প্রভাতী

পঞ্চ দধীচি স্মরণে

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

সেদিনও হয়েছিল সূর্যোদয়,

নির্মেঘ বসন্তের গগন৷

ঈশান কোণে অপ্রত্যাশিত মেঘ

বুঝতে পারেনি আসন্ন মহারণ৷

পাঁচই মার্চ, মহাবেদনার স্মৃতি,

বিক্ষত করে নিবিড় ভ্রাতৃ-প্রীতি৷

ধর্মের তরে পঞ্চ দধীচি যারা

আজও অম্লান প্রাতঃস্মরনীয় তারা৷

 

দূরাচারীর অস্ত্র যখন

নিঠুর খেলায় মাতে,

সাধুজনের পরিত্রাণে আসেন পরমপিতা সাথে৷

জড়বাদী মন মানেনা কখনো তাই পাপাচারে লিপ্ত,

কোন বিরোধীতা শুনিতে নারাজ

শুনিলেই হয় ক্ষিপ্ত৷

নিজ সঙ্কল্প রূপায়ণে দধীচিরা আসে ভূবনে,

হাসিমুখে তাঁদের মরণ বরণ

আপন কর্তব্য সাধনে৷

ক্ষমতাবৃত্তে দিশাহারা হয়েদুঃশাসনের বংশ,

অত্যাচারের অস্ত্র বানায় শিশুপাল আর কংস!

অহংবোধের উন্মাদনায়

লঙ্ঘিত মহামানবের বাণী,

ষড়যন্ত্রীর চক্র রচিছে

নিভৃতে চক্রপাণি৷

আজ সেই কুখ্যাত দিন----

ব্যাথিত হদয়ে স্মরণ করি

কেমনে শুধিব ঋণ!

তাঁদের দেখানো পথ অনুসরণে

সুদৃঢ় করি মন,

মানবিক কাজ পূরণে

করি সম্মান প্রদর্শন৷   

দধীচি দিবস

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

দধীচি দধীচি দধীচি দধীচি

দধীচি---পঞ্চবীর,

মার্চের আজ পঞ্চম দিনে

শ্রদ্ধায় নত শির৷

মানব-সেবার মহানযজ্ঞে

তোমরা হয়েছো সমিধ,

ধর্মসংস্থাপনার্থে

রক্ত-সিক্ত শহীদ৷

নরাধম যত দানবের দল

নৃশংস নির্মম,

কেড়ে নিয়েছিল কল্যাণকাজে

সকল উদ্যম৷

তোমাদের সেই প্রাণের প্রদীপ

আজও অনির্বাণ,

সেই আনন্দনগর যে আজ

মোদের তীর্থস্থান৷

প্রপঞ্চময় জগতে তোমরা

পঞ্চপ্রদীপ সম,

গুরুর চরণে জীবনাঞ্জলি---

তোমাদের নমো নমো৷

তোমার প্রতীক্ষা

লেখক
কেয়া সরকার

সূর্য থেকে যে আলো আসে পৃথিবীতে---

তার প্রতিটি কিরণে আছো তুমি,

চাঁদ যে জ্যোৎস্না ঢালে আমার ধরণীতে---

তার প্রতিটি পরতে আছো তুমি,

 

তোমার ভাবনায় দিন হয় রাত,

কালচক্র বয়ে চলে---

আঁধার রাত্রি আবার প্রভাত হবে,

বলে সে বলে চলে---

 

মনে মনে খুঁজেছি তাকে,

মনের মাঝে পেয়েছি,

মনের বাগানের ফুল দিয়ে

তাঁর তরে মালা আমি গেঁথেছি৷

 

পূজার বেলা সাঙ্গ হলে,

মন আমার একলা রবে

হৃদয়েরই সাধন আমার---

আবার দেখা হবেই হবে৷

 

