে আড়াই তোলা আদার রস গরম করে ওই আদার রস ঘিয়ে ফেলে দিয়ে কাঁসার থালা চাপা দাও৷ ঘি–য়ের কল্কলানি থেমে যাবার পর দুই তোলা ঘি আধ পোয়া গরম দুধের সঙ্গে রোগ যন্ত্রণার সময় রোগীকে খেতে দাও৷ সঙ্গে সঙ্গে শ্লেষ্মা (কফ) উঠে রোগী আরাম পাবে৷ একটানা পনের দিন ব্যবহার করলে রোগ সম্পূর্ণ সেরে যেতে পারে৷
৩) একটা কট্কটে ব্যাঙ (frog) ধরো ও তাকে কেটে তার হার্টটা ড়ন্দ্ব্ত্রব্জব্ধগ্গ বের করে নাও৷ সেই হার্টকে চার ভাগে বিভক্ত করে প্রত্যহ রোগীকে হার্টের সেই টুকরোগুলির একটি টুকরো একটি কলার মধ্যে পুরে অভুক্ত অবস্থায় স্নানান্তে খেতে দেবে৷ তাতে শ্বাসরোগে ভাল ফল পাওয়া যায়৷
৪) ৬/৭টা আরশোলা আধ সের জলে ফুটিয়ে আধ পোয়া থাকতে নাবিয়ে ভাল ভাবে ছেঁকে গরম গরম এক ছটাক মাত্রায় দিনে দু’বার পান করলে শ্বাসরোগ প্রশমিত হয়৷
৫) ময়ূরপুচ্ছ–ভস্ম এক আনা পরিমাণ মধু সহ ধীরে ধীরে লেহন করে খেলে শ্বাসকষ্ট অত্যল্প কালের মধ্যে দূরীভূত হয়৷
৬) পুরাণো ইক্ষুগুড় ও খাঁটি সরিষার তেল সমান মাত্রায় নিয়ে (ধরা যাক এক তোলা, এক তোলা) এক সঙ্গে মিশিয়ে ক্রমাগত একুশ (২১) দিন ভোরে খালি পেটে লেহন করে খেলে শ্বাসরোগে সুন্দর ফল পাওয়া যায়৷
(শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে)