শিক্ষা ও নব্য-মানবতাবাদ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

তোমরা জান যে সকল প্রাণীন সত্তারই অন্তর্নিহিত স্বভাব হল নিজেকে ভৌতিক ক্ষেত্রে বিস্তারিত করে দেওয়া, আর এই উদ্দেশ্যেই তাদের মৌলিক গুণের জন্যেই--উপরি-উক্ত বৈশিষ্ট্যকে মৌলিক গুণছাড়া আর কীই বা ৰলা যেতে পারে--তারা অন্যের স্বার্থের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে, অপরাপর জীবেদের শোষণ করে৷ এই মাত্র ৰললুম যে মানুষই হোক বা অনুন্নত জীবজন্তুই হোক সকলেরই অন্তর্নিহিত ধর্ম হল এটাই মানুষের ক্ষেত্রে রয়েছে আরেকটা বিশেষ বৈশিষ্ট্য যাকে সহজাত বৈশিষ্ট্যও ৰলতে পারি--আর সেটা হল এই যে, সে স্বভাবগত ভাবেই তার মানস জগতের পরিধিকে বাড়িয়ে তুলতে চায়৷ তাই মানুষ তার ভৌতিক ক্ষুধাকে আধ্যাত্মিক ভাবনার দিকে-আধ্যাত্মিক এষণার দিকে পরিচালিত করতে পারে যা অন্য অনগ্রসর জীবজন্তুরা করতে পারে না৷ অন্যান্য পশুপক্ষীদের এধরণের কাজ করার সামর্থ্য নেই৷ মানুষের মধ্যে এই বিস্তারের প্রবণতা থাকার দরুণ সে অন্যকে কেবল দৈহিক স্তরেই নয়, মানসিক স্তরেও তার শোষণ চালায়৷ আর মানসিক স্তরের এই শোষণ দৈহিক স্তরের শোষণের চেয়ে অনেক বেশী বিপজ্জনক৷

তাই বৌদ্ধিক অমিতব্যয়িতা বা কোন প্রকার জাগতিক পরাধীনতার হাত থেকে ৰাঁচবার জন্যে মানুষের পক্ষে উপযুক্ত শারীরিক ও মানসিক প্রশিক্ষণের দরকার পড়ে৷ ভৌতিক অস্তিত্ব রক্ষা তথা মানসিক বিকাশের জন্যে যে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ তাকেই ৰলৰ শিক্ষা Education)৷ যথা সময়ে এই ধরণের উপযুক্ত শিক্ষার অভাবে মানুষের অন্তর্জীবনে ও বহির্জীবনে একটা সুষ্ঠু সমন্বয়, একটা সুন্দর সামঞ্জস্যের অভাব দেখা দেয়৷ তাই দেখা যায় লোকেরা মৌখিক কথাবার্র্তয় যথেষ্ট আন্তরিকতা দেখালেও মনের দিক থেকে তাদের একবিন্দুও আন্তরিকতা থাকে না আর এই জিনিসটাই আজকাল ৰাইরের জগতে ব্যাপকভাবে ঘটে চলেছে৷ বৈয়ষ্টিক তথা সামুহিক জীবন আজ একপেশে হয়ে পড়েছে অর্থাৎ আজকের মানুষের জীবন তার সামরস্য হারিয়ে ফেলেছে৷ এজন্যে আমাদের যে জিনিসটি একাত্ত প্রয়োজন তা হ’ল একটা উপযুক্ত শিক্ষা ব্যবস্থা৷

উদ্দেশ্যের সততা দেখাবার জন্যে বা তারা যে মানুষ হিসাবে কতখানি উন্নত তা প্রমাণ করবার জন্যে অনেকে কখনও কখনও নিরস্ত্রীকরণের কথা ৰলে থাকে৷ তারা ৰলে, সাধারণভাবে অস্ত্রনির্মাণের ওপর, বিশেষ করে মারণাস্ত্র উৎপাদনের ওপর একটা সুনির্দিষ্ট নিয়ন্ত্রণ থাকা দরকার৷ যদিও তারা মৌখিকভাবে এ ধরণের কথা ৰলে, ভেতরে ভেতরে তারা অত্যন্ত মারাত্মক বা অত্যন্ত সাংঘাতিক ধরণের অস্ত্রনির্মাণের জন্যে তৎপর থাকে আর এর পেছনে মূল উদ্দেশ্য হল অন্যদের দাবিয়ে রাখা৷ এ ধরণের আচরণ জঘন্য পাশবিকতা ছাড়া আর কিছুই নয়৷ একবার জনৈক নেতা ৰলেছিলেন, শান্তির সম্ভাবনাকে জীইয়ে রাখো তবে সেই সঙ্গে ৰারুদের মশলাও শুকনো রাখো৷ এমনটি আজকের দুনিয়ায় ঘটে চলেছে৷ আমরা ৰলতে পারি, এ ধরণের ভৌতিক ক্ষুধা বা জড় প্রবণতাকে মানসিক এষণার দিকে পরিচালিত করে দেওয়া উচিত৷ কিন্তু যদি কেবল জাগতিক শিক্ষার মাধ্যমে ভৌতিক ক্ষুধাকে মানসিক এষণার দিকে চালিত করা হয় তবে সে প্রয়াসও কিন্তু যথেষ্ট নয়৷ কারণ, সে ক্ষেত্রে মানসিক পরাধীনতার আশঙ্কা থেকেই যায়৷ তাই এ সমস্যার উপযুক্ত সমাধান রয়েছে অন্যত্র৷

হ্যাঁ, মানুষকে পরিচালিত করতে হবে মানবিক অনুভূতি--- মানবিকভাবে বা ভাবপ্রবণতার দ্বারা৷ যদি কেবল মানবিক অনুভূতিগুলিই জগতের অস্ত্র- প্রতিযোগিতাকে নৈতিক দিক দিয়ে নিয়ন্ত্রণ করতে পারত তবে নিঃসন্দেহে সেটা ভাল জিনিস হত, কিন্তু এ ব্যাপারে এটাকেই শেষ কথা ৰলে ভেবে নিও না৷ মানব অনুভূতি মানুষের অন্তর্জগতের সংঘর্ষকে ৰদ্ধ করতে পারে না৷ এ ধরণের অন্তর্সংঘর্ষ প্রতিটি মানুষের মধ্যেই রয়ে গেছে৷ এই সমস্যার সমাধানের জন্যে আমাদের দ্বায়াত্মক ব্যবস্থা অবলম্বন করতে হৰে৷ প্রথমতঃ এই অস্থির মনকে নিয়ন্ত্রণ করতে গেলে আমাদের করতে হৰে কী--না, তাকে সমুচিত শিক্ষা দিতে হৰে-নব্যমানবতাবাদের শিক্ষা৷ এই শিক্ষাই মানুষের মনকে উপযুক্ত প্রশিক্ষণ দেৰে৷ সেই সঙ্গে তার মানসিক রূপান্তরণের জন্যে করতে হৰে আধ্যাত্মিক চর্চা৷ এ ধরণের শিক্ষাই আজ সব চেয়ে বেশী প্রয়োজন৷ এ ছাড়া অন্য কোনও পথ নেই৷                              (কলিকাতা, ২৫শে মে’৮৫)