মোসাহেৰ

Baba's Name
শ্রী প্রভাতরঞ্জন সরকার

কথায় বলা হয়, খোসামদে পাহাড়ও গলে মাখন হয়ে যায়৷ খোসামদে দুর্বাসা মুনিও গলে যান৷ সেই খোসামদের জন্যে ‘কাণ্ড’ শব্দটি ব্যবহার করা হয়৷ ‘খোসামদ’ শব্দটি এসেছে ফার্সী ‘খুসামদ’ থেকে৷ অনেকে ‘খুসামদ’–কে মার্জিত রূপ দেবার জন্যে ‘তোষামোদ’ ৰলে থাকেন৷ না, ‘তোষামোদ’ ৰলে কোনো শব্দ নেই৷ শাস্ত্রে ৰলেছে, খোসামদকারী প্রতি মুহূর্তেই প্রতি পদবিক্ষেপেই অধোগতি হয়, কারণ সে প্রতি মুহূর্তে, প্রতি পদবিক্ষেপে কেবল স্বার্থচেতনায় অস্বাভাবিক কাজ করে থাকে৷ আগেকার দিনে রাজাদের বা অবস্থাপন্ন লোকেদের বেতনভুক খোসামদকারী থাকত৷ তাদের ৰলা হত মোসাহেৰ–যারা সৰ সময় নিজেদের কর্ত্তাকে ‘সাহেৰ’, ‘সাহেৰ’ ৰলে তুষ্ট রাখবার চেষ্টা করে৷ আরৰী ব্যাকরণ অনুযায়ী ওই ‘সাহিৰ’ শব্দটির আদিতে ‘মু’ সংযুক্ত করে তাদের ৰলা হয় মুসাহিৰ বা মোসাহেৰ৷ এইভাবে বিভিন্ন গুণের সঙ্গে ব্যষ্টির সংযোগ সাধন করে ক্রিয়া বা বিশেষ্যের আদিতে ‘মু’ যোগ করে আরৰীতে বিভিন্ন শব্দ সৃষ্ট হয়ে থাকে৷ যেমন মুয়াল্লিন, মুয়াজ্জিন (যিনি আজান দেন), মুজাহিদ (যিনি জেহাদ বা ক্রুসেডে অংশগ্রহণ করেন), মুহাজির (যিনি অন্য দেশ থেকে এসে হাজির হয়েছেন অর্থাৎ রেফিউজী), মুসাফির (যিনি সফর বা ভ্রমণ করে চলেছেন) প্রভৃতি৷ সেই যে মোসাহেৰের একটা গল্প আছে না!

রাজামশায়ের একজন মোসাহেৰ চাই৷ তিনি খৰরের কাগজে যথাৰিধি কর্মখালির বিজ্ঞাপন দিলেন৷ জানিয়েও দিলেন, ‘‘আবেদনকারীকে দরখাস্তের সঙ্গে ৫০০ টাকার ক্রশ চেক দিতে হৰে যা প্রত্যর্পণযোগ্য নহে৷ হাজারে হাজারে দরখাস্ত এল৷ লিখিত পরীক্ষার পর মৌখিক পরীক্ষা চলছে৷ রাজামশায় বসে রয়েছেন৷ তাঁর সিংহাসনের বাঁ হাতলটা ধরে ঘাড় বেঁকিয়ে মন্ত্রীমশায় একটু কেতরে দাঁড়িয়ে রয়েছেন৷ এক একজন কর্মপ্রার্থী আসছেন ইন্টারভিউ (সংজ্ঞ–প্রতীতি) দিতে৷

রাজামশায় প্রথম জনকে জিজ্ঞেস করলেন–‘‘তুমি কি মোসাহেৰের কাজ পারৰে’’

সে ৰললে–‘‘নিশ্চয় পারব, জাঁহাপনা৷’’

রাজামশায় তার নাম খারিজ করে দিলেন৷ দ্বিতীয় কর্মপ্রার্থী এলেন–একজন চালাক–চতুর যুবক.......চোখে মুখে খই ফুটছে৷

রাজামশায় তাকে ৰললেন–‘‘মোসাহেৰের দায়িত্ব অত্যন্ত গুরু দায়িত্ব! তুমি কি এ কাজ পারৰে’’

কর্মপ্রার্থী ৰললে–‘‘একবার চান্স দিয়ে দেখুন শাহানশাহ্, আমি নিশ্চয় পারৰ৷’’ রাজা তাকেও না–পসীন্দ*(*শব্দটা ফার্সী৷ তাই ‘না–পছন্দ’ না ৰলে ‘না–পসীন্দ’ ৰলাই ৰেশী ভাল৷ তবে এর ৰাংলা রূপ হিসেৰে ‘না–পছন্দ’ও চলতে পারে’৷) করলেন৷ ৰলা বাহুল্য, এরও চাকরী হল না৷

