‘ষম্’ ধাতুর একটি অর্থ হ’ল কোন একটি সত্তায় নিজেকে মিশিয়ে দেওয়া অথবা নিজের মধ্যে কোন একটি সত্তাকে মিশিয়ে নেওয়া৷ অনেকের মধ্যে থেকে যে নিজেকে ধীরে ধীরে অনেকের মধ্যে মিশিয়ে নেওয়া৷ অনেকের মধ্যে থেকে যে নিজেকে ধীরে ধীরে অনেকের মধ্যে মিশিয়ে দিতে থাকে ও অনেকের মধ্যে নিজের বৈশিষ্ট্য প্রতিষ্ঠা করতে থাকে তাকে আমরা ৰাংলায় ৰলি ‘সেরা’৷ এই ‘ষম্’ (গুপ্ত যুগ থেকে ‘সম্’ ৰানান চলে আসছে) ধাতু ‘ড’ প্রত্যয় করে যে ‘ষ’ শব্দ পাচ্ছি তার একটি অর্থ প্রশংসার্থেই চলৰে--- নিন্দার্থে চলৰে না৷ তার মানে খারাপ হিসেৰে সবাইকে যে টেক্কা দিচ্ছে তার জন্যে ‘ষ’ শব্দটি ব্যবহার করা চলৰে না৷ এই ‘ষ’ শব্দটি স্ত্রীলিঙ্গবাচক৷
ওই একই অর্থে যার সামনে আর কোন কিছুই নিজের বৈশিষ্ট্য নিয়ে দাঁড়াতে পারছে না, যেমন আকাশে সূর্য থাকলে আর সব জ্যোতিষ্কের প্রভাবই ম্লান হয়ে যায়--- সেই ধরণের বস্তু, ৰাংলায় যাকে আমরা ৰলতে পারি সবার সেরা (সর্বশ্রেষ্ঠ),তার দম্যে ‘ষম্’ ‘ড’ করে ‘ষ’ শব্দটিই চলৰে৷ এটিও স্ত্রীলিঙ্গবাচক ও কেবল প্রশংসার্থেই ব্যবহৃত হৰে৷ এই প্রসঙ্গে আমাদের অনেকেরই অতি পরিচিত আক্লমন্দ সিংয়ের কথা মনে পড়ে গেল৷
আক্লমন্দ্ নামটি তার পৈতৃক নাম কিনা জানি না৷ তবে লোকে ৰলত, তার আক্কেল বা জ্ঞানগম্যি নাকি সবার সেরা ছিল৷ তাই তার নাম রাখা হয়েছিল আক্লমন্দ৷ আক্লমন্দ সিং শুভার্থে বা প্রশংসার্থে সবার সেরা ছিল কি অশুভার্থে বা নিন্দার্থে সবার সেরা ছিল তা নিয়ে আজও অনেকের মনে সংশয় থেকে গেছে৷ তার ইতিকথার কয়েকটা ছেঁড়া পাতা তোমাদের সামনে তুলে ধরছি৷ তোমরা তোমাদের বিচার - বিবেচনা প্রয়োগ করে দেখতে পারো৷
আক্ল্মন্দ সিং অনেক চেষ্টাচরিত্র করে কোম এক দেশের মন্ত্রী হয়েছিল৷ মন্ত্রী হবার পর স্ফূর্ত্তি দেখে কে...একেবারে শখের প্রাণ গড়ে মাঠ৷ কখনো কখনো মন্ত্রীসভার বৈঠকে যোগদান করা ছাড়া আর কোন কাজকম্মই রইল না৷ সরকারী ব্যয়ে ৰাড়ী-গাড়ী, তার সঙ্গে মাসান্তিক দক্ষিণা৷ মন্ত্রীসভার বৈঠকে গিয়েও তাকে এমন কিছু কাজ করতে হত না৷ চুপ করে থেকে কেবল কথাবার্র্ত্তগুলো শুণে যেতে হত৷ তারপরে যেদিকে যখন যা দেখত পাল্লা ভারী, ৰুঝুক সে দিনের পক্ষে নিজের মন্তব্য জানিয়ে দিয়ে ৰাড়ী ফিরত৷ সরকারী তেলে সরকারী গাড়ীতে সরকারী ড্রাইবার নিয়ে সে কখনও পূবদিকে, কখনও পশ্চিম দিকে, কখনও দিগ্বিদিকে গাড়ী ছোটাত৷ লগ্ ৰুকে লিখে রাখত, অমুক জায়গায় জরুরী কাজে গেছলুম৷
একদিন আক্লমন্দ ছুটল পূবদিকে৷ নদী-পর্বত-সমুদ্রমেখলা-অধিত্যকা পার হয়ে অনেক দূর পরে হঠাৎ ড্রাইবার ‘‘গাড়ী থামিয়ে দিলে৷ আক্লমন্দ সিং ড্রাইবারকে জিজ্ঞেল থামালে কেন?’’
