প্রবন্ধ

দাদাঠাকুরের চিঠি

আমার প্রিয় ছোট্ট ভাই বোনেরা,

আমি তোমাদের কিছু বলতে চাই৷ আমি চাই, তোমরা ‘মানুষ’ হও–মানুষের মত মানুষ হও৷ কবি বলেছেন, ‘‘গিয়েছে দেশ দুঃখ নাই, আবার তোরা মানুষ হ’’৷ যদি সত্যিকারের মানুষ হতে পার, তাহলে তোমাদের জীবন যেমন সার্থক হবে, তেমনি সমাজও নবজীবন লাভ করবে৷ তোমরা আদর্শ–মানুষ হলে আদর্শ সমাজ গড়ে উঠবে৷

আদর্শ মানুষ হতে হলে সততা, নৈতিকতা, সংযম, শৃঙ্খলা, নিয়মানুবর্তিতা প্রভৃতি সদ্গুণগুলো অর্জন করতে হবে৷ বিভিন্ন মহাপুরুষের জীবনী জানতে হবে, তাঁদের জীবন ও বাণী থেকে আমাদের শিক্ষা লাভ করতে হবে৷

শোষণ–মুক্তির দিশারী–প্রাউট

সৌমিত্র পাল

ইতিহাস বলে যে, আজ থেকে দশ লক্ষ বছর পূর্বে মানুষ পৃথিবীতে এসেছিল৷ সেটা ছিল আদিম বন্য অবস্থা৷ পশুর মতোই সে জীবন–যাপন করত৷ ক্রমে ক্রমে মানব সভ্যতার বিকাশ ঘটেছে৷ আজ জ্ঞান–বিজ্ঞান প্রযুক্তির ক্ষেত্রে বিস্ময়কর উন্নতি হয়েছে গোটা বিশ্বকে মানুষ ঘরে বসে দেখতে পাচ্ছে৷ প্রযুক্তিকে কাজে লাগিয়ে এক মুহূর্তে সে বিশ্বের এক প্রান্ত থেকে অন্য প্রান্তে যোগাযোগ করছে৷ বস্তুজগতের বিস্ময়কর সমৃদ্ধি ঘটালেও ব্যর্থ হয়েছে সে তার অন্তর্জগৎ (মনোজগৎ)–কে সমৃদ্ধ করতে৷ শান্তির পিয়াসী মানব মন বস্তুজগতের ভোগ সাধনায় মত্ত হয়ে মনোজগতে চির কাঙাল–ই থেকে গেছে৷ আর মনের নানান স্থূল বাসনাকে চরিতার্থ করতে দলগত, জাতিগত, সম্প্রদায়গত প্রভৃ

প্রাউটের নব্যমানবতাবাদই বিশ্বজুড়ে সন্ত্রাস ও শোষণ থেকে মুক্তির পথ

প্রভাত খাঁ

বিংশ ও একবিংশ শতাব্দী পৃথিবীর ইতিহাসে বিশেষভাবে স্মরণীয়৷ ধবংস ও সৃষ্টি আপেক্ষিক জগতে  এক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা৷ বিংশ শতাব্দিতে যে দুটি বিশ্বযুদ্ধ ঘটে গেছে তাতে এই পৃথিবীর বুকে নিয়ে এসেছে মানব সমাজের অগ্রগতিতে এক নোতুন প্রবাহ৷ মানব সমাজ সামগ্রিকভাবে অধিকতর  সচেতন হয়েছে ও এক বৃহৎ পরিবার ভুক্ত হয়েছে বিজ্ঞানের উন্নতি ও অধ্যাত্মবাদের বিজ্ঞানসম্মত ব্যাখ্যা ও প্রয়োগের দরুণ৷ অত্যাধুনিক  জগতে মার্গগুরু শ্রীশ্রী আনন্দমূর্ত্তিজী (মহান দার্শনিক শ্রদ্ধেয় প্রভাতরঞ্জন সরকার) পৃথিবীর বুকে সর্বরোগ হর যে আর্থসামাজিক দর্শন প্রগতিশীল উপযোগ তত্ত্ব দিয়েছেন সেটি যে আজকের সমাজের বিভিন্ন সমস্যার সমাধানে কতটা প্রাসঙ্গিক