পরের কর্মপ্রার্থীটি খুৰই শিক্ষিত কিন্তু ইন্টারভিউ কেমন হৰে তাই ভেৰে সে পৌষের শীতেও ঘেমে গেছল........রুমাল দিয়ে কপালের ঘাম মুছতে মুছতে সে রাজার সামনে এসে দাঁড়াল৷

রাজামশায় তাকে শুধোলেন–‘‘মোসাহেৰের এই মহান কর্ত্তব্যে তুমি কি সমর্থ’’

উৎসাহের অগ্ণিতে প্রদীপ্ত হয়ে কর্মপ্রার্থীটি ৰললে–‘‘নিশ্চয়ই পারৰ৷ একশ’ বার পারৰ, স্যার......কথা দিচ্ছি স্যার....কেবল একবার একটা চান্স দিন স্যার....ন্দব্ভব্দব্ধ ন্তুড়্ত্রুন্তুন্দ্ব হ্মপ্তন্দ্ব্ত্রব্দন্দ্ব৷’’

রাজামশায় তাকেও বাতিল করে দিলেন৷ এবার যে ছেলেটি এল তার চোখে–মুখে বুদ্ধির ঝলক ছিল কিন্তু প্রজ্ঞার গভীরতা ছিল না৷

রাজামশায় তাকে শুধোলেন–‘‘খোসামদের কাজটা তুমি কি পারৰে’’

সে বললে–‘‘সত্যিই রাজাসাহেৰ, খোসামদের কাজটা আমি কি পারৰ!’’

রাজামশায় ৰললেন–‘‘হ্যাঁ, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারো৷’’

সে ৰললে–‘‘হঁ্যাঁ, তবে চেষ্টা করে দেখতে পারি৷’’

রাজামশায় আড়চোখে মন্ত্রীর দিকে চাইলেন৷ মন্ত্রী ৰললেন–‘‘মহারাজ, ইনিই সর্ৰগুণান্বিত, এঁকেই ৰহাল করুন৷ আজকের দিনে ইনিই বিশ্বমানবতার প্রতিভূ......জয়মাল্য পাবার ইনিই অধিকারী৷’’

রাজামশায় প্রার্থীকে ৰললেন–‘‘ৰুঝলে হে, আজ থেকে তোমার চাকরী হল৷’’

তাহলে ৰুঝলে ‘কাণ্ড’ ৰলতে এই খোসামদকে ৰোঝায়৷ সংস্কৃতে কিন্তু মোসাহেৰকে ৰলা হয় ‘বিদুষক’৷ ‘মোসাহেৰ’ অর্থে সীমিত ক্ষেত্রে সংস্কৃতে ‘ভাণ্ড’ শব্দটিও চলত যার থেকে ৰাংলার ‘ভাঁড়’ শব্দটি এসেছে (যেমন–গোপাল ভাঁড়)৷ তবে ‘ভাঁড়’ ৰলতে ক্লাউনকেও ৰোঝায়৷ ‘‘আর ‘ভাঁড়ামি’ করতে হবে না’’–এমন কথা যখন আমরা বলে থাকি তখন কিন্তু সেটা ‘ভাণ্ড’ বা ‘ভাঁড়’ থেকে আসছে না, আসছে ‘ভণ্ড’ থেকে অর্থাৎ ভণ্ডামি অর্থে ‘ভাঁড়ামি’ শব্দ ব্যবহার করা হয়েছে৷

জাতীয় পতাকা দেশে দেশে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

সবুজ, সাদা, গেরুয়া আর মাঝখানে চরকা--- এই হচ্ছে আমাদের জাতীয় পতাকা৷ অন্যান্য দেশে ও জাতীয় পতাকা আছে৷

ইউরোপ মহাদেশের একটি দেশ ডেনমার্ক৷ এর আয়তন ষোল হাজার ছয়শো ঊনত্রিশ বর্গমাইল৷ লোক সংখ্যা আটচল্লিশ লক্ষ তের হাজার আটশো বিরানববই (১৯৬৭ খ্রীষ্টাব্দের হিসাব)৷ রাজধানী কোপেন হেগেন৷ এর জাতীয় পতাকা হচ্ছে রক্ত পতাকার মধ্যে সাদা ক্রুশ চিহ্ণ৷ ইউরোপের মধ্যে এটাই সবচেয়ে বড় জাতীয় পতাকা৷

