ধর্ম বৈবহারিক, সৈদ্ধান্তিক নয়৷ কে ধার্মিক আর কে ধার্মিক নয়, সেটা তার বিদ্যা, ৰুদ্ধি দিয়ে, পদমর্যাদা নিয়ে প্রমাণ হয় না৷ ধার্মিক কে? সেটা প্রমাণ হয় তার আচরণ দিয়ে৷ অধার্মিক কে? সেটা প্রমাণ হয় তার আচরণ দিয়ে৷ যে ধার্মিক হতে চায়, তাকে আচরণের দৃষ্টান্ত তৈরী করতে হৰে, আচরণ শোধরাতে হৰে৷ পুঁথি পড়ে কেউ বিদ্বান হয় না৷ কিন্তু বিদ্যা কী?
‘‘সা বিদ্যা, যা বিমুক্তয়ে৷’’ বিদ্যা তাকে ৰলা হয়, যার দ্বারা বিমুক্তি পাওয়া যায়৷ ৰন্ধন থেকে ছাড় পাওয়াকে মুক্তি ৰলে৷ ৰন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া গেল, কিন্তু দ্বিতীয়বার ৰন্ধন আবার হতে পারে৷ একবার ৰন্ধন থেকে মুক্তি পাওয়া গেল, দ্বিতীয়বার ৰন্ধনের সম্ভাবনা নেই, সেই বিশেষ প্রকারের মুক্তিকে ৰলা হয় বিমুক্তি৷ মুক্তি হ’ল liberation, আর বিমুক্তি হল liberation of permanent nature, (স্থায়ী প্রকৃতির মুক্তি)৷ যার দ্বারা বিমুক্তি পাওয়া যায়, তাকে বিদ্যা ৰলা হয়, যাঁর বিদ্যা আছে তিনি বিদ্বান৷
বিদ্বান সেও যার আচরণ তৈরী হয়ে গেছে৷ এই জন্যে আমি ৰলেছিলুম---ধর্ম হ’ল, ‘‘আচরণাৎ ধর্ম’’৷ নিরক্ষর ব্যষ্টি ধার্মিক হতে পারে, মহাপুরুষও হতে পারে আর মহামহোপাধ্যায় পণ্ডিত আবার অধার্মিকও হতে পারে৷ তোমাদের আমি বার বার ৰলি নিজের আচরণ তৈরী কর৷ আনন্দমার্গের দর্শন (Philosophy) সাধারণ জনতার জন্যে নয়, এটা বিদ্বান, পণ্ডিতের জন্যে৷ কিন্তু আচরণ সবাই শুদ্ধ করতে পারে৷ আদর্শ (Ideology) প্রচার করা যেমন সাধকের কাজ, তেমনই নিজে পবিত্র হওয়া, অপরকে পবিত্র করা ধার্মিক হওয়া, ও অপরকে ধার্মিক করা, সেও সাধকের কাজ৷ তাই না?
ৰলা হয়েছে, ‘‘আত্মমোক্ষার্থং জগদ্বিতায় চ’’৷ তুমি নিজে সৎ হলে, তাতে কাজ হৰে না৷ সমাজকেও সৎ বনাতে হৰে৷ নিজেকে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখ তাই যথেষ্ট নয়৷ মাহামারীর সময় ধরে নাও তোমার ঘর পরিষ্কাব-পরিচ্ছন্ন, তুমি খুব স্নান করছ, কিন্তু তোমার পাড়া একদম নোংরা, ওই অবস্থায় মহামারী থেকে বাঁচতে পারৰে না৷ কারণ আবহাওয়া দূষিত হয়ে গেছে৷ তুমি নিজে ধার্মিক হয়ে, আর তোমার পরিচিত লোকেরা, পরিবারের অন্য সদস্যরা পাপী থেকে গেল, তবে তুমি পাপাচার থেকে বাঁচতে পারৰে না, কারণ তাদের প্রভাব তোমার ওপর পড়ৰে৷ ধরে নাও পতি ধার্মিক, পত্নী নয়, পতি ঘুস নিতে চায় না, পত্নী ৰলে নাও, তবে ঘরে অশান্তি হৰে৷ ঠিক উল্টোও হতে পারে৷ পত্নী ধার্মিক, পতি নয়৷ সেখানে পতিও জোর করতে পারে, এমন করো, এমন করো না, এমন হও, এমন হয়ো না৷ বাধাও দিতে পারে৷ তাই তুমি ধার্মিক তাই যথেষ্ট নয়৷ নিজের পরিবেশকেও ধার্মিক তৈরী করতে হৰে৷ তুমি নিজে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন থাকৰে আর পাড়া-পড়শীকেও পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখৰে, তবে মহামারী থেকে বাঁচৰে৷ এইভাবে তুমি নিজে ধার্মিক হৰে আর অন্য ব্যষ্টিকেও ধার্মিক তৈরী করৰে৷ ধার্মিকের জন্যে এটা অত্যাবশ্যক, এটা কর্তব্য৷
আর এই যে ধর্ম প্রচার, এই প্রচারে দার্শনিক জ্ঞান গৌণ৷ প্রধান হ’ল নিজের আচরণ৷ লোকে তোমার পাণ্ডিত্যে যত প্রভাবিত হৰে তার থেকে ৰেশী হৰে তোমার আচরণে৷ যেখানেই যাও ধর্মাচরণ করো৷ ধর্মোচিত আচরণ করো৷ আচরণ ঠিক হলে, তোমার উন্নতি হৰে, মানসিক উন্নতি হৰে, আধ্যাত্মিক উন্নতি হৰে, আর তোমার সম্পর্কে যারা আসবে তারাও তোমার আচরণের দ্বারা প্রভাবিত হৰে৷ কিন্তু ধরে নাও তুমি সৈদ্ধান্তিক রূপে ধার্মিক হয়ে গেলে, অনেক ধার্মিক বই পড়ে নিলে, কিন্তু আচরণ ঠিক হ’ল না, তাতে কী হৰে? তোমার আধ্যাত্মিক উন্নতি হৰে না, মন ঠিক তৈরী হৰে না, আর লোকেও প্রভাবিত হৰে না৷ লোকে ৰলৰে, হ্যাঁ, উনি অনেক বই পড়েছেন, ওঁর মধ্যে আর কিছু নেই৷ তোমার প্রভাব অন্যের ওপর পড়বে না, কারণ যে নিজেকে তৈরী করে না, করার চেষ্টা করে না, সে অন্যকে কীভাবে তৈরী করবে? ‘‘অন্ধেন নীয়মানাঃ যথান্ধাঃ৷’’
ধর্ম আচরণের ব্যাপার৷ তোমাদের আমি ৰলি, যম-নিয়মে কঠোর হও, নিয়মিত সাধনা করো আর ধর্মপ্রচার জীবনের ব্রত করে নাও দেখ, তোমার জয় হৰেই৷ আর যত সৎ ব্যষ্টি আছে সবার জয় হৰে, জগতে সাধুতার জয়-জয়কার হৰে৷ এটাই হচ্ছে মানুষের জীবনের ধ্যেয়৷ যতদিন পৃথিবীতে আছ, নিজের কর্তব্য কর আর অন্যকেও কর্তব্যের পথে নিয়ে চল৷ এই তোমার কাজ৷ আর মনে রেখ তোমার সামনে বিরাট এক ব্রত, এক বিরাট মিশন, আর ওই মিশন পূর্ণ করার জন্যে তুমি এই পৃথিবীতে এসেছ, তুমি তুচ্ছ পশুর মত নও৷ জয় তোমারই হৰে৷