কোন বড় গাছের নীচেকার জায়গাকে ‘তলা’ বা ‘তলী’ বলা হয়৷ এই তলা বা তলী নিয়েও অনেক জায়গার নাম হয়৷ যেমন–নিমতলা, কেওড়াতলা, তালতলা (কলকাতা), আগরতলা (ত্রিপুরা), বাদামতলা ইত্যাদি ‘তলী’ দিয়ে যেমন–আমতলী, কুলতলী, ফুলতলী৷ কোন একটি স্থান কোন বিশেষ বস্তুতে বা কাজে ব্যবহূত হ’লে সেক্ষেত্রেও ‘তলা’ ব্যবহূত হয়৷ তবে এই ধরনের ক্ষেত্রে ‘তলী’ ব্যবহূত হয় না৷ যেমন–চণ্ডীতলা (হুগলী), কালীতলা, পঞ্চাননতলা (চন্দননগর), মাচানতলা (বাঁকুড়া), পোড়ামাতলা (নবদ্বীপ), ষষ্ঠীতলা (কৃষ্ণনগর), বুড়ো শিবতলা (চন্দননগর) প্রভৃতি৷ এছাড়া হাটতলা ও রথতলা তো অনেক জায়গাতেই রয়েছে৷
কোন স্থানে বহু দূর বিস্তৃত এলাকা জুড়ে যদি একই ধরনের বস্তু বা গাছপালা অধিক পরিমারে পাওয়া যায়, তবে সেই বস্তু বা গাছপালার উত্তরে ‘বনী’ শব্দ যোগ করে গ্রামের নাম তৈরী হয়৷ যেমন–আসানবনী, পহাশবনী, শালবনী (মেদিনীপুর), মধুবনী (মিথিলা) প্রভৃতি৷
গুণগত কারণে গ্রামের নাম
গ্রামের নাম অনেক সময় গুণগত কারণেও হয়ে থাকে৷ ৰাঙলার গ্রামেগঞ্জে প্রচুর সাপ রয়েছে৷ রাঢ়ে গোখরো সাপের সংখ্যা প্রচুর৷ রাঢ়ী ৰাংলায় এদের নাম ‘খরিস’৷ যাই হোক, যে গ্রামে সাপের সংখ্যা খুব বেশী তার নাম রাখা হয়েছিল সর্পলেহনা (বীরভূম)৷ এইরূপ মানভূম জেলায় রয়েছে ‘মণিহারা’, বাঁকুড়া জেলায় ‘মুকুটমণিপুর’ ইত্যাদি৷
আগেকার দিনে মানুষের পৌরুষব্যঞ্জক নাম রাখা হ’ত৷ আজকাল মিষ্টি নাম রাখার দিকে প্রবণতা বেশী৷ আগেকার মেয়েদের নাম রাখা হত ছয়/সাত অক্ষর দিয়ে৷ যেমন–বীরেন্দ্রমোহিনী, শতদলবাসিনী ইত্যাদি৷ তারপর কমতে কমতে চার অক্ষরে দাঁড়ায়৷ যেমন–বীণাপাণি, সৌদামিনী ইত্যাদি৷ তারপর তিন অক্ষরে, বর্তমানে দুই অক্ষরে দাঁড়িয়েছে৷ যেমন–বীণা, রীণা, ঋতা ইত্যাদি৷ আগেকার দিনে লম্বা লম্বা নামগুলো ডাকতে অসুবিধা হত বলে ছোট করে ডাক নাম রাখার প্রবণতা গড়ে উঠেছিল৷ যে মহিলার নাম ছিল কিরণশশী, সবাই তাকে ডাকত ‘কেন্না’ বলে৷ এখন ছোট নাম রাখা হয়, তাই ডাক নামের প্রয়োজন আর নেই বললেই চলে৷ নাম ছোট করতে করতে কোনদিন না এক অক্ষরে দাঁড়ায়৷ এক অক্ষরের নাম কিন্তু আমাদের ভাঁড়ে খুব বেশী নেই৷ দু’চারটে মনে পড়ছে–আঃ, উঃ, কি, ছিঃ, থুঃ, চ, খা৷ আমি আশা করি, ভবিষ্যতে পৃথিবীর বিভিন্ন ভাষায় এক অক্ষরেরও অনেক অর্থবহ শব্দ তৈরী হবে আর তখন সেই ধরনের নাম রাখলেও কেউ হাসাহাসি করবে না৷