ফ্রান্স পশ্চিম ইউরোপের একটি শক্তিশালী সাধারণতন্ত্র৷ আয়তন দুইকোটি বারো লক্ষ নয়শো ঊনিশ বর্গমাইল৷ লোকসংখ্যা পঞ্চাশ কোটি ছয় লক্ষ বাষট্টি হাজার (১৯৬৮ খ্রীষ্টাব্দের হিসাব)৷ রাজধানী প্যারিস৷ এর পতাকায় কালো, সাদা আর লাল পাশাপাশি থাকে৷ এই পতাকার প্রচলন হয় ১৭৮৯খ্রীষ্টাব্দে ফরাসী বিপ্লবের সময় থেকে৷

দক্ষিণ ইউরোপের একটি রাজ্য ইটালি৷ আয়তন এক লক্ষ ষোল হাজার দুইশো আশি বর্গমাইল৷ লোকসংখ্যা পাঁচকোটি পঁচিশ লক্ষ কুড়িহাজার (১৯১৩ খ্রীষ্টাব্দের হিসাব) রাজধানী রোম৷ এর জাতীয় পতাকায় আছে পাশাপাশি সবুজ, সাদা ও নীল৷

আফ্রিকার একটি দেশ মিশর৷ মিশরের পতাকা সবুজ৷ তাতে আছে ছয়টি সাদা অর্ধচন্দ্র আর পাঁচটি সাদা তারা৷

পাকিস্তানের পতাকা গাঢ় সবুজ৷ তার মাঝে আছে সাদা অর্দ্ধচন্দ্র আর পাঁচটি তারা৷

পৃথিবীর মধ্যে সর্ববৃহৎ দেশ সোভিয়েৎ যুক্তরাষ্ট্র (খণ্ডিত হওয়া আগে)৷ পৃথিবীর মোট স্থলভাগের ১/৬ অংশ এর অন্তর্ভুক্ত৷ আয়তন ছিয়াশি লক্ষ লক্ষ পঞ্চাশ হাজার বর্গমাইল৷ লোক সংখ্যা তেইশ কোটি সত্তরলক্ষ (১৯৫৮ খ্রীষ্টাব্দের হিসাব)৷ রাজধানী মস্কো৷ এর পতাকা লাল-তাতে কাস্তে ও হাতুড়ি৷ হাতুড়ির ওপর তারা৷

সাতটি লাল,ছয়টি সাদা লাইন ও আট চল্লিশটি তারা যোগে তৈরি হয় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পতাকা৷

রাষ্ট্র সংঘের নীল পতাকায় রাষ্ট্রসংঘের চিহ্ণ আঁকা থাকে৷

 

অভিমান

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

 আমি তোমায় জানিতাম না

 তুমিতো জানিতে মোরে,

তবে কেন আমি না বুঝিয়া ছিনু

  গহন অন্ধকারে?

অনেক আশায় খুঁজি চারিধার

   অরূপরতন সন্ধানে,

নিত্য লীলায় কেন লুকোচুরি

   চিরস্থায়ী বন্ধনে?

তোমারে ঘিরিয়া নাচিয়া ছন্দে

    অযুত জনম ধরে,

কত শত খেলা লীলাছলে কর

    সরস মানস তরে!

পারস্পরিক পরিচিতি তবে

   এত দেরি কেন বল,

যবে জানিলাম কাছেতে গেলাম

   ভাব বিনিময় হল৷

বিশ্বের মাঝে সর্বত্র তব অবাধ বিচরণ,

আমি কেন ছিনু নিদ্রামগ্ণ

হয়নি তো জাগরণ!