ড্রাইবার ৰললে---‘‘সাহেব, আর এক ফোঁটাও তেল নেই৷ গাড়ী আর এক-পাও এগোৰে না৷’’
তখন আক্লমন্দ সিং ৰললে---‘‘গাড়ী আর এগোৰে না! কোই ৰাত নহীঁ৷ গাড়ী তাহলে পেছোক৷ চল, ৰাড়ী ফিরে যাই’’৷
আক্ল্মমন্দ সিং কিছুদিন পরে তার যোগ্যতার নিদর্শন-স্বরূপ হ’ল সে দেশের রেলমন্ত্রী৷ এৰার সরকারী গাড়ী আগের মত যেমন ছিল তেমন তো রইলই, অধিকন্তু ট্রেনে সেলুনে চেপে ৰন্ধু-ৰান্ধৰ-পরিবারকে নিয়ে যেখানে যেমন খুশী সে ঘুরে ৰেড়াতে লাগল৷ হ্যাঁ, কাগজে-কলমে লেখা রইল, সে অমুক জায়গায় ুক জিনিসটা সরেজমিনে তদারকি করতে গেছল৷
একবার সে দেশের রেলবোর্ডের মিটিং হচ্ছে৷ ৰোর্ডের সদস্যরা যথাকালে অকুস্থলে হাজির৷ আক্ল্মন্দ সিংয়ের পৌঁছুতে অনেকখানি দেরী হয়ে গেল৷ পৌঁছেই সে হাত-পা ছুঁড়ে ইলেকশ্যানী-বত্তৃণতার মেজাজে ৰলতে লাগল, ‘‘আপনাদের কেমন গাড়ী মশাই! আজ আমি দেখে নোৰ....দেখে নোৰ....দেখে নোৰ৷ বসে বসে গরীৰ দেশের পয়সা খাচ্ছেন আর কাজ করছেন না’’৷ ৰোর্ডের সদস্যরা ৰললেন, ‘‘কী কসুর হয়েছে, মন্ত্রীসাহেৰ৷ আমরা তো কিছুই ৰুঝতে পারছি না’’৷
মন্ত্রী আক্ল্মন্দ সিং ৰললেন, ‘‘আসবার সময় আমি শৌচালয়ে গেছলুম৷ হঠাৎ কুর্র্ত্তটা খোলবার সময় পকেট থেকে পার্সটা ল্যাট্রিনের ফোকর গলে তলায় পড়ে গেল৷ আমি চেন পুল করতে থাকলুম৷ গাড়ী থামে না৷ আমি চেন ধরে ঝুলতে থাকলুম৷ তবু গাড়ী থামে না৷ আমি পাঁচ-মণী লাশ, আমি ঝোলার ফলে চেন ছিঁড়ে গেল৷ তবুও গাড়ী থামে না৷ চেন টানবার ফলে গাড়ী তো থামলই না৷ বরং হু হু করে এত জল ৰের হতে শুরু করল যে আমি মাঝ রাত্তিরে ফুলে ফেঁপে একেবারে ঢোল হয়ে গেলুম৷ এই আপনাদের গাড়ী! এই আপনাদের কর্মতৎপরতা! আমি দেখে নোৰ.........দেখে নোৰ...........নোৰ৷’’