১৯৮২ সালের ৩০শে এপ্রিল৷ কলকাতার বিজন সেতুর ওপরে ও নীচে ও নিকটস্থ বন্ডেল গেটে একই সময়ে ঘটে গিয়েছিল এ শতাব্দীর নৃশংসতম ও বীভৎসতম ঘটনা৷ সি পি এম’এর কর্ত্যব্যষ্টিদের নির্দেশে ওদের হার্মাদ বাহিনী আনন্দমার্গের ১৭ জন সন্ন্যাসী ও সন্ন্যাসিনীকে ট্যাক্সি থেকে নামিয়ে ধারাল অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে পেট্রোল ঢ়েলে জীবন্ত দগ্ধ করে৷ ওখান থেকে নিকটেই দু–দুটো থানা৷ একদিকে বালিগঞ্জ থানা, অন্যদিকে কসবা থানা৷ কিন্তু খুনীরা কয়েক ঘন্টা ধরে অবাধে এই পৈশাচিক কান্ড ঘটিয়ে গেল৷ কেউ গ্রেপ্তার হল না৷ কোনো মন্ত্রীও ঘটনাস্থলে এলেন না৷ বিকেলে মুখ্যমন্ত্রী কলকাতা বিমানবন্দরে (উত্তর বঙ্গ যাওয়ার সময়) এ ব্যাপারে সাংবাদিকদের প্রশ্ণের উত্তরে বললেন, এটা একটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা৷
কলকাতার বুকে প্রকাশ্য দিবালোকে ১৭ জন সন্ন্যাসী–সন্ন্যাসিনীক্ এইভাবে পৈশাচিকভাবে হত্যা করা হ’ল এটা বিচ্ছিন্ন ঘটনা এর কোনো বিশেষ গুরুত্ব নেই৷ এই জন্যে মুখ্যমন্ত্রী সহ কোনো মন্ত্রী ঘটনাস্থলে যাওয়া তো দূরের কথা দুঃখ প্রকাশও করলেন না৷ করবেন বা কী করে৷ ঘটনা তো ওঁরাই ঘটিয়েছেন৷ ঘটনা যে ওঁরাই ঘটিয়েছেন, তার সবচেয়ে বড় প্রমাণ, ওই এলাকার তৎকালীন অতিরিক্ত জেলা সচিব শের সিং আনন্দ বাজার পত্রিকায় বিবৃতি দিয়েছিলেন (পত্রিকায় প্রকাশিতও হয়েছিল), এই ঘটনার পেছনে রাজ্যের প্রধান ব্যষ্টিই জড়িত ছিলেন৷ অর্থাৎ তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী জ্যোতি বসু জড়িত ছিলেন৷ তিনি লিখিত নির্দেশও পাঠিয়েছিলেন৷
এ ছাড়া এ ঘটনা যে সি পি এম থেকেই ঘটানো হয়েছে, তার পক্ষে বহু যুক্তি–তথ্য সে সময় আনন্দবাজার, বর্তমান সহ বিভিন্ন পত্র–পত্রিকায় প্রকাশিত হয়েছিল৷ জ্যোতি বসুরা যদি নির্দোষ হতেন, তাহলে, মহানগরী কলকাতার বুকে প্রকাশ্যে ঘটে যাওয়া এত বড় একটা গণহত্যার দুষৃকতীদের কেন খুঁজে বের করে তাদের শাস্তি দেওয়া হ’ল না? ঘটনা ঘটে যাওয়ার পরও সি পি এম ২৯ বছর শাসনে ছিল, এই ২৯ বছর ধরে তারা অপরাধীদের ধরার পরিবর্তে আড়াল করে গেছে৷ পাছে সত্য প্রকাশ হয়ে পড়ে তাই ক্ষমতা থেকে চলে যাওয়ার আগে বিজন–সেতু হত্যাকান্ড সম্পর্কিত বহু ফাইলও মহাকরণ থেকে উধাও করে দিয়েছে৷ সন্ত্রাসবাদী সি পি এম পার্টির বিরুদ্ধে রাজ্যের মানুষের মনের পুঞ্জীভূত ঘৃণা ও মমতার আন্দোলনের ফল স্বরূপ সি পি এম’এর পতন হ’ল৷ রাজ্যে পরিবর্তন আসার আগে ও পরে মমতা ব্যানার্জী বার বার বলেছেন–খুনী সি পি এম’এর প্রতিটি খুনীর শাস্তি হবে৷