মনে জমে ছিল শতেক ব্যাথা,

হৃদয়ে আনিলে প্রেমের বারতা৷

সজল নয়নে প্রথম দেখায়৷

তোমারে করেছি বরণ৷

যত থাক শোক, দেহ ভরা রোগ,

তবুও আমার নাই অনুযোগ,

তুমি সদা সাথে প্রভাতে নিশিথে

লীলার আনন্দ করি উপভোগ৷

তুমি ছিলে কাছে বিগত জনমে,

এখনো রয়েছো, রবে চিরকাল,

পিতা-পুত্রের মধুর মিলন

অনন্তকাল রহিবে বহাল৷

মুক্তি-মোক্ষ, পুনর্জন্ম

তব বিবেচনা, তব বিচার্য,

আনন্দটুকু থাকে যেন মনে

মঙ্গলময়, যা’ কর ধার্য৷

পরিস্থিতিতে তুমি চির সাথী

ভক্তি ও প্রেমে স্বাগত বরণে,

হাসি-কান্নায় রচিত জীবন

যেন ঠাঁই পাই তব শ্রীচরণে৷

ক্লাসরুম

লেখক
ঋতজা চৌধুরী

ক্লাসরুমের ওই জানলা দিয়ে

ঢুকছে একটু আলো,

ক্লাসরুমের ওই টেবিল-চেয়ার

দেখতে লাগে ভালো৷

ক্লাসরুমের ওই চক-ডাস্টার

হাসছে মিটিমিটি,

কচিকাঁচাদের মাঝে শিক্ষক

করছেন তাঁর ডিউটি৷

ক্লাসরুমও যেনো তাদের তালে

মেতে উঠেছে আনন্দে,

ক্লাসরুমও যেনো গান গায়

মিষ্টি মধুর ছন্দে৷

গাছের ফাঁকে ক্লাসরুমকে

দেখতে লাগে বেশ,

কল্পনার এই ক্লাসরুম

আজ এই পাতাতেই শেষ৷৷

দরদী মেয়ে

লেখক
প্রণবকান্তি দাশগুপ্ত

বাঁকুড়া জেলায় দুর্ভিক্ষ লেগেছে৷ ঘরে ঘরে শুধু নেই নেই রব৷ আবাল-বৃদ্ধ-বনিতা---সকলেই উদরান্নের জন্য পাগলা কুকুরের মতো ছোটাছুটি করছে৷ কুখাদ্য-অখাদ্য খেয়ে অকালে মানুষগুলো মরছে! কে কাকে স্যহায্য করবে? সকলেই যে ভিখারী---সাহায্যপ্রার্থী?

এক ব্রাহ্মণ বড় গরীব কিন্তু তাঁর মনটা ছিল করুণায় ভরা৷ দরিদ্রের হাহাকার শুণে তাঁর অন্তরাত্মা কেঁদে উঠলো৷ সেবার গোলায় তাঁর কিছু ধান তোলা ছিল৷ কিন্তু সেগুলোছিল ভবিষ্যতের সংস্থান! ব্রাহ্মণ ভাবলেন আগে ক্ষুধাতুররা খেয়ে তো বাঁচুক, ভবিষ্যতের চিন্তা সময় করা যাবে৷ বর্তমানের আত্যন্তিক প্রয়োজনে ব্রাহ্মণ ভবিস্যতের কথা ভুলে গেলেন৷ স্বেচ্ছায় অনায়াসে তিনি বরণ করে নিলেন অপরিগ্রহ ব্রত৷

ব্রাহ্মণ মনস্থির করলেন একটা অন্নসত্র খুলবেন৷ মেয়ের কাছে সে ব্যাপার প্রকাশ করতেই মেয়ে তো আহ্লাদে নেচে উঠলো৷ এক মুহূর্ত বিলম্ব না করে সে হাঁড়ি-কড়াই বের করে তখনই রীতিমত কাজ শুরু করে দিল৷ চালে-ডালে খিচুড়ি চাপনো হল৷ দরিদ্র নারায়ণের সেবা হবে৷ ব্রাহ্মণের মেয়ের স্ফূর্তি আর ধরে না৷ রান্নার কাজে সে নাচের ভঙ্গীতে রাঁধুনীকে যোগান দিতে লাগলো৷

 রান্না নির্বিঘ্নে শেষ হলো৷

পঙ্গ পালের মতো সব ক্ষুধার্তরা উঠানে সারি সারি পাতা নিয়ে বসে গেল৷ গরম গরম খিচুড়ি সবে উনুন থেকে নামানো হয়েছে৷ ধোঁয়া উঠছে৷ ফুঁ দিতে দিতে ব্যথা হয়ে যায় ঠোঁট, তবু খিচুড়ি জুড়োয় না৷ খেতে গেলে জিব পুড়ে যায়, কিন্তু পেট তবু মানে না উপবাসের জ্বালা ৷ বেচারা আহারীরা, পড়লো বড় মুস্কিলে৷

ব্রাহ্মণের মেয়ে তাদের এ হেন অসহায়... অবস্থা-দেখে পাখা হাতে ছুটে এলো৷ বাতাস দিয়ে সবার খিচুড়ি সে জুড়িয়ে দিল৷

 গোগ্রাসে পরম আগ্রহে তখন সকলে ‘হাঁপুস-হুপুস’ শব্দে খেতে শুরু করে দিল! আহা কি সুস্বাদু ! ব্রাহ্মণের মেয়েটিকে সেদিন প্রাণ ভরে আশীর্বাদ করলো সকলে!

