সর্দিগর্মীর ঔষধ হ’ল চূর্ণ–নিম্বু (চূর্ণ–নেবু)৷ আগে বলা হয়েছে কোন একটা পাত্রে খানিকটা চূণ তার দ্বিগুণ জলে ভালভাবে গুলে নিতে হয়৷ তারপর তাকে থিতিয়ে যেতে দিতে হয় অর্থাৎ তাকে থিতু (‘থিতু’ শব্দ ‘স্থিতু’ শব্দ থেকে আসছে) অবস্থায় খানিকক্ষণ থাকতে দিতে হয়৷ চূণের জল থিতিয়ে গেলে চামচে করে ওপরের চূর্ণ–রহিত জল আস্তে আস্তে তুলে একটা পাত্রে ঢেলে নিতে হয়৷ এই চূণের জলে পাতিনেবুর ট্যাবা নেবুর রস মিশিয়ে খুব অল্প মিছরি (নামে মাত্র) গুঁড়ো দিয়ে খেলে সর্দি–গর্মী ঙ্মগরমকালে ‘লু’ লেগে যাওয়া বা হঠাৎ হঠাৎ ঠাণ্ডা–গরমে জ্বর হয়ে গায়ের তাপমাত্রা এক লাফে চরমে উঠে যাওয়ায় প্রশমিত হয়৷ তাছাড়া কাঁচা বেলের শরবৎ, আমপোড়ার শরবৎ সর্দি–গর্মীতে তাড়াতাড়ি বেশ ফল দেয়৷ কচি আঁবের ঝোল শরীরের পক্ষে স্নিগ্ধকারক৷ তবে ওই ঝোল পাতলা হওয়া উচিত৷ দগ্ধ গাঙ্গেষ্ঠি অর্থাৎ কচি আম পুড়িয়ে তার শরবৎ সর্দি–গর্মীর মহৌষধ৷ এ ছাড়া ঘর থেকে বেরোবার সময় আমানি খেয়ে বেরোতে হয়৷ আর সর্দিগর্মী হলে আমানি খেলে তাড়াতাড়ি ফল দিয়ে দেয়৷ সর্দিগর্মীতে বাইরে থেকে বরফ প্রয়োগ করে লাভ হয় না –বরং অবস্থা খারাপ হয়ে যেতে পারে৷
ঘামাচী (ঘর্মচচী)
চামড়াকে ঘর্মচচী থেকে বিমুক্ত করার জন্যে সমপরিমাণ তাজা দুধের সর ও ময়দা মিশিয়ে অল্পক্ষণ আঙ্গুলে ফেনিয়ে বা ফেটিয়ে নিয়ে, তারপর সারা শরীরে ওই সর–ময়দা মেখে ১৫/২০ মিনিট আলো–হাওয়া যুক্ত শুকনো জায়গায় (রোদে নয়) বসে থাকতে হয়৷ তারপর ওই লেপটে যাওয়া সর–ময়দাকে ঘষে ঘষে তুলে দিতে হয় ও সাবান না মেখে স্নান করতে হয়৷ সর–ময়দা ব্যবহারে সামান্যতম ক্ষতি হয় না৷ বরং ১৬ আনা লাভ হয়৷ শীতের দিনে চামড়া ফেটে গেলে অথবা অন্য যে কোন কারণে চামড়া খসখসে হয়ে গেলে, মেয়ে–পুরুষ যে কেউই সর–ময়দা ব্যবহার করতে পারেন৷
লাউয়ের গুণাগুণ
পরিচয় ও প্রজাতি ঃ অলাবু মানে লাউ (Bottle gourd)৷ অনেকে লাউকে ‘নাউ’ উচ্চারণ করেন৷ (যেমন ভুল উচ্চারণ করা হয়–নেবুকে ‘লেবু’)৷ উচ্চারণটি ঠিক নয় কারণ অলাবুতে তো ‘ন’ নেই৷ ‘কদু’ শব্দ এসেছে সংস্কৃত কদ্রু বা কন্দুকি শব্দ থেকে (দুয়েরই মানে যা গোলাকার বলের মত)৷ তাই কদু মানে গোল লাউ৷ আর লাউ মানে যে কোন প্রকারের লাউ৷ এই গোল লাউকেই মৈথিলীতে বলে ‘সজিমন’৷ লাউকে ভোজপুরী ও উত্তরপ্রদেশের পূর্বাংশে ‘লউকি’ বা ‘লওকা’ বলা হয়৷ হিন্দী/উর্দূতে বলা হয় ‘ঘিয়া’ (সংস্কৃত ‘ঘৃতাক’ শব্দ থেকে উর্দূ–হিন্দীতে এই ‘ঘিয়া’ শব্দটি এসেছেগ্গ৷ মরাঠী ও গুজরাতিতে লাউকে বলা হয় ‘দুধি’ (সংস্কৃত ‘দুগ্ধিকা’ থেকে এসেছে৷ আসলে ‘দুগ্ধিকা’ মানে কিন্তু লাউয়ের পায়েস)৷
লাউ সাধারণতঃ তিন প্রজাতিতে বিভক্ত– (১) বৈশাখী লাউ–আকারে লম্বা ও মাঠে হয় (২) বর্ষাতী লাউ–যা মাচায় হয় (৩) মাঘী লাউ–যা শীতে মাঠে হয়৷ লাউ সাধারণতঃ চার ধরনের হয়– লম্বা লাউ, ঘটি লাউ (দেখতে ঘটির মত যার খোলায় কমণ্ডলু হয়), গোল লাউ (যার খোলায় বাদ্যযন্ত্র হয়), গদা লাউ (যা দেখতে গদা বা মুদ্গরের মত হয়)৷ গুণগত বিচারে ঘটি লাউ সর্বশ্রেষ্ঠ৷ লাউয়ের আর একটি প্রজাতি আছে যা তিক্ত স্বাদযুক্ত৷
লাউ একটি নির্দোষ সবজি৷ স্নায়ুতন্তু (Nerve fibres), স্নায়ুকোষ (Nerve cells), লিবার ও কিডনীর পক্ষে এটি শুভ ফলপ্রদ৷ স্মৃতিশক্তি বৃদ্ধিতেও লাউ সাহায্য করে৷ অর্শ, যৌন অক্ষমতা ও ক্লীবতা, সুপ্তিস্খলন রোগে লাউয়ের তরকারী পথ্য ও ঔষধ৷ লাউ কথঞ্চিত পরিমাণে চর্ম রোগকেও প্রতিরোধ করে৷
লাউয়ের খোলা (লাউ বাকলা–কচি অবস্থায়) মুখে লালা এনে খাদ্য হজমে সাহায্য করে৷ লাউয়ের খোলা যকৃতের পক্ষে খুবই ভাল৷ লাউয়ের ক্ষীজের তৈলও চর্ম রোগের ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷
তিক্ত স্বাদযুক্ত লাউ খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয় না, ঔষধ হিসেবে ব্যবহৃত হয়৷ এর ক্ষীজের তৈল মাথার খুসকী রোগের উত্তম ঔষধ৷ এই লাউয়ের খোলা বায়েস/বাইস হিসেবে একতারায় ব্যবহৃত হয়৷ (লাউয়ের পায়েস ছাড়াও দধি সহযোগে লাউয়ের ‘রায়তা’ একটি উত্তম ভোজ্য)৷
(শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকারের ‘দ্রব্যগুণে রোগারোগ্য’ থেকে গৃহীত)