বিষাক্ত বৃত্ত

মন্ত্র আনন্দ

ভারতীয় মানুষ রাজনীতির এক বিষাক্ত বৃত্তে আবর্তিত হচ্ছে৷ দেশীয় পুঁজিপতিরা এই বৃত্তের কেন্দ্রে থেকে রাজনৈতিক দলগুলোকে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে নিয়ন্ত্রণ করছে৷ ১৯৩৮ সালে সুভাষচন্দ্র বসু জাতীয় কংগ্রেসের  সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর লণ্ডনে ভারতীয়  ছাত্রদের  এক সমাবেশে ভাষণ প্রসঙ্গে বলেন---‘‘দেশীয় পুঁজিপতিদের সহযোগিতায় ভারতে ব্রিটিশ সাম্রাজ্য শক্তি অর্জন করছে৷ এদের বিরুদ্ধেও জনগণকে ঐক্যবদ্ধ করতে হবে৷ শুধু রাজনৈতিক স্বাধীনতা নয়, মানুষকে অর্থনৈতিক  স্বাধীনতাও দিতে হবে৷’’

আমরা হিন্দীর বিরুদ্ধে নই, হিন্দী-সাম্রাজ্যবাদের বিরুদ্ধে

মানস দেব

আমি ও আমরা যারা রাজ্যে হিন্দী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরোধিতা করছি আমরা কেউ হিন্দী ভাষা ও হিন্দী ভাষীদের বিরুদ্ধে নই৷ আমরা হিন্দি আগ্রাসনের বিরুদ্ধে৷ যেমন হিন্দী বিহারকে বুদ্ধু  বানিয়ে দিয়েছে৷ মৈথিলি, ভোজপুরী, অঙ্গিকা ভাষাগুলো অনেক উন্নত হওয়া সত্ত্বেও আজ গেঁয়ো ভাষায় পরিণত হয়েছে হিন্দী আগ্রাসনের শিকার হয়ে৷  বাংলা ভাষার ক্ষেত্রেও সেই একই  ষড়যন্ত্র চলছে৷ আমাদের হিন্দি বিরোধিতা এখানেই৷ তাছাড়া  আজ ভারতবর্ষে  যারা একটি বিশেষ ধর্মীয় মতবাদকে জোর করে গিলিয়ে সাম্রাজ্যবাদী  শাসন কায়েম  করতে চাইছে  হিন্দী  ভাষা  তাদের  প্রধান হাতিয়ার৷ আমার তো মনে  হয় প্রকৃত হিন্দী অনুরাগীদেরও প্রতিবাদে সরব হওয়া উচিত৷ কেন তাদে

পা ধুয়ে দেওয়া নাটক

সুকুমার সরকার

পা ধুয়ে দেওয়া আর পা মাড়িয়ে যাওয়া দুটোর মধ্যে কোনো পার্থক্য থাকে না যদি মনুষ্যত্বের মর্য্যাদায় না থাকে৷ সম্প্রতি ভারতের প্রধান মন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কর্ত্তৃক অর্ধকুম্ভস্নানের পর পাঁচ দলিত সাফাই কর্মীর পা ধুইয়ে দেওয়ার পর যে বিতর্ক উঠেছে, তার পরিপ্রেক্ষিতে এই নিবন্ধের অবতারণা৷

দেশের প্রধানমন্ত্রীর কাজ দলিত ও সাফাই কর্মীদের পা ধুইয়ে দেওয়া নয়৷ তাঁর কাজ দেশের প্রতিটি মানুষের আর্থ-সামাজিক সাংস্কৃতিক বিকাশ সুনিশ্চিত করা ও মানুষকে মানুষের মর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করতে সমাজ রাষ্ট্রে যেখানে যেটুকু গলদ আছে আইনেরে দ্বারা তা দুর করা৷