তাই পরিবর্তনের পর সবাই আশা করেছিলেন, এবার বিজন সেতু হত্যাকান্ডের খুনী ও ষড়যন্ত্রকারীদের শাস্তি হবে৷ কিন্তু আজও তা হ’ল না৷
অনেক দিন পরে যদিও হাই কোর্টের প্রধান বিচারপতি অমিতাভ লালার নেতৃত্বে কমিশন বসানো হয়৷ সেই কমিশনের প্রতিবেদনও জমা পড়ে রাজ্য স্বরাষ্ট্র দপ্তরে তাও প্রায় তিন বছর হতে চললো৷ কিন্তু সেই প্রতিবেদন আজও প্রকাশ্যে আসেনে৷
আনন্দমার্গের কেন্দ্রীয় আশ্রমের দাবী ছিল কেন্দ্রীয় সরকার সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে শতাব্দীর এই নৃশংসতম ঘটনার তদন্ত হোক কারণ, এই ঘটনার সঙ্গে খোদ সেদিনের রাজ্য প্রশাসন জড়িত, বর্তমানে সরকার পরিবর্তন হলেও, সেই প্রশাসনের অনেকেই আজও কর্মরত৷ তাঁরা কখনই চাইবেন না, সত্য উদঘাটিত হোক, এ তো সহজ কথা৷ কারণ, কেঁচো খুঁড়লে সি পি এম’এর কর্তাদের সঙ্গে এখনও বহাল তবিয়তে স্বপদে আসীন বহু সচিব বা কর্মীর মুখোশ খুলে যাবে৷
তাই এখনও আনন্দমার্গ চায়, সুপ্রিম কোর্টের একজন কর্মরত বিচারপতিকে দিয়ে এই ঘটনার তদন্ত করানো হ’ক৷
তবে আজ হোক্, কাল হোক সত্য উদঘাটিত হবেই৷ তবে শুধু এটা যথেষ্ট নয়, সি পি এম স্পষ্টতঃই সন্ত্রাসবাদী এক পার্টি৷ এরা ধাপ্পার পর ধাপ্পা দিয়ে দীর্ঘ ৩৪ বছর জনগণকে বিভ্রান্ত করে ক্ষমতা দখল করে রেখেছিল৷ এই ৩৪ বছর ধরে পার্টি ক্যাডাররা আঙ্গুল ফুলে কলাগছি হয়েছে, যদিও মুখে এরা নিজেদের সর্বহারা প্রতিনিধি বলে দাবী করে, কিন্তু এদের ৩৪ বছরের রাজত্বকালে জনসাধারণ যেই তিমিরে ছিল সেই তিমিরেই থেকে গেছে, কিন্তু পার্টির উঁচু স্তরের থেকে নীচু স্তরের নেতারা পর্যন্ত বিপুল সম্পত্তি, গাড়ী, বাড়ী, ব্যাঙ্ক ব্যালান্স করে নিয়েছে৷
কিন্তু নিয়তির নিষ্ঠুর বিধানে আজ সিপিএমের অস্তিত্বই বিপন্ন৷ একমাত্র কেরলে টিম টিম করে জলছে৷ মানবতার এই শত্রু যত শীঘ্র ভারত থেকে বিদায় নেবে ততই দেশের মঙ্গল৷
সিপিএমের স্বরূপ মানুষ জেনেছে৷ বিধানসভায় ২৩৪–এর গর্বে যারা একদিন ঔদ্ধত্য দেখাত তারা আজ বিধান সভায় শূন্য হয়ে গেছে মানুষের ঘৃণা ও ক্ষোভের কারণে৷ মানুষকে এবার জানতে হবে আনন্দমার্গকে, তার সুমহান আদর্শকে৷ কারণ ন্যায় ও সত্যের ওপর প্রতিষ্ঠিত আদর্শ সমাজ গড়ার সব উপকরণ আনন্দমার্গেই আছে৷
- Log in to post comments