 বলো দেখি কে এই মেয়ে দরিদ্রের প্রতি যার এত দয়া? মনে রেখো, এই মেয়েটি হচ্ছেন ক্ষমা, পবিত্রতা, শুদ্ধচিত্ততা, সেবা ও তপস্যার প্রতিমূর্ত্তি শ্রীসারদামণি দেবী৷ বাঁকুড়া জেলার জয়রামবাটী নামক গ্রামে ১২৬০ সালের ৮ই পৌষ তিনি জন্মগ্রহণ করেন৷ তাঁর মাতার নাম শ্রীশ্যামাসুন্দরী দেবী৷ আর. পিতা শ্রীরামচন্দ্র মুখোপাধ্যায়৷

একুশের আশ্বাস

লেখক
জ্যোতিবিকাশ সিন্‌হা

একুশ ফেব্রুয়ারী---

তোমার ঊজ্জ্বল স্মৃতি বাঙালীর মর্মে গাঁথা

তুমি শোষিতের রুক্ষ অন্তরে ফল্গুর সরসতা৷

নিপীড়িত, বঞ্চিত বুকে জাগায়েছো আশা

তোমার পরশে মানুষ  পেয়েছে মুখের ভাষা৷৷

 

বাঙলার মাটি ভাষা-শহীদের রক্তে রাঙা

তারাই ভেঙেছে পরাধীনতার শিকল,

শোষণ যন্ত্রণা৷

একুশের বলিদান গেয়েছে জীবনের জয়গান

পৃথিবীর কুর্ণিশে

‘আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের’ সম্মান৷৷

 

মানব-ওষ্ঠে যতদিন রবে কথা,

ধমনীতে শোণিত

 একুশের আশ্বাস-বাণী সততঃ হবে উচ্চারিত৷

 অমর একুশের আহ্বানে মাতিবে

     পুণর্বার বাঙলার আকাশ-বাতাস

সকল বাঙালীর বাসভূমি মিলি একসাথে

    রচিবে বাঙালীস্তান,

           বাঙলার নূতন ইতিহাস৷৷

ভাষা বিপ্লবীদের প্রতি

লেখক
কৌশিক খাটুয়া

যাঁদের মরনে গর্বিত মনে

একুশকে করি স্মরণ,

ভাষা আন্দোলনে পথের দিশারী

করেছে মৃত্যু বরণ৷

বাংলা ভাষার দাবী আদায়ে

শত শত তাজা প্রাণ,

কোন ভাবাবেগে আন্দোলিত হয়ে

রাখে মাতৃভাষার মান!

‘উর্দু’ হবে রাষ্ট্রীয় ভাষা

পাকশাসকের ঘোষণা,

বাঙালির দাবী, বাঙালির ভাষা

লাঞ্ছিত আশা বাসনা!

বাংলা হরফ, বাংলা লিপি

মাতৃস্নেহের টান,

সেই অধিকার হরিয়া শাসক

করে বাংলাকে অপমান!

বাহান্ন সালের একুশ--------

জাগত বাঙালি-মর্যাদার হুঁশ,

সুসংবদ্ধ ছাত্র, যুবক, সমাজ কর্মী

পাহাড় আন্দোলিত, সাগরে ঊর্মি,

সেই আন্দোলনে গুলি বর্ষণে

পাকসশস্ত্র বাহিনী,

রচিত হলো রফিক, সালাম, জববরের

ভাষা আন্দোলনের কাহিনী৷

মাতৃ-অঙ্ক শূন্য করে

দামাল তুর্কি দল,

দু’নয়নে মায়ের গঙ্গা-পদ্মা

নীরব অশ্রুজল!

শত শহীদের রক্তে অর্জিত

বাংলা ভাষার মান,

হৃদয়ে বরণে স্মরণ করি

তাঁহাদের অবদান৷