দেশ ভাগের বলি বাঙালী, দেশ ভাগের পরিণতি কশ্মীর

মনোতোষ দেব

ক্ষমতালোভী নেতাদের দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে চতুর ব্রিটিশ তথাকথিত স্বাধীনতার নামে দেশ ভাগ করে দিয়ে চলে যায়৷ পরিণাম দুই প্রান্তে, দুই সীমান্তে---উত্তরে কশ্মীর ও পূর্বে বাংলায় আজও জ্বলছে আগুন৷ উত্তরে নেহেরু সরকারের দুর্বলতার ও বুদ্ধিহীনতার নাকি চাতুরীর পরিণাম অগ্ণিগর্ভ কশ্মীর৷ স্বাধীনতার অব্যবহিত পরে কশ্মীরের রাজা হরি সিং ঘোষণা করেন--- কশ্মীর ভারতের সঙ্গেই থাকবে৷ স্বাধীনতার শর্ত অনুসারে হরি সিংহের ঘোষণায় কশ্মীরের ভারতে অন্তর্ভুক্তি সন্দেহাতীত হয়ে গেল৷ কিন্তু তারপরও পাক সৈন্য কশ্মীর প্রবেশ করে৷ সেই দিনই পাকিস্তানকে মার দিয়ে কশ্মীরকে মুক্ত করার ক্ষমতা ছিল ভারতীয় সেনার যার নেতৃত্বে ছিলেন বাঙালী সেনা

নারী–প্রগতি

অবধূতিকা আনন্দরসধারা আচার্যা

আজকাল প্রায়ই নারী প্রগতি বলে একটা কথা অনেকের মুখে মুখে চলে আসছে৷ সেদিন রেডিও এফ. এম. গোল্ড এ প্রচারিত একটি অনুষ্ঠানে এই ‘‘নারী প্রগতি’’ কথাটা শুনে আমার মনে এ বিষয়ে কিছু লেখার ইচ্ছা প্রকট হয়৷

পাকিস্থান, ভারত ও বাংলাদেশ বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশে উন্নয়নের পথে চলার মানসিকতাকে অগ্রাধিকার দিক

প্রভাত খাঁ  

পাকিস্তান এমন একটি ভূখণ্ড যার তিনদিকই পাহাড় ও ভূমিবেষ্টিত  কিন্তু ভারত বিশাল দেশ তার পশ্চিমদিকে বিরাট অংশ ও পূর্বদিকের তিনভাগে প্রায় দুভাগ সমুদ্রবেষ্টিত তাই ভারতকে স্থলপথ ও জলপথে আক্রমন থেকে নিজেকে রক্ষায় বেশি সচেতন হতে হয়৷ গত ২০১১ তে প্রতিবেশী রাষ্ট্র-এর মদতপুষ্ট লস্কর তৈবার জঙ্গীরা  মুম্বাই আক্রমণ করে জলপথে৷ তার ভয়ঙ্কর পরিণতি শুধু ভারত নয় সারা পৃথিবী দেখেছে আর একটা অপ্রিয় সত্য কথা হল যে পাকিস্তানের জন্মই হয়েছে ভারত বিদ্বেষকে হাতিয়ার কবে৷ তাই সাম্প্রদায়িকেতার ভিত্তিতে ভারতবর্ষ ভাগাটাই হল সাম্রাজ্যবাদী ও ঔপনিবেশিক গোষ্ঠীর একটা কূটচাল  যার মধ্যে দিয়ে পাকিস্তানকে সামনে রেখে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা চ

বসন্তোৎসব

আচার্য মন্ত্রসিদ্ধানন্দ অবধূত

বসন্তোৎসব সারা ভারতের উৎসব–উত্তর ভারতে ‘হোলি’, বিহার অঞ্চলে ‘ফাগুয়া’ ও বাংলায় ‘দোলযাত্রা’৷ আদিতে এই উৎসব ছিল মূলতঃ আর্যদের৷ প্রাচীন আর্যদের বাসভূমি ছিল মধ্য এশিয়ায়৷ এই অঞ্চলটা ছিল ভীষণ ঠাণ্ডা৷ সারা শীতকাল কেবল বরফ পড়তো, এটা ছিল আর্যদের দুঃসহ কষ্টের কাল৷ নিদারুণ ঠাণ্ডায় মানুষ জবু–থবু হয়ে মরার মত পড়ে থাকতো, কোন কাজকর্ম করতে পারতো না৷ এই শীতকালটা যখন বিদায় নিত, আর্যরা তখন আনন্দে উৎসবে মেতে উঠতো৷ ‘উৎ’ মানে আনন্দে লাফিয়ে ওঠা আর ‘সব’ মানে ‘জন্মগ্রহণ করা’৷ আক্ষরিক অর্থেই বসন্তের আগমনে আর্যরা প্রাণচঞ্চল হয়ে উঠতো, হৈ–হুল্লোড় ও কর্মচাঞ্চল্যে মেতে উঠতো৷